(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
৬
সুগার রিভার্স জার্নি: সংযমী জীবনের শুরুয়াৎ
আজকেই রিপোর্টে ধরা পড়েছে আপনার ডায়াবেটিস।
ভয় পাবেন না।
এটাই আপনার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
প্রথম কাজ: উপবাস
আজকের প্রথম সিদ্ধান্ত— উপবাস।
সবচেয়ে ভালো হবে ২৪ ঘণ্টার ওয়াটার ফাস্টিং।
চাইলে জলের মধ্যে লেবুর রস ও এক চিমটি পিঙ্ক সল্ট মিশিয়ে নিতে পারেন।
যদি একেবারেই সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত ১৬ ঘণ্টার উপবাস অবশ্যই করবেন।
এই সময়ে শুধুই জল খাওয়া যাবে। চাইলে হালকা গরম জলও নিতে পারেন।
খাবারের এপিসোড – শুধুই একবার
ব্রেকফাস্ট মানে হলো ফাস্ট ভাঙা। অর্থাৎ উপবাস ভঙ্গ করা।
আজকের দিনে সেটাই হবে আপনার একমাত্র ইটিং এপিসোড।
আজকে সারাদিনে একবারের বেশি খাবেন না।
এই একবারের খাবারই হবে ইনসুলিন–ফ্রেন্ডলি।
মানে, শরীরে ইনসুলিনের বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না।
এটাই হবে আপনার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙার শুরুয়াৎ।
কী খাবেন ?
ভরপেট শাকসবজি (সিদ্ধ বা হালকা রান্না করা) → এর মধ্যে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল মিশিয়ে নেবেন।
বাদাম (Nuts) → কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম, আখরোট।
বীজ (Seeds) → কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিয়া সিড, তুলসীর বীজ।
অ–ভেজদের জন্য → মাছ, দেশি মুরগির ডিম, মাছের ডিম, মাছের তেল, মাশরুম, সোয়াবিন।
ভেজেটেরিয়ান হলে মাছ–ডিম বাদ দিন, বাকিগুলো চালিয়ে যান।
পনির বা দুধ–দই নয়।
আজকের দিনে বাজারে যে ডেয়ারি প্রোডাক্ট পাওয়া যায় তা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। তাই এগুলো বাদ দেবেন।
ব্যায়াম নয়, শুধুই শ্বাস–প্রশ্বাসের এক্সারসাইজ:
প্রথম দিনে শরীরকে কোনো চাপ দেওয়া যাবে না।
আজকের ব্যায়াম হলো শুধু— ডিপ ব্রিদিং।
১–৬ গোনা পর্যন্ত শ্বাস নিন।
ভাবুন— নির্মল প্রাণবায়ু কোষের বন্ধ দরজা খুলে দিচ্ছে।
শ্বাস ৫–৬ সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে ছাড়ুন।
ভাবুন— শরীরের ভেতরে জমে থাকা সমস্ত টক্সিন বেরিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ১০ মিনিট এভাবে করুন।
এবং মনে রাখবেন—
এটি প্রতিদিন অন্তত দুইবারের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
প্রথম দিনের মূলমন্ত্র:
“আজ আমি আমার শরীরকে প্রথমবারের মতো বিশ্রাম দিলাম।
আজ আমি শরীরের ভাষা শুনতে শুরু করলাম।
আজ আমি খাওয়া–দাওয়ার শৃঙ্খলা শিখলাম।
আজ আমি আমার মুক্তির প্রথম ধাপ অতিক্রম করলাম।”
আজকের করণীয়:
আজই বাজার থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনতে হবে।
কারণ এই জিনিসগুলো ছাড়া সুগার রিভার্স জার্নি এগোবে না।
পরবর্তী অংশে আমরা সেই তালিকা দিয়ে দিচ্ছি।
৭
রান্নাঘরের আবর্জনা সরানোর উদ্যোগ
আগেকার দিনে রান্নাঘরই ছিল পৃথিবীর মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট হাসপাতাল।
আমাদের ঘরের মশলাপাতিকে তখন বলা হতো—ঔষধি।
কারণ এগুলো শুধু খাবারের স্বাদই বাড়াতো না, শরীরকেও রাখতো সুস্থ।
কিন্তু আজ ?
আমাদের রান্নাঘর ভর্তি হয়ে আছে দুনিয়ার নানা রকম আবর্জনা দিয়ে।
সাদা চাল, সাদা আটা, ময়দা, চিনি, রিফাইন্ড তেল, প্যাকেটজাত খাবার—
খাদ্যের মোড়ক পরে থাকা এসব অখাদ্য বা আবর্জনাগুলোই ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের ক্ষতি করছে।
তাই প্রথম কাজ—
রান্নাঘরকে আবর্জনা মুক্ত করা।
যা যা একেবারেই ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে—
সাদা চাল, সাদা আটা, ময়দা
সাদা চিনি ও আয়োডিনের লেভেল লাগানো সাদা রিফাইন্ড লবণ
রিফাইন্ড অয়েল
প্যাকেটজাত প্রসেসড ফুড (চিপস, বিস্কুট, ইনস্ট্যান্ট নুডলস ইত্যাদি)
তারপর নতুন করে গড়ে তুলুন আপনার “সুস্থতার রান্নাঘর।”
কী কী রাখবেন ?
চাল, আটা – সব লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দেখে কিনুন
তেল – অবশ্যই কোল্ড প্রেসড
লবণ – সামুদ্রিক লবণ বা হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট
মশলা – গোটা গোটা কিনুন, বাড়িতে শিলনোড়া বা হামানদিস্তা দিয়ে গুঁড়ো করুন
প্রতিদিনের জন্য রাখুন কিছু জরুরি জিনিস—
কাঁচা হলুদ, আদা, লেবু, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, গ্রিন টি ইত্যাদি।
সালাদের জন্য চেষ্টা করবেন লোকাল ও দেশি বীজের সবজি কিনতে।
সবকিছু একেবারে খাঁটি ও অর্গানিক না হলেও, যতটা সম্ভব রাসায়নিক ও কীটনাশকমুক্ত জিনিস বেছে নিন।
মনে রাখবেন—
আপনার রান্নাঘরই আপনার আসল হাসপাতাল।
এই হাসপাতালের তাকগুলো ভর্তি রাখবেন কেবল সুস্থ থাকার লওয়াজিমায়।
যে কোনো ধরনের প্রসেসড বাজে জিনিস ঢুকতে দেবেন না।
কারণ,
যদি রান্নাঘর সঠিক হয়—তাহলেই জীবনও সঠিক পথে যাবে।
৮
দ্বিতীয় দিন: নতুন লাইফস্টাইল শুরু
আজ থেকে শুরু হচ্ছে তোমার নতুন জীবন।
গতকাল ছিলো শরীরকে বিশ্রাম দেওয়ার দিন। আজ থেকে শুরু হলো শৃঙ্খলার এক নতুন অভিযান।
মনে রেখো—আজকের এই সকালটা তোমার জন্য নতুন জন্ম।
তুমি যদি প্রতিদিনের নিয়ম মেনে চলো, তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তোমার রক্তে সুগার শুধু কমবে না, বরং পুরো শরীর আবার নতুন করে জেগে উঠবে।
ভোরের শুরু:
ডাকে পাখি—
খুলো আঁখি,
দেখো সোনালী আকাশ—বহে ভোরের বাতাস।
ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠবে।
বিছানায় বসেই প্রথম কাজ—শ্বাসের ব্যায়াম।
গভীরভাবে শ্বাস নাও, ছয় পর্যন্ত গোনো। কল্পনা করো—শরীরে বিশুদ্ধ প্রাণশক্তি ঢুকছে।
তারপর ধীরে ধীরে ছাড়ো। ভাবো—শরীরের ভেতর জমে থাকা সব টক্সিন বেরিয়ে যাচ্ছে।
মাত্র দশ মিনিট—তবুও এর শক্তি অসীম।
এরপর দুই গ্লাস গরম জল।
এই জল তোমার ভেতরের জমে থাকা অশুদ্ধিকে ধুয়ে নিয়ে যাবে।
সকালবেলার মেটাবলিক ড্রিঙ্ক:
একটি গ্লাসে নাও—
এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়া
এক চামচ আপেল সিডার / অলিভ / এলোভেরা ভিনেগার
এক চামচ লেবুর রস
আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা মেথির জল
এরপর গরম জল ঢেলে গ্লাস ভরো।
এটাই হলো পৃথিবীর সেরা মেটাবলিজম বুস্টার ড্রিঙ্ক।
এটা শরীরে ঢুকতেই তোমার মেটাবলিজম জেগে উঠবে, গ্লুকোজের ভারসাম্য ঠিক হতে শুরু করবে।
(এরপর অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করবে, যাতে ভিনেগারের এসিড দাঁতের ক্ষতি না করে।)
সকালের হাঁটা:
এবার বেরিয়ে পড়ো হাঁটতে।
কুড়ি মিনিট, আধঘণ্টা, বা এক ঘণ্টা—যতটা পারো।
কিছুটা সময় খালি পায়ে মাটিতে হাঁটবে।
যদি পারো কিছুটা দৌড়াও, হার্টবিট বাড়াও।
তখনই বুঝবে—তোমার শরীর আবার জেগে উঠছে।
ধন্বন্তরী চা:
হাঁটাহাঁটির পর তৈরি করো এক কাপ বিশেষ চা—
ধন্বন্তরী চা।
এই চা তোমার ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করবে, শরীরের ভেতরে প্রদাহ কমাবে, মনকে করবে সতেজ।
(এর রেসিপি বইয়ের আলাদা অধ্যায়ে দেওয়া থাকবে।)
উপবাস ভাঙ্গা – ব্রেকফাস্ট
গতকাল রাত সাতটায় যদি ডিনার করো, তবে আজ সকাল ১১টায় ১৬ ঘণ্টার ফাস্ট সম্পূর্ণ হবে।
তখনই প্রথমবার খাবে।
খাওয়ার নিয়ম:
আগে বাদাম (ভেজানো ও খোসা ছাড়ানো)
তারপর এক বড় বাটি রামধনু সালাদ – বিট, শসা, টমেটো, গাজর, মূলা, ক্যাপসিকাম, কচি বাঁধাকপি, অঙ্কুরিত ছোলা–মুগ, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, সামান্য লেবুর রস ও পিঙ্ক সল্ট। উপর থেকে এক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ঢেলে নাও।
খাওয়ার সময় মনে মনে ভাববে—“এই খাবার আমার শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে প্রাণসঞ্চার করছে।”
এরপর চাইলে চিয়া বা তুলসীর বীজের জল খেতে পারো।
যদি পারো, এই ব্রেকফাস্টের সঙ্গেই লাঞ্চও সেরে ফেলো।
মাছ, দেশি ডিম, শাকসবজি—সব খেতে পারো। ভাত বা রুটি খেতে হলে লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের হবে এবং পরিমাণে অল্প।
বিকেলে:
খাবারের পর ১–১.৫ ঘণ্টা জল খাবে না। তারপর যত খুশি জল খেতে পারো।
পড়ন্ত বিকেলে এক কাপ গ্রিন টি বা ব্ল্যাক কফি খাও।
এরপর আবার হাঁটতে বেরোবে। অন্তত আধা ঘণ্টা।
রাতের রুটিন:
ডিনার করার আদর্শ সময় রাত ৭টা।
সর্বোচ্চ ৮টার মধ্যে শেষ করবে।
যদি একান্তই দেরি হয়, তবে পরদিন ফাস্টের সময় বাড়িয়ে টাইমটা ব্যালেন্স করবে।
রাতের খাবার হালকা হতে হবে।
ডিনারের পর কিছুক্ষণ হাঁটবে, হালকা আড্ডা দেবে।
ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইলের ডেটা অফ করে দাও।
রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ো।
আজকের দিনের মূলমন্ত্র:
“আজ থেকে আমি আমার শরীরের সাথে বন্ধুত্ব শুরু করলাম।
আজ থেকে আমার প্রতিটি সকাল হবে নতুন সূর্যোদয়ের মতো।
আমি জানি, আমি পারব।
কারণ আমার শরীর আমার শত্রু নয়, সে-ই আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু।”
৯
নতুন জীবনের পথে
গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে আপনার নতুন জীবন গড়ে তোলার জার্নি।
এই জার্নি আগামী সাত দিন একটানা চলবে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠা:
ভোর পাঁচটার সময় ঘুম থেকে উঠুন। বিছানায় বসেই মিনিট দশেক শ্বাসের ব্যায়াম বা প্রাণায়াম করুন।
এরপর হালকা গরম জল খান দুই গ্লাস। তারপর একটি মেটাবলিক ড্রিঙ্ক তৈরি করুন—
এক চুটকি দারুচিনি গুঁড়ো
এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
এক চামচ লেবুর রস
আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা মেথির জল
এসব গরম জলে মিশিয়ে পান করুন। এটি হবে দিনের প্রথম মেটাবলিক বুস্টার ড্রিঙ্ক।
পরে দাঁত ভালো করে ব্রাশ করতে ভুলবেন না।
হাঁটা ও শারীরিক কার্যকলাপ:
এরপর উৎফুল্ল মনে হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন।
কুড়ি মিনিট, আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা—যতটা পারেন হাঁটুন।
সম্ভব হলে কিছুটা সময় খালি পায়ে ঘাসে বা মাটিতে হাঁটুন।
কিছুক্ষণ জোরে হাঁটা বা দৌড়ালে হার্টবিট বেড়ে যাবে, এতে রক্ত চলাচল তীব্র হবে।
ধন্বন্তরী চা
হাঁটার পর বাড়ি ফিরে হাত–পা ধুয়ে নিন। এরপর গ্রিন টি ও অন্যান্য হার্বাল উপাদান দিয়ে ধন্বন্তরী চা তৈরি করুন।
এই চা আপনার শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং মেটাবলিজমকে আরও সক্রিয় করবে।
উপবাস ভাঙা (ফাস্ট ব্রেক)
ধরা যাক আপনি আগের দিন সন্ধ্যা ৬টায় ডিনার করেছেন।
তাহলে আজ সকাল ১০টায় আপনার ১৬ ঘণ্টার উপবাস সম্পূর্ণ হবে।
ঠিক তখনই ফাস্ট ব্রেক করুন।
যদি অসুবিধা হয়, তবে অন্তত ১৪ ঘণ্টা উপবাসের পর খাবার খান।
প্রথম খাবার (ব্রেকফাস্ট+লাঞ্চ)
ভিজিয়ে রাখা বাদাম (খোসা ছাড়ানো) ভালো করে চিবিয়ে খান।
বড় এক বাটি সালাদ খান → বিট, শসা, গাজর, মূলা, ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, টমেটো, অঙ্কুরিত ছোলা–মুগ, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, লেবুর রস ও পিঙ্ক সল্ট। উপর থেকে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল দিন।
আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা চিয়া বা তুলসীর বীজের জুস পান করুন।
চাইলে এই ব্রেকফাস্টের সঙ্গেই লাঞ্চ সারতে পারেন। শাকসবজি, ডিম, মাছ সব চলবে। ভাত বা রুটি চাইলে খান লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের এবং যতটা সম্ভব কম।
নিয়ম: খাবার খাওয়ার পর ১–১.৫ ঘণ্টা পর্যন্ত জল খাবেন না। তার পর ইচ্ছে মতো জল খেতে পারবেন।
বিকেল ও সন্ধ্যা:
বিকেলে চাইলে এক কাপ গ্রিন টি বা ব্ল্যাক কফি নিতে পারেন।
তারপর আবার অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন।
রাতের খাবার (ডিনার):
সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ডিনার করুন। সম্ভব হলে আরও আগে করুন। একান্তই সম্ভব না রাত হলে ৮টার মধ্যে অবশ্যই ডিনার শেষ করুন।
এ সময় খাবার হবে হালকা—শাকসবজি, স্যুপ, ডিম বা মাছ।
ডিনারের পর হালকা হাঁটাচলা করুন, আড্ডা দিন, কিন্তু জল ছাড়া অন্য কোনো খাবার খাবেন না। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন।
ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোনের ডেটা অফ করে দিন।
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
এই রুটিন শুধু দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনের জন্য নয়।
এই একই রুটিন আপনাকে টানা সাত দিন মেনে চলতে হবে।
এরপর সপ্তম দিনের শেষে আবার ব্লাড টেস্ট করলে আপনি নিজেই ফলাফল দেখে অবাক হয়ে যাবেন—
আপনার সুগার লেভেল অনেকটাই নেমে আসবে, হয়তো একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
১০
নতুন লাইফস্টাইল মেনে চলার ৭দিন পর নিশ্চয়ই আপনি ব্লাড টেস্ট করিয়েছেন।
গত সাত দিনের লাইফস্টাইল ফলো করে যদি আপনার বাড়তি সুগার নেমে গিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারছেন এর কার্যকারিতা কতটা অসাধারণ। শরীর সত্যিই প্রতিদিনের যত্ন আর নিয়মের উত্তর দেয়। এবার আপনার জন্য রইল এক বছরের পূর্ণাঙ্গ লাইফস্টাইল রোডম্যাপ।
কেন এক বছর ?
কারণ, এক বছরের ভেতরে শরীর এক বিশাল পরিবর্তনের যাত্রা সম্পূর্ণ করে।
এক বছরের মধ্যে আমাদের রক্ত চারবার নতুন হয়ে যায়।
ছয়টি ঋতু পাল্টায়, শরীর প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন করে অভ্যস্ত হয়।
বারোটা মাসের প্রতিটি মাস আবার নতুন করে আমাদের অভ্যাস গড়ে তোলে।
অর্থাৎ, পুরো একটা বছর হলো শরীরকে ভিতর থেকে বদলে ফেলার জন্য সবচেয়ে নিখুঁত সময়সীমা।
এখানে একটা উদাহরণ দিই—
একটি ছোট্ট শিশুকে যদি তার নিজের পরিবার থেকে সরিয়ে অন্য একটি পরিবারে রাখা হয়, তবে এক বছরের মধ্যেই সে তার পুরনো ভাষা ভুলে গিয়ে নতুন ভাষা শিখে নেয়।
এটাই হলো মানবশরীর ও মনের আশ্চর্য ক্ষমতা— সে তার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখে, পুরনো অভ্যাস ভুলে নতুন অভ্যাস গড়ে তোলে।
ঠিক তেমনই, ডায়াবেটিসও কোনো জন্মগত অভিশাপ নয়।
এটা কেবল বছরের পর বছর জমে থাকা ভুল অভ্যাসের ফল।
আপনি যদি একটানা বারো মাস সঠিক নিয়মে জীবনযাপন করেন, শরীরও ধীরে ধীরে তার পুরনো “ইনসুলিন প্রতিরোধী অভ্যাস” ভুলে যাবে।
শরীর নতুন করে শিখবে— ইনসুলিনকে গ্রহণ করতে, সুগারকে ব্যবহার করতে, শক্তিকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে।
এইভাবেই এক বছরের মধ্যে আপনি শুধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবেন না, বরং এটাকে পুরোপুরি রিভার্স করবেন।
মানে— আপনার শরীর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে, আর আপনাকে আর ডায়াবেটিস নামক রোগকে নিয়ে ভয় পেতে হবে না।
এখন থেকে শুরু হচ্ছে সেই এক বছরের সুগার রিভার্সাল লাইফস্টাইল—
একটা পথ, যা আপনাকে রোগের শেকল থেকে মুক্ত করে একদম নতুন জীবনের দোরগোড়ায় দাঁড় করাবে।