১১
এক বছরের লাইফস্টাইল রোডম্যাপ
১. প্রথম তিন মাস—
প্রথম সাত দিনের লাইফস্টাইল যেমন ছিল, ঠিক তেমনই কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
খাবার, ঘুম, হাঁটা–ব্যায়াম, উপবাস—সব নিয়ম বজায় রাখতে হবে।
তিন মাস শেষে HbA1c টেস্ট করতে হবে। নিশ্চিন্ত থাকুন, রিপোর্ট একদম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
২. চতুর্থ মাস থেকে বারো মাস পর্যন্ত—
একই লাইফস্টাইল চালিয়ে যেতে হবে। তবে এ সময় থেকে অল্প অল্প করে ডাল খাবারে যোগ করতে পারবেন। পনিরও খেতে পারেন।
তবে সতর্ক থাকবেন—ডালও পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে, কারণ এতেও কার্বোহাইড্রেট আছে।
৩) অসতর্ক হলে কী করবেন ?
কখনো হঠাৎ একদিন নিয়ম ভঙ্গ হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নেই।
ততদিনে শরীর এতটাই সক্ষম হয়ে উঠবে যে, সে নিজেই সেই ছোট্ট ভুল ম্যানেজ করে নেবে।
তবে বারবার ভুল করলে শরীর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে—এটা মনে রাখতে হবে।
এক কথায়, পুরো এক বছর এই রুটিন মেনে চললে শরীর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভুলে যাবে এবং সুগার পুরোপুরি রিভার্স হয়ে যাবে।
১২
সুগার রিভার্সালের ফুড প্ল্যান
বিকল্প ১: দিনে ২ বেলা খাবার:
এটা সবচেয়ে কার্যকরী, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙতে সাহায্য করে।
দুপুর (প্রথম মিল – ফাস্ট ব্রেক)
৬–৮টি ভিজানো বাদাম (খোসা ছাড়ানো) + ১ চামচ ভিজানো চিয়া/তুলসী বীজের জল।
বড় এক বাটি সালাদ → বিট, শসা, গাজর, টমেটো, বাঁধাকপি, রঙিন ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ কুচি, ধনেপাতা, লেবুর রস, পিঙ্ক সল্ট, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল।
প্রোটিন: মাছ/ডিম/দেশি মুরগি/মাশরুম।
এক বাটি লো জিআই ভাত বা ২টা লো জিআই আটার রুটি (সর্বোচ্চ সীমা)।
রাত (ডিনার – সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ)।
হালকা শাকসবজি ভাজি/সুপ।
সামান্য প্রোটিন (মাছ/ডিম/মুরগি)।
চাইলে ছোট বাটি ডাল (কোনোভাবেই বেশি নয়)।
শেষে এক চামচ ফ্ল্যাক্সসিড বা কুমড়োর বীজ।
বিকল্প ২: দিনে ৩ বেলা খাবার:
(যাদের শুরুতে একেবারে ২ বেলায় নামা কষ্টকর মনে হয়, এটা তাদের জন্য)
সকাল (ব্রেকফাস্ট)
রাতে ভিজিয়ে রাখা ৬/৮টা কাঠ বাদাম, আখরোট ২ টুকরো, কুমড়োর/সূর্যমুখীর বীজ
চাইলে সেদ্ধ ডিম (১–২টি)
গ্রিন টি / ব্ল্যাক কফি
দুপুর (লাঞ্চ)
বড় এক বাটি সালাদ (উপরের মতো)
প্রোটিন: মাছ/ডিম/দেশি মুরগি/মাশরুম
এক বাটি লো জিআই ভাত বা ২টা লো জিআই আটার রুটি
রাত (ডিনার – ৭টার মধ্যে শেষ)
শাকসবজির স্যুপ/হালকা ভাজি
সামান্য প্রোটিন
চাইলে সামান্য ডাল
কখনোই খাবেন না:
ভাত–রুটি–ডাল একসঙ্গে থালা ভরে (কার্ব ওভারলোড)
খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে জল
রাতে ভাত/ভারী খাবার (অবশ্যই এড়াতে হবে)
গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম:
খাওয়ার এপিসোড = ২ বা সর্বোচ্চ ৩ বেলা
রাত ৮টার পর কোনোভাবেই খাবার নয়
খাবার সবসময়ই ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে
খাবারের পর অন্তত ১০–১৫ মিনিট হাঁটা
খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে জল নয়, তার পর যত খুশি জল
খাবার খাওয়ার মূলমন্ত্র “কম খাও, ঠিক খাও, সময়ে খাও।
এই তিন মন্ত্রই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙার আসল চাবিকাঠি।”
১৩
এই অধ্যায়ে আমরা দেখেছি—সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু খাদ্য নয়, বরং আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনই সবচেয়ে বড় ওষুধ।
ভোরে ওঠা, প্রাণভরে শ্বাস নেওয়া, সূর্যের আলো গ্রহণ করা, নিয়মিত হাঁটা, সময়মতো খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম আর নিরুদ্বেগ মন—এসবই মিলেই আমাদের শরীরকে সুগার মুক্ত করে।
প্রথম সাত দিনের অভ্যাস দিয়ে শুরু হয়েছিল আমাদের যাত্রা, আর সেই অভ্যাসগুলো যদি তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর ধরে চালিয়ে যাই, তবে শরীর নিজেই পুরোনো রোগ ভুলে নতুন করে বাঁচতে শেখে।
হ্যাঁ, কোনো কোনো দিন হয়তো ভুল হবে, হয়তো নিয়ম মানা সম্ভব হবে না, কিন্তু তাতে ভয় নেই। শরীর তখন এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, সে নিজেই সেই ভুলকে সামলে নিতে পারে।
এই অধ্যায় থেকে মূল শিক্ষা হলো—
সঠিক খাদ্যাভ্যাসের চেয়েও বড় হলো সঠিক জীবনযাপন।
কারণ নিয়মিত ও শৃঙ্খল জীবনই আমাদের HbA1c কমায়, শরীরকে ইনসুলিন সেনসিটিভ করে তোলে, আর আমাদের মুক্তির রাস্তায় নিয়ে যায়।
আজ থেকে প্রতিটি সকাল যদি হয় নতুন সূর্যের মতো, প্রতিটি রাত যদি হয় শান্ত ঘুমের মতো—তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমরা বলতে পারব: “ডায়াবেটিস আমাকে নয়, আমি ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করছি।”