Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 37

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৩৭

❤♠❤♠❤♠❤

- "ব‌ইতে সন্ন্যাসীকে নিয়ে মিথ বললে মিথ, লোককথার নামে গল্পকথা বললে গল্পকথা ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটা উনি লেখেননি।" সকলের উপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে যায় সিদ্ধার্থ, "বইতে শুধু আছে, দুই ভাইয়ের দেখা হয়েছিল, বড়ভাই ছোটভাইকে কিছু টাকাপয়সা দিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে বলেন। বাকি কথাগুলো আছে মনমোহন গোস্বামীর হাতের লেখায়, বোধহয় ওঁর নিজের কপিটাতে।" সিদ্ধার্থ তাকিয়ে আছে শুক্লার দিকে। 

শুক্লা বাবার দিকে তাকায়, তারপর মায়ের দিকে। শেষে পাশে বসা দাদার দিকে তাকাতে শাক্য ওর কাঁধে হাত দিয়ে থামায়। 

- "তিনটে বইতে এইগুলো লেখা আছে, দাদুুর নিজের হাতে লেখা। বাবার, আমার আর শুক্লার। আমাদের তিনজনকে হাতে তুলে দিয়েছিলেন উনি এই কপিগুলো।" শাক্য উত্তর দেয়। 

- "আ চ ছা," একটু অন্যমনস্ক ভাবেই সিদ্ধার্থ বলে যায়, "তিনটে কপি হলেও, আমি যেটা ভেবেছি, সেটাই ঠিক, এগুলো তোমাদের একান্ত ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্ন। আর পারিবারিক ইতিহাস, স্পেশালি নলিনাক্ষ ও কমলাক্ষ রায়চৌধুরীর আত্মত্যাগের ইতিহাস গোপন রাখার কথাও মাথায় রাখতে বলেছেন ঠাকুর্দা। আর সেই কথা মেনে চলোও তোমরা। তাই আমি যখন বইটা ধার চাইলাম ঠাকুরাণীর চিতার ব্যাপারটা ক্লিয়ার করার জন্য, শুক্লা ওর বইটা দিল না। একটা নতুন কপি প্রেজেন্ট করল। এদিকে আমি পেনসিলের লেখাগুলো পড়ে ফেলেছি। তাই আমার মনে হল, শুক্লা তথ্য গোপন করে জটিলতা তৈরি করতে চাইছে। বিডির অজান্তেই বিডির উদ্দেশ্যপূরণ হয়ে গেল। অবশ্য আমার নিজের আসল তথ্য জানা হয়ে গেছিল।"

- "বলতে পারো, শুক্লা ঠাকুর্দার নির্দেশ মানছিল তখন।" শাক্য বোনকে জড়িয়ে রেখেছে। 

- "বুঝেছি। আমি অবশ্য ছাপা বইতেও কিছু কথা পেলাম, রায়চৌধুরী বংশের ইতিহাস। সুদূর রাজপুতানা থেকে বাংলায় এসেছিলেন ওরা। প্রথমে এই বংশের পদবী ছিল দেও, সেটা বাংলা উচ্চারণে বদলে হয় দেব। ইংরেজ রাজত্বের শুরুতে ওঁরা জমিদারির সনদ আর চৌধুরী উপাধি পেয়েছিলেন, তার কিছুকাল পর বংশের কেউ রায়সাহেব সম্মান পান, সম্ভবত এই চার্চ হওয়ার সময়ে। তখন থেকেই দেও বা দেব এর বদলে পরিবারে রায়চৌধুরী পদবী ব্যবহার শুরু হয়, উপাধি আর জমিদার পরিচয় মিলিয়ে।" সিদ্ধার্থ থামে। 

- "এগুলো সবই সঠিক তথ্য। তবে এই কেসের সঙ্গে বোধহয়..... " শাক্যর বাবা সুশোভনবাবু বলে ওঠেন। 

- "আছে, যোগ আছে।" সিদ্ধার্থ হাসে, "বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি? শুক্লার দেওয়া বই থেকে জেনেছি, নলিনাক্ষ রায়চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল অভয় ধর। তাকে অন্য বিপ্লবীরা তো বটেই, কমলাক্ষ রায়চৌধুরীও খুঁজেছিলেন, পাননি। আজকের বিডি, বাসুদেব ধর, তারই বংশধর। তাই বিডি ঠাকুরাণীর চিতার মিথটা জানত। যেমন এখানকার সবাই জানে। সেজন্য পূর্ণিমার রাত বেছে নিয়েছিল পাচারের জন্য। সেদিন সবাই ঘরের ভিতরে থাকবে, কোনো সাক্ষী থাকবে না। সুখলালকে দলে রেখেছিল, তাকে দিয়ে সবাইকে আবার মিথটা মনে করিয়ে দিয়েছিল। গোল বাধল আমরা আসার পর। ও জঙ্গলেই এল আশীষকে হাতবদল করতে। আর জঙ্গলের প্রহরীরা সেই অতীতেও দেশকে বাঁচাতে জঙ্গলের আইন খাটিয়েছিল, আজও তাই।"

বিডির অতীতের সঙ্গে এই কেসের যোগ সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। তারপর ফিসফাস শুরু হয় নিজেদের মধ্যে। 

সিদ্ধার্থ বলে, "এবার বলি, আমরা দুজন, আমি আর ঋষি কিভাবে বাকিটা জানলাম।" 

- "আমাদের সবচেয়ে হেল্প করেছে সঞ্জয়। ও গোস্বামী পরিবার আর শাক্যর ঢালাও প্রশংসা করল। তার ঠিক পরেই শুক্লার পায়ের চোটে স্থানীয় লোকেরা ওর যেভাবে যত্ন করল, সেটাও আমরা নিজেদের চোখে দেখলাম। তাতে এরা কতদূর খারাপ কাজ করতে পারে, আমাদের সন্দেহ শুরু হল।" ঋষি বলে।

- "ঠিক তাই। কথায় কথায় সঞ্জয় ঠাকুরাণীর চিতার জনশ্রুতিও বলল, নিচের শহরের কাছে চার্চের কথাও বলল। সেগুলো জুড়ে আমি আরেকটা কাহিনীর আভাস পাচ্ছিলাম। ফলে পরদিন চার্চে গেলাম। ফাদার বারটনের সঙ্গে কথা বলে প্রথমবার বুঝলাম সেই রাতে কি হয়েছিল।" সিদ্ধার্থ থামে। 

- "আমরা দুজনেই খেয়াল করলাম," ঋষি বলছে, "সঞ্জয় এই এলাকা, জঙ্গল, পথঘাট বা রায়চৌধুরী বাড়ির সম্পর্কে যতটা জানে, আমাদের জানিয়ে দিচ্ছিল সমানে। তাপস সেখানে নিজে এই কেসের প্রাইমারি ইনভেস্টিগেটর হয়ে সেগুলো সবাই জানে বলে নিশ্চিন্ত হাবভাব দেখাচ্ছে। তাপস আর সঞ্জয়ের ইন্টিগ্রিটি যে আলাদা, চার্চে যাওয়ার দিনই ধরে ফেললাম আমরা। এবার জানতে হবে, তাপসের পিছনে কে কে আছে।"

- "তাই তোমরা ফাঁদ পাতলে।" এডিজির মুখে হাসি। 

- "হ্যাঁ, আমি দিল্লি থেকে আগের অফিসার সম্পর্কে খবর দিতে মেইল করলাম, তাপসের সামনে থেকে। পরদিন যখন হাতির হামলা নিয়ে সবার মাথাব্যথা, তখন বিডি থাকতে না পেরে আমাকে জিজ্ঞেস করে ফেলল, দিল্লি থেকে আমি কি উত্তর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দুজনের কাছে পুরো ছবিটাই পরিষ্কার হয়ে গেল। এরপর গতকাল যা যা ঘটেছে, সবাই জানেন।" 

- "হাতির হামলার সামনে সিদ্ধার্থ আর ঋষির ভূমিকা দেখেই আমি বুঝতে পারি, ওদের উপর ভরসা করতে পারি। গতকাল তাই সবকথাই খুলে বলি ওদের। তখনই আমাদের প্ল্যান হয়ে যায়।" শাক্য, ঋষি, সিদ্ধার্থ তিনজনের জন্য প্রথম হাততালি দিয়ে ওঠে উপস্থিত পুলিশের লোকজন, একে একে সবাই। 

সিদ্ধার্থ হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে জেঠুমণির দিকে ফেরে, "এবার তুমি বলো, এই কেসের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও, ইনভেস্টিগেশন চলাকালীন আর কি সামনে এসেছে।" সবাই আবার নড়েচড়ে বসে। 

[ ❤ অতীত আর বর্তমানের মধ্যে আর কোন যোগসূত্র বাকি? কি বলবেন জেঠুমণি? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে