Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 41

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৪১

❤🌹❤🌹❤🌹❤

হোটেলে নিজের ঘরে ঢুকেই ঋষি শ্রীতমাকে ফোন করে, "বুঝলে, গল্প তরতরিয়ে এগোচ্ছে। এখানে তো একজন শুক্লাকে ফোন করতে ঘরে গেছে।" 

ওপাশে শ্রীতমা হি হি হাসিতে গড়িয়ে পড়াটা ঋষির কানে মধু ঢালে। আরও বলে, "আর শোনো না, কাল সব মিটে যাবে মনে হচ্ছে। পরশু যদি আমরা কলকাতা রওনা দিই, তোমাকে জানিয়ে দেব। শাক্যদা নিশ্চয়ই আসবে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। তুমি সবাইকে পটিয়ে পাটিয়ে নিয়ে চলে আসবে কিন্তু। যাওয়ার আগে একবার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।"

- "চেষ্টা করব। শুক্লাও নিশ্চয়ই যেতে চাইবে।"

- "হ্যাঁ হ্যাঁ। সে আর বলতে। এখানে একজনকে দেখেই দুজনেরই অবস্থা বুঝতে পারছি। এরপর কলকাতায় গিয়ে দুজন কি করবে কে জানে। আমাদের আর কোনোদিন পয়সা খরচ করে সিনেমা থিয়েটার দেখতে হবে না।" ঋষি হো হো করে হাসে। 

শ্রীতমা বলে, "ধ্যাত, তুমি না !"

ওদিকেও এরকমই গদগদ ভাষ চলছে —
- "তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল সারাদিন। প্রথম দেখার পর থেকে তাই হচ্ছে। খালি মনে হচ্ছে, তোমাকে কত কথা বলার আছে। তখন তো বুঝতে পারছিলাম না কেন ওরকম ইরেজিস্টেবল লাগত।" সিদ্ধার্থ পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেই ফেলেছে শুক্লার কাছে। 

- "আমারও তো তোমার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করছিল। আমিই তো প্রথম তোমার সঙ্গে কথা বলতে গেছিলাম পরশুদিন।" শুক্লাও কিছু গোপন করে না। 

- "সে তো পরশু। কাল কয়েক মিনিটও কথা বলতে পারিনি। আজ তো দেখাই হয়নি। কবে যে দেখা হবে। তোমার সঙ্গে শান্তিতে গল্প করতে পারব !" সিদ্ধার্থর গলায় আবার বেদনার বাষ্প জমা হয়। 

- "জানি না। তোমার যত উৎসাহ তো চোর, ডাকাতের সঙ্গে দেখা করায়।" শুক্লার হালকা বকুনিটা মিষ্টি লাগে খুব। 

- "না গো, মোটেই সেটাতে উৎসাহ নেই। বরং ওদের দেখা পেলেই আর যাতে দেখতে না হয়, তাই গরাদের ওপারে পুরে দিতে চাই। শুধু তোমাকেই আমি বারবার দেখতে চাই।" সিদ্ধার্থও তাড়াতাড়ি ম্যানেজ করে। 

- "ভালই ফ্লার্ট করতে পারো, তাই না?" শুক্লাকে বন্ধুরা বুঝিয়েছে, একেবারে গলে যাবি না। 

- "মোটেই না। আমি একটুও ফ্লার্ট না। বরং মেয়েদের ভয় পাই।" সিদ্ধার্থ সঙ্গে সঙ্গে সেফজোনে চলে যায়। 

- "কেন? মেয়েরা বাঘ না ভাল্লুক? তোমাকে খেয়ে ফেলবে? আর ভয়ই বা কোথায় পাও? সোমা তো আজ সারাদিন গল্প করল, সোনাদা সবচেয়ে ভালবাসে, যা চায় তাই দেয় ওকে। ও নাকি সোনাদার প্রিন্সেস?"

- "সোমা তো আমার ছোট বোন। আমি অন্য মেয়েদের ভয় পাই বলেছি।" সিদ্ধার্থ বুঝতে পেরেছে, পুলিশকে উকিলি জেরা করার ক্ষমতা আছে শুক্লার। 

- "ওওওওও আ-চ-চ-ছা। সিদ্ধার্থ রায়ের বোন ছাড়া সব মেয়েরা বাঘ ভাল্লুক, এটাই বলতে চাও !"

- "মোটেই না। এসব কোথায় বললাম? বাকি মেয়েদের ব্যাপারে কিছু জানিই না, বলব আবার কি। শুধু এটা জানি, শাক্য গোস্বামীর বোন খুব ভাল।" সিদ্ধার্থ নিঃশব্দে হাসছে বলে ফেলে। খুব ইচ্ছে করছে এইসময় লজ্জায় লাল শুক্লার মুখটা দেখতে। 

যতই বন্ধুরা শিখিয়ে দিক, এই প্রশংসায় গলবে না, সত্যিই এমন হয়না। শুক্লার লজ্জারুণ গলা সিদ্ধার্থর কানে মধু ঢালে, "সত্যি কথা বলছ?"

- "সত্যি সত্যি সত্যি। কেন তুমি জানো না, বুঝতে পারোনি, তোমাকে আমার কতটা ভাল লাগে?"

শুক্লা চুপ, সিদ্ধার্থ আবার খোঁচায়, "কি হল? কিছু বলবে না?"

- "তুমি কাল চলে যাবে? আর আসবে না আমাদের বাড়িতে?" শুক্লার গলা ভারী হয়ে গেছে। 

- "কালও কিছু কাজ আছে। আমরা সম্ভবতঃ পরশু যাচ্ছি। তোমাকে কাল ফাইনাল বলব। পরশু সকালে যদি যাই, এ যাত্রায় আমার আর পাহাড়ের উপরে যাওয়া হবে না। তুমি পরশু সকালে সবাইকে নিয়ে একবার এসো। তবে আমি আবার আসব। আর তোমার সঙ্গে কলকাতায় গিয়েই দেখা করব। তোমাকে আমাদের বহরমপুরের বাড়িতে নিয়ে যাব, ঠাকুরাণীর মূর্তি দেখবে না তুমি?"

- "তোমার বাড়ির সবাই যদি কিছু মনে করেন আমি গেলে?"

- "কি আবার মনে করবে? আমরা তোমাদের বাড়িতে এলাম, তেমনই তুমিও যাবে। একলা না যাও, শাক্যকে নিয়ে, বাবা মাকে নিয়ে যাবে। আর আমি সোমাকে দিয়ে বৌদিকে দিয়ে সব বলব বাড়িতে। তোমার পড়াশোনা মিটলেই বলব।"

- "তোমার বাড়িতে সবাই, মানে আমাকে...." শুক্লা ইতস্ততঃ করছে। 

সিদ্ধার্থ বুঝতে পারে ওর টেনশন। একটু গাঢ় গলায় বলে, "তোমাকে আমি ভালোবাসি, এটাই সবচেয়ে বড় কথা শুক্লা। তার উপর তুমি এমন একটা মেয়ে, তোমাকে ভালো না বেসে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের বৌদিভাইকে যেমন জেঠুমণি আর জেঠিমণি ভালোবাসেন, সোমা ভালোবাসে, তোমাকেও সবাই ভালোবাসবে। আমার কথা মিলিয়ে নিও। তুমি পারবে না এদের আপন করে নিতে?"

- "পারব। তুমি পাশে থাকলে সব পারব।"

সেরকমই সুর তখন বাড়ির বড়দের সবার আসরে। শুক্লার ব্যাপারটা সবাই টের পেয়েছে, রাজশ্রী আর সোমা তো বটেই। ওকে সবার পছন্দও হয়েছে। এবার সোনাইয়ের সঙ্গে কথা বলে ও বাড়িতে প্রস্তাব পাঠানোর অপেক্ষা। 

জেঠিমণি বলেন, "ভগবান যখন সব জুটিয়ে দিয়েছেন, আমার সোনাইকে এবার আমি সংসারে বেঁধে ফেলব।"

- "সত্যিই ভগবানের দয়া। একশো বছর আগেও মদনমোহন আর ঠাকুরাণীর দয়ায় আমাদের পরিবারের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। আবার নাম বদলে নলিনাক্ষ রায়চৌধুরী আর সদরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে কমলাক্ষ রায়চৌধুরী যেমন লুকিয়ে দেশের সেবা চালিয়ে যেতে পেরেছেন, তেমনই একশো বছর পরেও আমার সোনাই তাঁদের দয়াতেই দেশের ক্ষতি আটকেছে। শুধু তাই নয়, দুই পরিবার এক হয়েছে, স্মরণ গোস্বামীর পরিবারের সঙ্গে যোগ তৈরি হয়েছে।"

- "এবার ঐ পরিবারের সঙ্গে রায়চৌধুরী পরিবারের আত্মীয়তাও গড়ে উঠতে চলেছে।" তথাগত খুশি হয়ে বলে। 

- "আমার মনে হয়, ঠাকুরাণীর চিতার মিথ বা লোককথা আসলে সত্যি। তাই ঠাকুরাণীর মূর্তি নিয়ে নলিনাক্ষ দাদু যখন জঙ্গলে ছিলেন, চিতারা সেখানে আসত। তারাই দাদুকে বাঁচিয়েছিল, অত্যাচারীদের শাস্তি দিয়েছিল। এবারও তারাই এসেছে জঙ্গলে, তাদের বংশধররা এসেছে আমাদের সোনাইয়ের শক্তি হয়ে।" রাজশ্রী বলে ওঠে। 

- "ঐজন্য বাড়ির যতটা ওপর ওপর ঘোরা সম্ভব, দেখেশুনে শৌর্য্যদা আর বৈদুর্য্যদা এই বাড়ির পুরোটা না হলেও, অন্ততঃ কিছুটা অংশ সারিয়ে এখানে একটা আজকাল যেমন সবাই চাইছেন, সেই স্টাইলে রাজকীয় হোটেল আর সাফারির ব্যবস্থা করবে বলছে। তিন চার পুরুষ ব্যবসা করে আসছে এই পরিবার। তাই পুরনো বাড়ি সংরক্ষণের এই আইডিয়া তারা কাজে লাগাতেও পারবে আশা করা যায়।" জেঠুমণি খুশি খুশি বলেন। 

- "তখন আমরা আবার এখানে আসব বাবা। সোনাদা আর শুক্লার বিয়ে হবে।ভাবলেই কি আনন্দ যে হচ্ছে।" সোমার আর আনন্দ ধরে না। 

[ ❤ আপাততঃ এই গল্প এখানে শেষ হল। খুব তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে সিদ্ধার্থ রায় আর শুক্লা গোস্বামীর সঙ্গে। 

❤ যারা এতদিন গল্পের সঙ্গে ছিলেন, সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের মতামত চাই কমেন্টে। ভবিষ্যতে লেখার ভুলভ্রান্তি সংশোধন করতে পারব তাহলে। আর আপনারা চাইলে সিদ্ধার্থ - ঋষি জুটি আবার ফিরবে নতুন গল্পে। ]