Read Jharapata 44 by Srabanti Ghosh in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

ঝরাপাতা - 44

ঝরাপাতা

পর্ব - ৪৪

❤💕❤💕❤💕❤

মনের স্বপ্ন ভেঙে যেতে বেশি সময় লাগে না রনির। সি *গা *রে *ট অর্ধেক পোড়ার আগেই দেখে মা বাবার সঙ্গে মিলি ফিরে যাচ্ছে। মানে নিচে নেমেই চলে গেল? রনি একটু পরে নামবে ভেবেছিল। ওর সঙ্গেই নিচে যেতে লজ্জা করছিল, বিশেষ করে ওর বাবা মা রয়েছে। 

ও অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে, তার মধ্যেই কানে টান পড়ল। চমকে উঠে উফ বলেই দেখে বনি। 

- "দাদা কি করিস না, ছাড়।" রনি পিছিয়ে আসে। 

- "মেয়েটাকে রেখে গেলাম, মাপ চেয়ে পটানোর জন্য। আমার সামনে তো কথাও শুরু করলে। তারপর কি হল যে ওরকম মুখচোখ করে নিচে গেল? পড়া আছে, আরেকদিন আসবে বলে চলেই গেল?" পিউ ঝাঁঝিয়ে ওঠে। 

- "বারবার সরি বলেছি। তাও রাগ।" রনি হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে পড়ে, "এক্ষুণি নিচে যাব ভাবছি, তার মধ্যে দেখি চলেই গেল। আর কত যে জ্বালাবে আমাকে।"

- "জ্বলছিস নাকি?" বনি ভাইয়ের বুক ডলে দেয়, "দেখিস বাবা, প্রেমের জ্বালা তো, নাকি অম্বল হয়েছে?"

- "ধ্যাত, তুই সর তো।" রনি দাদার হাত ঠেলে দেয়। 

- "আচ্ছা আচ্ছা তুই রাগ কমা। একদম কথা বলেনি?" বনি খাটে হেলান দেয়, পিউ কোমরে হাত দিয়েই দাঁড়িয়ে। 

- "কথা মানে আমাকে দোষারোপ। একটাও কথা শুনল না। শেষে না চেঁচামেচি করে, কে কি ভাববে, তাই চুপ করে গেলাম।"

- "তা রাগ করবে না? নিজে যখন রাগারাগি করো, অন্যদের কেমন লাগে বোঝো।" পিউ ধপাশ করে বরের পাশে বসে পড়ে। 

- "এবার তোমরা শুরু করো। এই কদিনে কতবার বলেছ এগুলো? কতবার সরি বলেছি? তাও হয়নি তো? ঠিক আছে, আমিও বললাম, বিয়ের পর হঠাৎ একটা কাণ্ড করেছিলাম, আমি রেগে যাই, চীৎকার চেঁচামেচি করি, এইজন্য এত কথা শুনছি তো এতগুলো মাস ধরে, শোনাও। আমার এখন শোনার দিন, শুনছি।"

- "আবার রাগ করছিস?" বনি স্পষ্টতই বিরক্ত। 

- "রাগ না, বরং প্রতিবাদ করা ছেড়ে দিলাম। যদি কখনো প্রমাণ করতে পারি, আমি মিলির খারাপ চাইনি, তখন যা বলার বলব।"

- "এইসব ছেঁদো মান অভিমান বাদ দাও তো, যথেষ্ট বয়স হয়েছে তোমার। একটু ম্যাচিওরড চিন্তাভাবনা করো। এখন কি করবে বলো। মেয়েটা কি সারাজীবন কাঁদবে?" পিউও একরকম বিরক্ত। 

রনি প্রথমে চুপ করে থাকে, মিলির কান্নাভেজা মুখটা মনে পড়ে, ইসস, সত্যিই মেয়েটা কত কষ্ট পাচ্ছে ! একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে, "আমি চেষ্টা করব কথা বলার। চেষ্টা করব ব্যাপারটা মেটানোর।"

- "আমি একবার কথা বলব ওর সঙ্গে?" রনির নরম গলায় পিউ একটু নরম হয়েছে। 

চট করে ভেবে নেয় রনি, মিলি সবকিছু ভুল বুঝেছে। সেইসব কথা শুনলে বাড়িতে আরও ঝামেলা বাড়বে, তাছাড়া মিলি কি আশা করতে পারে না, ও নিজে ক্ষমা চাইবে? ও মাথা নাড়ে, "না থাক, মিলি তোমাকে না বলতে পারবে না। আসলে রাগ থেকে যাবে। তার চেয়ে আমাকে যা ইচ্ছে বলুক, একসময় তো মাথা ঠান্ডা হবে।"

- "এটা একদম ঠিক ভেবেছিস। চালিয়ে যা, একদিন দেবীর দয়া হবে।" বনি ভাইয়ের পিঠ ঠুকে দেয়।

বনিরা চলে যেতেই রনি ফোন করে মিলিকে। যেমন ভেবেছিল, ফোন ধরে না মিলি। কয়েকবার ফোন করে না পেয়ে শেষে টেক্সট করে ও। ওপাশে কেউ মেসেজ দেখে না। ততক্ষণে রনি সব ভেবে নিয়েছে। মিলিকে ছেড়ে অন্য একজনকে ফোন করে। 

💟💕💟💕💟💕💟

পরদিন কলেজ থেকে বেরিয়ে মিলি দেখে রনি দাঁড়িয়ে আছে। এইটুকু বুঝতে পারছে, রনির কাছাকাছি গেলে নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে, কাল রাতেও লুকিয়ে কেঁদেছে। এদিকে এখন সবার সামনে কি করবে? 

এগিয়ে যাওয়ার আগেই দেখে ফোন বাজছে। রনির হাতেও ফোন। সবে রাগ হচ্ছিল, এখন এখানে নাটক না করলে হত না, রনি ফোনটা বুক পকেটে ভরছে। অথচ ওর ফোন এখনও বাজছে। অবাক হয়ে ফোনটা সামনে ধরে, দিদি ফোন করছে ! কোনো সমস্যা না হলে তো দিদি ফোন করবে না ! মিলি তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে। 

ওর গলা শুনেই লিলি বলে, "এ্যাই বোন, আমার সঙ্গে একটু দেখা করবি?"

- "কেন রে কি হয়েছে?" অঙ্কুর আছে, বন্ধুরা আছে, কেউ যেন টের না পায়, মিলি যথাসম্ভব দূরে সরে আসে। অন্যরাও মাথা ঘামায় না, ও রনির সঙ্গে যাবে ভেবে নেয়। যদিও পলাশ রক্তচক্ষুতে চেয়ে থাকে। 

- "তোর সঙ্গে একটু কথা ছিল। এভাবে ফোনে সব বলা যাবে না। একদিন আমাদের বাড়িতে আয়, কিংবা বাইরে দেখা কর না রে।"

- "তোর কি হয়েছে দিদি?" দিদির গলায় উদ্বেগ মিলির চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। 

- "আমার যা হওয়ার হবে, তুই একটু রনিদার সঙ্গে আয় না।" লিলির মুখে রনির নাম শুনে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে শান্ত রাখে মিলি। দিদিকে বলে, "আমি একাই আসব। পরশু রবিবার পারলে আসব। মাকে কিছু একটা বলে ম্যানেজ করি।"

- "তুই রনিদার সঙ্গে আয় না। তাহলে মা কিছু বলবে না।"

- "এটা তোকে কে বলল? রনিদা?" মিলির কেমন একটা সন্দেহ হয়। 

লিলি চটপট সামলে নেয়, "ওর সঙ্গেই তো এলি। ঠিক আছে। তুই একাই আয়, তাহলেই হবে।"

- "দিদি, যুগলদার সঙ্গে কি তোর কোনো ঝামেলা হচ্ছে?" আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে মিলি। 

- "ওর কথা একদম বলবি না। ওর নাম শুনলেও গা জ্বালা করে।"

- "মানেটা কি দিদি? সবাইকে বিপদে ফেলে তুই ঐভাবে যাকে বিয়ে করলি, তার কথা বলব না?"

- "অনেক কথা আছে রে। তুই আয়, সব বলব বলেই ডাকছি। আসবি তো?" লিলির গলায় আকুতি। 

- "হুঁ, রবিবার আসব দাঁড়া।"

ফোনটা ব্যাগে ঢোকানোর আগেই রনি ওর পাশে বাইকটা থামায়, "ওঠো, চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি।" মিলি পিছনে তাকিয়ে দেখে, বন্ধুরা কেউ নেই। রাস্তা পার হয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে চলে গেছে। নিশ্চিন্ত হয়ে ও নিজেও রাস্তা পার হতে ঘুরে দাঁড়ায়। 

- "এ্যাই, মিলি, প্লিজ, কি ছেলেমানুষি হচ্ছে? বাইকে ওঠো। আমার কথাটা শোনো।" রনি বাইক স্ট্যান্ড করে ছুটে আসে। ততক্ষণে সিগনাল হয়ে গেছে, মিলি রাস্তার ওপারে যেতে পা বাড়িয়েছে। রনি একবার ভাবে ওর সঙ্গেই যাবে কিনা। কিন্তু বাইক লক করে যেতে যেতে মিলি রাস্তা পেরিয়ে যাবে। আর ওকে দেখলে নিশ্চয়ই দাঁড়াবে না, যাহোক কিছুতে উঠে পড়বে। 

বাড়ি এসে মিলি ফোন করে অঙ্কুরকে। ওকে বলে, আর কখনো যেন এভাবে আগে আগে চলে না আসে। এখন থেকে ওর সঙ্গেই বাসে উঠবে। অঙ্কুর অবাক, রনিদা তো এসেছিল, তাও ! 

💟💕💟💕💟💕💟💕

যা কিছুই ঘটে যাক, সম্পূর্ণ মন দিতে হবে পড়ায়, এটা মিলি ঠিক করেই নিয়েছে। ওর পড়াশোনা, ওর রেজাল্ট দিয়ে ও একটা উত্তর দিতে পারবে সবাইকে, প্রিন্সিপাল স্যারকেও। কিন্তু সত্যিই রবিবার কি বলে বেরোবে, ভেবে পায় না। কলেজের দিনে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ অঙ্কুর ওকে ক্লাসে না দেখলেই খোঁজ করবে। এদিকে মাকেও মিথ্যে বলে দিদির ব্যাপারে জড়ানো কতদূর উচিত? কি বলবে দিদি? যুগলদা খুব খারাপ, আর রনিদা খুব ভালো? তাই দিদি রনিদাকে বিয়ে করবে ঠিক করেছে? মিলিকে সরে যেতে বলবে, ওদের মাঝখান থেকে? 

এইখানেই মিলির হিসেব মিলছে না, "আমি কোনোদিন ওদের মাঝখানে ছিলামই না। আমার সঙ্গে বিয়ে রনিদা মানেনি, সবাই জানে। আজ রনিদা দিদিকে বিয়ে করলে দু বাড়ির সবাই মেনে নেবে। তাহলে আমাকে রনিদা কেন মাঝখানে ঢোকালো? আমি বুঝিইনি ওকে কখন কখন ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ওর নিজের কি উপকার হল আমি ভালোবাসি জেনে, ও আমাকে ভালোবাসে বলে? নাহ, যেভাবেই হোক, দিদির সঙ্গে দেখা করতেই হবে।"

মাকে মিলি বলে, ওর কলেজের এক বান্ধবীর জন্মদিন। শুধু ওকে আর আরেকটি মেয়েকে নিমন্ত্রণ করেছে, রবিবার দুপুরে যাবে, খাবে, বিকেলের আগেই চলে আসবে। গোপা যেতে মত দেয়। তেমনি মিলি নিশ্চিন্ত, যেহেতু অঙ্কুরের নিমন্ত্রণ নেই, ওকে নিমন্ত্রণ বাড়ির আশেপাশে যেতে বলবে না কেউ। 

💟💕💟💕💟💕💟

রবিবার দুপুর বারোটায় যে রেস্টুরেন্টে দিদি ডেকেছে, তার সামনে পৌঁছেই মিলির একটা প্রবল অস্বস্তি হয়, কখনো এখানে আসেনি, কিন্তু সামনের গেটটা যেন চেনা চেনা। দিদিকে ফোন করে, লিলি বলে ও ভিতরে, অপেক্ষা করছে। 

ভেতরে ঢুকে বিরাট ঘর, বেশ কিছু লোকজন, দূরের একটা টেবিল থেকে হাত তুলেছে লিলি, মিলি এগিয়ে গিয়ে বসে, "দিদি, আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। চটপট বল।"

- "বলছি বলছি। তুই রনিদার সঙ্গে ঝগড়া করছিস কেন?"

- "এটা বলতে ডেকেছিস? যা বলতে ডেকেছিস সেটা বল। না আগে যুগলদার ব্যাপারটা কি বল।"

- "সবই একই কথা বোন। বেশ, তুই যখন চাইছিস, যুগলের কথাই আগে বলছি। যুগলের ফ্যামিলি আমাকে তো মানেইনি, এখন যুগলও বলছে, আমার জন্য ওর সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।"

- "বাহ, ভালো ছেলে বেছেছিস। অবশ্য ছেলেরা এরকমই হয়। তা এখন যুগলদা কি চায়, তুইই বা কি চাস?"

- "যুগলকে ওর বাড়ির লোকেরা ফিরিয়ে নেবে বলেছে। আমি তো আর বাড়িতে....। যাক গে, ছাড়, রনিদা বলছে, এই তো রনিদা এসে গেছে। শোন না, তোরা কথা বল, সব মিটিয়ে নে।"

রনিকে দেখেই মিলি সোজা উঠে দাঁড়ায়, "তুই আবার আমাকে এভাবে বোকা বানালি দিদি? এজন্যই আমার মন বারবার বলছিল, মাকে মিথ্যে বলে তোর সঙ্গে দেখা করা ঠিক নয়। শোন, তোরা যা ইচ্ছে কর, আমাকে ডাকিস না। আর কখনো ডাকিস না।" সামনের দিকেই ছিল মিলি, রনির পাশ কাটিয়ে প্রায় ছুটে বেরিয়ে আসে। লিলি একবার ওর নাম ধরে ডাকতেই রনি বারণ করে, "ডেকে লাভ নেই। ও দাঁড়াবে না। কিছুতেই আমার সঙ্গে কথা বলবে না। ভেবেছিলাম তোমার সামনে কথা হলে সবটা বোঝাতে পারব।" রনি উলটে মিলির চেয়ারটাতেই বসে পড়ে। 


চলবে