Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 14

হাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৪

পঞ্চপাণ্ডব ও দুর্যোধনাদির অস্ত্রগুরু হিসাবে কৃপাচার্য ও দ্রোণাচার্যের নিয়োগ

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

পঞ্চপাণ্ডব ও দুর্যোধনাদির অস্ত্রগুরু হিসাবে কৃপাচার্য ও দ্রোণাচার্যের নিয়োগ

 

পরীক্ষিতপুত্র জনমেজয়ের অনুরোধে  বৈশম্পায়ন যুধিষ্ঠিরাদি পঞ্চপাণ্ডব ও দুর্যোধনাদি কৌরব ভ্রাতাদের অস্ত্রশিক্ষা ও তাদের অস্ত্রগুরু কৃপাচার্য ও দ্রোণাচার্যের বিষয়ে বলতে শুরু করলেন -

মহর্ষি গৌতমের শরদ্বান নামে এক মহা ধনুর্বিদ শিষ্য ছিলেন কিন্তু বেদপাঠে তার কোনো মনোযোগ ছিল না। শরদ্বানের তপস্যায় ভয় পেয়ে ইন্দ্র জানপদী নামে এক অপ্সরা পাঠালেন। তাকে দেখে শরদ্বানের হাত থেকে ধনুর্বাণ পড়ে গেল এবং কামার্ত হওয়ায় তার বীর্যপাত হোলো। সেই বীর্য একটি শরগাছের উপর পড়ে দু ভাগ হোয়ে গিয়ে তা থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করলো। রাজা শান্তনু তাদের দেখতে পেয়ে গৃহে এনে নিজের সন্তানের মতো পালন করলেন এবং বালকের নাম কৃপ ও বালিকার নাম কৃপী রাখলেন। শরদ্বান জানতে পেরে রাজভবনে এলেন এবং কৃপকে উপয়ুক্ত শিক্ষা দিয়ে ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী করলেন। যুধিষ্ঠির দুর্যোধন ও সমস্তা রাজপুত্রগণ এই কৃপাচার্যের কাছে অস্ত্রবিদ্যা শিখতে লাগলেন।

একদিন স্নানকালে ঘৃতাচী অপ্সরাকে দেখে ভরদ্বাজ ঋষির শুক্রপাত হয়। সেই শুক্র তিনি কলসের মধ্যে রেখে দিলে তা থেকে দ্রোণ জন্মগ্রহণ করেন। অগ্নিবেশ্য মুনি দ্রোণকে অস্ত্রশিক্ষা দেন। পাঞ্চালরাজ ছিলেন ভরদ্বাজের সখা, তাঁর পুত্র দ্রুপদ দ্রোণের সঙ্গে খেলা করতেন। পিতার আদেশে দ্রোণ কৃপীকে বিবাহ করলেন। তাঁদের একটি পুত্র হয়, সে ভূমিষ্ঠ হয়েই ঘোড়ার মতো চিৎকার করেছিল বলে তার নাম রাখা হোলো অশ্বত্থামা।

ভরদ্বাজের মৃত্যুর পর দ্রোণ পিতার আশ্রমে থেকে তপস্যা ও ধনুর্বিদ্যা চর্চা করতে লাগলেন। একদিন তিনি শুনলেন যে সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্রবিদ ভৃগুনন্দন পরশুরাম তাঁর সমস্ত ধন ব্রাহ্মণদের দিয়ে দিচ্ছেন। দ্রোণ মহেন্দ্র পর্বতে পরশুরামের কাছে গিয়ে প্রণাম করে ধন চাইলেন। পরশুরাম বললেন, আমার কাছে সোনা-রূপা, ধন যা ছিল সবই ব্রাহ্মণদের দিয়েছি, সমগ্র পৃথিবী কশ্যপকে দিয়েছি, এখন কেবল আমার শরীর আর অস্ত্রশস্ত্র অবশিষ্ট আছে, কি চাও বলো। দ্রোণ বললেন, আপনি সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র আমাকে দিন এবং তাদের প্রয়োগ ও প্রত্যাহার বিধি আমাকে শেখান। পরশুরাম দ্রোণের প্রার্থনা পূরণ করলেন। দ্রোণ কৃতার্থ হয়ে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কাছে গেলেন, কিন্তু ঐশ্বর্যগর্বে দ্রুপদ তার বাল্যসখার অপমান করলেন। দ্রোণ ভীষণ ক্রোধে অভিভূত হয়ে হস্তিনাপুরে গিয়ে কৃপাচার্যের গৃহে গোপনে বাস করতে লাগলেন।

একদিন রাজকুমারগণ নগরের বাইরে এসে ছোটো ছোটো কাঠের বল নিয়ে খেলছিলেন। হঠাৎ তাদের বল কূপের মধ্যে পড়ে গেলো, অনেক চেষ্টা করেও তারা তুলতে পারলেন না। একজন পক্ককেশ ব্রাহ্মণ নিকটে বসে হোম করছেন দেখে তারা তাকে ঘিরে দাঁড়ালেন। এই ব্রাহ্মণ ছিলেন দ্রোণ। তিনি সহাস্যে বললেন, ধিক! তোমাদের ক্ষত্ৰবল আর অস্ত্রশিক্ষা, ভরতবংশে জন্মে একটা বল তুলতে পারলে না! তোমাদের বল আমি এই কাশ (এক রকম সরু লম্বা ঘাষ) দিয়ে তুলে দেবো, কিন্তু আমাকে খাওয়াতে হবে। যুধিষ্ঠির বললেন, কৃপাচার্য অনুমতি দিলে আপনি প্রত্যহ আহার পাবেন। দ্রোণ সেই কূপে একটি কাশ ফেলে বলটা বিদ্ধ করলেন, তার পর আর একটি কাশ দিয়ে প্রথম কাশটির পিছনে বিদ্ধ করলেন। এইভাবে পর পর কাশ ফেলে উপরের কাশ ধরে বলটা টেনে তুললেন। রাজকুমারগণ পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে দ্রোণ বললেন, তোমরা আমাকে যেমন দেখলে তা ভীষ্মকে জানাও।

রাজকুমারগণের কাছে বিবরণ শুনে ভীষ্ম বুঝলেন যে এই ব্রাহ্মণ দ্রোণ এবং তিনিই রাজকুমারদের অস্ত্রগুরু হবার যোগ্য। ভীষ্ম তখনই দ্রোণকে সসম্মানে ডেকে আনলেন। দ্রোণ বললেন, পাঞ্চালরাজপুত্র দ্রুপদ আর আমি মহর্ষি অগ্নিবেশ্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছিলাম, বাল্যকাল থেকে দ্রুপদ আমার সখা ছিলেন। শিক্ষা শেষ হলে চ’লে যাবার সময় তিনি আমাকে বলেছিলেন, দ্রোণ, আমি পিতার প্রিয়তম পুত্র, আমি পাঞ্চালরাজ্যে অভিষিক্ত হলে আমার রাজ্য তোমারও হবে। তার এই কথা আমি মনে রেখেছিলাম। তার পর আমি পিতার আদেশে এবং পুত্রকামনায় বিবাহ করি। আমার পত্নী ব্রতপরায়ণা এবং সব কাজে আমার সহায়। আমার পুত্র অশ্বত্থামা অতিশয় তেজস্বী। একদিন অশ্বত্থামা ধনিপুত্রদের দুধ খেতে দেখে আমার কাছে এসে দুধ খাওয়ার জন্য কাঁদতে লাগল। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও কোথাও ধর্মসঙ্গত উপায়ে দুগ্ধবতী গাভী পেলাম না। এদিকে অশ্বত্থামার সঙ্গী বালকরা তাকে পিটুলি গোলা খেতে দিলে, দুধ খাচ্ছি মনে করে সে আনন্দে নাচতে লাগল। বালকরা সেই দৃশ্য দেখে আমাকে উপহাস করলো। আমি পূর্বের বন্ধুত্ব স্মরণ করে স্ত্রীপুত্র সহ দ্রুপদ রাজার কাছে গেলাম। আমি তাকে সখা বলে সম্ভাষণ করতে গেলে দ্রুপদ বললেন, ব্রাহ্মণ, তোমার দুর্বুদ্ধি হয়েছে তাই আমাকে সখা বলছো, সমানে সমানেই বন্ধুত্ব হয়। ব্রাহ্মণ আর অব্রাহ্মণ, রথী আর অরথী, রাজা আর দরিদ্র — এদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় না। তোমাকে এক রাত্রির উপযুক্ত ভোজন দিচ্ছি নিয়ে চলে যাও।

দ্রোণ বললেন, এই অপমানের পর আমি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা করে কুরুদেশে চলে এলাম। মহামতি ভীষ্ম, এখন বলুন আপনি আমাকে কি জন্য ডেকেছেন? ভীষ্ম বললেন, আপনি রাজকুমারদের অস্ত্রশিক্ষা দিন, এখানে সসম্মানে বাস করে সমস্ত ঐশ্বর্য ভোগ করুন। কৌরবগণ আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। দ্রোণ বললেন, কুমারদের শিক্ষার ভার আমি নিলে কৃপাচার্য দুঃখিত হবেন, অতএব আমাকে কিছু ধন দিন, আমি সন্তুষ্ট হয়ে চলে যাই। ভীষ্ম উত্তর দিলেন, কৃপাচার্যও থাকবেন, আমরা তার যথোচিত সম্মান ও ভরণপোষণ করব। আপনি আমার পৌত্রদের অস্ত্রগুরু হবেন।

ভীষ্ম একটি সুন্দর ধনদৌলত ও খাদ্যদ্রব্যে পূর্ণ গৃহে দ্রোণের বাসের ব্যবস্থা করলেন এবং রাজকুমারদের অস্ত্রশিক্ষার ভার তার হাতে দিলেন। বৃষ্ণি ও অন্ধক বংশীয় এবং নানা দেশের রাজপুত্রগণ দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষার জন্য এলেন, কর্ণও তাঁকে গুরুরূপে বরণ করলেন। সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্জুনই দ্রোণাচার্যের সর্বাপেক্ষা স্নেহের পাত্র হলেন।

নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য দ্রোণের কাছে শিক্ষার জন্য এলেন, কিন্তু নীচজাতি বলে দ্রোণাচার্য তাকে ফিরিয়ে দিলেন। একলব্য দ্রোণের পায়ে মাথা রেখে প্রণাম করে বনে চলে গেলেন এবং মাটি দিয়ে দ্রোণের একটি মূর্তি তৈরী কোরে তার সামনে নিজের চেষ্টায় অস্ত্রবিদ্যা অভ্যাস করতে লাগলেন।

একদিন কুরু ও পাণ্ডবগণ দ্রোণাচার্যের সঙ্গে মৃগয়ায় গেলেন। তাদের এক অনুচর মৃগয়ার উপকরণ এবং কুকুর নিয়ে পিছনে পিছনে গেলো। কুকুর ঘুরতে ঘুরতে একলব্যের কাছে উপস্থিত হল এবং তার কৃষ্ণ বর্ণ, মলিন দেহ, হরিণের চর্ম পরা ও মাথায় জটা দেখে চিৎকার করতে লাগল। একলব্য একসঙ্গে সাতটি বাণ ছুঁড়ে কুকুরের মুখ বন্ধ কোরে দিলে, তাই নিয়ে কুকুর রাজকুমারদের কাছে গেল। তারা বিস্মিত হয়ে একলব্যের কাছে এলেন এবং তাকে দেখার পর তার কথা দ্রোণাচার্যকে জানালেন। অর্জুন দ্রোণকে গোপনে বললেন, আপনি আমাকে বলেছিলেন যে আপনার কোনও শিষ্য আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে না, কিন্তু একলব্য আমাকে চেয়ে সেরা কিভাবে হোলো? দ্রোণাচার্য অর্জুনকে সঙ্গে নিয়ে একলব্যের কাছে গেলে একলব্য ভূমিষ্ঠ হয়ে দ্রোণাচার্যকে প্রণাম করে হাতজোড় কোরে দাঁড়িয়ে রইলেন। দ্রোণাচার্য বললেন, বীর, তুমি যদি আমার শিষ্যই হও তবে গুরুদক্ষিণা দাও। একলব্য আনন্দিত হয়ে বললেন, কি দেব আজ্ঞা করুন, গুরুকে অদেয় আমার কিছুই নেই। দ্রোণাচার্য বললেন, তোমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ আমাকে দাও। এই দারুণ বাক্য শুনে একলব্য খুশিমুখে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ কেটে করে দ্রোণাচার্যকে দিলেন। তার পর একলব্যা অন্য অঙ্গুলি দিয়ে তীর ছোঁড়ার চেষ্টা করে দেখলেন, কিন্তু তীর আগের মতো দ্রুতগামী হল না। তাই দেখে অর্জুন সন্তুষ্ট হোলেন।

দ্রোণের শিক্ষার ফলে ভীম ও দুর্যোধন গদাযুদ্ধে, অশ্বত্থামা গুপ্ত অস্ত্রের প্রয়োগে, নকুল-সহদেব অসিযুদ্ধে, যুধিষ্ঠির রথচালনায়, এবং অর্জুন বুদ্ধি বল উৎসাহ ও সর্বাস্ত্রের প্রয়োগে শ্রেষ্ঠ হলেন। দুর্যোধন ও তার ভ্রাতাগণ ভীম ও অর্জুনের শ্রেষ্ঠতা সইতে পারতেন না।

একদিন দ্রোণাচার্য একটি কৃত্রিম পাখী গাছের উপর রেখে কুমারদের বললেন, তোমরা ওই পাখীকে লক্ষ্য করে স্থির হয়ে থাক, যাকে বলব সে শরাঘাতে ওর মুণ্ডচ্ছেদ করে ভূমিতে ফেলবে। সকলে শরসন্ধান করলে দ্রোণাচার্য যুধিষ্ঠিরকে বললেন, তুমি গাছের উপর ওই পাখি, এই গাছ, আমাকে আর তোমার ভ্রাতাদের দেখছ? যুধিষ্ঠির বললেন যে তিনি সবই দেখতে পাচ্ছেন। দ্রোণাচার্য বিরক্ত হয়ে বললেন, সরে যাও, তুমি এই লক্ষ্যভেদ করতে পারবে না। দুর্যোধন ভীম প্রভৃতিও বললেন, আমরা সবই দেখছি। দ্রোণাচার্য তাদেরও সরিয়ে দিলেন। তার পর অর্জুনকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, আমি কেবল পাখীটাকে দেখছি। দ্রোণাচার্য বললেন, আবার বলো। অর্জুন বললেন, কেবল পাখীর মাথা দেখছি। আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে দ্রোণ বললেন, এইবারে শর ত্যাগ কর। তৎক্ষণাৎ অর্জুনের ক্ষুরধার শরে পাখীর ছিন্ন মুণ্ড ভূমিতে পড়ে গেল।

একদিন শিষ্যদের সঙ্গে দ্রোণ গঙ্গায় স্নান করতে গেলেন। তিনি জলে নামলে একটা কুমীর তাঁর কোমরে কামড়ে ধরলে, দ্রোণাচার্য শিষ্যদের বললেন, তোমরা শীঘ্র আমাকে রক্ষা কর। তার বলার সঙ্গে সঙ্গেই অর্জুন পাঁচটি তীর ছুঁড়ে কুমীরকে খণ্ড খণ্ড করলেন, অন্য শিষ্যরা বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলেন। দ্রোণাচার্য খুশী হোয়ে অর্জুনকে ব্রহ্মশির নামক অস্ত্র দান করে বললেন, এই অস্ত্র মানুষের প্রতি প্রয়োগ করো না, যদি অন্য শত্রু তোমাকে আক্রমণ করে, তবেই প্রয়োগ করবে।

______________

(ক্রমশ)