Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 28

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-২৮

অর্জুনের দ্বারা খাণ্ডব বন দহন ও ময় দানব কর্তৃক যুধিষ্ঠিরের সভাগৃহ নির্মাণ
 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

অর্জুনের দ্বারা খাণ্ডব বন দহন ও ময় দানব কর্তৃক যুধিষ্ঠিরের সভাগৃহ নির্মাণ

একদিন কৃষ্ণ ও অর্জুন বন্ধুদের এবং তাদের স্ত্রীদেরকে সঙ্গে নিয়ে যমুনায় জলবিহার করতে গেলেন। তারা যমুনার তীরে নানা জীব-জন্তুতে পূর্ণ মনোহর খাণ্ডব বন দেখে সেখানে বিহার করতে এলেন এবং সকলে পান ভোজন নৃত্য গীত ও বিবিধ খেলাধূলা করতে থাকলেন। তার পর কৃষ্ণ ও অর্জুন কাছেই এক মনোরম স্থানে গিয়ে বসে নানা বিষয় আলোচনা করতে লাগলেন। এমন সময়ে সেখানে এক ব্রাহ্মণ এলেন, তার তপ্তকাঞ্চনতুল্য বিশাল দেহ, দাড়ি পিঙ্গলবর্ণ, মাথায় জটা শোভিত। তিনি বললেন, আমি বহুভোজী ব্রাহ্মণ।  হে কৃষ্ণ ও অর্জুন, তোমরা আমাকে প্রচুর ভোজন করিয়ে তৃপ্ত কর। আমি অগ্নি, অন্ন চাই না, এই খাণ্ডব বন দগ্ধ করতে চাই। তক্ষক নাগ সপরিবারে এখানে থাকে, তার বন্ধু ইন্দ্র এই বন রক্ষা করেন, সেজন্য আমি দগ্ধ করতে পারি না। তোমরা শ্রেষ্ঠ অস্ত্রবিদ, তোমরা সহায় হলে আমি খাণ্ডব বন দহন কোরে ভোজন করতে পারবো।

কৃষ্ণ ও অর্জুন অগ্নিকে প্রশ্ন করলেন, আপনি খাণ্ডব বন দহন কোরে ভোজন করতে চাইছেন কেনো? উত্তরে অগ্নি বললেন — শ্বেতকি নামে এক রাজা বিরামহীন ভাবে যজ্ঞ করতেন। তার পুরোহিতদের চোখ যজ্ঞের ধোঁয়ায় পীড়িত হওয়ায়, তারা আর যজ্ঞ করতে চাইলেন না। তখন রাজা মহাদেবের তপস্যা করতে লাগলেন। মহাদেব বর দিতে এলে শ্বেতকি বললেন, আপনি আমার যজ্ঞে পৌরোহিত্য করুন। মহাদেব রাজি হলেন না। পরিশেষে মহাদেবের আদেশে দুর্বাসা মুনি শ্বেতকির যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন। সেই যজ্ঞে আমি বারো বছর ঘৃতপান করেছিলাম, তার ফলে আমার অরুচি রোগ হোলো। আমি অরুচি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় জানার জন্য ব্রহ্মার কাছে গেলে ব্রহ্মা বললেন, তুমি খাণ্ডব বন দগ্ধ করে সেখানকার সমস্ত জীব-জন্তুর মেদ ভক্ষণ করো, তা হলেই তোমার রোগমুক্তি হবে। ব্রহ্মার উপদেশে আমি অগ্নি খাণ্ডব বন দগ্ধ করতে গেলে, হাজার হাজার হস্তী শূঁড় দিয়ে এবং বিশাল নাগগণ মুখ দিয়ে জল ছিটিয়ে আগুন নিভিয়ে দিয়েছিল। সাত বার চেষ্টা করে বিফল হয়ে আমি আবার ব্রহ্মার কাছে গেলাম। ব্রহ্মা বললেন, নর ও নারায়ণ অর্জুন ও কৃষ্ণরূপে জন্মেছেন এবং এখন খাণ্ডব বনেই আছেন, তারা তোমার সহায় হলে দেবতারাও বাধা দিতে পারবেন না।

অর্জুন অগ্নিকে বললেন, আমার কাছে দিব্য বাণ অনেক আছে কিন্তু তার উপযুক্ত ধনু এখন সঙ্গে নেই, কৃষ্ণও নিরস্ত্র। আপনি এমন উপায় বলুন যাতে ইন্দ্র বৃষ্টিপাত করালে আমি তাকে নিবারণ করতে পারি। তখন অগ্নিদেব বরুণকে স্মরণ করলেন এবং বরুণ উপস্থিত হোলে তার কাছ থেকে গাণ্ডীব ধনু, অক্ষয় তূণীর এবং কপিধ্বজ রথ চেয়ে নিয়ে অর্জুনকে দিলেন এবং কৃষ্ণকে একটি চক্র ও কৌমোদকী নামক গদা দিলেন। কৃষ্ণ ও অর্জুন রথে আরোহণ করলে অগ্নি খাণ্ডব বন দগ্ধ করতে লাগলেন। পশু পাখী চিৎকার করে পালাতে গেলো, কিন্তু অর্জুনের বাণে বিদ্ধ হয়ে অগ্নিতে পড়ল, কোনও প্রাণী নিস্তার পেলে না। অগ্নির আকাশস্পর্শী শিখা দেখে দেবতারা উদ্বিগ্ন হলেন। ইন্দ্রের আদেশে মেঘ থেকে প্রচুর জলবর্ষণ হোতে লাগলো, কিন্তু আগুনের তেজে তা আকাশেই শুকিয়ে গেলো। এই সময়ে নাগরাজ তক্ষক কুরুক্ষেত্রে ছিলেন। তক্ষকপত্নী তার পুত্র অশ্বসেনকে নিয়ে বাইরে আসবার চেষ্টা করলে অর্জুন তাঁর শিরচ্ছেদ করলেন। তখন ইন্দ্র জোরে বাতাস বইয়ে অর্জুনকে মোহগ্রস্ত করলেন, সেই সুযোগে অশ্বসেন মুক্ত হোলো। ইন্দ্র তাকে মোহগ্রস্ত করেছেন এই কারণে অর্জুন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বাণ দিয়ে আকাশ ঢেকে ফেললেন। ইন্দ্র ও অর্জুনের তুমুল যুদ্ধ হোতে লাগল। অসুর, গন্ধর্ব, যক্ষ, রাক্ষস প্রভৃতি কৃষ্ণ ও অর্জুনকে হারাবার জন্য উপস্থিত হোলো, কিন্তু অর্জুনের শরাঘাতে এবং কৃষ্ণের চক্রে আহত হয়ে সকলেই পালিয়ে গেলো। ইন্দ্র বজ্র নিয়ে এবং অন্যান্য দেবগণ নিজ নিজ অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করলেন, কিন্তু কৃষ্ণ ও অর্জুনের অস্ত্রাঘাতে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হল। অবশেষে ইন্দ্র মন্দর পর্বতের একটি বিশাল শৃঙ্গ উপড়ে নিয়ে অর্জুনের প্রতি নিক্ষেপ করলেন। অর্জুনের বাণে পর্বতশৃঙ্গ সহস্রখণ্ড হয়ে খাণ্ডববনে পড়ায় অসংখ্য প্রাণী মারা গেলো।

দেবগণের পরাজয় দেখে ইন্দ্র আনন্দিত হয়ে কৃষ্ণ ও অর্জুনের প্রশংসা করতে লাগলেন। তখন দৈববাণী হল - বাসব, তোমার সখা তক্ষক দগ্ধ হননি, তিনি কুরুক্ষেত্রে আছেন। অর্জুন আর কৃষ্ণকে কেউ যুদ্ধে জয় করতে পারে না, তারা পূর্বে নর ও নারায়ণ নামক দেবতা ছিলেন। দৈববাণী শুনে ইন্দ্রাদি দেবগণ সুরলোকে চলে গেলেন এবং অগ্নি অবাধে খাণ্ডব বন দগ্ধ করে প্রাণিগণের মাংস রুধির চর্বি খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন। এই সময়ে ময় নামক এক দানব তক্ষকের আবাস থেকে বেগে পালাচ্ছে দেখে অগ্নি তাকে খেতে চাইলেন। কৃষ্ণ তাকে মারবার জন্য চক্র উদ্যত করলেন, কিন্তু ময়ের কাতর প্রার্থনায় এবং অর্জুনের অনুরোধে নিরস্ত হলেন। অগ্নি পনেরো দিন ধরে খাণ্ডব বন দগ্ধ করলেন। তক্ষকপুত্র অশ্বসেন, নমুচির ভাই ময় দানব এবং চারটি পক্ষী, এই ছটি প্রাণী ছাড়া কেউ জীবিত রইল না।

মন্দপাল নামে এক তপস্বীর সন্তান ছিল না। তিনি মৃত্যুর পর পিতৃলোকে স্থান পেলেন না, দেবগণ তাঁকে বললেন, আপনার পিতৃঋণ শোধ হয়নি, আপনি পুত্র উৎপাদন করে তবে এখানে আসুন। শীঘ্র বহু সন্তান লাভের জন্য মন্দপাল পাখী হয়ে জারিতা নাম্নী পাখীর সঙ্গে মিলিত হলেন। জারিতার গর্ভে চারটি ব্রহ্মবাদী পুত্র উৎপন্ন হোলো। খাণ্ডব দহনের সময় তারা ডিম্বের মধ্যেই ছিল, মন্দপালের প্রার্থনায় অগ্নি তাদের মারলেন না। মন্দপাল তার চার পুত্রকে নিয়ে জারিতার সঙ্গে অন্যত্র চলে গেলেন।

তার পর ইন্দ্র দেবগণের সঙ্গে এসে কৃষ্ণ ও অর্জুনকে বললেন, তোমাদের আশ্চর্য কর্ম দেখে আমি খুশী হয়েছি, তোমরা বর চাও। অর্জুন ইন্দ্রের সমস্ত অস্ত্র চাইলেন। ইন্দ্র বললেন, মহাদেব যখন তোমার উপর প্রসন্ন হবেন, তখন তোমাকে সকল অস্ত্র দেবো। কৃষ্ণ বর চাইলেন, অর্জুনের সঙ্গে যেন তার চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব থাকে। ইন্দ্র বর দিয়ে সদলে চলে গেলেন। অগ্নি কৃষ্ণ ও অর্জুনকে বললেন, আমি পরিতৃপ্ত হয়েছি, এখন তোমরা যেখানে ইচ্ছা যেতে পারো। তখন কৃষ্ণ অর্জুন ও ময় দানব তিনজনে রমণীয় নদীর তীরে গিয়ে বসলেন।

কৃষ্ণ ও অর্জুন নদীতীরে উপবিষ্ট হোলে ময় দানব হাত জোড় কোরে সবিনয়ে অর্জুনকে বললেন, আপনি কৃষ্ণের ক্রোধ আর অগ্নির দহন থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। আপনার উপকার আমি কি ভাবে করবো বলুন। অর্জুন উত্তর দিলেন, তোমার কর্তব্য সবই তুমি করেছো, তোমার মঙ্গল হোক, তোমার আর আমার মধ্যে যেন সর্বদা সুসম্পর্ক থাকে। এখন তুমি যেতে পারো। ময় বললেন, আমি দানবগণের বিশ্বকর্মা ও মহাশিল্পী, আপনাকে খুশী করবার জন্য আমি কিছু করতে চাই। অর্জুন বললেন, প্রাণরক্ষার জন্য তুমি কৃতজ্ঞ হয়েছো, এখন তোমাকে দিয়ে আমি কিছু করাতে চাই না। তোমার ইচ্ছাও ব্যর্থ করতে চাই না, তুমি কৃষ্ণের জন্য কিছু করো, তাতেই আমার উপকার হবে।

ময় দানবের অনুরোধ শুনে কৃষ্ণ একটু ভেবে বললেন, শিল্পিশ্রেষ্ঠ, যদি তুমি আমাদের খুশী করার জন্য কিছু করতে চাও, তবে যুধিষ্ঠিরের জন্য এমন এক সভা নির্মাণ করো যার অনুকরণ মানুষের অসাধ্য। তার পর কৃষ্ণ ও অর্জুন ময়কে যুধিষ্ঠিরের কাছে নিয়ে গেলেন। কিছুকাল গত হলে সবিশেষ চিন্তার পর ময় সভা নির্মাণে উদ্যোগী হলেন। তার পর তিনি চতুর্দিকে দশ হাজার হাত পরিমাপ করে সমস্ত ঋতুর উপযুক্ত সভাস্থান নির্বাচন করলেন।

কৃষ্ণ এতদিন ইন্দ্রপ্রস্থে সুখে বাস করছিলেন, এখন তিনি পিতার কাছে যেতে ইচ্ছুক হলেন। তিনি পিসি কুন্তীকে প্রণাম করে বোন সুভদ্রাকে স্নেহ জানিয়ে বিদায় নিলেন। তার পর তিনি দ্রুতগামী রথে আরোহণ করলেন। কৃষ্ণের সারথি দারুককে সরিয়ে দিয়ে যুধিষ্ঠির নিজেই বৰ্গা হাতে নিলেন, অর্জুনও শ্বেত চামর নিয়ে রথে উঠলেন। ভীম, নকুল, সহদেব ও পুরবাসিগণ রথের পিছনে চললেন। এইরূপে অর্ধ যোজন গিয়ে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে ফিরে যেতে বললেন। তাঁর রথ অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত পাণ্ডবগণ তাঁর দিকে চেয়ে রইলেন।

পাণ্ডবগণ ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এলে ময় দানব অর্জুনকে বললেন, আমাকে অনুমতি দিন আমি একবার কৈলাসের উত্তরে মৈনাক পর্বতে যাবো। অনেক দিন আগে দানবগণ সেখানে যজ্ঞ করেছিলেন, তার জন্য আমি কতকগুলি বিচিত্র ও মনোহর রত্নখচিত বস্তু সংগ্রহ করেছিলাম যা দানবরাজ বৃষপর্বার সভায় দেওয়া হয়। যদি পাওয়া যায়, তবে সেগুলি আমি আপনাদের সভার জন্য নিয়ে আসবো। বিন্দুসরোবরের তীরে রাজা বৃষপর্বার গদা আছে, তা স্বর্ণবিন্দুতে অলংকৃত, দৃঢ়, এবং লক্ষ গদার তুল্য শত্রুঘাতিনী। সেই গদা ভীমের, যোগ্য। সেখানে দেবদত্ত নামক বরুণের শঙ্খও আছে। এই সবই আমি আপনাদের জন্য আনবো।

অর্জুনের অনুমতি নিয়ে ময় দানব মৈনাক পর্বতে উপস্থিত হলেন। তিনি বৃষপর্বার গদা, শঙ্খ, রত্নখচিত বস্তু এবং প্রভূত ধনরাশি সংগ্রহ করে ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এলেন এবং ভীমকে গদা আর অর্জুনকে দেবদত্ত শঙ্খ দিলেন। তার পর ময় দানব ত্রিভুবন বিখ্যাত মণিময় সভা নির্মাণ করলেন যার দীপ্তিতে যেন সূর্যের প্রভাও ম্লান হোলো। এই বিশাল সভার প্রাচীর ও তোরণ রত্নময়, অভ্যন্তর বহুবিধ উত্তম সামগ্রীতে ও চিত্রে সজ্জিত। কিংকর নামক আট হাজার আকাশচারী মহাকায় মহাবল রাক্ষস সেই সভা রক্ষা করতো। ময় দানব সেখানে একটি অতুলনীয় সরোবর রচনা করলেন, তার সোপান স্ফটিকনির্মিত, জল অতি নির্মল, বিবিধ মণিরত্নে সাজানো এবং স্বর্ণকমল শোভিত। যে রাজারা সেই সভা দেখতে এলেন তাদের কেউ কেউ সরোবর বলে বুঝতে না পেরে জলে পড়ে গেলেন। সভাস্থানের সকল দিকেই পুষ্পিত বৃক্ষশোভিত উদ্যান ছিলো। চোদ্দ মাসে সভাগৃহ সম্পন্ন করে ময় দানব যুধিষ্ঠিরকে সংবাদ দিলেন যে সভা প্রস্তুত হয়েছে।

যুধিষ্ঠির ঘী ও মধু মিশ্রিত পায়স, ফলমূল, বরাহ ও হরিণের মাংস, তিলমিশ্রিত অন্ন প্রভৃতি বিবিধ উপাদেয় খাদ্য দিয়ে দশ হাজার ব্রাহ্মণ ভোজন করালেন এবং তাঁদের মূল্যবান ব্স্ত্র, মাললা ও বহু গাভী দান করলেন। তারপর গীত বাদ্য সহকারে পূজা ও বিগ্রহ স্থাপন কোরে সভায় প্রবেশ করলেন। নানা দেশ থেকে আগত ঋষি ও রাজাদের সঙ্গে পাণ্ডবগণ সেই সভায় আনন্দে বাস করতে লাগলেন।

______________

(ক্রমশ)