মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-৩৪
পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে দুর্যোধন ও শকুনির ষড়যন্ত্র
প্রাককথন
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।
সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।
মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।
সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।
অশোক ঘোষ
পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে দুর্যোধন ও শকুনির ষড়যন্ত্র
দুর্যোধন তার মামা শকুনির সঙ্গে ইন্দ্রপ্রস্থে গিয়ে পাণ্ডবসভার অতুলনীয় ঐশ্বর্য ঘুরে ঘুরে দেখলেন। স্ফটিক দিয়ে নির্মিত এক জায়গায় জল আছে মনে করে তিনি পোশাক টেনে উপরে তুললেন, পরে ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হলেন। আর এক জায়গার পদ্মশোভিত সরোবর দেখে স্ফটিক দিয়ে নির্মিত মনে করে দুর্যোধন তাতে পড়ে গেলেন, তাই দেখে পরিচারকরা হেসে তাকে অন্য পোশাক এনে দিলো। তিনি পোশাক বদলে এলে ভীম অর্জুন এবং আরো অনেকে হাসলেন, তাতে দুর্যোধন ক্রোধে তাদের দিকে তাকিয়েও দেখলেন না। অন্য এক জায়গায় তিনি দরজা আছে মনে করে স্ফটিকের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পেলেন। আরও এক জায়গায় দরজা আছে ভেবে ঠেলতে গিয়ে পড়ে গেলেন এবং আর এক জায়গায় দরজা খোলা থাকলেও বন্ধ আছে ভেবে ফিরে এলেন। এইভাবে নানা প্রকারে ধোঁকা খেয়ে, লজ্জা পেয়ে তিনি দুঃখিত হোয়ে হস্তিনাপুরে ফিরে গেলেন।
দুর্যোধনের অবস্থা দেখে শকুনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছ কেন? দুর্যোধন বললেন, মামা, অর্জুন ও অন্য পাণ্ডবদের বিক্রমে সমস্ত পৃথিবী যুধিষ্ঠিরের বশে এসেছে এবং তাঁর রাজসূয় যজ্ঞও সম্পন্ন হয়েছে দেখে আমি ঈর্ষায় জ্বলে মরছি। কৃষ্ণ শিশুপালকে বধ করলেন, কিন্তু এমন কোনও পুরুষ ছিল না যে তার প্রতিশোধ নেয়। প্রজারা যেমন কর দেয়, সেইরূপ রাজারা বিবিধ রত্ন এনে যুধিষ্ঠিরকে উপহার দিয়েছেন। আমি আগুনে পুড়ে, বিষ খেয়ে অথবা জলে ডুবে মরবো, কিছুতেই বেঁচে থাকতে পারবো না। যদি পাণ্ডবদের সমৃদ্ধি সহ্য করি, তবে আমি পুরুষ নই, স্ত্রী নই এমন কি ক্লীবও নই। তাদের সমৃদ্ধি আমি একা সংগ্রহ করতে পারবো না, আমার সহযোগিও দেখছি না, তাই মৃত্যুচিন্তা করছি। পাণ্ডবদের বিনাশের জন্য আমি পূর্বে বহু চেষ্টা করেছি, কিন্তু সবই বিফলে গেছে। পুরুষকারের চেয়ে দৈব অধিক শক্তিশালী, তাই আমরা ক্রমশ দুর্বল হচ্ছি আর পাণ্ডবরা শক্তিশালী হচ্ছে। মামা, আমাকে মরতে দিন আর আমার দুঃখের কথা পিতাকে জানাবেন।
শকুনি বললেন, যুধিষ্ঠিরের প্রতি রাগ বা ঈর্ষা করা তোমার উচিত নয়। তারা পৈতৃক রাজ্যের অংশই পেয়েছে এবং নিজেদের শক্তিতে শক্তিশালী হয়েছে, তাতে তোমার দুঃখ হচ্ছে কেন? অর্জুন অগ্নিকে তুষ্ট করে গাণ্ডীব ধনু, দুই অক্ষয় তৃণীর আর ভয়ংকর অস্ত্রসমূহ পেয়েছে, সে তার ধনু আর বাহুর বলে রাজাদের বশে এনেছে, তাতে দুঃখের কি আছে? ময় দানবকে দিয়ে সে সভা করিয়েছে, কিংকর নামক রাক্ষসরা সেই সভা রক্ষা করে, তাতেই বা তোমার দুঃখ হবে কেন? তুমি অসহায় নও, তোমার ভাইয়েরা আছেন তার সঙ্গে মহাধনুর্ধর দ্রোণ, অশ্বত্থামা, কর্ণ, কৃপাচার্য, আমি ও আমার ভাইয়েরা আর রাজা সোমদত্ত তোমার সাথে আছেন - এঁদের সঙ্গে নিয়ে তুমি সমগ্র জগৎ জয় করতে পারো।
দুর্যোধন বললেন, যদি অনুমতি দেন তবে আপনাদের সাহায্যে আমি পৃথিবী জয় করবো, সকল রাজা আমার বশে আসবে, পাণ্ডবসভাও আমার হবে। শকুনি বললেন, পঞ্চপাণ্ডব, কৃষ্ণ এবং পুত্রসহ দ্রুপদ একসঙ্গে থাকলে দেবতারাও এঁদের হারাতে পারেন না। যুধিষ্ঠিরকে যে উপায়ে জয় করা যায় তা আমি বলছি শোন। সে পাশা খেলা ভালবাসে কিন্তু ভালো খেলতে জানে না, কিন্তু তাকে ডাকলে সে আসবেই। পাশা খেলায আমার মতো দক্ষ ত্রিভুবনে কেউ নেই। তুমি যুধিষ্ঠিরকে পাশা খেলতে আমন্ত্রণ করো, আমি তার রাজ্য আর রাজলক্ষ্মী সবই জয় কোরে তোমাকে দেবো। এখন তুমি ধৃতরাষ্ট্রের অনুমতি নাও। দুর্যোধন বললেন, মামা, আপনিই তাঁকে বলুন, আমি বলতে পারবো না।।
দুর্যোধনের কথা মতো শকুনি ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, মহারাজ, দুর্যোধন দুর্ভাবনায় অসুস্থ ও দুর্বল হোয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, নিশ্চয়ই কোনও শত্রু তার এই শোকের কারণ। আপনি এ বিষয়ে কৃপা কোরে অনুসন্ধান করুন?
ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনকে ডেকে বললেন, পুত্র, তোমার শোকের কারণ কি? প্রচুর ঐশ্বর্য আর রাজচ্ছত্র তোমাকে আমি দিয়েছি, তোমার ভাইয়েরা আর বন্ধুরা তোমার সঙ্গে সহযোগিতা করেন, তুমি বহুমূল্য পোশাক পরছো, মাংস ও অন্যান্য উৎকৃষ্ট খাদ্য খাচ্ছো, আরামদায়ক শয্যা, সুন্দরী নারী, উত্তম বাসগৃহ ও ভ্রমণের স্থানও তোমার আছে, তাহলে তুমি কাঙ্গালের ন্যায় শোক করছো কেন? দুর্যোধন উত্তর দিলেন, পিতা, আমি কাপুরুষের মতো ভোজন করছি, পোশাক পরছি, প্রমোদ করছি। কিন্তু, আমাদের শত্রুরা শক্তিশালী হচ্ছে আর আমরা দুর্বল হোয়ে যাচ্ছি, এই কারণেই আমি বিবর্ণ ও দুর্বল হোয়ে যাচ্ছি। অষ্টাশি হাজার ব্রাহ্মণ গৃহস্থ এবং তাদের প্রত্যেকের ত্রিশটি দাসী যুধিষ্ঠির পালন করেন। তাঁর ভবনে প্রত্যেক দিন দশ হাজার লোক সোনার পাত্রে উত্তম অন্ন ভোজন করে। বহু রাজা তাকে কর এবং আরও অনেক মূল্যবান উপহার দিয়েছেন। বহু রত্নভূষিত সোনার কলস দিয়ে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে অভিষিক্ত করেছেন, তা দেখে আমার ভয়ঙ্কর ঈর্ষা হোলো। যুধিষ্ঠিরের সমতুল ঐশ্বর্য ইন্দ্র, যম, বরুণ বা কুবেরেরও নেই। পাণ্ডুপুত্রদের সমৃদ্ধি দেখে আমি মনে মনে জ্বলে মরছি, আমার মনে শান্তি নেই। মহারাজ, পাশা খেলায় নিপুণ আমার এই মামা পাশা খেলায় বাজী রেখে পাণ্ডবদের সমস্ত ঐশ্বর্য হরণ করতে চান, আপনি অনুমতি দিন।
ধৃতরাষ্ট্র বললেন, মহাপ্রাজ্ঞ বিদুরের উপদেশে আমি চলি, তাঁর মত নিয়ে কর্তব্য স্থির করবো। তিনি দূরদর্শী, ধর্মসম্মত ও উভয় পক্ষের কল্যাণকর উপদেশই তিনি দেবেন। দুর্যোধন বললেন, মহারাজ, বিদুর আপনাকে বারণ করবেন, তার ফলে আমি নিশ্চয় মরবো, আপনি বিদুরকে নিয়ে সুখে থাকবেন। পুত্রের এই কথা শুনে ধৃতরাষ্ট্র আদেশ দিলেন, শিল্পীরা শীঘ্র একটি মনোরম বিশাল সভা নির্মাণ করুক, তার এক হাজার স্তম্ভ ও এক শত দরজা থাকবে। তারপর ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, পুত্র, তুমি পৈতৃক রাজ্য পেয়েছো, সকলের জ্যেষ্ঠ বলে রাজার পদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছো, তবে কেন শোক করছো?
পাণ্ডবসভায় তিনি ভ্রমের বশে কিভাবে বিপাকে পড়েছিলেন আর উপহাসের পাত্র হয়েছিলেন তা জানিয়ে দুর্যোধন ধৃতরাষ্ট্রকে যুধিষ্ঠিরের জন্য বিভিন্ন দেশের রাজারা যে উপহার এনেছিলেন তার বিবরণ দিলেন। দ্রৌপদী প্রত্যেক দিন অভুক্ত থেকে দেখতেন সভায় আগত সকলের ভোজন হয়েছে কিনা। রাজসূয় যজ্ঞ করে যুধিষ্ঠির হরিশ্চন্দ্রের ন্যায় সমৃদ্ধিলাভ করেছেন, তা দেখে আমার আর বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, পুত্র, যুধিষ্ঠির তোমার প্রতি ঈর্ষা করে না, তার যেমন অর্থবল ও মিত্রবল আছে তোমারও তেমন আছে। তোমার আর পাণ্ডবদের একই পিতামহ। ভ্রাতার সম্পত্তি কেন হরণ করতে চাইছো? যদি যজ্ঞ করে ঐশ্বর্য লাভ করতে চাও, তবে ঋত্বিকরা তার আয়োজন করুন। তুমি যজ্ঞে ধনদান কর, সমস্ত ঐশ্বর্য ভোগ কর, স্ত্রীদের সঙ্গে আনন্দ করো, কিন্তু অধর্ম থেকে বিরত হও।
দুর্যোধন বললেন, যার নিজের বুদ্ধি নেই, কেবল বহু শাস্ত্র শুনেছে, সে শাস্ত্রের অর্থ বোঝে না, হাতা যেমন ডালের স্বাদ বোঝে না। আপনি পরের বুদ্ধিতে চলে আমাকে ভোলাচ্ছেন কেন? বৃহস্পতি বলেছেন, রাজার আচরণ সাধারণের আচরণ থেকে ভিন্ন, রাজা সযত্নে স্বার্থচিন্তা করবেন। মহারাজ, জয়লাভই ক্ষত্রিয়ের পেশা, ধর্মাধর্ম বিচারের প্রয়োজন নেই। কে শত্রু, কে মিত্র, এরূপ কোনও লিখিত প্রমাণ নেই, যে লোক দুঃখের কারণ সেই শত্রু। জাতি অনুসারে কেউ শত্রু হয় না, পেশা সমান হলেই শত্রুতা হয়।
শকুনি বললেন, যুধিষ্ঠিরের যে সমৃদ্ধি দেখে তুমি দুঃখিত হচ্ছো, তা আমি পাশা খেলায় জিতে নেবো, তুমি যুধিষ্ঠিরকে আহ্বান করো। আমি সুদক্ষ পাশা খেলোয়াড়, কোনো যুদ্ধ না করেই পাশা খেলে পাণ্ডবদের জয় করবো, তাতে সন্দেহ নেই। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, আমি মহাত্মা বিদুরের মতে চলে থাকি, তার সঙ্গে কথা বলে কর্তব্য স্থির করবো। পুত্র, শক্তিশালীর সঙ্গে বিবাদ করা আমার মত নয়, বিবাদ এক ভয়ঙ্কর অস্ত্রস্বরূপ, তাতে যুদ্ধের সৃষ্টি হয়। দুর্যোধন বললেন, বিদুর আপনার বুদ্ধিনাশ করবেন তাতে সংশয় নেই, তিনি পাণ্ডবদের যেমন কল্যাণ চান তেমন আমাদের চান না। প্রাচীন কালের লোকেরাও পাশা খেলেছেন, তাতে বিপদ বা যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই। দৈব যেমন আমাদের, তেমন পাণ্ডবদেরও সহায় হতে পারেন। আপনি মামা শকুনির বাক্যে সম্মত হোয়ে পাণ্ডবদের পাশা খেলার জন্য নিয়ে আসার আজ্ঞা দিন।
ধৃতরাষ্ট্র অবশেষে অনিচ্ছায় সম্মতি দিলেন এবং সংবাদ নিয়ে জানলেন যে পাশা খেলার জন্য সভা নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। তখন তিনি বিদুরকে বললেন, তুমি শীঘ্র গিয়ে যুধিষ্ঠিরকে ডেকে আনো, তিনি ভাইদের সঙ্গে এসে আমাদের সভা দেখুন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে পাশা খেলুন। বিদুর বললেন, মহারাজ, আপনার আদেশের প্রশংসা করতে পারি না, পাশা খেলার ফলে বংশনাশ হবে, পুত্রদের মধ্যে বিবাদ হবে। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, বিদুর, দৈব যদি প্রতিকূল না হয় তবে কলহ আমাকে দুঃখ দিতে পারবে না, বিধাতা সারা জগৎ দৈবের বশে রেখেছেন। তুমি আমার আজ্ঞা পালন কর।
ধৃতরাষ্ট্রের আজ্ঞায বিদুর ইন্দ্রপ্রস্থে গেলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার মনে সুখ নেই, আপনি কুশলে আছেন তো? বৃদ্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র ও প্রজারা সুখে আছে তো? কুশল জ্ঞাপনের পর বিদুর বললেন, রাজা যুধিষ্ঠির, ধৃতরাষ্ট্র তোমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন যে, দুর্যোধন ও তার ভাইয়েরা যে সভা নির্মাণ করেছেন তা তোমাদের সভারই তুল্য, এসে দেখে যাও। তুমি তোমার ভাইদের সঙ্গে সেখানে গিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে পাশা করো, আনন্দ করো। তোমরা গেলে সকলেই আনন্দিত হবে।
যুধিষ্ঠির বললেন, পাশা খেলা থেকে বিবাদের সৃষ্টি হয়, তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তির পাশা খেলা উচিৎ নয়। আপনার কি মত? বিদুর বললেন, আমি জানি যে পাশা খেলা অনর্থের মূল, তার নিবারণের চেষ্টাও আমি করেছিলাম, তথাপি ধৃতরাষ্ট্র আমাকে পাঠিয়েছেন। যুধিষ্ঠির, তুমি বিদ্বান ও বুদ্ধিমান, যা সঠিক তাই করো। যুধিষ্ঠির বললেন, শকুনির সঙ্গে খেলতে আমার ইচ্ছা নেই, কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র যখন ডেকেছেন তখন আমি বারণ করতে পারি না।
পরদিন যুধিষ্ঠির দ্রৌপদী, চার ভাই ও পরিজনদের নিয়ে হস্তিনাপুরে যাত্রা করলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, কৃপ, দুর্যোধন, শল্য, শকুনি প্রভৃতির সঙ্গে দেখা করে ধৃতরাষ্ট্রের গৃহে গেলেন। গান্ধারী তাঁকে আশীর্বাদ করলেন, ধৃতরাষ্ট্রও পঞ্চপাণ্ডবকে আশীষ জানালেন। দ্রৌপদীর বহুমূল্য বেশভুষা দেখে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রবধূরা ঈর্ষান্বিত হলেন। পাণ্ডবগণ সুখে রাত্রিযাপন কোরে পরদিন সকালে পাশা খেলার সভায় প্রবেশ করলেন।
______________
(ক্রমশ)