Featured Books
  • ঝরাপাতা - 11

    #ঝরাপাতাপর্ব - ১১রনির প্রশ্নে পিউ আবার কেঁদে উঠে বলে, "কেন এ...

  • LOVE UNLOCKED - 4

    Love Unlocked : 4Pritha :আজকে সারাটাদিন আরিয়া ক্যাফেই কাটিয...

  • জঙ্গলের প্রহরী - 11

    জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১১- "আচ্ছা, মিস গোস্বামীটা বাদ দিয়ে আম...

  • মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 128

    মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১২৮ বেদব্যাস বর্ণিত সুবর্ণষ্ঠীবীর কা...

  • LOVE UNLOCKED - 3

    Love Unlocked: 3Pritha :একটা ক্যাফের সামনে দাড়িয়ে আছে আরিয...

বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 69

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-৬৯

যুধিষ্ঠিরের কাছে সশিষ্য দুর্বাসা মুনির আতিথ্য গ্রহণের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

যুধিষ্ঠিরের কাছে সশিষ্য দুর্বাসা মুনির আতিথ্য গ্রহণের কাহিনি

পাণ্ডবগণের কাম্যকবনে বাস করবার সময় একদিন তপস্বী দুর্বাসা দশ হাজার শিষ্য নিয়ে দুর্যোধনের কাছে এলেন এবং দুর্যোধনের বিনীত অনুরোধে তার কাছে কয়েক দিনের জন্য আতিথ্য গ্রহণ করলেন। দুর্যোধনের অতিথি হয়ে থাকার সময় দুর্বাসা কোনওদিন বলতেন, আমি ক্ষুধার্ত, শীঘ্র আমাকে খেতে দাও, এই বলেই স্নান করতে গিয়ে অনেক দেরি কোরে ফিরতেন। কোনও দিন বলতেন, আজ ক্ষিধে নেই, খাবো না, তার পর হঠাৎ এসে বলতেন, এখনই খেতে দাও। কোনও দিন মাঝরাতে উঠে খাবার দিতে বলতেন কিন্তু খাবার দেওয়ার পর না খেয়ে গালাগালি দিতেন। পরিশেষে দুর্যোধনের অবিরাম পরিচর্যায় খুশি হয়ে দুর্বাসা বললেন, তোমার কাঙ্খিত বর চাও। দুর্যোধন আগেই কর্ণ, দুঃশাসন প্রভৃতির সঙ্গে মন্ত্রণা করে রেখেছিলেন। তিনি দুর্বাসাকে বললেন, মহর্ষি, আপনি শিষ্যদেরকে সঙ্গে নিয়ে যুধিষ্ঠিরের আতিথ্য গ্রহণ করুন। যদি আমার উপর আপনার অনুগ্রহ থাকে, তবে যখন সকলের খাওয়ার পর নিজে আহার করে দ্রৌপদী বিশ্রাম করবেন সেই সময়ে আপনি যাবেন। দুর্যোধনের কথায় দুর্বাসা সম্মত হলেন।

সূর্যের বরে এবং সূর্যের দেওয়া পাত্রে খাবার রান্না কোরে, সেই পাত্র থেকে দ্রৌপদী যত জনকে পেট ভরে খাবার পরিবেশন করুক না কেন, সেই পাত্র খাবারে পূর্ণ থাকত। কিন্তু, দ্রৌপদীর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই পাত্রে আর খাবার অবশিষ্ট থাকত না। তারপর একদিন পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদীর খাওয়ার পর দশ হাজার শিষ্য নিয়ে দুর্বাসা কাম্যকবনে উপস্থিত হলেন। যুধিষ্ঠির যথাবিধি আপ্যায়ন কোরে তাকে বললেন, মহর্ষি, আপনি স্নান কোরে শীঘ্র আসুন। শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে দুর্বাসা স্নান করতে গেলেন। দশ হাজার শিষ্য সহ দুর্বাসার খাওয়ার যোগাড় কি ভাবে হবে, এই ভেবে দ্রৌপদী আকুল হলেন এবং নিরুপায় হয়ে মনে মনে কৃষ্ণের স্তব করে বললেন, হে মধুসূদন, তুমি এই বিপদের থেকে আমাদের উদ্ধার করো। পাশা খেলার সভায় দুঃশাসনের হাত থেকে যেমন আমাকে উদ্ধার করেছিলে সেইরূপ আজ এই সংকট থেকে আমাকে পরিত্রাণ করো।

দ্রৌপদীর প্রার্থনায় কৃষ্ণ তখনই দ্রৌপদীর কাছে উপস্থিত হলেন। দুর্বাসার আগমনের কথা শুনে তিনি বললেন, দ্রৌপদী, আমি অত্যন্ত ক্ষুধার্ত, শীঘ্র আমাকে কিছু খেতে দাও, তার পর অন্য কাজ করো। দ্রৌপদী লজ্জিত হয়ে বললেন, যে পর্যন্ত আমি খাইনা সে পর্যন্তই সূর্যের দেওয়া পাত্রে খাবার থাকে। আমার খাওয়া হয়ে গেছে, সেজন্য এখন আর খাবার অবশিষ্ট নেই। কৃষ্ণ বললেন, দ্রৌপদী, এখন রসিকতার সময় নয়, আমি ক্ষুধার্ত, তোমার পাত্র এনে আমাকে দেখাও। দ্রৌপদী পাত্র আনলে কৃষ্ণ দেখলেন তাতে একটুখানি শাকান্ন লেগে আছে, তিনি তাই খেয়ে বললেন, সমগ্র বিশ্বের যজ্ঞভোজী দেবতা তৃপ্তিলাভ করুন, তুষ্ট হন। তার পর তিনি সহদেবকে বললেন, ভোজনের জন্য মুনিদের শীঘ্ৰ ডেকে আন।

এদিকে দুর্বাসা ও তার শিষ্য মুনিগণ তখন স্নানের জন্য নদীতে নেমে অঘমর্ষণ মন্ত্র জপ করছিলেন। সহসা তাদের গলা দিয়ে খাদ্যের স্বাদমিশ্রিত ঢেকুর উঠতে লাগল, তাঁরা তৃপ্ত হয়ে জল থেকে উঠে পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগলেন। মুনিরা দুর্বাসাকে বললেন, এমন বোধ হচ্ছে আমরা যেন আকণ্ঠ ভোজন করে তৃপ্ত হয়েছি, এখন আবার কি করে ভোজন করবো? দুর্বাসা বললেন, আমরা বৃথা খাবার প্রস্তুত করতে বলে যুধিষ্ঠিরের নিকটে মহা অপরাধ করেছি, পাণ্ডবগণ ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের যেন দগ্ধ না করেন। কৃষ্ণ তাদের সহায়, সেজন্য তাদের ভয় করি। শিষ্যগণ, তোমরা শীঘ্র পালিয়ে যাও।

কৃষ্ণের কথায় সহদেব নদীতীরে এসে দেখলেন কেউ নেই। তিনি এই সংবাদ দিলে পাণ্ডবগণ ভাবলেন, হয়তো মাঝরাতে দুর্বাসা হঠাৎ ফিরে এসে আমাদের কাছে খেতে চাইবেন। তাদের চিন্তিত দেখে কৃষ্ণ বললেন, রাগী স্বভাব দুর্বাসার আগমনে বিপদ হবে এই আশঙ্কায় দ্রৌপদী আমাকে স্মরণ করেছিলেন তাই আমি এসেছি। কোনও ভয় নেই, আপনাদের তেজে ভয় পেয়ে দুর্বাসা পালিয়েছেন। পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী বললেন, হে কৃষ্ণ, মহাসমুদ্রে ডুবতে থাকা লোকে যেমন ভেলা পেলে রক্ষা পায়, আমরা সেইরূপ তোমার কৃপায় ভীষণ বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছি। তার পর কৃষ্ণ পাণ্ডবগণের নিকট বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

______________

(ক্রমশ)