Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 86

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-৮৬

ধৃতরাষ্ট্রের নির্দেশে যুধিষ্ঠিরের কাছে সঞ্জয় কর্তৃক দৌত্যের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

ধৃতরাষ্ট্রের নির্দেশে যুধিষ্ঠিরের কাছে সঞ্জয় কর্তৃক দৌত্যের কাহিনি

দ্রুপদের পুরোহিত বিদায় নেওয়ার পর ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে বললেন, তুমি উপপ্লব্য নগরে গিয়ে পাণ্ডবগণের সংবাদ নেবে এবং যুধিষ্ঠিরকে অভিনন্দন জানিয়ে বলবে, ভাগ্যক্রমে তুমি বনবাস থেকে জনপদে ফিরে এসেছ। সঞ্জয়, আমি পাণ্ডবদের সূক্ষ্ম দোষও দেখতে পাই না, ক্রুর স্বভাব মন্দবুদ্ধি দুর্যোধন এবং দুষ্টবুদ্ধি কর্ণ ছাড়া এখানে এমন কেউ নেই যে পাণ্ডবদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব এবং কৃষ্ণ ও সাত্যকি যাঁর অনুগত সেই যুধিষ্ঠিরকে যুদ্ধের পূর্বেই তার রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়া ভালো। গুপ্তচরদের কাছে কৃষ্ণের যে পরাক্রমের কথা শুনেছি তা মনে করে আমি শান্তি পাচ্ছি না, অর্জুন ও কৃষ্ণ মিলিত হয়ে এক রথে আসবেন শুনে আমি শঙ্কিত। যুধিষ্ঠির মহাতপা ও ধর্মপরায়ণ, তার ক্রোধকে আমি যত ভয় করি, অর্জুন কৃষ্ণ প্রভৃতিকেও তত করি না। সঞ্জয়, তুমি পাণ্ডবদের সেনানিবেশে যাও এবং যুধিষ্ঠির যাতে খুশি হন এমন কথা বলো। সকলের মঙ্গল জিজ্ঞাসা কোরে তাকে জানিও যে আমি শান্তিই চাই। বিপক্ষকে যা বলা উচিত, যা ভরতবংশের হিতকর এবং যাতে যুদ্ধ না হয় এমন কথাই তুমি বলবে।

ধৃতরাষ্ট্রের নির্দেশে সঞ্জয় উপপ্লব্য নগরে এসে যুধিষ্ঠিরকে অভিবাদন করলেন। কৌরবদের কুশল জিজ্ঞাসার পর যুধিষ্ঠির বললেন, সঞ্জয়, দীর্ঘকাল পরে ধৃতরাষ্ট্রের কুশল শুনে এবং তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন সাক্ষাৎ ধৃতরাষ্ট্রকেই দেখছি। তার পর যুধিষ্ঠির ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, অশ্বত্থামা, কর্ণ, ধৃতরাষ্ট্র ও তার পুত্রগণ, রাজপুরস্থ রমণীগণ, দাসীগণ প্রভৃতি সকলেরই সংবাদ নিলেন ।

সকলের কুশল সংবাদ দিয়ে সঞ্জয় বললেন, মহারাজ, দুর্যোধনের কাছে সাধুপ্রকৃতি প্রবীণ ব্যক্তিরা আছেন, আবার পাপীষ্ঠ ব্যক্তিরাও আছে। আপনারা দুর্যোধনের কোনও অপকার করেননি তবুও তিনি আপনাদের প্রতি অন্যায় ব্যবহার করেছেন। ধৃতরাষ্ট্র যুদ্ধের অনুমোদন করেন না, তিনি মানসিক কষ্ট ভোগ করছেন। সকল পাপের চেয়ে আত্মীয় বিরোধ গুরুতর — এ কথাও ব্রাহ্মণদের কাছে শুনেছেন। ধর্মরাজ, আপনি নিজের বুদ্ধিবলে শান্তির উপায় স্থির করুন। আপনারা সকলেই ইন্দ্রতুল্য, কষ্টে পড়লেও আপনারা রাজ্যলাভের জন্য ধর্মত্যাগ করবেন না।

যুধিষ্ঠির বললেন, এখানে সকলেই উপস্থিত আছেন, ধৃতরাষ্ট্র যা বলেছেন তাই বলো। সঞ্জয় পঞ্চপাণ্ডব, কৃষ্ণ, সাত্যকি, চেকিতান, বিরাট, পাঞ্চালরাজ ও ধৃষ্টদ্যুম্নকে বললেন, রাজা ধৃতরাষ্ট্র শান্তির উদ্দেশ্যে আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন, তার ইচ্ছা আপনাদের ও কৌরবদের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হোক। মহাবলশালী পাণ্ডবগণ, হীন কর্ম করা আপনাদের উচিত নয়, সাদা কাপড়ে কাজলের ফোঁটার মতো সেই পাপ যেন আপনাদের স্পর্শ না করে। কৌরবগণকে যদি যুদ্ধে বিনষ্ট করেন তবে জ্ঞাতিবধের ফলে আপনাদের জীবন মৃত্যুর তুল্য হবে। কৃষ্ণ, সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্ন ও চেকিতান যাঁদের সহায়, কে তাদের জয় করতে পারে? আবার দ্রোণ, ভীষ্ম, অশ্বত্থামা, কৃপ, কর্ণ, শল্য প্রভৃতি যাঁদের পক্ষে আছেন সেই কৌরবগণকেই বা কে জয় করতে পারে? জয়ে বা পরাজয়ে আমি কোনও মঙ্গলই দেখছি না। আমি বিনীত হয়ে কৃষ্ণ ও পাঞ্চালরাজের কাছে সকলের মঙ্গলের জন্য সন্ধির প্রার্থনা করছি। ভীষ্ম ও ধৃতরাষ্ট্র এই চান যে, আপনারা শান্তি স্থাপন করুন।

যুধিষ্ঠির বললেন, সঞ্জয়, আমি যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক এমন কথা তোমাকে বলিনি, তবে ভয় পাচ্ছো কেন? যুদ্ধ অপেক্ষা শান্তি ভালো, যদি ভয়ঙ্কর কাজ না করেও ধর্মসঙ্গত অধিকার পাওয়া যায় তবে কোন মূর্খ যুদ্ধ করতে চায়? বিনা যুদ্ধে অল্প পেলেও লোকে যথেষ্ট মনে করে। জ্বলন্ত আগুন যেমন ঘী পেয়েও তৃপ্ত হয় না, মানুষও সেইরূপ ধর্মসঙ্গত বস্তু পেয়েও তৃপ্ত হয় না। দেখ, ধৃতরাষ্ট্র ও তার পুত্রগণ বিপুল ধন-সম্পদ পেয়েও তৃপ্ত হন নি। ধৃতরাষ্ট্র সংকটে পড়ে পরের উপর নির্ভর করছেন, এতে তার মঙ্গল হবে না। তিনি বহু ঐশ্বর্যের অধিপতি, এখন দুর্বুদ্ধি ক্রুরস্বভাব কুমন্ত্ৰিদের দ্বারা ঘিরে থাকা পুত্রের জন্য বিলাপ করছেন কেন? দুর্যোধনের স্বভাব জেনেও তিনি বিশ্বস্ত বিদুরের উপদেশ অগ্রাহ্য করে অধর্মের পথে চলছেন। দুঃশাসন, শকুনি আর কর্ণ — এঁরাই এখন লোভী দুর্যোধনের মন্ত্রী। আমরা বনবাসে গেলে ধৃতরাষ্ট্র ও তার পুত্ররা মনে করলেন সমগ্র রাজ্যই তাদের হস্তগত হয়েছে। এখনও তারা নিষ্কণ্টক হয়ে তা ভোগ করতে চান, এমন অবস্থায় শান্তি অসম্ভব। ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব জীবিত থাকতে ইন্দ্রও আমাদের ঐশ্বর্য হরণ করতে পারেন না। আমরা কত কষ্ট পেয়েছি তা তুমি জান। তোমার অনুরোধে কৌরবদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করতে প্রস্তুত আছি। কৌরবদের সঙ্গে পূর্বে আমাদের যে সম্বন্ধ ছিল তাও অটুট থাকবে, তোমার কথা অনুসারে শান্তিও স্থাপিত হবে। কিন্তু দুর্যোধন আমাদের রাজ্য ফিরিয়ে দিন, ইন্দ্রপ্রস্থ রাজ্য আবার আমার হোক।

সঞ্জয় বললেন, ধর্মরাজ, কৌরবগণ যদি আপনাকে রাজ্যের ভাগ না দেন তবে অন্ধক ও বৃষ্ণিদের রাজ্যে আপনাদের ভিক্ষা করাও শ্রেয়, কিন্তু যুদ্ধ করে রাজ্যলাভ উচিত হবে না। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী, দুঃখময় ও অস্থির। যুদ্ধ করা আপনার সুনামের পক্ষে উচিৎ নয়, অতএব আপনি পাপজনক যুদ্ধ থেকে বিরত থাকুন। কৃষ্ণ, সাত্যকি ও দ্রুপদ প্রভৃতি রাজারা চিরকালই আপনার অনুগত, এঁদের সাহায্যে পূর্বেই আপনি যুদ্ধ করে দুর্যোধনের অহঙ্কার চূর্ণ করতে পারতেন। কিন্তু বহু বছর বনে বাস করে বিপক্ষের শক্তি বাড়িয়ে এবং স্বপক্ষের শক্তি ক্ষয় করে এখন যুদ্ধ করতে চাইছেন কেন? আপনার পক্ষে ক্ষমাই ভালো, প্রতিশোধের ইচ্ছা ভালো নয়। ভীষ্ম, দ্রোণ, দুর্যোধন প্রভৃতিকে বধ করে রাজ্য পেয়ে আপনার কি সুখ হবে? যদি আপনার পরামর্শদাতারা আপনাকে যুদ্ধে উৎসাহিত করেন, তবে তাদের হাতে সর্বস্ব দিয়ে আপনি সরে যান, ধর্মের পথ থেকে ভ্রষ্ট হবেন না।

যুধিষ্ঠির বললেন, সঞ্জয়, আমি ধর্ম করছি না কি অধর্ম করছি তা জেনে আমার নিন্দা করো। অবস্থা বিশেষে ধর্মের পরিবর্তন হয়, বিদ্বান লোকে বুদ্ধিবলে কর্তব্য নির্ণয় করেন। কিন্তু বিপন্ন না হলে পরধর্ম আশ্রয় করা নিন্দনীয়, যদি আমরা তা করে থাকি তবে আমাদের দোষ দিও। আমি পিতা-পিতামহের পথেই চলি। যদি সাম নীতি বর্জন করে সন্ধিতে অসম্মত হই তবে আমি নিন্দনীয় হবো। যুদ্ধের উদ্যোগ কোরে যদি ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পালন না কোরে যুদ্ধে বিরত হই তা হলেও আমার দোষ হবে। মহামতি কৃষ্ণ উভয়পক্ষের শুভার্থী, ইনিই বলুন আমাদের কর্তব্য কি।

কৃষ্ণ বললেন, আমি দুই পক্ষেরই হিতাকাঙ্ক্ষী এবং শান্তি ভিন্ন আর কিছুর উপদেশ দিতে চাই না। যুধিষ্ঠির তার শান্তিপ্রিয়তা দেখিয়েছেন, কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র আর তাঁর পুত্ররা লোভী, অতএব যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রবল। যুধিষ্ঠির ক্ষত্রিয়ের ধর্ম অনুসারে নিজের রাজ্য উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করবেন, এতে তার ধর্মলোপ হবে কেন? পাণ্ডবরা যদি এমন কোনও উপায় জানতেন যাতে কৌরবদের বধ না করে রাজ্যলাভ করা যায় তবে এঁরা ভীমকে শান্ত রেখে সেই উপায় অবলম্বন করতেন। ক্ষত্রিয়ের ধর্ম অনুসারে যুদ্ধ করতে গিয়ে যদি এঁদের মৃত্যু হয়, তাও প্রশংসনীয় হবে। সঞ্জয়, তুমিই বলো, ক্ষত্রিয় রাজাদের পক্ষে যুদ্ধ করা ধর্মর্সম্মত কিনা। দস্যুবধ করলে পুণ্য হয়, অধার্মিক কৌরবগণ দস্যুবৃত্তিই অবলম্বন করেছেন। অন্যকে না জানিয়ে বা প্রকাশ্যভাবে সবলে যে পরের ধন হরণ করে সে চোর। দুর্যোধনের সঙ্গে চোরের কি পার্থক্য আছে? পাণ্ডবগণের স্ত্রী দ্রৌপদীকে যখন পাশা খেলার সভায় আনা হয়েছিল তখন ভীষ্মাদি কিছুই বলেন নি, ধৃতরাষ্ট্রও বারণ করেননি। দুঃশাসন যখন দ্রৌপদীকে শ্বশুরদের সামনে টেনে নিয়ে এল তখন বিদুর ভিন্ন কেউ তার রক্ষক ছিলেন না, সমবেত রাজারা কোনও প্রতিবাদ করেননি। সঞ্জয়, পাশা খেলার সভায় যা ঘটেছিল তা ভুলে গিয়ে তুমি এখন পাণ্ডবদের উপদেশ দিচ্ছ! পাণ্ডবদের অনিষ্ট না করে যদি আমি শান্তি স্থাপন করতে পারি তবে আমার পক্ষে তা পুণ্যকর্ম হবে। আমি নীতিশাস্ত্র অনুসারে ধর্মসম্মত অহিংস উপদেশ দেব, কিন্তু কৌরবগণ কি তা মানবেন? তারা কি আমার সম্মান রক্ষা করবেন? পাণ্ডবগণ শান্তিকামী, যুদ্ধ করতেও সমর্থ, এই বুঝে তুমি ধৃতরাষ্ট্রকে আমাদের মত যথাযথ জানিও।

সঞ্জয় যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, আমাকে এখন ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিন। আমি আবেগবশে কিছু অন্যায় বলি নি তো? কৃষ্ণ, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব, সাত্যকি, চেকিতান, আপনাদের সকলের কাছে আমি বিদায় চাইছি। আপনারা সুখে থাকুন, আমাকে প্রসন্ন মনে বিদায় দিন।

যুধিষ্ঠির বললেন, সঞ্জয়, তুমি মিষ্টভাষী বিশ্বস্ত দূত, কটু কথাতেও রাগ করো না, কৌরব ও পাণ্ডব উভয়পক্ষই তোমাকে সম্মান করেন, পূর্বে তুমি অর্জুনের প্রিয় বন্ধু ছিলে। তুমি এখন যেতে পারো। হস্তিনাপুরের ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতগণকে, দ্রোণাচার্য ও কৃপাচার্যকে এবং রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে আমার অভিবাদন জানিও। অস্ত্রবিশারদ অশ্বত্থামা, মূর্খ শঠ দুর্যোধন, তার তুল্যই মূর্খ দুষ্টস্বভাব দুঃশাসন, যুদ্ধবিমুখ ধার্মিক যুযুৎসু, মহাধনুর্ধর ভূরিশ্রবা ও শল্য, দক্ষ পাশা খেলোয়াড় খলবুদ্ধি শকুনি, যিনি পাণ্ডবদের জয় করতে চান এবং দুর্যোধনাদিকে মুগ্ধ করে রেখেছেন সেই কর্ণ, ধর্মপরায়ণ দীর্ঘদর্শী বিদুর যিনি আমাদের পিতামাতার তুল্য মাননীয় শুভার্থী ও উপদেষ্টা প্রভৃতি সকলকে কুশল জিজ্ঞাসা করো। যে সকল ব্রাহ্মণ আমার নিকট বৃত্তি পেতেন তাদের জন্য বৃত্তি দেওয়ার জন্য দুর্যোধনকে বলো। ভীষ্মের চরণে আমার প্রণাম জানিয়ে বলো, পিতামহ যাতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আপনার সকল পৌত্র জীবিত থাকে সেই চেষ্টা করুন। দুর্যোধনকে বলো, পরদ্রব্যে লোভ কোরো না, আমার শান্তিই চাই, তুমি রাজ্যের একটি প্রদেশ আমাদের দাও। অথবা আমাদের পাঁচ ভাইকে কুশস্থল, বৃকস্থল, মাকন্দী, বারণাবত এবং আর একটি মোট পাঁচটি গ্রাম দাও, তা হলেই বিবাদের অবসান হবে। সঞ্জয়, আমি সন্ধি বা যুদ্ধ উভয়ের জন্য প্রস্তুত।

যুধিষ্ঠিরের নিকট বিদায় নিয়ে সঞ্জয় দ্রুত ধৃতরাষ্ট্রের কাছে ফিরে এসে বললেন, আপনি পুত্রের ইচ্ছায় সম্মতি দিয়ে পাণ্ডবদের রাজ্য ভোগ করতে চাইছেন, এতে সারা জগতে আপনার অখ্যাতি হয়েছে। আপনার দোষেই কুরু ও পাণ্ডবদের বিরোধ ঘটেছে, যদি যুধিষ্ঠিরকে তার রাজ্য ফিরিয়ে না দেন তবে আগুন যেমন শুকনো ঘাস পুড়িয়ে দেয় তেমন ভাবে অর্জুন কৌরবগণকে ধ্বংস করবেন। আপনি অবিশ্বস্ত লোকদের উপদেশে চলছেন, বিশ্বস্ত লোকদের বর্জন করেছেন। আপনার এমন শক্তি নেই যে এই বিশাল রাজ্য রক্ষা করতে পারেন। আমি এখন ক্লান্ত হয়েছি, অনুমতি দিন এখন বিশ্রাম নিতে যাই। যুধিষ্ঠির যা বলেছেন কাল সকালে আপনাকে জানাবো।

______________

(ক্রমশ)