Featured Books
  • THE TALE OF LOVE - 13

    Catagory-(Romantic+Thriller️+Psycho+Toxic+Crime‍️+Foreign pl...

  • মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 119

    মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১১৯ নবম দিনের যুদ্ধের শেষে রাত্রে ভী...

  • জঙ্গলের প্রহরী - 4

    জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৪অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটাতে ঋষি তাড়াত...

  • ঝরাপাতা - 1

    ///ঝরাপাতাপর্ব - ১সন্ধ্যা নামার ঠিক আগের এই সময়টা খুব প্রিয়...

  • Ms Dhoni

    রাঁচির ছোট্ট শহর। স্টেশন রোডের পাশে এক সরকারি কোয়ার্টারে থা...

বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 119

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১১৯

নবম দিনের যুদ্ধের শেষে রাত্রে ভীষ্মের কাছে যুধিষ্ঠিরাদির গমনের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

নবম দিনের যুদ্ধের শেষে রাত্রে ভীষ্মের কাছে যুধিষ্ঠিরাদির গমনের কাহিনি

নবম দিনের যুদ্ধের শেষে শিবিরে এসে যুধিষ্ঠির তার মিত্রদের সঙ্গে মন্ত্রণা করতে লাগলেন। তিনি কৃষ্ণকে বললেন, মত্ত হাতির মতো ভীষ্ম আমাদের সৈন্য বিনাশ করছেন। আমি বুদ্ধির দোষে ভীষ্মের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে শোকগ্রস্ত হয়েছি। আমার বনে যাওয়াই ভালো, যুদ্ধে আর রুচি নেই, ভীষ্ম প্রতিদিনই আমাদের বহু সৈন্য বিনাশ করছেন। কৃষ্ণ, যদি আমাদের প্রতি তোমার অনুগ্রহ থাকে তবে এমন উপদেশ দাও যাতে আমার স্বধর্ম নষ্ট না হয়।

কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, বিষণ্ণ হবেন না, আপনার ভাইয়েরা শত্ৰুহন্তা মহাবীর। অর্জুন যদি ভীষ্মকে বধ করতে না চান তবে আপনি আমাকে নিযুক্ত করুন, আমি ভীষ্মকে যুদ্ধে আহ্বান কোরে দুর্যোধনাদির সামনেই তাকে বধ করবো। যে পাণ্ডবদের শত্রু সে আমারও শত্রু, আপনার ও আমার একই উদ্দেশ্য। আপনার ভাই অর্জুন আমার সখা, ভগ্নিপতি ও শিষ্য, তার জন্য আমি নিজের শরীর থেকে মাংস কেটে দিতে পারি। অর্জুন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে ভীষ্মকে বধ করবেন। এখন তিনি সেই কথা রাখুন, অথবা আমাকেই ভার দিন। ভীষ্ম বিপরীত পক্ষে যোগ দিয়েছেন, নিজের কর্তব্য বুঝছেন না, তার শক্তি ও জীবনকাল শেষ হয়ে এসেছে।

যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে বললেন তুমি আমাদের রক্ষক থাকলে আমরা ভীষ্মকে কেন ইন্দ্রকেও জয় করতে পারি। কিন্তু স্বার্থের জন্য তোমাকে মিথ্যাবাদী করতে পারি না, তুমি যুদ্ধ না করেই আমাদের সাহায্য করো। ভীষ্ম আমাকে বলেছিলেন যে দুর্যোধনের পক্ষে যুদ্ধ করলেও তিনি আমার হিতের জন্য মন্ত্রণা দেবেন। অতএব আমরা সকলে মিলে তার কাছে যাব এবং তার বধের উপায় জেনে নেব। তিনি নিশ্চয় আমাদের এমন উপদেশ দেবেন যাতে আমাদের জয় হয়। বালক ও পিতৃহীন অবস্থায় তিনিই আমাদের লালন পালন করেছিলেন, সেই বৃদ্ধ প্রিয় পিতামহকে আমি হত্যা করতে চাইছি — আমার ক্ষত্রিয় জীবনে ধিক!

পাণ্ডবগণ ও কৃষ্ণ কবচ ও অস্ত্র ত্যাগ কোরে ভীষ্মের কাছে গিয়ে মাথা নত কোরে প্রণাম করলেন। তাদেরকে সাদরে স্বাগত জানিয়ে ভীষ্ম বললেন, বৎসগণ, তোমাদের কল্যাণের জন্য কি করবো নিঃশঙ্ক হয়ে বলো। যদি অতি কঠিন কাজ হয় তাও আমি করবো। ভীষ্ম বার বার এই কথা বললে যুধিষ্ঠির ক্ষীণস্বরে বললেন, আপনি সর্বজ্ঞ, কোন্ উপায়ে আমরা জয়ী হবো, রাজ্যলাভ করবো? প্রজারা কিসে রক্ষা পাবে? আপনার বধের উপায় বলুন। যুদ্ধে আপনার বিক্রম আমরা কি কোরে সইব? আপনি রথে সূর্যের মতো বিরাজ করেন। কখন বাণ নেন আর কখন নিক্ষেপ করেন, কিছুই দেখতে পাই না। আপনার বাণ বর্ষণে আমাদের বিপুল সেনা বিনষ্ট হচ্ছে। পিতামহ, বলুন কিভাবে আমরা জয়ী হবো।

ভীষ্ম বললেন, পাণ্ডবগণ, আমি জীবিত থাকতে তোমাদের জয়লাভ হবে না। যদি জয়ী হতে চাও তবে অনুমতি দিচ্ছি তোমরা আমাকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রহার করো। এই কাজ তোমাদের কর্তব্য মনে করি, আমি মারা গেলে বাকি কৌরবগণ সকলেই মারা যাবে। যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি ক্রুদ্ধ যমরাজের মতো যুদ্ধ করেন, দেবরাজ ইন্দ্র এবং সমস্ত দেবতা ও অসুরও আপনাকে জয় করতে পারেন না, আমরা কি করে জয়ী হবো তার উপায় বলুন। ভীষ্ম বললেন, তোমার কথা সত্য, সশস্ত্র হয়ে যুদ্ধ করলে আমি দেবতা ও অসুরেরও অজেয়। কিন্তু আমি যদি অস্ত্র ত্যাগ করি তবে তোমরা আমাকে বধ করতে পারবে। নিরস্ত্র, ভূপতিত, বর্ম ও কবচবিহীন, পলায়মান, ভীত, শরণাপন্ন, স্ত্রী, স্ত্রীনামধারী, বিকলেন্দ্রিয়, একপুত্রের পিতা এবং নীচজাতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে আমার প্রবৃত্তি হয় না। যার পতাকা অমঙ্গলসূচক তার সঙ্গেও যুদ্ধ করি না। তোমার সেনাদলে দ্রুপদপুত্র মহারথ শিখণ্ডী আছে, সে পূর্বে স্ত্রী ছিলো তা তোমরা জানো। শিখণ্ডীকে সামনে রেখে অর্জুন আমার প্রতি তীক্ষ্ণ শর নিক্ষেপ করুক। এই উপায়ে তোমরা কৌরবদেরকে জয় করতে পারবে।

পিতামহ মহাত্মা ভীষ্মকে অভিবাদন করে পাণ্ডবগণ নিজেদের শিবিরে ফিরে গেলেন। ভীষ্মকে প্রাণবিসর্জনে প্রস্তুত দেখে অর্জুন দুঃখী ও লজ্জিত হয়ে কৃষ্ণকে বললেন, বৃদ্ধ পিতামহের সঙ্গে কি করে যুদ্ধ করবো? আমি ছোটবেলায় তার কোলে উঠে পিতা বলে ডেকেছি। তিনি বলতেন, বৎস, আমি তোমার পিতা নই, আমি পিতামহ। সেই ভীষ্মকে কি কোরে বধ করবো? তিনি যেমন ইচ্ছা আমাদের সৈন্য ধ্বংস করুন, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ করবো না, তাতে আমার জয় বা মৃত্যু যাই হোক। কৃষ্ণ, তুমি কি বল ?

কৃষ্ণ বললেন, তুমি ক্ষাত্রধর্ম অনুসারে ভীষ্মকে বধের প্রতিজ্ঞা করেছ, এখন পিছিয়ে যাচ্ছ কেন? তুমি ওই দুর্ধর্ষ ক্ষত্রিয় বীরকে রথ থেকে নিপাতিত করো, নতুবা তোমার জয়লাভ হবে না। দেবতারা পূর্বেই জেনেছেন যে ভীষ্ম যমালয়ে যাবেন, এর অন্যথা হবে না। মহাবুদ্ধি বৃহস্পতি দেবরাজ ইন্দ্রকে কি বলেছিলেন শোন - বয়োজ্যেষ্ঠ বৃদ্ধ গুণবান পুরুষও যদি আততায়ী হয়ে আসেন তবে তাঁকে বধ করবে।

______________

(ক্রমশ)