Read LOVE UNLOCKED - 3 by Pritha Das in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

LOVE UNLOCKED - 3

Love Unlocked: 3
Pritha 🎀:

একটা ক্যাফের সামনে দাড়িয়ে আছে আরিয়া। মাথা তুলে আরেকবার নামটাও দেখে নিলো। বড় বড় করে বোর্ডে লেখা আছে "কফি হাব"। টেনশনে বারবার হাত কচলাচ্ছে। হাতদুটো পুরো ঘেমে গেছে। আগেরদিন কলেজ থেকে একটানা এখানে চলে এসেছিল। খবর পেয়েছিল এখানে কাজের জন্য লোক নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর ওকে হতাশ করেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত মালিকের কোনো দরকারি কাজ পরে গেছিল তাই তিনি আজ আসতে পারবেন না জানিয়েছেন। অগত্যা এরপরে তো আর কিছু বলা যায়না। আজ আবারও সবাইকে ডাকা হয়েছে, তাই ইচ্ছা না থাকলেও কলেজটা কামাই করতেই হলো। যতই হোক কাজটা এখন খুব দরকার ওর। মাত্র দুজনকে নেওয়া হবে , আর তার জন্য অ্যাপ্লাই করেছে প্রায় হাজারের বেশি লোক। তার উপর ওর কফি বানানোর কোনো এক্সপেরিয়েন্সও নেই। কেবল কফি চিনি আর দুধ ফুটিয়ে দিলেই যে কফি হয়ে যায়না কাল এসে বুঝে গেছে। চার ঘণ্টা ধরে বসে বসে লক্ষ্য করেছে এখানে প্রতিটা স্টাফকে। কতটা নিপুণ সবাই। কেউ কফির উপর ডিজাইন করছে কেউবা অনেকতা উঁচু থেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাতের কৌশলে একটা পাত্র থেকে অন্য পাত্রে দুধ ঢালছে। আবার কেউ হাসি মুখে গেস্টদের অ্যাপায়ন করতে ব্যস্ত।
ব্যাপারটা যে অতটাও সহজ না আগে বুঝলে কখনও অ্যাপ্লাই করতই না।আর না এখন এসে টেনশন করতে হতো। তবে এখন আর টেনশন করে লাভ নেই। যা হবে সব দুগ্গা মা দেখবেন। এসব ভেবেই কাঁচের দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরের দৃশ্যটা কিছুটা আগের দিনের মতো। তবে আগের দিনের তুলনায় আজ  সেখানকার স্টাফদের আরও বেশি সিরিয়াস দেখাচ্ছে। ট্রান্সপারেন্ট কাঁচের ভিতর দিয়ে সকল স্টাফদের দেখা যাচ্ছে।
সাইড দিয়ে আরেকটা যাওয়ার রাস্তা চলে গেছে। সেখানে সম্ভবত লোকজন এসে বসে অথবা বসের কেবিনটা হতে পারে। মনে মনে এতক্ষণ জায়গাটা কত বড় হতে পারে বা কোথায় কি থাকতে পারে অনুমান করার চেষ্টা করছিল। এই ওর বড় দোষ ! নতুন জায়গায় গেলে সেটা বেশ অনেক্ষণ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ না করলে শান্তি হয়না। আগের দিন অবশ্য টেনশনে সেকথা ভুলেই গেছিল। তবে আজ এই পর্যবেক্ষণের চক্করে ওর পাশে বসে থাকা মেয়েগুলোকে লক্ষ্য করা হয়নি। প্রত্যেকেই খুব সুন্দর পরিপাটি করে সেজে এসেছে। বেশির ভাগ জনের কাপড় হাঁটুর নিচে নামার দুঃসাহস দেখায়নি অথচ বুকের অনেকটাই নিচে নেমে গেছে। কিছুজনের উগ্র মেকআপ আবার শালীনতার সীমা ছাড়িয়েছে। ওদের দেখেই মুখটা কুঁচকে উঠলো। এদের আবভাবেই এদের উদ্দেশ্য বোঝা যাচ্ছে। বিরক্তিতে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল। কিছু ছেলেও এসেছে অবশ্য তবে তাদের সংখ্যা কম। 

"হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন ?" হঠাৎ করেই কারোর গলা পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো তার ঠিক পাশের মেয়েটাই তাকে ডাকছে। নাহ্ এর পোশাকটা ভদ্রই আছে। এতজনের মাঝে পাশের টাকেই লক্ষ্য করা হয়নি।
কোনো সাড়া না পেয়ে মেয়েটি এবার আরিয়ার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে আবার বলল "ও হ্যালো ম্যাম ! শুনছেন ? আপনাকে অনেকবার ডেকে গেছে।"
এবার হুশ ফিরল আরিয়ার। চমকে উঠলো যেন। এদিক ওদিক চারিদিকে তাকাতে লাগলো।
মেয়েটি আবার বলল "সোজা গিয়ে ডানদিকে ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে।আপনার নাম ডেকেছে বেশ কয়েকবার।"

আরিয়া একটু হেসে মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। মেয়েটার বলা কথা অনুযায়ী এতক্ষণ যেখানে স্টাফদের কাজ করতে দেখছিল তার পাশের সরু গলিটা দিয়ে গেলে ডানদিকে বসের কেবিনটা পড়বে। ও উঠে হাঁটা দিলো। নিজের কোয়ালিফিকেশন এর ফাইলগুলো বুকে চেপে বিড়বিড় করতে করতে এগিয়ে গেলো। নিজের মাথায় নিজেই চাপড় মেরে বলল " আরু কনসেন্ট্রেট কর নিজের কাজে। তুই এখানে কি করতে এসেছিস আর কি করছিস ইডিয়ট। ও দুগ্গা মা তুমি সব সামলে নিও প্লিজ।" হাতদুটো জোর করে একবার নমস্কার করে দরজায় নক করলো। "May I come in ?"

ভিতর থেকে আওয়াজ এলো " Yes come in"

আরিয়া দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো ভিতরে। সামনে একটু মাঝ বয়সী একটা লোক বসে আছে। ও ফাইলগুলো সামনের টেবিলে রেখে দাড়িয়ে রইলো চুপ করে। তবে সামনে থাকা ব্যক্তি সেই ফাইলগুলো ধরেও দেখলো না। বসার জন্য ইশারা করে প্রশ্ন করল "নাম?"

"আরিয়া মজুমদার"

"কি করো ?"

"কলেজে পড়ি। ফার্স্ট ইয়ার।ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছি।"

"কলেজে পরো সবে ! তাও আবার ফার্স্ট ইয়ার?! পারবে সবটা সামলাতে ? তা এই বয়সে জবের দরকার হলো কেন !"

"স্যার আমি মনে করি এখানে সবটাই স্কিলস এর উপর নির্ভর করে। তাছাড়া যেটুকু জানি না আমি শিখে নেবো। জবটা আমার জন্য খুবই দরকার।"

"স্কিলস এর উপর যখন ডিপেন্ড করে তাহলে নিজের কোয়ালিফিকেশন এর ফাইলস গুলো এনেছো কেন! ওখানে কি নিজের ফাইভ পাসের প্রুভ আছে?" একটু কৌতুক করেই বললেন ভদ্রলোক।

"এটা তো রুলস ! আমি বলেছি যে আমি মনে করি এখানে সবটাই স্কিলস এর উপর নির্ভর করে। আমার মনে হওয়া থেকে আমি রুলস চেঞ্জ করতে পারিনা।"

"গুড। জবটা তুমি কেন করতে চাও?"

"আমি অনাথ। তাই আমার চাকরিটা প্রয়োজন। নিজের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য।হয়তো আমি সবে ইন্টার্ন। তবে আমি এটুকু বলতে পারি যে, আমার কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং পরিশ্রম আপনাকে নিরাশ করবে না। "

"Smooth... এই বিষয়ে কি জানো ?

এবার মুখটা একটু ফ্যাকাশে হয়ে গেলো আরিয়ার। ও এসব ব্যাপারে খুব একটা পটু নয়। মনে মনে ভেবেই ফেলল এই জবটাও গেলো বোধহয়।
আবার প্রশ্ন এলো "বানাতে পারো ?"

"যতটুকু পারিনা শিখে নেবো।" সোজা সাপটা উত্তর দিলো। সব আশা ছেড়েই দিয়েছে ও।

"Love your confidence.... you're selected....আজ থেকেই জয়েন করো।"

"আজ থেকেই ?" আরিয়া অস্বাভাবিক স্বরে বলে উঠলো। ওর যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না। ব্যাপারটা ওর জন্য এতটা ইজি হবে ভাবতে পারেনি। তার উপর আজকেই জয়েন করতে বলছে....

"Any problem?"

"No sir....I will give my best....but আমার কাজ ?"

"বাইরে অপেক্ষা করো আমি মেইল করে দিচ্ছি বাকিরা বুঝিয়ে দেবে।"

"Ok sir" ফাইল গুলো তুলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো আরিয়া।

বাইরে বেরোতেই দেখলো তখনকার মেয়েটা এদিক ওদিক পায়চারি করছে। আরিয়া ভাবলো একবার গিয়ে নামটা জিজ্ঞেস করে আসবে। যতই হোক তখন হেল্প তো করে দিলো। নইলে ওকে যে ডাকা হচ্ছে ও বুঝতেই পারতো না।আরিয়া মেয়েটার দিকে হাসি মুখে এগিয়ে এলো।

"Hello! Thank you once again...."

"আগের বার ধন্যবাদ বলেছ বলে এবার এসে thank you বলছো? Problem নেই ধন্যবাদেও কাজ চলে যেত।" মেয়েটি মুচকি হেসে বলল।

"অ্যাঁ!" আরিয়া একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।

"আরেহ জোকিং ইয়ার। Why so serious? By the way I'm sonali...." মেয়েটি হাসতে হাসতে আরিয়ার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল।

আরিয়া হাত মিলিয়ে উত্তর দিল "আমি আরিয়া মজুমদার।"

"হুম জানি। তোমার ফাইলের উপরেই দেখেছিলাম। তাই তো যখন তোমার নাম ধরে ডাকলো আমি বুঝে গেছিলাম তোমায় ডাকছে। যাই হোক ইন্টারভিউ কেমন গেল ?"

আরিয়া কোনোমতে হাসির বেগটা সামলে বলে উঠলো "ভালই গেছে। আমায় সিলেক্ট করে নিয়েছে। তবে আমি ভাবছি দুটোই তো জায়গা ছিল।যতদূর শুনলাম আরেকজন অলরেডি সিলেক্টেড হয়ে গেছে। আর এখন আমায় যদি অ্যালাউ করে ফেলে তবে বাকিদের এখনো কী জন্য বসিয়ে রেখেছে?"

"আরেহ সেই সিলেক্টেড জনটাই আমি। তাছাড়া এই ব্রাঞ্চের জন্য মাত্র দুটো সিট খালি।অন্য ব্রাঞ্চেও তো লোক নেবে। তাদের ইন্টারভিউটাও এখানেই নিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া সিইও তো আসেনি তাই শর্টে শটাং বুঝলে ?!"

"আসেনি মানে ? যিনি ইন্টারভিউ নিচ্ছেন উনি কে তাহলে ?!" 

"আমিও তোমার মতই নতুন বুঝলে। আমি জানি না উনি কে তবে সিইও নন।"

ইতিমধ্যেই একটা মহিলা এসে বলে উঠলো "তোমাদের দুজনকেই স্যার এখানে থাকতে বলেছেন ?আমার সাথে এসো কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।"
দুজনেই মহিলাটির পিছন পিছন গেলো।
___________________________________________

সকালের মিটিংটার পর থেকেই দেবর্ষি প্রচণ্ড রেগে আছে। যাকে পারছে রাগ ঝেড়ে দিচ্ছে। অফিসের স্টাফেরা একেবারে তটস্থ। ভয়ে কেউ আজকে স্যারের কেবিনে যেতে রাজি না। ইতিমধ্যেই প্রায় সাতবার আবিরকে নিজের কেবিনে ডেকে বিনা কারণ ঝাড়া হয়ে গেছে। আবিরও মুখ গোমড়া করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একবার করে কেবিনে ঢুকছে আর ঝাড় খেয়ে মুখ গোমরা করে বেরোচ্ছে। ওর মুখ দেখে বাকিরা ভয়ে আরও চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। 
আট নম্বর বার আবার আবিরের ডেস্কের রিংটা বেজে উঠল। রিংটা বন্ধ করে বিরবিরিয়ে বলে উঠলো "শালা সকাল থেকেই লেগে আছে। সকালে লেবু জল নিয়ে ক্ষেপেছিল এখন আবার কোন মুখপোড়া কি করেছে কে জানে ঝারই শুনে যাচ্ছি খালি। কপালটাই ফুটো একেবারে!" 
আবির এসে দেবর্ষির কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। বুকে ফু দিয়ে নক করলো। ভিতরে থেকে অনুমতি পেতেই দরজা খুলে ঢুকতে না ঢুকতেই মুখের উপর একটা ফাইল এসে পড়ল।

"যদি কাজ না করার হয় তো অফিসে আসবে না। পেন্ডিং ওয়ার্ক দেখলে আমার মাথায় আগুন জ্বলে।"(দেবর্ষি)

"স্যার এটার জন্য এখনও সময় আছে। তাই...."

"Shut up ! আমি কোনো এক্সকিউজ চাইনি। এটা হয়নি কেন !!! Damn it" কথাটা বলেই সামনে থাকা টেবিলের উপর দুম করে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো।
আবির সামান্য কেঁপে উঠলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো "ভাগ্যিস এটা আমার পিঠে পড়েনি।"

"What ?! জোকারের মত এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেন !"

আবির তাড়াতাড়ি নিচে পড়ে থাকা ফাইলগুলো কুড়াতে কুড়াতে বলতে লাগলো "কিছু না স্যার আমি এখুনি এগুলো কমপ্লিট করার ব্যবস্থা করছি।"

"Wait ! সেন সাইন কোম্পানি বিকেলের মিটিংয়ের অ্যাড্রেসটা পাঠায়নি এখনও ?"

ফাইল কুড়াতে ব্যস্ত হাতগুলো থেমে গেলো। "যাহ এটাও বলতে ভুলে গেছি যে অ্যাড্রেসটা অনেক আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন ওনারা। আমার কি দোষ সকাল থেকে রাক্ষসের মত হা হা করে চিল্লাচ্ছে। আর কিছু বললেই এমনভাবে ধেয়ে আসছে যেন গিলে খাবে।"

"কি বিড়বিড় করছো ! একটা প্রশ্ন করলাম তো !"

"হ..হ্যাঁ...স...স্যার ওনারা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সকালেই।"

দাঁতে দাঁত চেপে দেবর্ষি বলে উঠলো "তো সেটা আমায় বলা হয়নি কেন এতক্ষণ !"

"সরি স্যার!" মাথা নিচু করে বলে উঠলো আবির।

"সকাল থেকে তোমার সরি শুনে যাচ্ছি। ভুল করার যদি কোনো প্রাইজ পাওয়া যেতো তুমি বোধহয় ফার্স্ট হতে। ইডিয়ট একটা। লোকেশনটা বলো।"

"কফিহাব..."
.
.
.
.
চলবে.....