Read LOVE UNLOCKED - 7 by Pritha Das in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • LOVE UNLOCKED - 7

    Love Unlocked :7Pritha :আবির গাড়িটা এনে দাঁড় করালো সিংহ রা...

  • হরিচাঁদের আশীর্বাদ

    নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট্ট গ্রাম—ঠাকুরনগর। সকালের কাক ডাকছে, মাঠে...

  • Mission Indiana - 2

    মিশন ইন্ডিয়ানা**************পর্ব - 2************Truth About...

  • ঝরাপাতা - 14

    ঝরাপাতাপর্ব - ১৪- "ইয়েস, শ্রেয়ান সরকার। মিঃ শ্রেয়ান, যদি...

  • জঙ্গলের প্রহরী - 14

    জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৪সিদ্ধার্থ আর ঋষির কাছে এসে দাঁড়ায় শ...

বিভাগ
শেয়ারড

LOVE UNLOCKED - 7

Love Unlocked :7
Pritha 🎀:

আবির গাড়িটা এনে দাঁড় করালো সিংহ রায় ম্যানশনে। তবে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখার পরেও দেবর্ষির নামার কোনো হেলদোল না দেখে খোঁচা মেরে বলল "কি হলো স্যার নামবেন না ?" না নামার কারণটা যদিও ও জানে কিন্তু তাও একটু খোঁচা মেরে দিল, মানে সারাদিন ধরে ওকে হুমকি দেওয়ার প্রতিশোধ !
দেবর্ষি একবার আবিরের দিকে কটমট করে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলল " তোমার সমস্যা কি ! আমার গাড়ি আমি যতক্ষণ খুশি বসে থাকব। তুমি নেমে যাও বরং।"

আবির পুরো ভেবলে গেলো। এমন উত্তর আসা করেনি। তাই আমতা আমতা করে বলল "না আপনি নামলে আমি গাড়িটা পার্ক করতাম ! গার্ডরা পার্কিং লটের দরজা খুলে অপেক্ষা করছে তো তাই।"

দেবর্ষি আর কোনো উচ্চবাচ্য করলো না। চুপচাপ নেমে পড়ল। আবির গাড়িটা নিয়ে চলে গেলো পার্কিংলটে। দেবর্ষি আর অপেক্ষা না করে এগিয়ে গেলো বাড়ির দিকে। প্রথমেই বিশাল গেটটা পেরিয়ে সামনে বড় ফুলের বাগান,মাঝে দিয়ে চলে গেছে সিমেন্ট বাঁধানো পথ। বাড়ির সামনে এসে এটা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ডানদিকে গেলে পার্কিংলট এবং বামদিকে গেলে সুইমিংপুল আর একটা ছোটখাটো প্লেগ্রাউন্ড। দেবর্ষি দরজাটা খোলা দেখে ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো।
ভিতরের দৃশ্যটা কিছুটা আলাদা। দেখলে মনে হবে মা তার ছোট বাচ্চার জেদকে পাত্তা না দিয়ে খাওয়ার জন্য জোর করছে। 

দেবর্ষি এগিয়ে এসে নিজের কোটটা খুলে চেয়ারের উপর রেখে বলে উঠলো "কি হয়েছে দাদান! কেন খেতে চাইছো না তুমি। মম কত চেষ্টা করছে খাওয়ানোর জন্য।"
ছেলের কথা শুনে নন্দিনীদেবী করুন চোখে তাকালো ছেলের দিকে। বলে উঠলেন "তখন থেকে চেষ্টা করছি দেখ ! খেতেই চাইছে না এভাবে না খেয়ে থাকলে ওষুধগুলো খাওয়াবো কি করে বলতো !"

"না না আমি মোটেই খাবো না।" বাচ্চাদের মত জেদ করে চিল্লিয়ে বলে উঠলেন নারায়নবাবু ওরফে নারায়ন সিংহ রায়। এনাকে দেখে এখন কেউ বলবে না যে ইনিই এককালীন ব্যবসার বাজারে বিশাল নাম কিনেছিলেন। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল এনার তৈরি কফিশপ এর বিভিন্ন ব্রাঞ্চ। যার দেখভাল এর দায়িত্ব এখন নাতিকে দিয়ে তিনি শান্ত হয়েছেন। যদিও দেবর্ষি নিজের ক্ষমতায় নিজের ফ্যাশন হাউস তৈরি করে দেশে বিদেশে নিজের পরিচয় গড়েছে। তবে দাদুর তৈরি এই কফিশপের দায়িত্বও সমান তালে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।

দেবর্ষি বলে উঠলো "কেন এমন করছো দাদান! খাবারটা খেয়ে নাও আমার তো অনেক কাজ থাকে এমন হুটহাট জেদ করলে হয় বলো !?" বলে হাঁটু গেঁড়ে দাদুর চেয়ারটার পাশে বসে পড়ল। তারপর মায়ের হাতে থাকা প্লেট থেকে এক চামচ স্যুপ তুলে দাদুর মুখের সামনে ধরলো।
তবে নারায়ণবাবু তা খেতে নারাজ। হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিলো চামচটা। চিল্লিয়ে বলে উঠল "না আমি খা..." কথা বলার মাঝেই দেবর্ষি জোর করে স্যুপটা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো।
কিন্তু নারায়নবাবু তা গলদ্ধঃকরণ করলেন না। মুখ থেকে স্যুপটা ফেলে দিলেন সোজা দেবর্ষির গায়ে।

এমনসময় গাড়িটা পার্ক করে এসে ঘরে ঢুকলো আবির। দেবর্ষির সারামুখ জ্যাকেটে ভর্তি স্যুপ দেখে নিজের হাসিটা আর থামিয়ে রাখতে পারল না। এতক্ষণের মুচকি মুচকি আটকে রাখা হাসিটা অট্টহাসি পরিণত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। সাথে যোগ দিলেন নারায়নবাবুও। বলা হয় মানুষ শিশু এবং বৃদ্ধ বয়সে এমনই অবুঝের মতো আচরণ করে। নারায়নবাবুও এর ব্যতিক্রম নয়।
নন্দিনীদেবী ছেলের রেগে রক্তিম হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে একটা ঢোক গিললেন। এগিয়ে এলে শশুড়মশাইকে থামানোর জন্য। কিন্তু তিনি তার কাজে থামলেন না।
ঠিক এমন সময়েই বোমাটা ফেটে গেলো "stop it !" নন্দিনীর দেবীর হাতের স্যুপের বাটিটাও রেহাই পেলো না এই রোষের হাত থেকে।ওটা এখন ভাঙ্গা অবস্থায় মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
দেবর্ষি কেটে কেটে বলে উঠলো "দাদান লাস্ট টাইম বলছি খাবারটা কি খাবে ?"

"না" সোজাসাপ্টা জবাব দিলেন নারায়নবাবু।

"তোমার সমস্যা কি কেনো খাচ্ছ না !" বলতে বলতে টেবিলে থাকা অবস্থায় গ্লাস বাটি একে একে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলতে লাগলো দেবর্ষি। এবার আবিরের মুখটাও একেবারে চুপসে গেছে। 
ছেলের এমন পাগলামিতে নন্দিনীদেবী ছুটে এলেন। " বাবান শান্ত হ! চুপ কর। সামান্য একটা ব্যাপারে কি এমন পাগলামি করছিস। এসবে আমি অভ্যস্ত আমি মানিয়ে গুছিয়ে ঠিক খাইয়ে দেবো। এতদিন পর বাড়ি ফিরেছিস যা তুই ঘরে যা। যা বলছি।"

"মম সামান্য কাণ্ড লাগছে তোমার ?আমার মুখটা দেখো সামান্য লাগছে এটা ? কি প্রবলেম খাবারটা খেতে ?! আমি, আমি দেবর্ষি সিংহ রায় নিজে হাতে খাবার খাইয়ে দিচ্ছি সেখানে আমায় রিজেক্ট করছে ! How dare him !"

"বাবান!" ধমকে উঠলেন নন্দিনীদেবী। "কাকে কি বলছিস ভুলে গেছিস ? হ্যাঁ নাহয় খাইয়ে দিতে গেছিস আর সে খায়নি ! বুড়ো বয়সে এমন হয়েই থাকে।  তোর মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে ! এতে এভাবে কেউ রিয়েক্ট করে ! খাওয়াতে তো পারিসনি, খালি রাগ আর রাগ ! কিসের এত রাগ তোর ? কিসের এত অহংবোধ ? খেটেছিস তাই তার ফল পেয়েছিস দাঁড় করিয়েছিস নিজের বিসনেস। নাম কিনেছিস বলে কি মানুষকে মানুষ ভাবছিস না ! লোকে ঠিকই বলে তুই স্বাভাবিক নোস। কথায় কথায় এমন রাগ দেখানো অস্বাভাবিক। তোর কাউন্সিলিং দরকার।" একনাগাড়ে এতটা বলে হাঁপিয়ে উঠলেন নন্দিনী দেবী। ভীষণ রেগে গিয়েছেন উনি। কিন্তু সামনে ছেলের থেকে কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে অবাক হয়ে গেলেন। এতক্ষণে তো তুলকালাম বাঁধানোর কথা ছিল। কই হলো না তো !

দেবর্ষি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে মায়ের দিকে তাকিয়ে। মুখটা লাল হয়ে রয়েছে। রেগে রয়েছে কিনা অভিব্যক্তিটা খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকার পর এবার শ্বশুরমশাই এর দিকে তাকালেন। যাকে নিয়ে এত ঝামেলা তার উপর কোনো প্রভাবই পড়েনি। সে দিব্যি হুইল চেয়ারে বসে হাঁটুর উপর দুই হাত রেখে পা নাচাচ্ছে আর নন্দিনী দেবীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচাচ্ছে।

দেবর্ষি নন্দিনীদেবীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো "আমি হাল ছাড়িনা মম। আমি খাইয়েই ছাড়বো। কাজের কাজ পারিনি মানে কি ! আমি করবোই। And listen there’s nothing in this world that Debarshi Singha Roy can’t do..."

বলে নারায়নবাবুর সামনে হাঁটু গেড়ে আবার বসলো দেবর্ষি। নরম স্বরে বলল "দাদান, প্লিস খেয়ে নাও। আমি তোমায় কাল ঘুরতে নিয়ে যাবো প্রমিজ।"

পা নাচাতে নাচাতে একই ভঙ্গিতে নারায়নবাবু উত্তর দিলেন "হবে না। আমি তাও খাবো না।"

এবার যেন দেবর্ষির মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। হুইল চেয়ারটা নাড়িয়ে চিৎকার করতে করতে বলে উঠলো "কি তখন থেকে খাবো না খাবো না লাগিয়ে রেখেছো হ্যাই ! খেতে তোমাকে হবেই।"

"বাবান! বাড়াবাড়ি করছিস ! এটা কিভাবে কথা বলছিস তুই বয়স্ক মানুষটার সাথে ! তুই পাগল হয়ে গেছিস। রাগে অন্ধ হয়ে গেছিস তুই।" (নন্দিনীদেবী)

"হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল সবাই আমায় পাগল বলে যাও। পাগল তো আমি।" কথাগুলো বলতে বলতে উন্মাদের মত মাথার চুলগুলো খিমচে ধরলো দেবর্ষি। ওকে এখন একদম অন্যরকম লাগছে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আবির এগিয়ে যেতে গেলো। তবে বাঁধ সাধলেন নারায়নবাবু। আবিরের হাতটা আটকে কানে ফিসফিস করে বললেন "ম্যাজিক দেখবি আবির দাদুভাই ?"

আবির একটা ঢোক গিলে বলে উঠলো "দাদু তুমি প্লিস আর গণ্ডগোল পাকিও না। চুপ করে যাও।"

কিন্তু নারায়নবাবু মানলেন না। চেঁচিয়ে বলে উঠলেন "আমি খেতে পারি কিন্তু একটা শর্তে।"

দেবর্ষি মাথার চুলগুলো থেকে হাত সরিয়ে দাদুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো "কি শর্ত ?" এত কিছুর মাঝেও ও শর্তটা পূরণ করতে চায়। দেবর্ষি সিংহ রায় কোনো কাজ পারেনা সেটা তো হতে পারে না। মায়ের বলা কথাটা ভুল প্রমাণ করতেই হবে যে ! নইলে হেরে যাবে তো। তাই ও উদগ্রীব হয়ে উঠল শোনার জন্য।
"কি হলো বলো কি করলে খাবে ?"

সকলের দৃষ্টি এখন নারায়নবাবুর উপর। নারায়নবাবু মনে মনে কিছুটা হেসে নিলেন "মায়ের বলা কথা দেবর্ষি সিংহ রায়ের ইগোতে লেগেছে যে ! তাই রাগের মাথাতেও এখন সব ভুলে আমায় খাওয়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।"
তবে মুখে বললেন "আমার নাতবৌ লাগবে,ব্যাস। যতক্ষণ না আমি নাতবউ পাচ্ছি একদানা খাবারও খাবো না।"

রাগে দেবর্ষির চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে এলো। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল "আবার সেই একই কথা ! খালি বিয়ে,বিয়ে আর বিয়ে। তোমরা কি বিয়ে ছাড়া কিছুই বোঝো না ! বিয়ে মানেই সস্তা হয়ে যাওয়া। মেয়ে মানেই ধোঁকা! অনেক বড় ধোঁকা।" সাইডে থাকা কাচের টেবিলটা ধরে উল্টে দিল। নিমেষের মধ্যেই নিচে পরে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেলো। রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগলো।

"না মেয়ে মানে ধোঁকা নয়। নিজের মাকে দেখ। ধোঁকা লাগছে ? ঠিক আছে তুই যদি এখনও সেই অতীতের ঘটনায় বাঁধা পরে থাকিস তাহলে আমার আর কিছুই বলার নেই। তবে শুনে রাখ, নাতবৌ এর দেখা না পেলে আমি কোনো খাবার মুখে তুলবো না। অনশন করবো আমি, অনশন। আর এভাবেই একদিন মরে যাব। পস্তাবি তখন খুব পস্তাবি।" বলতে বলতে নারায়নবাবু নিজের হুইল চেয়ারের চাকা নিজেই টেনে টেনে চলে গেলেন নিজের ঘরে।

দেবর্ষি কিছুক্ষণ থম মেরে দাড়িয়ে থাকার পর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ঠাস করে নিজের ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

নন্দিনী দেবী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ছেলেকে আজ আর খাওয়ানো যাবে না তিনি জানেন। "আবির অনেক তো রাত হলো খেয়ে নাও। তোমার স্যার তো আর উপর থেকে নামবে না।"

"না না ম্যাম বাড়িতে মা অপেক্ষা করছে। আমি বাড়ি যাই এবার। আজ যা হলো কাল থেকে স্যারের মুড খুব খারাপ থাকবে।আমি বরং আসি আজকে। "

"গাড়িটা নিয়ে যাও বরং।"

"না না লাগবে না...."

শাসনের ভঙ্গিতে নন্দিনীদেবী বলে উঠলেন "যা বলেছি চুপচাপ শোনা হয় যেন। কোনো ভনিতা নয়।"

"আচ্ছা ঠিক আছে।" বলে বেরিয়ে গেলো আবির।
.
.
.
.
চলবে.....