Read Anti Ageing Lifestyle by KRISHNA DEBNATH in Bengali স্বাস্থ্য | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

এন্টি এজিং লাইফস্টাইল

আমরা সাধারণত মনে করি বয়স বাড়া মানেই শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, শক্তি কমে যাওয়া, চেহারায় বয়সের ছাপ পড়া ইত্যাদি। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ও জীবনযাত্রার গবেষণা বলছে— বয়স বাড়লেও সঠিক জীবনশৈলী, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক ভারসাম্যের মাধ্যমে হরমোনাল ব্যালেন্স অনেকাংশে ঠিক রাখা যায় এবং তারুণ্যও অনেকদিন ধরে রাখা সম্ভব।

বয়স তো বাড়বেই। আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু হরমোন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এগুলো হচ্ছে:

১) গ্রোথ হরমোন (GH): টিস্যু রিপেয়ার, মাংসপেশি ও ফ্যাট মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। বয়সের সাথে কমে যায়।
২) টেস্টোস্টেরন (পুরুষ)/ইস্ট্রোজেন-প্রজেস্টেরন (নারী): যৌনস্বাস্থ্য, শক্তি, হাড়ের দৃঢ়তা ও মুডের সঙ্গে সম্পর্কিত। ৩০–৪০ এর পর থেকেই ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে।
৩) ডিএইচইএ (DHEA): এক ধরণের "অ্যান্টি-এজিং" হরমোন, যা কর্টিসলকে নিয়ন্ত্রণ করে। বয়সের সাথে কমে যায়।
৪) মেলাটোনিন: ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবেও কাজ করে। বয়সের সাথে এর নিঃসরণ কমে যায়।
৫) ইনসুলিন: বয়সের সাথে কোষ ইনসুলিনে কম সাড়া দেয় (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স), ফলে এনার্জি ব্যালেন্স বিঘ্নিত হয়।

বয়স বাড়লে কোনো ওষুধ দিয়েই এসব হরমোনকে ঠিক করা যায় না। একমাত্র জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রেখে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুড়িয়ে যাওয়ার গতিকে কমিয়ে দেওয়া যায়।
যাদের বয়স পঞ্চাশ হয়ে গেছে, মনে হচ্ছে বার্ধক্য এসে যাবে; তাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। মেনে চলতে পারলে আরও অন্তত কুড়ি বছর জওয়ান থাকতে পারবেন।

১) রেগুলার অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। বেরি জাতীয় ফল, সবুজ শাকসবজি, হলুদ, গ্রিন টি – এগুলো কোষের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে হরমোনাল ভারসাম্য রক্ষা করে।

২) নিয়মিত হেলদি ফ্যাট খেতে হবে। অ্যাভোকাডো তো এখন আমাদের রাজ্যের বাজারেও পাওয়া যায়। বাজেটে কুলালে খেতে পারেন। এছাড়াও কাঠ বাদাম, অলিভ অয়েল, ফ্ল্যাক্সসিড, ফ্যাটি ফিশ – এগুলো থেকে হরমোন তৈরির উপাদান (গুড কোলেস্টেরল/ওমেগা-৩) পাওয়া যায়।

৩) প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রোটিন খেতে হবে। প্রতিদিন শরীরের ওজন প্রতি কেজিতে ১–১.২ গ্রাম প্রোটিন নিলে গ্রোথ হরমোন ও টেস্টোস্টেরন স্বাভাবিক থাকে।

৪) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফার্মেন্টেড ফুড রাখতে হবে। খাঁটি দই, কিমচি, কেফির, বিটের কানজি – এগুলো গাট মাইক্রোবায়োম ঠিক রেখে ইনসুলিন ও কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৫) শুধু চিনি নয়, হাই কার্ব জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। এছাড়াও সব ধরণের প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, প্রদাহ ও হরমোনাল ডিসঅর্ডার সৃষ্টি করে।

৬) রেগুলার ব্যায়াম করতে হবে। তাতে বয়সজনিত কারণে মাসল ক্ষয় হয়ে যাবার প্রবণতাকে রোধ করা সম্ভব হবে। স্ট্রেংথ ট্রেনিং ও হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভেল ট্রেনিং খুবই উপযোগী। এসব যদি করতে নাও পারেন, তাহলে জোরে জোরে হাঁটুন এবং সুযোগ পেলেই দৌড়াদৌড়ি করুন। যোগাসন করুন।

৭) নিয়মিত মেডিটেশন করুন। মানসিক প্রশান্তির চর্চা করুন। বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করুন। রাজনৈতিক কূটকাচালির মধ্যে না জড়িয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলেই মন ভালো থাকবে।

৮) ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম একান্ত প্রয়োজন। এতে গ্রোথ হরমোন, মেলাটোনিন ও ইনসুলিন সেনসিটিভিটি পুনরুদ্ধার হয়। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যায়।

৯) এই সময়ে শরীরকে ডিটক্স করে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এরজন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা পরিমিত সময়ের উপবাস ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়, অটোফ্যাজি সক্রিয় করে ও গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধি করে।

১০) লিভার ডিটক্সিফিকেশনের জন্য কিছু প্রাকৃতিক জিনিস নিতে পারেন। লেবুর জল, বিট, ব্রকলি, গ্রিন ভেজিটেবলস লিভারের এনজাইমকে সক্রিয় করতে খুবই কার্যকর।

১১) আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, তবুও কিছু ঘাটতি থেকেই যায়। সুতরাং বয়সের সাথে সাথে ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য আরও কিছু ফুড সাপ্লিমেন্ট অবশ্যই নেওয়া দরকার।

১২) নিজের থেকে কম বয়সের লোকদের সাথে সময় কাটান। যাদের চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন আছে, তাদের সঙ্গে চললে আপনিও আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন। শরীরে গ্রোথ হরমোনের প্রোডাকশন শুরু করার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিক্রেট।

১৩) মাঝেমধ্যে পছন্দের জায়গায় ঘুরতে যান। নিজের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে মনটাকে স্বাধীনতা উপভোগ করতে দিন। দেখবেন মনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আপনার শরীরও অনেক তাজা হয়ে উঠবে।

১৪) সবসময় পজেটিভ চিন্তা করুন। আপনি যদি ঈশ্বর বিশ্বাসী হন, তাহলে ঈশ্বরের মঙ্গল ইচ্ছাকে সম্মান করে সকল অবস্থায় নির্বিকার থাকতে চেষ্টা করুন। আর যদি ঈশ্বর বিশ্বাসী না হন, তাহলেও কোনো ক্ষতি নেই। ঈশ্বর না থাকলেও এই ইউনিভার্স তো আছেই ! সুতরাং তার উপর ভরসা রেখে চলুন। মনের মধ্যে সবসময়ই একটা পজেটিভ ওয়েব অনুভব করবেন।

মনে রাখবেন, বয়স বাড়লেও হরমোনাল ব্যালান্স অনেকাংশেই আমাদের হাতে। সঠিক খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক প্রশান্তি ও যথেষ্ট ঘুম – এই সবগুলো মিলেই অ্যান্টি-এজিং লাইফস্টাইল তৈরি হয়। এতে শুধু বাইরের তারুণ্য নয়, ভেতরের শক্তি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক স্বচ্ছতাও দীর্ঘদিন বজায় থাকে।