Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জুবিন গার্গ : দুর্ঘটনা নাকি হত্যা ?




জুবিন গার্গ : দুর্ঘটনা নাকি হত্যা ?

আসামের আকাশ যেন এখন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। প্রতিটি গলিতে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি আড্ডায় আজ একটাই নাম উচ্চারিত হচ্ছে— জুবিন গার্গ। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই কিংবদন্তি শিল্পী হঠাৎই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। খবর এল— সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করার সময় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই মৃত্যু কি নিছক একটি দুর্ঘটনা, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে কোনো গভীর রহস্য ?

প্রথম দিকে সংবাদমাধ্যম জানাল— এটি একটি ডাইভিং অ্যাকসিডেন্ট। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রশ্নের ঝড় উঠল। কেন না জানা গেল, সেদিন তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন তাদেরকে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পাশাপাশি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে অটোপসি রিপোর্টও অপরিহার্য বলে জানানো হয়েছে। এখন জুবিনের ভক্তদের হৃদয়ে একটাই প্রশ্ন— “আমাদের জুবিনদা সত্যিই কি দুর্ঘটনায় মারা গেলেন, নাকি তাঁকে অন্ধকার কোনো ষড়যন্ত্র গ্রাস করল ?”

জনমতের ক্ষোভ ও কান্না :

আসামের যুব সমাজের শোক আজ ক্ষোভে রূপ নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছে— “এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়।” কারও চোখে জল, কারও মুখে রাগ। সবাই সবার মতো করে এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।

কেউ বলছে, “জুবিনদা কখনো একা ছিলেন না, তাহলে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল ?”

আবার কেউ লিখছে, “এই মৃত্যুতে অনেক প্রশ্ন আছে, যার উত্তর চাই।”


আসামের মাটি জানে, জুবিন গার্গ শুধুমাত্র একজন গায়ক ছিলেন না; তিনি ছিলেন মানুষের প্রাণের স্পন্দন। তাঁর গান ছিল প্রেমের, বিদ্রোহের, প্রতিবাদের, আবার আশারও। তাই তাঁর মৃত্যু নিয়ে মানুষ শুধু শোক প্রকাশ করছে না, ন্যায়বিচারের দাবিও তুলছে।

সরকারের হস্তক্ষেপ :

মানুষের এই ক্ষোভকে গুরুত্ব দিয়েই আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা টুইট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন— জুবিন গার্গের মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই Multiple FIRs দায়ের হয়েছে শ‍্যামকানু মহান্ত এবং সিদ্ধার্থ শর্মা-র বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন— সব FIR এখন CID-এর হাতে হস্তান্তরিত করা হবে এবং একটি consolidated case তৈরি করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালানো হবে।

এই ঘোষণা যেন আরও রহস্য বাড়িয়ে দিল। হঠাৎ করে কেন এতোগুলো FIR ? কী সম্পর্ক ছিল এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে ? কী কারণে তাঁদের নাম উঠে এল ? প্রশ্ন যত বাড়ছে, ততই মনে হচ্ছে— এ মৃত্যুতে কিছু একটা গোপন সত্য লুকিয়ে আছে অবশ্যই।

মিডিয়ার বিভ্রান্তি :

আসামের মিডিয়াও যেন দ্বিধা বিভক্ত। কেউ এটিকে সরাসরি Accidental Death বলছে, আবার কেউ লিখছে Unclear Circumstances। আবার সামাজিক মাধ্যমে গুজবের ঢেউ— “হত্যা নাকি দুর্ঘটনা ?” প্রশ্নটা এখন প্রতিটি মানুষের মনে। আসামের মানুষ সত্য জানতে চায়।

একজন কিংবদন্তির অকাল প্রস্থান :

কিন্তু সব প্রশ্নের আড়ালে এক নির্মম সত্য রয়েছে— জুবিন গার্গ আর নেই। তাঁর গান “ইয়া আলি” থেকে “মই আসমীয়া”, প্রতিটি সুর যেন আজ কাঁদছে। তাঁর কণ্ঠে বড় হয়েছে এক প্রজন্ম, তাঁর গানে ভেসেছে প্রেমিক-প্রেমিকা, জেগেছে প্রতিবাদের আগুন। সেই মানুষটাই আজ অন্ধকার এক রহস্যের মধ্যে চলে গেছেন। তাঁর এই মৃত্যুর ঘটনায় শুধু আসাম নয়, ত্রিপুরাসহ পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলি এবং পশ্চিমবঙ্গেও শোকের আবহ বিরাজ করছে।

সত্য উদঘাটনের দাবি :

আজ আসামের আকাশে শুধু কান্নাই নয়, প্রশ্নও ভাসছে। জুবিন গার্গের মৃত্যু কি আসলেই একটি দুর্ঘটনা ? নাকি এই অকাল প্রয়াণের পেছনেও রয়েছে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র ? FIR, CID তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ— সবকিছুই ইঙ্গিত করছে এ ঘটনা এতটা সরল নয়।

আমরা প্রার্থনা করি, তদন্ত হোক নিরপেক্ষভাবে, সত্য বেরিয়ে আসুক আলোর সম্মুখে। কারণ জুবিন গার্গের মতো একজন কিংবদন্তির মৃত্যু যদি রহস্যে ঢাকা থাকে, তবে সেটা শুধু একটি পরিবারের ক্ষতি নয়— আসামের আত্মার ক্ষত।

আজ জুবিন নেই, কিন্তু তাঁর গান আছে, তাঁর কণ্ঠ আছে, তাঁর স্মৃতি আছে। আর আছে মানুষের দাবি— “আমাদের প্রিয় শিল্পীর মৃত্যুর ঘটনার আসল সত্য প্রকাশিত হোক, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।”