Read Gut-Brain Axis by KRISHNA DEBNATH in Bengali স্বাস্থ্য | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

পেট যখন সেকেন্ড ব্রেইন

Gut-Brain Axis: শরীর ও মনের সেতুবন্ধন 

মানুষের শরীরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক সম্পর্কগুলোর একটি হলো Gut-Brain Axis। এটা হলো আমাদের মস্তিষ্ক (Brain) আর অন্ত্র (Gut)-এর মধ্যে একটি অবিরাম যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা গড়ে ওঠে Vagus Nerve-এর মাধ্যমে।

মাতৃগর্ভে ভ্রূণ সৃষ্টির শুরুতেই কোষ বিভাজন থেকে এ দুই অঙ্গের ভিত্তি তৈরি হয়। ব্রেইন সেল বিভাজিত হয়ে একটি সেল রূপ নেয় মস্তিষ্কের, আরেকটি সেল রূপ নেয় অন্ত্র বা গাটের। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন— Brain আর Gut হলো “একই পরিবারের দুই ভাই”। এবং এ কারণেই মানুষের গাটকে সেকেন্ড ব্রেইনও বলা হয়।

বড় ভাই অর্থাৎ মস্তিষ্ক থাকে টপ ফ্লোরে (মাথায়)। সে চিন্তা করে, সিদ্ধান্ত নেয় এবং নির্দেশ দেয়।

ছোট ভাই অর্থাৎ গাট থাকে সেকেন্ড ফ্লোরে (পেটে)। সে খাবার হজম করে, শরীরকে চালনা করে এবং শরীরের বিভিন্ন ফাংশনগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।


এই দুই ভাইয়ের মধ্যে দিনরাত সিগন্যাল আদান-প্রদান হয়। আর এই সিগন্যালের মূল চালিকাশক্তি হলো Gut Microbiome বা ব্যাকটেরিয়া। এই সিগন্যাল যে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আদান প্রদান করা হয় তার নাম হচ্ছে ভেগাস নার্ভ।


গাট মাইক্রোবায়োম কী ?

আমাদের অন্ত্রে রয়েছে— প্রায় ৩৯ ট্রিলিয়ন মাইক্রোবস, যা আসলে মানুষের মোট কোষের সংখ্যার থেকেও বেশি !

প্রায় ১৫০০০-এর বেশি ভেরাইটির ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীব। এরা শুধু হজম নয়, শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। 

কী কী কাজ করে ?

১) ভিটামিন তৈরি করে (যেমন: B12, K2 ইত্যাদি)।
২) শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী শর্ট চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে।
৩) মিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
৪) হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে (যেমন: সেরোটোনিনের প্রায় ৯০% গাটে তৈরি হয়, যা “হ্যাপিনেস হরমোন”)।
৫) ইনফ্লেমেশন কমায়, ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।


যখন এদের ব্যালান্স নষ্ট হয় তখন কী হয় ?

গাট মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য নষ্ট হলে একে বলে Dysbiosis। তখন তার প্রভাব সারা শরীরের উপরেই পড়ে—

১) ঘুমের সমস্যা: গাট থেকে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিনের উৎপাদন কমে যায়, ফলে ইনসমনিয়া বা অস্থির ঘুমের লক্ষণ দেখা দেয়।

২) মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশন: গাট থেকে ব্রেইন পর্যন্ত ভুল সিগন্যাল পৌঁছায়, ফলে এংজাইটি ও মুড ডিসঅর্ডার বাড়ে।

৩) ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া: ব্যালান্স নষ্ট হলে ইনফ্লেমেশন বাড়ে, যা সরাসরি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪) হজমের সমস্যা: এসিডিটি, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) ইত্যাদি দেখা দেয়।

৫) ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া: সহজেই সংক্রমণ হয়, অ্যালার্জি বেড়ে যায়।

৬) ডায়াবেটিস ও স্থূলতা: গাট ব্যাকটেরিয়ার গঠন পরিবর্তিত হলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়তে পারে। এরফলে শরীর মোটা হতে থাকে এবং ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে।

কীভাবে গাট-ব্রেইন এক্সিসকে সুস্থ রাখবেন ?

১) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান: শাকসবজি, ডাল, ফল, বার্লি, ওটস। এগুলো গাট ব্যাকটেরিয়ার প্রিয় খাবার।

২) ফারমেন্টেড ফুড যোগ করুন: খাঁটি দই, ইডলি, কানজি, কিমচি, সাওয়ারক্রাউট ইত্যাদি।

৩) অ্যান্টিবায়োটিক এড়িয়ে চলুন: এগুলো ভালো ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে।

৪) স্ট্রেস ম্যানেজ করুন: মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, প্রণায়াম, শ্বাসের ব্যায়াম করলে গাট-ব্রেইন এক্সিস স্থিতিশীল হয়।

৫) প্রচুর পরিমাণে জলপান করুন: এতে টক্সিন বেরিয়ে যায়, ব্যাকটেরিয়া ফ্লোরা সুস্থ থাকে।

মস্তিষ্ক আর অন্ত্রের এই যোগাযোগকে উপেক্ষা করলে চলবে না। Gut-Brain Axis আসলে সেই অদৃশ্য সুতো, যা শরীর এবং মনকে এক সূত্রে বেঁধে রাখে। গাট মাইক্রোবায়োমের সঠিক ভারসাম্য মানেই—
ভালো হজম,
শান্ত মন,
নির্বিঘ্ন ঘুম,
আর দীর্ঘস্থায়ী সুস্থ জীবন।

তাই মনে রাখো— তোমার মুড, ঘুম, এমনকি ব্লাড প্রেশারও অনেকাংশে তোমার গাটের ওপর নির্ভর করছে।
অর্থাৎ, গাট খুশি থাকলে ব্রেইনও খুশি থাকবে ! 

পুনশ্চ: এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ে জনৈক সম্মানিত পাঠক আমাকে মেসেজ করেছিলেন।  তাই উনার জন্যই আমি এই লেখাটি তৈরি করলাম। আমার এই লেখা থেকে তিনি যদি কিছুটাও উপকৃত হন তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।
আপনাদের মধ্যেও কেউ যদি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আমার কাছে কোনো রকম বিশেষ লেখা চান, তাহলে অবশ্যই আমাকে মেসেজ করে জানাতে পারেন।