Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 19

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ১৯

❤♣❤♣❤♣❤

শাক্য আর ওর দলবলকে দেখে উপস্থিত সবাই মাঝখানে পথ করে দেয় প্রথমে, তারপরই প্রায় সবাই একসঙ্গে সমস্ত ঘটনা বোঝাতে থাকে ওকে। শাক্য ততক্ষণে সিদ্ধার্থ আর নিজের গার্ডদের কাছে পৌঁছেছে। গার্ড দুজন অক্ষত, তবে সিদ্ধার্থর জামাকাপড় ধুলোমাখা, কোথাও কোথাও কালচে ছোপ দেখে রক্তও মনে হল শাক্যর। ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছে, হাতে সিগারেট। ছেলেমেয়েরা শ্বাস টানে, শাক্য বুঝতে পারে, ওর চেহারা দেখে ভয় পেয়েছে এরা। 

শাক্য একবার ওদের দিকে ফেরে, "তোমরা কি বাড়িতে চলে যাবে? আমার এখানে সময় লাগবে।" কেউ অবশ্য রাজি হয় না। 

শিল্টন এখানে, সঙ্গে কমল। অবশ্য কমল এসেছে ঘটনা ঘটার পর। বাবুয়া, শিচাং, জনি, ডাবলু, বিকাশ আর রিঙ্গো, ওদের ছজন ফরেস্ট গার্ড রয়েছে জঙ্গলের সামনে। হাতিরা দিক বদলায় কিনা নজরে রাখছে ওরা। কিছু স্থানীয় লোকজনও কৌতূহলে সেখানে। 

শিল্টন চটপট এগিয়ে এসে পুরো বিবরণ দেয়। ও বলে, "স্যার আমরা হাটে ছিলাম, নিজের কেনাকাটার জন্য। হঠাৎই হাতির পাল এখানে আসছে দেখি। লোকজন প্রথমে ঘাবড়ে গেছিল। জঙ্গল লাগোয়াই সবার বাড়ি ঘরদোর, তবে এমন তো কেউ দেখেনি। পুলিশের চারজনই, সিদ্ধার্থস্যার, ঋষিস্যার, তাপসস্যার আর সঞ্জয়দা এখানে ছিল। ওরা চীৎকার করে লোকজনকে রাস্তার ধার ছেড়ে ঢালের দিকে চলে যেতে বলেছিল, নিজেরাও চলে এসেছিল। এইতো ঋষিস্যার, আপনি বলুন না।"

ঋষি এগিয়ে এসেছিল। ও বলে, "আমরা তো ভেবেছিলাম হাতি সোজা রাস্তা ধরে নামবে। যদিও হাটে অন্ততঃ জনাপঞ্চাশ লোক, তাও সবাই যদি ঢালের দিকে সরে যায়, কোনো বাধা না পেলে হাতিরা নিশ্চয়ই কারও ক্ষতি করবে না। বিশেষ করে হাতি চট করে পাশে বা পিছনে ফিরতে পারে না। এর মধ্যে মুশকিল হল, একটি মেয়ে ভয় পেয়ে চীৎকার চেঁচামেচিতে ঘাবড়ে গিয়ে উলটো পাহাড়ের বাঁকের দিকে দৌড়তে শুরু করে। ততক্ষণে হাতির দলটা মোড়ের সামনে।"

শাক্য থ হয়ে গেছে, এরকম সাংঘাতিক একটা ঘটনায়। ওর ভয় ছিল, জঙ্গলে নয়া চিতার আমদানি হলে পুরনো জন্তু বিশেষ করে হাতিরা বিরক্ত হবে। কিন্তু এমনটা ও স্বপ্নেও ভাবেনি। শুকনো জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চেটে বলে, "তারপর কি হল? মিঃ রায় ফায়ার করেন?"

- "না না, স্যার তখন ফায়ার করলে তো হাতিরা ক্ষেপে যেত, মেয়েটিকে বাঁচানোর কোনো চান্সই থাকত না।" ঋষি মাথা নাড়ে, "স্যার ওদিকে দৌড়ে যান, মেয়েটিকে হাত ধরে এদিকে নিয়ে আসবেন বলে ঘুরেও ছিলেন, ততক্ষণে হাতিরা আরও কাছে এসে যাচ্ছে, সামনে ওদের দুজনকে দৌড়তে দেখে বোধহয় ক্ষেপেও যাচ্ছিল, প্রথমবার একটা হাতি ডেকে উঠল। আমার তো কানে তালা লেগে গেছিল। স্যার তার মধ্যেই মন ঠিক করে মেয়েটিকে নিয়ে খাদের দিকটায় ছুটে যান। শেষের দিকে আর সময় নেই দেখে লাফ দিয়ে গড়িয়ে নামার চেষ্টা করেছিলেন। তাতেই ছরে টরে গেছে।" 

ঋষি দম নিতে থামতেই শাক্য ঝাঁপিয়ে পড়ে, "মেয়েটি কেমন আছে? কোথায় মেয়েটা?"

- "ও রঙ্গিলা স্যার। কুশনির মেয়ে। ঠিক আছে, ভাল আছে। ওর সামান্যই কেটে কুটে গেছে। যা যেটুকু সিদ্ধার্থস্যারের লেগেছে। তবে উনি তো জায়গা ছেড়ে যেতে রাজি না। তাপসস্যার আর সঞ্জয়দা গাড়িতে করে রঙ্গিলাকে হেলথ সেন্টারে নিয়ে গেছিলেন। টেটভ্যাক দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। কুশনি মেয়েকে নিয়ে বাড়ি গেছে।" কমল এবার কথা বলে। 

- "গুলি চলল কখন?" শাক্য মূল কথা ভোলেনি। 

- "খাদের দিকে নেমে যাওয়ার পর লোকজন কেউ রাস্তায় নেই, সবাই ঢালে নামতে পেরেছে দেখে দাদা ফায়ার করে। আমাদের দুজনেরই গান লোডেড ছিল। আমাকে চেঁচিয়ে বলেছিল, ও আগে একরাউন্ড ফায়ার করছে, যদি হাতিরা না থামে, তখন আমি। দরকার হয়নি। দাদা আকাশের দিকে ফায়ার করার আগেই হাতিদের দল ভেঙে গেছিল দৌড়োদৌড়িতে। তারপর হাতিরা হাটের ফাঁকা চত্বরে ধীরে ধীরে ঘুরে ফিরে গেল।"

- "আপনাদের রিভলভারে হাতির কিছু হওয়ার কথা না, কিন্তু গায়ে লাগলে, আহত হলে আরও ডেঞ্জারাস হয়ে উঠবে।" আক্ষেপে মাথা নাড়ে শাক্য। 

- "নিশ্চিন্ত থাকুন মিঃ গোস্বামী, একটি হাতিরও কোনো ক্ষতি হয়নি। আমার আইফোনে আমি ভিডিও করেছি এপাশ থেকে। দুবার চালিয়ে দেখেছি আমি। দাদার গানের মুখ কোনদিকে আপনিও দেখতে পাবেন, হাতিদেরও।" মুখ কালো করে শাক্যর হাতে ফোনটা দেয় ঋষি। 

সিদ্ধার্থর ফোন করা শেষ, ও এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপুল আবেগে শাক্য এগিয়ে যায় দু পা, "থ্যাঙ্ক ইউ সিদ্ধার্থ, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। তুমি মানে আপনি যা করেছেন, আমি ভাবতে পারছি না।"

সিদ্ধার্থর মুখ কিন্তু কালো, "আপনি থাকলেও এটাই করতেন।"

- "ঘন্টাখানেক হতে যাচ্ছে দাদা। এবার চলো। তোমার টেটভ্যাক নিতে হবে, স্কারগুলো ওয়াশ করতে হবে। রক্ত শুকিয়ে গেছে। এবার চলো। মিঃ গোস্বামী এসে গেছেন।" ঋষি সিদ্ধার্থর কাঁধে হাত দিয়ে ওকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। 

- "প্লিজ সিদ্ধার্থ, গো এ্যাহেড। টেক এ রেস্ট। তুমি যতদূর সম্ভব করেছ। বাকিটা আমি দেখছি।" শাক্যও নরমভাবে বলে। 

- "শাক্য, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।" সিদ্ধার্থ নড়েনি, সোজা তাকিয়ে আছে শাক্যর চোখের দিকে।

[ ❤ সিদ্ধার্থ কি কথা বলতে চায়? এবার কি শাক্য তার কথায় উত্তর দেবে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে