Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ? - 6

পর্ব ৬ : 

গুমনামী বাবার ছদ্মবেশে — অদৃশ্য নেতাজীর দীর্ঘ ছায়া  

তাইহোকুর আকাশে যে বিমান দুর্ঘটনার গল্প রটানো হলো, তার কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ কখনোই পাওয়া গেল না। মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট থেকে এটা পরিষ্কার যে সেদিন বা তার আগে পরের এক মাসের মধ্যেও কোনো ধরনের বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি।
রাশিয়ার রহস্যময় অধ্যায়ে তাঁর নাম বারবার উঠে এলো, কিন্তু সত্য যেন আরও গোপনীয়তার অবগুণ্ঠনে মুখ ঢেকে নিল।
আর ঠিক তখনই ভারতের মাটিতে ভেসে উঠতে শুরু করল এক অদ্ভুত কানাঘুষো—একজন অজ্ঞাত সাধু, যিনি গোপনে বাস করছেন এক রহস্যের ঘেরাটোপে; তাঁকে ঘিরে যত রহস্য, সবই একজন মানুষের ছায়ার দিকে ইঙ্গিত করে, তিনি আর কেউ নন— নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।  

লোকেরা তাঁকে ডাকতে শুরু করল—**“গুমনামী বাবা।”** বলে।


রাম ভবনের গোপন সাক্ষাৎ : গবেষণার সূত্রে ও স্থানীয় কাহিনীতে আরও কিছু ঘটনার কথা উঠে এসেছে—  
- উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন এক মুখ্যমন্ত্রী (এইচ এন বহুগুণা) নাকি গোপনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাম ভবনে এবং দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।  
- পরবর্তী সময়ে বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা ও ভবিষ্যতের রাষ্ট্রপতি ডঃ প্রণব মুখার্জিও সেখানে গিয়ে দেখা করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। বেরিয়ে এসে তিনি শুধু মন্তব্য করেছিলেন: *“This man is extraordinary.”*  
- এগুলো কোনো সরকারি রেকর্ডে নেই, কিন্তু স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা শপথ করে বলেছেন—এই সাক্ষাৎ সত্যিই ঘটেছিল।  

এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামী দুর্গাপ্রসাদ পান্ডে, শ্রীকান্ত শর্মা প্রমুখ সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন—তাঁরা যখন গুমনামী বাবার মুখ ও কণ্ঠ শুনেছিলেন, তখন মনে হয়েছিল তিনি আর কেউ নন, নেতাজী নিজেই।  


প্রমাণের অদ্ভুত সারি : রাম ভবন থেকে উদ্ধার হলো নেতাজীর মতো হস্তাক্ষরে লেখা ডজন ডজন চিঠি। 
সেখানে যে সকল বই পাওয়া গিয়েছে, সেগুলোর পাতায় পাতায় পাওয়া গেল নেতাজীর অবিকল হাতের লেখার মতো নোট।
দলিল, নথি, নানারকম কাগজপত্র— যার প্রতিটি পাতায় লুকিয়ে আছে নেতাজীর স্মৃতি।  
এমনকি এমন কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রীও পাওয়া গেল, যা কেবল তাঁরই হতে পারে।  

এই সব দেখে প্রশ্ন উঠল—  
এক সাধুর ঘরে এত নেতাজী সম্পর্কিত জিনিসপত্র এলো কীভাবে ?  
তিনি কি কেবল একজ সাধু ছিলেন,  
না কি সত্যিই সেই মানুষ, যাঁকে গোটা দেশ নেতাজী বলে জানে ?  



গোপন সাক্ষাৎকারের কাহিনী : স্থানীয়রা বলতেন— তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের এক মুখ্যমন্ত্রী (হেমবতী নন্দন বহুগুণা) গোপনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।  
আরও অবাক করা কথা হলো, একবার প্রণব মুখার্জিও নাকি সেখানে গিয়েছিলেন।  
বেরিয়ে এসে শুধু বলেছিলেন—  
**“This man is extraordinary.”**  

কোনও সরকারি রেকর্ডে এসব ঘটনার ছিটেফোঁটাও নেই। থাকার কথাও না।
কিন্তু গুজব তো শুধুই হাওয়া নয়— তারও ভিত্তি থাকে।  

DNA পরীক্ষার বিতর্ক : ২০০০-এর দশকে মুখার্জি কমিশন তদন্ত শুরু করে। সেই কমিশনের উদ্যোগে গুমনামী বাবার দাঁত ও জিনিসপত্র থেকে **DNA টেস্ট** করানো হয়েছিল।  
রিপোর্টে বলা হয়— মিল পাওয়া যায়নি।  

কিন্তু গবেষকরা স্পষ্ট অভিযোগ তুলেছেন—  
**DNA পরীক্ষার মূল ‘electropherogram’ ডেটা প্রকাশ করা হয়নি।**  
অর্থাৎ কাঁচা রিপোর্ট গোপন রাখা হয়েছে।  
যা প্রমাণ করে— ফলাফল আড়াল করা হয়েছে, আর এটাই ছিল এক ধরনের ঘোটালা।  

অতএব, সরকারি রিপোর্ট নেতাজীকে অস্বীকার করলেও, প্রশ্নের চেয়েও বড় প্রশ্ন থেকে গেল—  
যদি সত্যিই তিনি স্রেফ একজন সাধু হন, তবে কেন তাঁর ইলেক্ট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট প্রকাশ করা হলো না ?
যদি তিনি সত্যিই নেতাজী না হন, তবে এই গোপনীয়তার প্রয়োজন কী ছিল ?  
কেনই বা আজও এই পুরো সত্যটাকে গোপন রাখা হয়েছে ?  



প্রশ্নের ঘূর্ণিঝড় : গুমনামী বাবার ছদ্মবেশে লুকোনো সেই অদৃশ্য মানুষটা কে ছিলেন, তার কোনও সরকারি উত্তর নেই।  
কিন্তু রাম ভবনের প্রতিটি দেয়াল যেন আজও ফিসফিস করে বলে—  
“তিনিই নেতাজী ছিলেন।”  

প্রমাণ আছে, আবার নেইও।  
সাক্ষ্য আছে, কিন্তু সরকারি নথিতে নীরবতা।  
আর এই নীরবতাই প্রমাণ করে—  
সত্যকে ঢেকে রাখার জন্য ভয়ের এক অদৃশ্য হাত সবসময় সক্রিয় ছিল।  

এখন প্রশ্ন হলো—  
গুমনামী বাবা সত্যিই যদি নেতাজী হন, তবে তিনি কেন আড়ালে থাকলেন ?  
এটা কি কেবল ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস,  
নাকি আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপ আর ক্ষমতাধরদের ভয় তাঁর অদৃশ্য জীবনের আসল কারণ ?


আড়ালের কারণের ইঙ্গিত : গুমনামী বাবা নিজেও নাকি একাধিকবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন—  
**“আমি প্রকাশ্যে এলে দেশ আন্তর্জাতিক চাপে পড়বে।”**  

তাহলে কি সত্যিই তাঁর নীরবতা ছিল এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ?  
নাকি এর পেছনে ছিল নেহেরু-স্ট্যালিনের কোনও অলিখিত বোঝাপড়া?  
আর যদি তাই হয়, তবে সেই চুক্তির শর্তই বা কী ছিল ?