The Author DR RAJESH CHOUDHURI অনুসরণ করুন Current Read ভালবাসার যজ্ঞ By DR RAJESH CHOUDHURI বাংলা Motivational Stories Share Facebook Twitter Whatsapp Featured Books মাতঙ্গীর অভিশাপ - 3 তৃতীয় পর্ব: “রহস্যময় অতিথি”গিরিরামপুরে সেদিন সন্ধ্যা নেমেছ... ভালবাসার যজ্ঞ শুধু নীতিবাক্য, উপদেশ ও বানী শ্রবন- পঠন কারো জীবন পরিচালিত... THE TALE OF LOVE - 15 Catagory-(Romantic+Thriller️+Psycho+Toxic+Crime️+Foreign pl... অচেনা আলো - 5 “ঝড়ের আভাস”---নীরব অস্থিরতাদিনগুলো বদলাচ্ছিল।মিশা আর ইশানি... মার্কস বাই সিন - 5 মার্কস বাই সিন-৫পানশালার দরজা ঠেলে বৃষ্টিভেজা অন্ধকার রাস্তা... বিভাগ Short Stories আধ্যাত্মিক গল্প Fiction Stories Motivational Stories Classic Stories Children Stories Comedy stories పత్రిక কবিতা ভ্রমণ বিবরণ Women Focused নাটক Love Stories Detective stories Moral Stories Adventure Stories Human Science মনোবিজ্ঞান স্বাস্থ্য জীবনী Cooking Recipe চিঠি Horror Stories Film Reviews Mythological Stories Book Reviews থ্রিলার Science-Fiction ব্যবসায় খেলা প্রাণী জ্যোতিষ বিজ্ঞান কিছু Crime stories শেয়ারড ভালবাসার যজ্ঞ (1) 42 150 শুধু নীতিবাক্য, উপদেশ ও বানী শ্রবন- পঠন কারো জীবন পরিচালিত করতে পারেনা, আমাদের জীবনচলনায় কোন পরিবর্তন আনতে পারেনা, - যদি'না সেই বানীকারক মহাপুরুষের প্রতি আমাদের সক্রিয় ভালবাসা ও টান থাকে। সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা " ধূমপান ক্যান্সারের কারন" সতর্কবার্তাটি লক্ষ করে কোন ধূমপানে আসক্ত ব্যাক্তি ধূম্রপানের কুঅভ্যাস বর্জন করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না। বরং যারাই দীর্ঘদিনের ধূমপানের অভ্যাস বর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে তাদের কোন প্রিয় ভালবাসার মানুষ, যেমন মা- বাবা- স্ত্রী- প্রেমিকা- বন্ধু- শুভানুধ্যায়ী, তাদের কথায়, তাদের অভিমানের কারনেই এই কুঅভ্যাস বর্জন করেছে। পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুরের হাজার-হাজার বানী -উপদেশ দেওয়া আছে আমাদের বাঁচা- বাড়ার জন্য। কিন্তু সেইসব বানী-উপদেশ আমাদের জীবনে কোন কাজেই লাগেনা যদি না তাঁর প্রতি আমার সক্রিয় ভালবাসা ও টান জন্মায়। কিন্তু যখন আমি তাঁর দীক্ষা নেই,- সেই মুহুর্তে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র আমার কাছে একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত অজ্ঞাত ব্যাক্তি। আমি তাঁকে কিভাবে ভালবাসব, তাঁর প্রতি টান কিভাবে সৃষ্টি হবে,- আর আমি তাঁর কথা কেনই বা মেনে চলব? সেই টান ও ভালবাসা জন্মানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় দীক্ষান্তে ইষ্টভৃতি পালনের মধ্য দিয়ে। প্রতিদিন প্রত্যুষে আমার গুরু, আমার প্রিয়পরমের ভোগের জন্য প্রত্যাশাহীন নিষ্ঠানন্দিত অর্ঘ্য নিবেদনই হল ইষ্টভৃতি। মনোবিজ্ঞান অনুসারে আমি যখন কারো জন্য নিঃস্বার্থভাবে কিছু করি তখন সেই করার ফলস্বরূপ সেই ব্যাক্তিটি আমায় ভালবাসবে কিনা তা নিশ্চিত নয়,- কিন্তু সেই ব্যাক্তিটির প্রতি আমার ভালবাসা জন্মিয়ে যায়,- তা নিশ্চিত। যার জন্য আমার করা যত বেশী,- তার প্রতি আমার ভালবাসা - টান ও তত বেশী। রাস্তার একটি অপরিচিত কুকুরকে যদি আমি রোজ একটি বিস্কিট খেতে দেই,- তাহলে সেই কুকুরটির প্রতিও আমার টান সৃষ্টি হয়ে যায়। হঠাৎ কোন একদিন যদি কুকুরটিকে দেখতে না পাই,- তবে মন খারাপ হয়ে যায়।রাতে বাচ্ছা ছেলেটি যখন জ্বরে আক্রান্ত তখন মা ঘুমাতে পারে না,- সারা রাত জেগে ছেলের সেবা- শুশ্রুষা করতে থাকে। যদি ও বাবা কোন কোন সময় ঘুমিয়ে পড়ে- মা কিন্তু ঘুমাতে পারেনা। কারন, ছেলের জন্য বাবার চেয়ে মা'র করা অনেক বেশী। দশ মাস গর্ভে ধারন করেছেন, প্রসব বেদনা সহ্য করে জন্ম দিয়েছেন, রাতে কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে বারে বারে দুধ দিয়েছেন কত কি!!! তাই ছেলের প্রতি মা'র টান অনেক বেশী। তাই কথায় বলে " কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কভু নয়।" সাধারনতঃ আমাদের মত জাগতিক- সাংসারিক মানুষদের কাছে অর্থই হল সর্বাধিক প্রিয় বস্তু। দীক্ষান্তে যখন আমি আমার সেই কষ্টার্জিত, সর্বাধিক প্রিয় অর্থ থেকে সামান্য কিছু অংশ প্রতিদিন প্রত্যুষে প্রত্যাশাহীনভাবে-ভক্তিভরে আমার গুরুর ভোগের জন্য নিবেদন করতে থাকি তখন অজান্তেই ধীরে ধীরে গুরুর প্রতি আমার ভালবাসা জন্মাতে শুরু করে। তাঁর প্রতি টান জন্মায়। তাঁর প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হলে তখন ইচ্ছে হয় তাঁকে জানার, তাঁর কথা শুনার। তাঁর প্রতি সৃষ্ট টান আমায় প্ররোচিত করে নিজের জীবনচলনাকে তাঁর ইচ্ছানুসারে পরিচালিত করতে,- শুরু হয় বাঁচা- বাড়ার উদ্দেশ্যে আমার পথচলা। তাই দীক্ষান্তে ইষ্টভৃতি এত আবশ্যক এবং অবশ্যকরনীয় প্রক্রিয়া। ইষ্টভৃতিই আমাদের মনে দীক্ষাকে চেতন রাখে। নতুবা দীক্ষা নেওয়াই সার,- আমার জীবনে তার কোন প্রভাব ফেলে না। এই ইষ্টভৃতি প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মন্তব্য বিশেষ প্রনিধানযোগ্য। এই ঋষিকবি জীবনে ইষ্টভৃতিরূপ মহাযজ্ঞের মাহাত্ম্য অনুভব করেই বোধহয় মন্তব্য করেছিলেন, - " সংসারের মাঝখানে থেকে অন্ততঃ একটা মঙ্গলের যজ্ঞ আরম্ভ করে দাও। সেই মঙ্গল যজ্ঞের জন্য তোমার ভান্ডারের একটা অতি ছোট দরজা ও যদি খোলে রাখ তা'হলে দেখবে, আজ যে অনাভ্যাসের দ্বারে একটু টান দিতে গেলেই আর্তনাদ করে উঠছ, যার মরচে পড়া তালায় চাবি ঘুরছে না, ক্রমেই তা খোলা অতি সহজ ব্যাপারের মতো হয়ে উঠবে- একটি শুভ উদ্যোগে ত্যাগ আরম্ভ হয়ে তা ক্রমশই বিস্তৃত হতে থাকবে। সংসারকে তো আমরা অহোরাত্র সমস্তই দিই, ভগবানকে ও কিছু দাও-প্রতিদিন একবার অন্ততঃ মুষ্টিভিক্ষা দাও- সেই নিস্পৃহ ভিখারী তাঁর ভিক্ষাপাত্রটি হাতে হাসিমুখে প্রতিদিনই আমাদের দ্বারে আসছেন এবং প্রতিদিনই ফিরে যাচ্ছেন। তাঁকে যদি একমুঠো করে দান করা আমরা অভ্যাস করি তবে সেই দানই আমাদের সকলের চেয়ে বড়ো হয়ে উঠবে। ক্রমে সে আর আমাদের মুঠোয় ধরবে না, ক্রমে কিছুই আর হাতে রাখতে পারব না। কিন্তু তাঁকে যেটুকু দেব সেটুকু গোপনে দিতে হবে, তাঁর জন্য কোনো মানুষের কাছে এতটুকু খ্যাতি চাইলে চলবে না। কেননা লোককে দেখিয়ে দেওয়া, সেটুকু একরকম করে দিয়ে অন্য রকম করে হরন করা। সেই মহাভিক্ষুককে যা দিতে হবে তা স্বল্প হলে ও নিঃশেষ দেওয়া চাই। তার হিসেব রাখলে হবে না, তার রসিদ চাইলে চলবে না। দিনের মধ্যে আমাদের একটা কোন দান যেন এইরূপ পরিপূর্ণ দান হতে পারে, - সে যেন সেই পরিপূর্নস্বরূপের কাছে পরিপূর্ণ ত্যাগ হয় এবং সংসারের মধ্যে এইটুকু ব্যাপারে কেবল তাঁরই সঙ্গে একাকী আমার প্রত্যহ একটি গোপন সাক্ষাতের অবকাশ ঘটে। " কবিগুরু যে " নিস্পৃহ ভিখারী" , " ' মহাভিক্ষুক' আর ' পরিপূর্ণস্বরূপ" এর কথা বলছেন তিনি আর কেউ নন,- বর্তমান যুগোপযোগী পুরুষোত্তম সদগুরুই সেই তিনি। শুধুমাত্র আমাদের দেশের এই ঋষিকবিই নন, পাশ্চাত্য দেশের বিখ্যাত দার্শনিক- কবি William James এর অনুরূপ একটি মন্তব্য এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।, - " Keep the faculty of effort alive in you by a little gratuitous exercise everyday. That is, be systemitacally ascetic or heroic in little unnecessary points, do everyday something for no other reason than that you would rather not do it, so that when the hour of dire need draws high, it may find you not unnerved or untrained to stand the test. Asceticism of this sort is like the insurance which a man pays on his house and goods. The tax does him no good at the time, and possibly may never bring him a return. But if the fire does come, his having paid it will be his salvation from ruin. So with the man who has daily innured himself to habits of concentrated attention, energetic volition and self denial in unnecessary things. He will stand like a tower, when everything rocks around him, and when the softer fellow- mortals are winnowed like chaff in the blast." ( অর্থাৎ, -প্রতিদিন কিছু কিছু অপ্রত্যাশী কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে নিজের কর্মশক্তিকে সক্রিয় রাখো। সংযমী ও বীরোচিত মন নিয়ে নিষ্ঠার সাথে প্রতিদিনই এটি করে চলো নিতান্ত অকারণে। দেখবে, চরম সংকট মুহুর্তেও তুমি অপ্রস্তুত বা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হ'য়ে পড়বেনা-অন্যের মত। এই অপ্রত্যাশী নিষ্ঠানন্দিত অবদান অনেকটা জীবন-বীমার মত- ঠিক যেমন মানুষ তার ঘরবাড়ি- বস্তুসামগ্রীর রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বীমার আশ্রয় নেয়। এই বীমা সবসময় লাভজনক হয়ে ওঠে না কিন্তু যদি কোনও ধরনের বড় বিপর্যয় বা অগ্নিকান্ডে সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে যায়, তখন এই বীমা বিপর্যয় থেকে মুক্তি বা পরিত্রাণের পথে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। ঝড়, ঝঞ্চা ও বিপর্যয়ে চারদিক যখন ধ্বংসে টালমাটাল হয়ে উঠবে, দূর্বল প্রতিবেশীরা যখন উড়ে যাবে তূষের মত তখন ঐ নিষ্ঠানন্দিত কৃতিসম্ভেগী অপ্রত্যাশী কর্মযজ্ঞে অভ্যস্থ মানুষ ঝড়ের মুখে অটলভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে স্তম্বের মত।" দীক্ষান্তে প্রতিদিন প্রত্যুষে ইষ্টভৃতি পরিপালনই হল এই " অপ্রত্যাশী নিষ্ঠানন্দিত অবদান " - যা আমাদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে। সংকটমুহুর্তে অটলভাবে দাড়িয়ে থাকতে এই ইষ্টভৃতি আমাদের শক্তি যোগায়। এমন নয় যে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রই এইযুগে এসে প্রথমবার ইষ্টভৃতির প্রবর্তন করেছেন। যুগে যুগে নানাভাবে-নানারূপে আমাদের আর্যসংস্কৃতিতে এই ইষ্টভৃতির প্রচলন ছিল। শ্রীশ্রীঠাকুর এইবার এসে ইষ্টভৃতিকে আমাদের প্রাত্যহিক দৈনন্দিন কর্মঅভ্যাসের মধ্যে নিয়ে আসলেন,- আমাদের বাঁচা- বাড়াকে অক্ষুন্ন রাখতে। আমরা মহাভারতে দ্রোপদির বস্ত্রহরনের ঘটনা দেখেছি। দেখেছি ধৃতরাষ্ট্রের রাজসভায় যখন দুষ্ট দুঃশাষন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরন করতে চেষ্টা করছিল তখন দ্রৌপদীর আকুল প্রার্থনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সাড়া দিয়ে দ্রৌপদীকে এত এত বস্ত্রের যোগান দিয়েছিলেন যে দুঃশাসন খুলে তা শেষ করতে পারেনি। এই ঘটনার অনেক বছর পূর্বে আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল যা দ্রৌপদীর উপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই দয়ার সাথে সম্পর্কিত। সেদিন রাজসভায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, পান্ডবগন, কৌরবগন এবং অন্যান্য আরো অনেক রাজা-মহারাজা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় শিশুপাল নামে এক দুষ্ট রাজা এসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে গালাগাল করে অপমান করছিল। শিশুপালের উপর আশীর্বাদ ছিল,- তার একশত একটা অপরাধ মার্জনা করা হবে। কিন্তু সেদিন তার মাত্রা অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সুদর্শন চক্র পাঠিয়ে শিশুপালের শিরচ্ছেদ ঘটান। শিরচ্ছেদ ঘটিয়ে সেই সুদর্শন চক্র যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে ফেরত আসে তখন শ্রীকৃষ্ণের আঙ্গুল কেটে যায়। পাশে বসা দ্রৌপদী সাথে সাথে নিজের শাড়ীর আঁচল ছিড়ে শ্রীকৃষ্ণের ক্ষতস্থান বেঁধে দেন। এখানে মনে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক, - যিনি পরমেশ্বর, যার ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতা ও নড়েনা বলে আমরা বিশ্বাস করি, - তাঁর সুদর্শন চক্র তাঁরই আঙ্গুল কেটে দিল কিভাবে? এমনটা কেন হল? বলা হয়,- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ইচ্ছা করেই তাঁর হাতের আঙ্গুল কাটলেন যাতে পাশে বসা দ্রৌপদী তার শাড়ির আঁচল ছিড়ে এক টুকরো কাপড় তাঁকে দান করেন। কারন, দয়া মানেই দিয়ে পাওয়া। স্বয়ং বিধাতা ও তাঁর সৃষ্ট বিধানের বাইরে কিছু করতে পারেন না। ভবিষ্যতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরনের সময় তার লজ্জা নিবারণের জন্য শ্রীকৃষ্ণের যে দয়ার প্রয়োজন হবে,- তার জন্য দ্রৌপদীর কাছ থেকে এই কাপড়ের টুকরারূপ দান গ্রহন প্রয়োজন ছিল। শ্রীকৃষ্ণের প্রতি দ্রৌপদীর এই অপ্রত্যাশী দানই তাকে ভবিষ্যতের বস্ত্রহরনরূপ বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল। এই অপ্রত্যাশী দানই হল ইষ্টভৃতি। এই মহাভারতেই আরেকটি ঘটনা রয়েছে,-যা ইষ্টভৃতির মাহাত্ম বর্ননা করে। পঞ্চপান্ডব সেইসময় অজ্ঞাতবাস কাটাচ্ছিল। দূর্যোধন চক্রান্ত করে ঋষি দূর্বাশাকে পাঠায় পঞ্চপান্ডবের বাসস্থানে। উদ্দেশ্য খুব খারাপ। ঋষি দূর্বাশা খুব রাগী মানুষ- যখন তখন যাকে তাকে অভিশাপ দিয়ে দেন। তাই ঋষি দূর্বাশা যদি কোনকারনে পঞ্চপাণ্ডবকে অভিশাপ দিয়ে ধ্বংস করে দেন,- তবে দূর্যোধনের উদ্দেশ্য সফল হয়। ঋষি দূর্বাশা যখন দুপুরবেলা তার সহস্র শিষ্য সাথে নিয়ে পঞ্চপান্ডবের কুটিরে উপস্থিত হলেন তখন সকলের খাওয়া-দাওয়া শেষ। হাড়ি শূন্য। কিন্তু দূর্বাশাকে এই কথা বলা যাবে না,- রেগে অভিশাপ দিয়ে দিতে পারেন। যুধিষ্ঠির বুদ্ধি করে বললেন,-" মহারাজ, আপনারা স্নান সেরে আসুন। আমি ভোগের ব্যাবস্থা করি। " দূর্বাশা স্নান করতে গেলে দ্রৌপদী নিরূপায় হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আহবান করলেন। শ্রীকৃষ্ণ এসেই বললেন,-" আমায় খাবার দাও। " দ্রৌপদী বললেন,-" প্রভু, হাড়ি শূন্য। কোথা থেকে দেই?" শ্রীকৃষ্ণ জানালেন,-" হাড়ির ভেতর খুঁজে দেখ।" অগ্যতা দ্রৌপদী হাড়ির ভেতর খুঁজে একটি অন্নের দানা খুঁজে পেলেন। সেই একটি দানাই শ্রীকৃষ্ণের হাতে তুলে দিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সেই একটি দানাই গ্রহন করলেন। সাথে সাথে ঋষি দূর্বাশা ও তার সহস্র শিষ্যের পেট ও ভরে গেল। স্নান সেরে তারা ফিরে গেলেন,- পঞ্চপান্ডবের কুটিরমূখী আর হন নি। অভিসম্পাত থেকে পঞ্চপাণ্ডব রক্ষা পেল। দারুন ব্যাপার!! কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ এত নাটক করলেন কেন?? তিনি পরমেশ্বর, স্বয়ং বিধাতা,- তিনি আদেশ করলেই ঋষি দূর্বাশা না খেয়েই এখান থেকে চুপচাপ চলে যেত। কিন্তু এই একটা দানা খুঁজেপেতে বের করে, তা খাওয়ার নাটক করার কি প্রয়োজন ছিল? দ্রৌপদীর কাছ থেকে এই ইষ্টভৃতিরূপ অন্নের দানা গ্রহন না করে যে স্বয়ং বিধাতা ও দয়া করতে পারতেন না। একইরকম রামায়নে ও দেখা যায় মাতা সীতা প্রতিদিন তাঁর স্বামী প্রভু রামের উদ্দেশ্যে ইষ্টভৃতি নিবেদন করতেন। ভগবান রামকৃষ্ণদেব ও বলতেন,- " গুরুর কাছে আসলে হাতে করে একটা কিছু নিয়ে আসতে হয়।" এই " হাতে করে নিয়ে আসা" ও ইষ্টভৃতির একটা রূপ। কলেজে পড়ার সময় আমার খৃষ্টান বন্ধুদের ও দেখতাম তাদের বেতনের একটা অংশ প্রতিমাসে গীর্জায় গিয়ে প্রভু যীশুকে নিবেদন করত। তা ও ইষ্টভৃতির এক প্রকার। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র শুধুমাত্র এই ইষ্টভৃতি যজ্ঞটিকে আমাদের দৈনন্দিন প্রাত্যহিক জীবনের একটা অপরিহার্য, অবশ্যকরণীয় কর্তব্য হিসাবে প্রবর্তন করে দিলেন। প্রতিদিন প্রত্যুষে সর্ব্বকর্মারম্ভে যখন আমি আমার প্রভু, আমার প্রিয়পরমের উদ্দেশ্যে ভক্তিঅর্ঘ্য নিবেদন করে আমার দিনটি শুরু করি তখন সারাদিন আমার চিন্তায়-চেতনায়-ভাবনায়-কর্মে তাঁর ছাপ থেকে যায়, তাঁকে আমি ভালবাসতে শিখি, আমি তাঁর হয়ে উঠি। Download Our App