Read Eugenics and compatible marriage by DR RAJESH CHOUDHURI in Bengali মনোবিজ্ঞান | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

ইউজেনিক্স ও সঠিক বিবাহনীতি

 কুকুরের বংশের কত প্রকার!!  নাম ও তার কত বাহারি!!  ল্যাব্রাডর, ডোবারম্যান, স্পেনিয়েল, আফগান হাউন্ড, শেপার্ড,  বুলডগ,  ব্লাড হাউন্ড...  কত কি! একেক বংশের কুকুরের একেক গুন মূখ্য। কোন বংশের কুকুর তার বিশ্বস্ততার জন্য বিখ্যাত, তো কোন বংশের কুকুর তার সৌন্দর্যের জন্য, কোনটা তার বন্ধুত্বসুলভ ব্যাবহারের জন্য, কোনটা প্রচন্ড বুদ্ধিমত্তার জন্য, কোনটা তার নীরোগ স্বাস্থের জন্য। কুকুরপ্রমীরা যখন নিজের জন্য কুকুর কিনতে যান তখন কুকুরের বংশের নানা বৃত্তান্ত, তার পূর্বপুরুষদের আচার আচরন, এই কুকুরের বংশগত বিশুদ্ধতা ..  সমস্তকিছু সম্পর্কে খোজখবর নিয়ে, নিশ্চিত হয়ে তবেই কুকুর কিনেন।

কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার- সামান্য এক কুকুর কিনতে আমরা তার বংশ, পূর্বপুরুষ সম্পর্কে এত বাচবিচার করলেও..  আমাদের জীবনের সবচেয়ে গূরত্বপূর্ণ যে সিদ্ধান্ত- সেই বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় আমরা অধিকাংশই হবু জীবনসঙ্গীর বর্ন - বংশকে উপেক্ষা করে থাকি।কয়েক পৃষ্ঠা বিজ্ঞান পড়ে স্বঘোষিত  ' বিজ্ঞান মনস্ক' ও ' আধুনিক ' পরিচয়ধারী মানুষদের কাছে বর্ন - বংশ, গোত্র..  এসবের বাছ- বিছার যেন একান্তই মূল্যহীন ।  কুকুর, গরু, ঘোড়া, গাধা, আম, কাঠাল... সকল কিছুরই আলাদা আলাদা জেনেটিক প্রকার( বংশ) রয়েছে; কিন্তু সব মানুষ সমান।তাই, পাত্র চাই- পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনে সবার উপরে মোটা  করে লিখে দেন উনারা,-"  No Caste Bar"।  

সুন্দর চেহারা, একটা ভাল ডিগ্রী আর ব্যাংক ব্যালেঞ্চটা ঠিক থাকলেই হল।আর যেসব কপোত- কপোতী ভালবাসা করে বিয়ে করে তাদের মতে ' ভালবাসা' র কাছে সব তুচ্ছ।যদিও ' ভালবাসা' আর ' শারীরিক আকর্ষন" বা "ক্ষনস্থায়ী আবেগ",- এই ভিন্ন ভিন্ন  অনুভূতিকে গুলিয়ে আমরা প্রায়শই এক করে ফেলি। আর, বিয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ও আমাদের ধারনা অস্পষ্ট। কেন বিয়ে করব?? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকের কাছেই অজানা। কিন্তু শ্রীশ্রী ঠাকুর বলেন" উন্নয়ন আর সুপ্রজনন- এই তো বিয়ের মূল/ যেমন- তেমন করে বিয়ে করিস না'কো ভুল।" 

মনের  ভালবাসা, চাঁদ বদন, ব্যাংক ব্যালেঞ্চ আর কাগজের ডিগ্রী দিয়ে তো সুপ্রজনন হয় না ভাই।  সন্তান আসে ব্রীডিং এর মাধ্যমে জেনেটিক ক্রসিং এর পর। সেই ব্রীডিং নিয়ে পশু- পাখির ক্ষেত্রে কত গবেষনা আর ফর্মূলা। একমাত্র মানুষ ব্যাতিরেকে।

Lloyd C. Brackett নামে এক ব্যাক্তি  সারা জীবন ধরে শুধু কুকুরের ব্রীডিং নিয়ে গবেষনা করে কাটিয়ে দিলেন। জার্মান  শেফার্ড প্রজাতির কুকুর উনার গবেষনার ফসল। উনার সম্পর্কে লেখা হয়েছে "  His technique for reducing error and improving quality focused on carefull selection of breeding partners"।

উন্নতমানের কুকুরের জন্ম দিতে গিয়ে উনি পুরুষ ও স্ত্রী কুকুরের নির্বাচনে ছিলেন খুব সাবধানী। সারাজীবন গবেষনা করে ঠিক করেছিলেন কোন বংশের পুরুষ কুকুরের সাথে কোন বংশের স্ত্রী কুকুরের মিলনে উন্নত মানের কুকুরের জন্ম হয়।কুকুরের ব্রীডিং এর ক্ষেত্রে উনার সেই ফর্মূলা " Brackets formula" আজ ও সমাদৃত বিশ্বব্যাপী।  এই ফর্মূলার ব্যাত্যয় হলে মা ও বাবা কুকুরের গুনগুলি সন্তানের মধ্যে প্রকট না হয়ে অবগুনগুলির প্রধান্যই দেখা যায়।

তাহলে মানুষের ক্ষেত্রে??!! উন্নত সন্তানের জন্মের উদ্দেশ্যেই আর্য ঋষিরা তাদের সাধনালব্ধ জ্ঞান দ্বারা বিয়ের ব্যাপারে কিছু বিধি- নিষেধ তৈরী করেছিলেন। তাদের মতে বিয়ে মূলতঃ তিন প্রকার- সলোম, অনুলোম ও প্রতিলোম বিবাহ। ঋষির মতে  প্রতিলোম ( উচ্চবর্ণের স্ত্রী ও নিম্নবর্ণের পুরুষের মধ্যে)বিবাহ সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। কারন, তাতে জাত সন্তানের মধ্যে ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তি প্রকট হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়,- প্রতিলোম বিবাহে স্বামী স্ত্রীর সাংসারিক জীবনেও চরম অশান্তি ও দুর্দশা দেখা দেয় সাধারণ:। ভারতীয় ঋষিদের মতে এই প্রকার বিবাহে স্বামী-স্ত্রীর জীবনীশক্তি হ্রাস পেয়ে উভয়েই যন্ত্রনাময় পরিস্থিতির শিকার হয়৷

 অনেকেই তর্কের খাতিরে বলে থাকেন- প্রতিলোমজ সন্তানদের ও অনেক সুন্দর ও ভাল হতে দেখা যায়। এর উত্তরে ও সেই বিখ্যাত ব্রীডিং বিষেশজ্ঞ  Lloyd C. Brackett বল্লেন-" The science of genetics  teaches us to search beneath the superficial resemblance's of the phenotypes for the important clues in the genotypes "

শ্রীশ্রী ঠাকুরের প্রিয় শিষ্য দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস দুঃখ করে বলেছিলেন- " ঠাকুর আপনার কাছে এসে কয়েকদিন থাকব - তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বিশ্বস্ত,  দায়ীত্বশীল লোক নেই- যা' র উপর আমার স্বরাজ দলটার দায়ীত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে কয়েকটা দিন আপনার কাছে কাটাব।

"শ্রীশ্রী ঠাকুর প্রত্তুত্তরে বলেছিলেন-" দাস দা, এক সামান্য স্বরাজ দলের দায়িত্ব দেওয়ার মত লোক আপনি পাচ্ছেন না। দেশ স্বাধীন করে কার হাতে দেবেন?!!"

দেশবন্ধু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন-" ঠাকুর, উপায় কি?"

ঠাকুর বললেন-" যদি দেশ প্রকৃতই স্বাধীন করতে হয় তবে এখন থেকে বিবাহ সংস্কারে লেগে পড়ুন। বিয়েগুলি বিধিমাফিক হলেই সুসন্তানের জন্ম হবে- সেই সন্তানই হবে দেশের সুনাগরিক। "

মানুষ জন্মগত ভাবে ( genetically) সৎ ও শুভসংস্কার সম্পন্ন না হলে পরিবেশে ফেলে ও কৃত্রিম উপায়ে তাকে খুব একটা পরিবির্তন করা সম্ভব হয় না।

শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের দেশের প্রাচীন ঋষিদের প্রবর্তিত এই বিবাহনীতির উপর সর্বোচ্চ গূরত্ব আরোপ করেছেন। একটি উন্নত জাতি ও দেশ গঠনে এই সঠিক বিবাহনীতির বিকল্প নেই।

 যদিও ঋষিরা অনুলোম বিবাহের ( উচ্চ বর্নের পুরুষ ও নিম্ন বর্নের স্ত্রী) প্রশংসা করেছেন,- কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থায়,- অনুলোম বিবাহ প্রজোয্য নয়। কারন শাস্ত্র মতে কোন পুরুষ তার প্রথম বিবাহ সবর্নে-স্ব বংশে এবং ভিন্ন গোত্রে করবে। তারপর একাধিক বিবাহ করলে তবে অনুলোম বিবাহ প্রজোয্য। যেহেতু বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থায় বহুবিবাহ নিষিদ্ধ, - তাই সবর্নে স্ব-বংশে, ভিন্ন গোত্রে বিবাহই একমাত্র কাম্য।

 না,- বর্ন, বংশ, গোত্র এই শব্দগুলো শুনে নাক সিঁটকানোর কারন নেই। আপনি আপনার বিজ্ঞানের বইয়ের পাতায় এই বিষয়ে কোন চ্যাপ্টার পড়েননি বলে ব্যাপারগুলো এত মূল্যহীন ভাবার কারন নেই। হাজার বৎসর পূর্বে আমাদের দেশের যে ঋষিরা কোন টেলিস্কোপের সাহায্য ছাড়াই আর নাসায় চাকরি না করেও,- শুধুমাত্র হিমালয়ের গুহায় ধ্যান করে করে মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের নিখুঁত অবস্থান লিপিবদ্ধ করেছেন, পৃথিবী থেকে সুর্যের দূরত্ব জেনেছিলেন কম্পিউটার ছাড়াই তাদের মস্তিস্কপ্রসূত বর্নাশ্রম ভিত্তিক বিবাহনীতিকে অগ্রাহ্য করা বোকামিরই পরিচয়। আধুনিক বিজ্ঞান এখনো ঋষিদের বহু সিদ্ধান্ত ও মতের ব্যাখ্যা জানেনা৷ গবেষণা আরো প্রয়োজন। 

বর্নাশ্রম মানা আর জাতিভেদ প্রথা,- এক করে গুলিয়ে ফেললেই মুসকিল।  বংশ পরিচয় মানেই জাতপাত নিয়ে ভেদাভেদ করা নয়,- বংশের নাম দিয়ে আমার সংস্কৃতি, সভ্যতা, আদব কায়দা, মানসিকতা, অভ্যাস, খাওয়াদাওয়া ইত্যাদির পরিচয় পাওয়া যায়। যে আমার সাথে  সারাজীবন  কাটাবে, যে আমার বংশধর আনবে,- তার সংস্কৃতি, সভ্যতা, মানসিকতা, অভ্যাস তথা বর্ন-বংশ আমার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন হলেই যে বিবাহ সফল হবে,- তা অস্বীকার করার কিছু নেই।

 Love at first sight বা মনের আবেগ প্রসূত তথাকথিত ভালবাসা তীব্র আকর্ষন কখনো বিবাহের কারন হতে পারেনা৷ অনেকেই একটা কুকুরকে খুব ভালবাসে, কেউ কেউ রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরকে ভীষণ ভালবাসে, কোন কোন মেয়ে  শাহরুখ খানকে পাগলের মত ভালবাসে,- তাই বলে তারা ঐ কুকুরকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে উঠে না৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিয়ে করতে পারছেনা বলে কেউ আত্মহত্যা করেনা৷ 

উন্নত জাতি ও সমাজ গঠনে  বর্ন, বংশ, গোত্র মেনে ( অর্থাৎ হেরিডিটি মেনে) বিবাহের উপযোগিতা  ভারতীয় ঋষিদের পাশাপাশি পাশ্চাত্য দেশের পন্ডিতরাও উপলব্ধি করেছিলেন। পাশ্চাত্যের বহু পন্ডিত ও দার্শনিকের উক্তি এই বিষয়ে রয়েছে।

(1) "Plato was one of the earliest theorists to advocate the betterment of the human race by choosing the correct mate"

 (2) ' Eugenics' এর সংজ্ঞা নির্ধারণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,- Bertrand Russell, a British philosopher, described it as more of a social movement than a science in that it “attempt[s] to improve the biological character of a breed by deliberate methods adopted to that end.

(3) "Eugenicists believed that through the use of both positive and negative eugenics they could eliminate many so-called hereditary defects such as mental retardation, criminality, and mental illness, and thereby eradicate many social problems."

(4)" Francis Galton, the cousin brother of Charles Darwin, concluded that many physical and psychological traits were inherited, and that as a result, manipulative breeding could produce persons with desired traits."

(5)" As eugenicists analyzed American societal problems in the late 1800s, they came to rely on the assumption that nearly all social ill resulted from heredity."

ভারতীয়  ঋষিদের মত পাশ্চাত্যের মনিষীগন যদিও সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নতির জন্য বংশধারা( heredity) মেনে সঠিক বিবাহনীতির প্রয়োজন উপলব্ধি করেছিলেন,- কিন্তু সেই বিবাহনীতির সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ ও প্রয়োগ করতে তারা সমর্থ হন নি৷ 

রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য রাষ্টনায়ক, রাজনীতিবিদগন, বুদ্ধিজীবিরা যতই আইন কানুন বানাক, যতই শিক্ষাগত ডিগ্রীর সংখ্যা বাড়াক, নানা প্রকল্প রূপায়ন করুক,- যতদিন না,- আর্য ঋষিদের বিবাহনীতি সারা দেশে সঠিকভাবে পালন করার জন্য উদ্যোগ না নেওয়া হচ্ছে ততদিন কোন লাভই হবেনা৷ সকল প্রচেষ্টাই অশ্বডিম্ব প্রসব করবে৷