Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 12

মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ 

ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায় 


( পূর্ব প্রকাশিতের পর )


১৪





ভিটামিন–মিনারেলের ঘাটতি পূরণ


আমরা যতই ডায়াবেটিস রিভার্সাল বা লাইফস্টাইল পরিবর্তনের কথা বলি না কেন, শরীরের ভেতরে যদি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব থাকে, তাহলে পুরো সিস্টেমই দুর্বল হয়ে পড়ে।

ভাবুন তো—
আপনার কাছে যদি একটি দারুণ গাড়ি থাকে, সুন্দর ইঞ্জিন, ভালো ব্রেক, ভালো টায়ার— কিন্তু পেট্রোল বা ডিজেলই নেই, তাহলে কি সেই গাড়ি চলবে ?
শরীরও একদম সেইরকম। আমাদের কোষগুলোর কাজ চালানোর জন্য কিছু “মাইক্রো–নিউট্রিয়েন্ট” প্রয়োজন হয়, যেগুলো ছাড়া বাকি সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

কেন এই ঘাটতি হয় ?

আজকের দিনে আমাদের খাদ্য থেকে আমরা আর আগের মতো ভিটামিন–মিনারেল পাচ্ছি না। কারণ—

মাটির উর্বরতা কমে গেছে, ফলে শস্যে মিনারেল কম।

হাইব্রিড ও কেমিক্যাল–ভর্তি চাষে খাবারের আসল পুষ্টি নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রসেসড ফুড খাওয়া বেড়েছে, যেখানে পুষ্টি নেই, শুধু ক্যালোরি আছে।

সূর্যের আলো কম পাওয়া, ইনডোর লাইফ–স্টাইল।


ডায়াবেটিসে সবচেয়ে জরুরি ভিটামিন–মিনারেল

১. ভিটামিন D – ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়। ভিটামিন D না থাকলে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
সূর্যের আলো প্রতিদিন অন্তত ১৫–২০ মিনিট পেতে হবে।


২. ম্যাগনেসিয়াম – শরীরের ৩০০+ এনজাইম ফাংশনে লাগে। ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। বাদাম, বীজ, সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর থাকে।


৩. ক্রোমিয়াম – ব্লাড সুগার ম্যানেজ করতে সরাসরি সাহায্য করে। পুরো শস্য, ব্রকোলি, ডিমের কুসুমে পাওয়া যায়।


৪. ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড – ইনফ্ল্যামেশন কমায়, হার্টকে রক্ষা করে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়। দেশি মাছ, ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড, আখরোট থেকে নিতে হবে।


৫. জিঙ্ক – ইনসুলিন স্টোর ও রিলিজ করতে সাহায্য করে। ডাল, বীজ, বাদাম, সামুদ্রিক খাবারে বেশি থাকে।



তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে ?

ডায়াবেটিস রিভার্সালের পথে শুধু কার্ব কমানো বা ফাস্টিং করলেই হবে না।
ভেতরের কোষগুলোকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন–মিনারেল দিয়ে শক্তিশালী না করলে শরীর টেকসই হবে না।

এজন্যই—
প্রতিদিনের খাবারে ফ্রেশ শাকসবজি, বাদাম, বীজ, দেশি মাছ, সূর্যের আলো, প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট রাখতেই হবে।



১৫




স্ট্রেস: সুগারের নীরব আগুন


আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্ট্রেস যেন অদৃশ্য এক আগুন। অফিসের চাপ, সংসারের দায়িত্ব, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, সামাজিক প্রতিযোগিতা—এসব মিলেই আমাদের শরীরের ভেতরে নীরব অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে থাকে।

স্ট্রেস হলেই শরীরে বেড়ে যায় কর্টিসল হরমোন।
কর্টিসল যখন দীর্ঘদিন বেশি থাকে, তখন—

লিভার বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি করে

রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আরও গভীর হয়


অর্থাৎ, শুধু খাবার বা ব্যায়াম নয়, স্ট্রেসও ডায়াবেটিসের বড় কারণ।




মস্তিষ্ক–মন–শরীরের যোগসূত্র

আমাদের মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেম স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে।
যখন মন শান্ত থাকে, শরীরও শান্ত থাকে। আর মন অস্থির হলে শরীরের প্রতিটি কোষে তা ছাপ ফেলে। এজন্য স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টকে বলা হয় সুগার রিভার্সের গোপন চাবিকাঠি।




কীভাবে স্ট্রেস কমাবেন ?

১. শ্বাসের ব্যায়াম (Breathing Exercise):

প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট, ১:৪:২ অনুপাতে শ্বাস নিন–ধরুন–ছাড়ুন।

এতে কর্টিসল হরমোন দ্রুত কমে যায়।


২. ধ্যান ও যোগব্যায়াম:

দিনে অন্তত ১৫ মিনিট ধ্যান করুন।

মনোযোগ ভেতরে আনুন, শান্তি অনুভব করুন।


৩. প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা:

সপ্তাহে অন্তত একদিন গাছপালা, নদী, মাটি, সূর্যের আলো—এসবের সান্নিধ্যে যান।

প্রকৃতি নিজেই সেরা হিলার।


৪. হার্বাল সাপোর্ট:

অশ্বগন্ধা: স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমিয়ে কর্টিসল ব্যালান্স করে।

তুলসী পাতা: স্নায়ু শান্ত করে, মানসিক স্থিরতা আনে।

ল্যাভেন্ডার চা বা অয়েল: মনকে রিল্যাক্স করে, ঘুম ভালো করে।


৫. হাসি ও আনন্দ:

প্রতিদিন অন্তত কিছুক্ষণ প্রাণ খুলে হাসুন।

হাসির সময় শরীরে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা প্রাকৃতিক “Stress Buster”।


৬. ডিজিটাল ডিটক্স:

ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে মোবাইল–টিভি–ল্যাপটপ সব বন্ধ করুন।

মেলাটোনিন হরমোন স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে শুরু করবে।



স্ট্রেস আপনার শরীরের প্রতিটি কোষকে ক্লান্ত করে দেয়।
কিন্তু মনে রাখবেন—স্ট্রেসকে হারানোর ক্ষমতা আপনার হাতেই আছে।

সঠিক শ্বাস, সঠিক ধ্যান, প্রকৃতির ছোঁয়া আর কিছু হার্বাল বন্ধু—এসবই আপনার মনকে শান্ত করবে, শরীরকে মুক্তি দেবে, আর সুগারকে নামিয়ে আনবে।

“মন শান্ত হলে, শরীরও সুস্থ হয়।”
এই মন্ত্র মনে রেখে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টকে জীবনযাত্রার অংশ করে তুলুন।



১৬



ঘুম, আলো আর মেলাটোনিন – হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির ডাক

আমাদের শরীরে আছে এক আশ্চর্য ছোট্ট গ্রন্থি— পাইনিয়াল গ্ল্যান্ড।
এটাই হলো সেই কারখানা, যেখানে তৈরি হয় মেলাটোনিন হরমোন।
এই হরমোনই আমাদের শরীরকে বলে দেয়—
“এবার ঘুমোবার সময় হয়েছে, সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিশ্রাম দাও।”



লাখো বছরের ছন্দ:


মানুষ যখন গুহায় থাকত, তখন সূর্য অস্ত গেলেই চারপাশে নামত গাঢ় অন্ধকার।
আকাশে চাঁদ-তারার আলো ছাড়া আর কিছু থাকত না।
অন্ধকার নামতেই পাইনিয়াল গ্ল্যান্ড সক্রিয় হয়ে যেত।
শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ত মেলাটোনিন।
মানুষ, পশু-পাখি, সব জীবই তখন শান্ত ঘুমের দেশে যেত।

এভাবেই লাখো বছর ধরে আমাদের শরীর তৈরি হয়েছে অন্ধকারে ঘুমানোর জন্য।


গত দেড়শ বছরের বদল:


কিন্তু গত দেড়শ বছরে সভ্যতার নামে আমরা এক ভয়ঙ্কর ভুল করেছি—
আমরা রাতের অন্ধকারকে মুছে ফেলেছি।

বাল্ব, টিউবলাইট, ল্যাম্পপোস্ট, মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ—
সবই মেলাটোনিনের শত্রু।
তুমি যখন রাত দশটায় মোবাইলের স্ক্রিনে আঙুল চালাও, তখন শরীরের পাইনিয়াল গ্ল্যান্ড বিভ্রান্ত হয়।
সে ভাবে—
“আচ্ছা ! চারপাশে তো এখনও আলো ! তাহলে ঘুমানোর সময় হয়নি।”

এর ফলাফল ?

মেলাটোনিন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়।
ঘুম ভাঙা ভাঙা হয়।
কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বেড়ে যায়।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে, সুগার নামতে চায় না।

বিজ্ঞান একদিকে, জীবন অন্যদিকে:

তুমি যতই স্বাস্থ্যকর খাবার খাও, যতই এক্সারসাইজ করো—
যদি ঘুম ঠিক না হয়, মেলাটোনিন না বাড়ে, তাহলে সুগার নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
কারণ ঘুমের সময়ই শরীর কোষ মেরামত করে, ইনসুলিন সেনসিটিভিটি ফেরায়।

সমাধান – প্রকৃতির ছন্দে ফেরা

১. রাত ১০টার মধ্যে আলো নিভিয়ে দাও।
হালকা হলুদ আলো ব্যবহার করো, যাতে শরীর ভাবে অন্ধকার নেমে এসেছে।


২. ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল-টিভি বন্ধ।
স্ক্রিনের নীল আলো (blue light) পাইনিয়াল গ্ল্যান্ডকে পাগল করে দেয়।


৩. সকালবেলা সূর্যের আলো খাও।
দিনের আলো শরীরকে বলে দেয়— এবার জেগে ওঠো।
এতে সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক হয়।


৪. একই সময়ে ঘুমোও, একই সময়ে ওঠো।
শরীরের ভেতরের ঘড়িটা তখন আবার প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে নেবে।



আজ আমরা সমাজে যেমন অন্যায় দেখে চোখ বন্ধ করে থাকি,
তেমনি শরীরের ক্ষেত্রেও রাতের অন্ধকারকে বিদায় জানিয়েছি।
কিন্তু মনে রেখো—
অন্ধকারকে ফিরিয়ে না আনলে ঘুম ফিরবে না।
ঘুম না ফিরলে সুগারও ফিরবে না।

তাহলে প্রতিজ্ঞা করো—
আজ রাত থেকেই আলো নিভিয়ে দাও, প্রকৃতিকে আবার ডাকতে দাও।
পাইনিয়াল গ্ল্যান্ড আবার জেগে উঠুক,
মেলাটোনিন ছড়িয়ে পড়ুক,
আর তুমি শান্ত ঘুমে ডুবে যাও সুস্থ জীবনের পথে।



১৭




শরীরচর্চা, শ্বাসব্যায়াম ও ধ্যান – মুক্তির আসল পথ

ভাবুন তো—
একজন মানুষ প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হাঁটার জন্য বেরোলেন।
চারপাশে ভোরের আলো, পাখির ডাক, ঘাসের উপর শিশিরবিন্দু।
খালি পায়ে যখন তিনি ঘাসের উপর হাঁটলেন, তখন শুধু পা নয়, যেন তাঁর মনও হালকা হয়ে গেল।
এই হাঁটা শুধু শরীর নাড়ানো নয়—এটা আসলে সুগারের শিকল ভাঙার প্রথম পদক্ষেপ।



হাঁটা – প্রথম মুক্তির মন্ত্র

ডায়াবেটিস রিভার্স করতে চাইলে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।
দিনে অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটতে হবে।
যারা প্রথমে পারছেন না, তারা ১০ মিনিট দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
খাওয়ার পর ১০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন—দেখবেন, সুগার একাই নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে।



শক্তিবর্ধক ব্যায়াম – পেশীই আপনার আসল বন্ধু


আমাদের শরীরের প্রতিটি পেশী হলো ছোট্ট ছোট্ট “গ্লুকোজের ব্যাংক।”
আপনি যত ব্যায়াম করবেন, এই ব্যাংকগুলো তত গ্লুকোজ জমা করে রাখবে, রক্তে ভেসে বেড়াতে দেবে না।
সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন নিজের শরীরের ওজন দিয়ে ব্যায়াম করুন—squat, push-up, plank।
এগুলো আপনার মেটাবলিজমকে এমনভাবে জাগিয়ে তুলবে যে শরীর ধীরে ধীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভুলে যাবে।




শ্বাসের ব্যায়াম – কোষের দরজা খোলার চাবি

একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন—
আপনি গভীর শ্বাস নিচ্ছেন,
পরিষ্কার বাতাস আপনার শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যাচ্ছে,
আর কোষগুলো আনন্দে তাদের দরজা খুলে দিচ্ছে।

এটাই হচ্ছে শ্বাসব্যায়ামের আসল শক্তি।

প্রতিদিন সকালে ও রাতে ১০ মিনিট করুন।
৪ সেকেন্ড শ্বাস নিন, ১৬ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ৮ সেকেন্ডে ছেড়ে দিন।
মনে করুন, আপনার শরীর থেকে স্ট্রেস, টক্সিন, চিন্তা—সব ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছে।



ধ্যান – মনের শান্তি মানেই সুগারের শান্তি


ডায়াবেটিস শুধু শরীরের নয়, মনেরও রোগ।
যখন আপনি ১৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে শুধু নিজের শ্বাসে মন রাখবেন, তখন আপনার কর্টিসল হরমোন শান্ত হবে।
স্ট্রেস কমবে, ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়বে।
ধ্যান মানে শুধু নীরব বসে থাকা নয়—এটা হলো নিজের শরীরকে বলা,
“আমি তোমার যত্ন নিচ্ছি। তুমি একা নও।”




যোগাসন – শরীর ও মনের সেতুবন্ধন


ভুজঙ্গাসন, মণ্ডুকাসন, সূর্যনমস্কার—এগুলো শুধু আসন নয়, এগুলো হলো শরীরের প্রাকৃতিক ওষুধ।
এগুলো প্যানক্রিয়াসকে উদ্দীপিত করে, রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, হজমশক্তি শক্তিশালী করে।




মুক্তির ২৪ ঘণ্টার ফর্মুলা

সকাল – হাঁটা + প্রানায়াম
দুপুর – খাওয়ার পর ১০ মিনিট হাঁটা
বিকেল – strength training বা যোগাসন
সন্ধ্যা – ধ্যান + হালকা হাঁটা
রাত – ঘুমানোর আগে ৫ মিনিট শ্বাসব্যায়াম



খাবার আপনাকে সাময়িকভাবে বাঁচাবে,
কিন্তু শরীরচর্চা, শ্বাসব্যায়াম আর ধ্যান মিলেই আপনাকে ডায়াবেটিস মুক্তির স্থায়ী রোডম্যাপ দেবে।

প্রতিদিন এই অভ্যাস করলে একদিন আপনিই দাঁড়িয়ে বলবেন—

“আজ আমি শুধু সুগার কমাইনি, আমি আমার জীবনটাই বদলে ফেলেছি।”



১৮



খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন 


সুগার রিভার্সালের করতে হলে – খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতেই হবে।

সুগার রিভার্স করার আসল যাত্রা শুরু হয় আমাদের খাবারের টেবিল থেকে।
কারণ, আমরা প্রতিদিন যা খাই—সেটাই আমাদের রক্তে গ্লুকোজের ওঠা–নামা নির্ধারণ করে।

আজকের দিনে চিকিৎসকরা সুগার রোগীদের বলেন—
“বারবার অল্প অল্প করে খান, যাতে হাইপো না হয়।”
কিন্তু এই পরামর্শটাই আসলে সমস্যার গোড়া।
কারণ, বারবার খাওয়া মানে বারবার ইনসুলিন নিঃসরণ।
আর ইনসুলিনের এই বাড়তি স্পাইকই ধীরে ধীরে কোষের দরজাকে শক্ত করে বন্ধ করে দেয়।
ফলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙার বদলে আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

তাই সুগার থেকে মুক্তি পেতে হলে খাবারের এপিসোড কমাতে হবে, এবং প্রতিটি খাবার হতে হবে ইনসুলিন–ফ্রেন্ডলি।



প্রধান নীতি – ৩টি প্রশ্ন:

খাবার মুখে তোলার আগে প্রতিবার নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করুন—

১. এটা কি আমাকে ইনসুলিন স্পাইক দেবে ?


২. এটা কি আমার গাট–বন্ধু ব্যাকটেরিয়াদের খাওয়াবে ?


৩. এটা কি আমার শরীরের কোষকে পুষ্ট করবে ?



যদি উত্তরে “না” আসে, তাহলে সেই খাবার আপনার জন্য নয়।




নিই কী কী খাওয়া যাবে বেশি করে ?


শাকসবজি (পাতাওলা সবজি, শসা, করলা, পালং, বাঁধাকপি ইত্যাদি)

প্রোটিন (মাছ, দেশি মুরগির ডিম, মাশরুম, সয়াবিন)

নাটস ও সিডস (আলমন্ড, আখরোট, চিনা বাদাম, চিয়া, ফ্ল্যাক্স, কুমড়োর বীজ)

নারকেল, লেবু জাতীয় ফল

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, কোল্ড প্রেসড সর্ষের তেল


কী কী সীমিত পরিমাণে খাওয়া যাবে ?

ডাল (কার্ব আছে, তবে পুষ্টি সমৃদ্ধ)

লো জিআই ফল (আপেল, নাশপাতি, বেদানা, পাকা পেঁপে)

লাল চাল/লো জিআই চাল – তবে দিনে এক বাটির বেশি নয়

অর্গানিক বা লো জিআই আটার রুটি – সামান্য


কী কী একেবারেই এড়াতে হবে ?


সাদা চাল, সাদা আটা, ময়দা

প্রসেসড ফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস

সবধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার

কোল্ড ড্রিঙ্কস, ফাস্টফুড, ট্রান্সফ্যাট

অ্যালকোহল ও নিকোটিন



খাবারের সংখ্যা:

দিনে ২–৩ এপিসোড খাওয়া।

যদি ২ বেলা হয় → দুপুর ও রাত

যদি ৩ বেলা হয় → বাদাম/সিডস দিয়ে হালকা ব্রেকফাস্ট + দুপুর + রাত


কখনোই ৩ বেলার বেশি নয়।


কেন এটা জরুরি ?

কারণ,

প্রতিটি খাবারের পর শরীর ইনসুলিন তৈরি করে।

দিনে যতবার খাবেন, ততবার ইনসুলিন স্পাইক হবে।

ইনসুলিন স্পাইক যত কমানো যাবে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙা তত সহজ হবে।


এইভাবে ধীরে ধীরে শরীর ভুলে যাবে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের অভ্যাস।
আপনার HbA1c কমবে, ওষুধ/ইনসুলিনের প্রয়োজন মুছে যাবে।


মনে রাখবেন, “খাবার হোক ঔষধ, আর ঔষধ হোক খাবার।”