স্বপ্নদ্রষ্টা আর শ্রমিকের গল্প
যদি হঠাৎ কেউ তোমাকে প্রশ্ন করে — “তাজমহল কে বানিয়েছিল?”
তুমি, আমি, প্রায় সবাই একবাক্যে বলব — শাহজাহান।
এই উত্তর আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি।
কিন্তু কি কখনো ভেবেছো, আসলে তাজমহল কারা বানিয়েছিল?
সেই অসংখ্য শ্রমিক, মিস্ত্রি, শিল্পী, পাথর কাটা মানুষ —
যারা বছরের পর বছর ধরে ঘাম ঝরিয়ে, কষ্ট সহ্য করে, হাতের তালুতে ফোস্কা তুলে
তাজমহলের প্রতিটি ইঞ্চি পাথর বসিয়েছিল নিখুঁতভাবে।
তাদের নাম আজ কেউ জানে না, কেউ মনে রাখেনি।
মানুষ শাহজাহানের নাম মনে রেখেছে কেন?
কারণ তিনি সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তাজমহল শুধু একটি সমাধি নয়, এটি এক স্বপ্নের রূপ —
যে স্বপ্ন ভালোবাসা, সৌন্দর্য আর চিরস্থায়িত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
এই পৃথিবী সবসময় স্বপ্নদ্রষ্টাদের কথা মনে রাখে।
যারা কাজ করে, তারা সম্মান পায়;
কিন্তু যারা স্বপ্ন দেখে, তারা অমর হয়ে যায়।
তুমি হয়তো আজ কোনো বড় কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছো —
ধরো মাইক্রোসফট, গুগল, টাটা, বা অন্য কিছু।
তুমি খুব খুশি, কারণ ভালো মাইনে, বড় অফিস, চমৎকার পরিচিতি।
কিন্তু একবার ভাবো তো —
তুমি কার স্বপ্ন পূরণে কাজ করছো?
তোমার নিজের, নাকি কারো অন্যের?
যে কোম্পানির হয়ে তুমি কাজ করছো,
তার মালিকের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে, তোমার নয়।
তুমি শুধু তার স্বপ্নের এক টুকরো অংশ —
একজন কর্মী, একটুখানি সহায়।
দিনের শেষে সবাই সেই কোম্পানির নাম বলবে,
তোমার নাম কেউ বলবে না।
কারণ এই পৃথিবী সবসময় সেই নামটাই মনে রাখে,
যে স্বপ্ন দেখতে সাহস করেছে।
তুমি যদি নিজের স্বপ্নের তাজমহল বানাতে পারো,
তাহলেই তুমি ইতিহাসে স্থান পাবে।
হাজার মানুষ তোমার ঘামে তৈরি প্রাসাদে কাজ করতে পারে,
কিন্তু তারা সবাই হবে সহযাত্রী —
প্রকৃত গন্তব্য তোমারই হবে, যদি দিকনির্দেশ তোমার মনের মানচিত্রে আঁকা থাকে।
আমাদের সমাজে একটা বড় ভুল ধারণা আছে
আমরা মনে করি, পরিশ্রমই সব।
কিন্তু সত্যিটা হলো,
পরিশ্রম শুধু তখনই মহৎ হয়, যখন সেটা নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে ব্যবহৃত হয়।
অন্যের স্বপ্ন পূরণে করা পরিশ্রম একদিন শেষ হয়ে যায়,
কিন্তু নিজের স্বপ্নের পথে ফেলা এক ফোঁটা ঘামও ইতিহাস হয়ে যায়।
তুমি যদি ভাবো, তাজমহলের শ্রমিকেরা ভালো পারিশ্রমিক পেয়েছিল,
হয়তো পেয়েছিল।
কিন্তু সম্মান? স্মৃতি? ইতিহাসের পাতায় নাম?
তা তারা কখনো পায়নি।
কারণ তাদের কাজ পেশা ছিল,
কিন্তু শাহজাহানের কাজ ছিল স্বপ্ন।
এই পার্থক্যটাই জীবনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়।
তাই বন্ধু, নিজেকে শুধু কর্মী হিসেবে দেখো না।
তুমি এক সম্ভাবনা, তুমি এক স্রষ্টা, তুমি এক স্বপ্নদ্রষ্টা।
নিজের স্বপ্নের দিকেই এগিয়ে যাও।
ছোট্ট কিছু হলেও নিজের সৃষ্টি করো,
যেটা তোমার হৃদয় থেকে এসেছে, তোমার আত্মার সঙ্গে যুক্ত।
তুমি যদি নিজের তাজমহল গড়তে পারো —
সে হয়তো পাথরের হবে না,
হয়তো শুধু একটি ধারণা, একটি লেখা, একটি প্রতিষ্ঠান,
কিন্তু সেটাই হবে তোমার চিরস্থায়ী পরিচয়।
এই পৃথিবী ঘামকে নয়,
স্বপ্নের আলোকে চেনে।
যে মানুষ নিজের ভেতরে স্বপ্নের প্রদীপ জ্বালাতে পারে,
তাকে কোনো অন্ধকার ছুঁতে পারে না।
তাজমহলের শ্রমিকেরা হয়তো অদৃশ্য হয়ে গেছে,
কিন্তু শাহজাহান আজও বেঁচে আছেন তাঁর স্বপ্নে।
তুমি যদি নিজের জীবনের শাহজাহান হতে পারো,
তাহলেই একদিন কেউ বলবে —
“সে অন্যের জন্য কাজ করেনি,
সে নিজের স্বপ্নের তাজমহল বানিয়েছিল।”
স্বপ্ন দেখা একাকী কাজ নয়— এটি ধৈর্য, পরিকল্পনা আর ছোট ছোট পদক্ষেপের সমন্বয়। স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে চাইলে কয়েকটি প্রাথমিক অভ্যাস গড়ে নাও। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা নিজের প্রকল্পের ওপর কাজ করো; সেটি লেখালেখি, পরিকল্পনা, শেখা বা ছোট পরীক্ষা—যা হলে কাজটি ধীরে ধীরে জমে উঠবে। ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেগুলো পূরণ করো— প্রতিটি ছোট বিজয় তোমার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলবে। ব্যর্থতা আসলেও হারিয়ে যেও না; প্রত্যেক ব্যর্থতা একটা শিক্ষার পাঠ। টাকা ও সময় বাঁচাতে শিখো— তোমার স্বপ্নকে আর্থিকভাবে স্থিতিশীল করতে একটি সাধারণ সঞ্চয় ও বাজেট তৈরি করো।
নিজেদের সঙ্গে সদয় হও; তুলনা ছেড়ে দাও। অন্য কারো তাজমহল তোমার প্রত্যাশা বদলে দেবে না— তুমি নিজেই নিজের নির্মাতা হবে। পরামর্শ নাও কোনো উপযুক্ত মানুষের কাছে, — একজন মেন্টরের কথা গ্রহণ করলে ভুল কমবে এবং পথ দ্রুত সুগম হবে। কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি বিশ্রাম ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নাও; সুস্থ মনেই সৃষ্টিশীলতা বিকাশ পায়।
বসে না থেকে শুরু কর আজ থেকেই। আজকের একটি ছোট কাজই আগামীকালের ইতিহাস তৈরি করতে পারে। স্বপ্ন দেখো সাহস করে, কাজ করো সকল বেঁচে থাকা সাহস দিয়ে।
✍️ — Krishnadev Nath
ykdonline.in