শরীরে চর্বি কেন বাড়ে ?
মানুষ কেন মোটা হয় জানেন ? “চর্বি খেলে চর্বি হয়” — এই ভুল ধারণাই আমাদের মোটা করে তুলছে। বহু মানুষ মনে করে চর্বি খেলেই চর্বি হয় ; অথচ এই কথাটি সত্যি নয়। আমি নিজেও এক সময় এই রকম ভুল ধারণার শিকার হয়েছিলাম। নিজের বাড়তি ওজন কমাতে না পেরে অনেক ধরনের ঘরোয়া টোটকা ট্রাই করতেছিলাম। লেবুর জল, জিরার জল, আরও কতকিছুই খেয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ওজন তো আমার নব্বই কেজি থেকে আর নামতেই চাইছে না !
২০০৬ সালের কথা।
ত্রিপুরার একজন স্বনামধন্য ডাক্তারবাবুর লেখা একটি বই আমার হাতে এল। বইটির নাম আজ আর ঠিক মনে নেই — হয়তো “রোগা শরীর মোটা শরীর” বা “মোটা শরীর রোগা শরীর”, কিছু একটা হবে। কিন্তু এই বইয়ের মূল বক্তব্যটা এখনো স্পষ্ট মনে আছে —
ডাক্তারবাবু লিখেছিলেন,
“স্নেহ অতি ভীষণ বস্তু — থাকলেও জ্বালা, না থাকলেও জ্বালা!”
তার বক্তব্য ছিল, শরীরের ওজন ঠিক রাখতে চাইলে তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
আমি তখন নিজের ওজন নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলাম। বহু চেষ্টা করেও ওজন কমাতে পারছিলাম না।
বইটা পড়ে মনে হলো — আহা ! অবশেষে যেন সোনার চাবি হাতে পেয়ে গেলাম !
তারপর শুরু হলো আমার ওজন কমানোর অভিযান।
আমি তেল খাওয়া বন্ধ করে দিলাম।
আমি এমনিতেই খুব ডেডিকেটেড মানুষ — একবার কিছু ধরলে তার শেষ না দেখে ছাড়ি না।
তাই কয়েক মাস ধরে আমি তৈলাক্ত খাবারের দিকে ফিরেও তাকাইনি।
কিন্তু তিন মাস পর যখন দাঁড়িপাল্লায় উঠলাম, তখন চমকে গেলাম —
ওজন তো কমলোই না, বরং শরীরে অন্যসব সমস্যা শুরু হয়ে গেল।
চামড়া শুকিয়ে গেল, নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়ল, মাথার চুল ঝরে যেতে লাগল।
শরীর যেন ভেতর থেকে সংকেত দিচ্ছিল —
“তুমি ভুল পথে হাঁটছো।”
শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে সেই ‘নো–অয়েল’ অভিযান বন্ধ করতে হলো।
তখনও জানতাম না — আসলে শরীরে চর্বি জমার প্রকৃত কারণ তেল নয়, কার্বোহাইড্রেট।
আজ, বহু বছর পরে আমি বুঝেছি —
“চর্বি খেলে চর্বি হয়”— এই কথাটি একদমই সত্য নয়।
চর্বি আমাদের শরীরের শত্রু নয়, বরং এক অপরিহার্য বন্ধু।
আমাদের মস্তিষ্ক, হরমোন, ত্বক, হৃদযন্ত্র — সবকিছুই ফ্যাটের উপর নির্ভরশীল।
বরং অতিরিক্ত ভাত, রুটি, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার — এগুলোই শরীরে ইনসুলিনের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়,
আর সেই ইনসুলিনই অতিরিক্ত শক্তিকে ফ্যাটে পরিণত করে জমা রাখে।
অর্থাৎ,
আমরা যা ভাবি, সত্য তার ঠিক উল্টো।
চর্বি আমাদের মোটা করে না —
আমরা যেভাবে চিন্তা করি, সেই ভুল চিন্তাই আমাদের মোটা করে।
এই ভুলটা শুধু আমার নয় —
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা একই ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছি।
অনেকে এখনও মনে করেন, “মাছ–মাংস–ডিম না খেলে শরীর ভালো থাকবে না।” আবার অনেক চিকিৎসকও এই ধরনের ধারণা মানুষের মনে পুশ করে দেন।
কিন্তু প্রকৃতি কখনোই এমন নিষ্ঠুর নয়।
প্রকৃতি আমাদের শরীরকে এমনভাবে তৈরি করেছে যে,
যথাযথ ফ্যাট, প্রোটিন, ও প্রাকৃতিক খাবার থাকলেই
শরীর নিজেই নিজের স্বাস্থ্যকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অসুখের মূল কারণ যদি ভুলভাবে ধরা হয়,
তাহলে যত ওষুধই খাওয়া হোক না কেন, শরীর কখনোই সেরে ওঠে না।
চিকিৎসার শুরুটা হওয়া উচিত সত্যকে চিনে নেওয়া দিয়ে।
তাই আমি এখন মানুষকে একটাই কথা বলি —
“তুমি খাবারকে ভয় পেও না,
বরং ভুল জ্ঞানকে ভয় পেয়ো।”
আজ আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি —
চর্বি নয়, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটই শরীরের ফ্যাট জমার মূল কারণ।
তেল বন্ধ করে নয়, বরং শরীরের ইনসুলিন–রিদমকে ঠিক করে
ওজন কমানোই আসল পথ।
সত্যি বলতে কী,
আমি আজ কৃতজ্ঞ সেই পুরোনো ডাক্তারবাবুর প্রতি —
কারণ তাঁর ভুল থেকেই আমি সত্যটা খুঁজে পেয়েছি।
এবং সেই সত্যটাই এখন আমি পৃথিবীর সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি — ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে বই লিখতে শুরু করে দিয়েছি,
যাতে কেউ যেন আর সেই ভুল পথে না হাঁটে,
যেমন আমি একসময় হেঁটেছিলাম।
Fat is not your enemy —
Wrong thinking is.
– Yogi Krishnadev Nath
🔗 ykdonline.in