Read Story of Mahabharat Part 156 Fight between Karna and Arjun on 17th day day by Ashoke Ghosh in Bengali আধ্যাত্মিক গল্প | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 156

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৫৬

সপ্তদশ দিনে অর্জুন ও কর্ণের যুদ্ধ

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

সপ্তদশ দিনে অর্জুন ও কর্ণের যুদ্ধ

কৃষ্ণের নির্দেশে দারুক অর্জুনের রথ প্রস্তুত করলো। তারপর কৃষ্ণের সাথে অর্জুন সেই রথে উঠে রণভূমির দিকে চললেন।

কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন, তোমার সমান যোদ্ধা পৃথিবীতে নেই, তবুও তুমি কর্ণকে অবহেলা কোরো না। আজ যুদ্ধের সপ্তদশ দিন চলছে, তোমাদের এবং শত্রুপক্ষের বিপুল সৈন্যের এখন অল্পই অবশিষ্ট আছে। কৌরবপক্ষে এখনও অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা, কর্ণ, শল্য ও কৃপ এই পাঁচ মহারথ জীবিত আছেন। অশ্বত্থামা তোমার গুরু দ্রোণের পুত্র, কৃপ তোমার আচার্য, কৃতবর্মা তোমার মাতৃকুলের আত্মীয়, মহারাজ শল্য তোমার বিমাতার ভাই, এই কারণে এঁদের উপর তোমার দয়া থাকতে পারে, কিন্তু পাপমতি কর্ণকে আজ তুমি সত্বর বধ করো। জতুগৃহদাহ, পাশা খেলা এবং দুর্যোধন তোমাদের উপর যত উৎপীড়ন করেছেন সে সমস্তেরই মূল পরামর্শদাতা দুরাত্মা কর্ণ। অর্জুন বললেন, তুমি যখন আমার সহায় তখন কর্ণের কথা দূরে থাক, ত্রিলোকের সকলকেই আমি পরলোকে পাঠাতে পারি।

এই সময়ে ভীম তুমুল যুদ্ধে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর সারথিকে বললেন, আমি সব দিকে শত্রুদের রথ ও পতাকা দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছি। অর্জুন এখনও এলো না, যুধিষ্ঠিরও আহত হয়ে চলে গেছেন। এঁরা জীবিত আছেন কিনা জানি না। যাই হোক, এখন আমি শত্রুসৈন্য বধ করবো, তুমি দেখে বলো আমার কত বাণ অবশিষ্ট আছে। সারাথি বলল, আপনার এত অস্ত্র আছে যে ছয়খানি গরুর গাড়ি তা বহন করতে পারে না। আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে হাজার হাজার অস্ত্র নিক্ষেপ করুন।

কিছুক্ষণ পরে সারাথি বলল, আপনি গাণ্ডীবের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন না? আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে, অর্জুনের রথের পতাকার দণ্ডে ওই ভয়ংকর বানর দেখা যাচ্ছে, তিনি কৌরবসৈন্য বিনষ্ট করতে করতে আপনার কাছে আসছেন। ভীম আনন্দিত হয়ে বললেন, তুমি যে খুশির খবর দিলে তার জন্য আমি তোমাকে চোদ্দটি গ্রাম, একশত দাসী এবং কুড়িটি রথ দেবো।

অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, পাঞ্চালসৈন্যেরা কর্ণের ভয়ে পালাচ্ছে, তুমি শীঘ্র কর্ণের কাছে রথ নিয়ে চলো, নয়তো সে পাণ্ডব ও সৃঞ্জয়গণকে বিনাশ করবে। অর্জুনের রথ দেখতে পেয়ে শল্য বললেন, কর্ণ, ওই দেখ অর্জুন আসছে, তার ভয়ে কৌরবসেনা পালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তিনি সমস্ত সৈন্য ছেড়ে দিয়ে তোমার দিকেই আসছেন। কর্ণ, তুমি কৃষ্ণ ও অর্জুনকে বধ করতে সমর্থ, তুমি ভীষ্ম, দ্রোণ, অশ্বত্থামা ও কৃপাচার্যের সমান। আমাদের পক্ষের রাজারা অর্জুনের ভয়ে পালাচ্ছেন, তুমি ভিন্ন আর কেউ এঁদের ভয় দূর করতে পারবে না। এই যুদ্ধে কৌরবগণ তোমাকেই রক্ষাকর্তা মনে করেন। কর্ণ শল্যকে বললেন, আপনি এখন প্রকৃতিস্থ হয়েছেন, আমার মনের মত কথা বলছেন, অর্জুনের ভয়ও ত্যাগ করেছেন। আজ আমার বাহুবল দেখুন, আমি একাকীই পাণ্ডবগণকে ধ্বংস করবো এবং কৃষ্ণ ও অর্জুনকেও বধ করবো। এই দুই বীরকে না মেরে আমি ফিরব না।

এই সময়ে দুর্যোধন, কৃপ, কৃতবর্মা, শকুনি, অশ্বত্থামা প্রভৃতিকে দেখে কর্ণ বললেন, আপনারা সব দিক থেকে কৃষ্ণ ও অর্জুনকে আক্রমণ করুন, তারা পরিশ্রান্ত ও ক্ষতবিক্ষত হলে আমি অনায়াসে তাদের বধ করবো। কর্ণের উপদেশ অনুসারে কৌরবপক্ষীয় মহারথগণ সসৈন্যে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলেন। অর্জুনের বাণবর্ষণে কৌরবসৈন্য বিধ্বস্ত হতে লাগল, যারা ভীমের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল তারাও পালিয়ে যেতে থাকলো। কৌরবসৈন্য বিধ্বস্ত হলে অর্জুন ভীমের কাছে এলেন এবং তাকে যুধিষ্ঠিরের কুশল সংবাদ জানিয়ে অন্যত্র যুদ্ধ করতে গেলেন।

দুঃশাসনের দশ জন ভাই অর্জুনকে ঘিরে ধরলে  অর্জুন ভল্লের আঘাতে সকলকেই বধ করলেন। নব্বইজন সংশপ্তক রথী অর্জুনকে বাধা দিতে এলে কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর তারাও নিহত হোলো।

______________

(ক্রমশ)