Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

ক্রমবর্ধমান বিবাহবিচ্ছেদ ও প্রতিকার

আমাদের ছোটবেলায় ছিল যৌথ পরিবার। অনেকগুলি ভাই-বোন, বাবা-কাকা-জেঠা, পিসি-কাকি-জেঠি-মা-বাবা-ঠাকুরমা-দাদু নিয়ে বিশাল পরিবার। পরিবারে থাকত একজন কর্তা। যিনি বয়োজ্যেষ্ঠ, ব্যাক্তিত্ববান, শ্রদ্ধেয়,- তিনিই পরিবারের কর্তা। বাবা-জেঠা বা দাদু,- তাদের মধ্যেই কেউ কর্তা হতেন। এই কর্তাকে সবাই সমীহ করত।

তখনও পরিবারের একে অপরের সাথে লাগালাগি ছিল, ভাইয়ে-ভাইয়ে রেষারেষি ছিল, মা-কাকী-জেঠির মধ্যে চুলোচুলি হত, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হত। কিন্তু পরিবারের ' কর্তা'র সামনে সব চুপ। যতই লাগালাগি-চুলোচুলি থাকুক,- কর্তা যতদিন আছেন,-কেউ পরিবার থেকে পৃথক হবার কথা ভাবতেই পারত না৷ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চূড়ান্ত মনোমালিন্য হলেও একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মুখেও আনা নিষেধ ছিল। কর্তার কানে গেলে তিনি খুব রাগ করবেন। কর্তার ভয়ে, - শত বিদ্বেষ সত্বেও সবাই একসাথে থাকতে থাকতে একে অপরকে মানিয়ে নিত৷ একে অপরকে সহ্য করা শিখে নিত৷ থাকতে থাকতে আবার মিল হত৷ আবার ঝগড়া হত৷ এইভাবেই কেটে যেত আনন্দে-সুখে-দুখে-ঝগড়ার মধ্য দিয়ে। পরিবারের ঐক্য বজায় থাকত কর্তাকে কেন্দ্র করেই।

যেমনটা,-আমাদের সৌরজগতের ' কর্তা' হলেন সূর্য।  তাকে কেন্দ্র করে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মংগল ইত্যাদি গ্রহগুলি নিজ নিজ কক্ষপথে দৌড়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে। একেকটি গ্রহের আকৃতি-প্রকৃতি-বৈশিষ্ট পৃথক পৃথক হলেও সূর্যকে কেন্দ্র করে তাদের যৌথ পরিবার অটুট রয়ে গেছে। সূর্যের উপর প্রত্যেকটি গ্রহের অভিকর্ষ  টান ও সম্ভ্রমই এই সৌরপরিবারকে একত্রে  ধরে রেখেছে।

ধীরে ধীরে আমরা যতই উচ্চশিক্ষিত, আধুনিক, স্মার্ট, উচ্চাকাঙ্খী হতে লাগলাম,- ততই আমরা যৌথ পরিবার থেকে বেরিয়ে এসে নিউক্লিয়াস পরিবারে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছি৷ স্বামী-স্ত্রী আর সন্তান,- এই হল আমাদের পরিবার। মা-বাবা যদিও আছে,- কিন্তু কর্তার ভূমিকায় আর নেই৷ আমার পরিবারে আমিই কর্তা,- আমার বউ কর্তী৷ এল নারী-পুরুষে সমান অধিকার আর সমান যোগ্যতার ঢেউ। কেউ কারো চেয়ে কম নই,- কেউ কারো উপর নির্ভর নই৷ দুইজনেই শিক্ষিত,- দুইজনেই বুঝদার। সামান্য সামান্য দ্বন্দে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছিনা৷ দুইজনেরই অহং বজায় রাখা চাই। একে অপরকে সয়ে-বয়ে চলার প্রবনতা কমতে লাগল। একে অপরের ভুল ও অপরাধ ক্ষমা করার ইচ্ছা চলে গেল। বাড়তে লাগল বিবাহ বিচ্ছেদ। তোমার পথ তুমি দেখ,- আমার পথ আমি। গত দশ বছর পূর্বে আমাদের দেশে প্রতি এক হাজার দম্পতির মধ্যে একটি দম্পতি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতে যেত,- বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে হল এক হাজারের মধ্যে তের। দিন দিন আরো বাড়ছে।

যখনই পারস্পরিক দ্বন্দ প্রবল হচ্ছে স্বামী স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদকে বেছে নিচ্ছে,- ভবিষ্যৎ সুখের আশায়। ভাবছে পরস্পরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেই তারা ভাল থাকবে৷ কিন্তু Linda waite নামে এক আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী দীর্ঘ গবেষণার পর তার গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেছেন,- যেসকল অসন্তুষ্ট দম্পতি ভবিষ্যৎ  সুখের আশায় ডাইভোর্স নিয়ে পরস্পরের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেছেন তাদের ব্যাক্তিগত জীবনে সুখ ও আনন্দের মাত্রা সেইসকল দম্পতির  চেয়ে অনেক কম যারা পারস্পরিক দ্বন্দ সত্ত্বেও কোনভাবেই ডাইভোর্স নিচ্ছেন না,- বরং নানাভাবে একে অপরকে সহ্য করে সংসার টিকিয়ে রাখছেন কোনরকমে। (১)

অলীক শান্তির আশায় অধৈর্য হয়ে যদিও স্বামী-স্ত্রী ডাইভোর্স নিচ্ছেন,- কিন্তু এই ডাইভোর্সের কুফল সবচেয়ে বেশী ভুগতে হয় তাদের সন্তান-সন্ততিদের। বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমানিত,-

যে সকল ছেলেমেয়েদের মা-বাবার ডাইভোর্স হয়ে গেছে তাদের মধ্যে,-

(১) ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের প্রকোপ অনেক বেশী। পরবর্তী জীবনে তারা দীর্ঘ মেয়াদি major depression এর রোগীতে পরিনত হয়।

(২) এইসকল ছেলেমেয়েদের মধ্যে পরবর্তী জীবনে সাইকিয়াট্রিস্ট ডাক্তারের কাছে যাবার প্রবনতা বেশী থাকে।

(৩) ডাইভোর্স নেওয়া স্বামী স্ত্রীর ছেলে সন্তানদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশী। এবং তাদের আয়ুও অন্যদের চেয়ে কম হয়।

(৪) তাদের মধ্যে বিভিন্ন সংক্রমনজনিত রোগ, হজম সংক্রান্ত ব্যাধি, শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত রোগ বেশী হয়ে থাকে। তারা একটু বেশীই দুর্ঘটনা প্রবন হয়ে থাকে৷

(৫) এইসকল সন্তানদের মধ্যে ক্যান্সার, হার্টের রোগ, স্ট্রোক, আর্থাইটিস ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী হয়ে থাকে।

(৬)  অন্যান্য ছেলেমেয়েদের তুলনায় ডাইভোর্স নেওয়া মা-বাবার সন্তানদের মধ্যে নেশাগ্রস্ততার প্রবনতা অনেক গুন বেশী হয়ে থাকে।

(৯) এইসকল ছেলেমেয়েদের পরবর্তী সংসার জীবন অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী ক্ষনস্থায়ী ও অসন্তোষের হয়ে থাকে। তারা কাউকে বিশ্বাস ও ভরসা করতে পারে অনেক কম। বৈবাহিক সম্পর্কের পবিত্রতা রক্ষার প্রবনতা তাদের মধ্যে অনেক কম হয়ে থাকে। (২,৩,৪)

শুধু তাই নয়,- ডাইভোর্স নেওয়া পুরুষ মহিলাদের মধ্যেও মাদকাসক্তির প্রবনতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী হয়ে থাকে। (৫)

কোন দম্পত্তিই মনের আনন্দে ডাইভোর্সের পথ বেছে নেয় না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে না পেরে,- বাধ্য হয়ে এই উপায় বেছে নেয়। অত্যন্ত দু:খজনক পরিস্থিতির শিকার হয় বলেই আদালতের দরজায় কড়া নাড়ে৷ কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীদের মতে যদি ডাইভোর্স এতটা সহজলভ্য না হত,- তবে পারস্পরিক দ্বন্দে লিপ্ত স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সয়ে-বয়ে নেওয়ার জন্য আরেকটু বেশী চেষ্টা করত, একে অপরের দোষ ত্রুটি ও অপরাধগুলি আরো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করত, একে অপরকে মানিয়ে নিত। এইভাবে চলতে চলতে তারা আবার একে অপরের সাথে সুখে সংসার করতে পারত,- ডাইভোর্সের পরিমান অনেকটাই কমত। তাতে সন্তান সন্ততিদের ভবিষ্যৎ এত বিপদ সংকুল হয়ে উঠত না৷ পশ্চিমা দেশের হাওয়া লেগে এবং আদালতের দরজাটা সহজগম্য হউয়ায়,- সামান্য ঝগড়াঝাটি হলেই ডাইভোর্সের ভাবনা খুব তাড়াতাড়ি মাথায় আসে।

যদি প্রতিটি নিউক্লিয়াস পরিবারেও একজন কর্তা থাকত,- যার প্রতি স্বামী স্ত্রী দুইজনেরই শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম, ভালবাসা, টান,সমীহ  থাকত,- তবে সেই কর্তার শাষন, উপদেশ, সমাধান ও দিক নির্দেশ পেয়ে তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ ও ঝগড়া খুব সহজেই মিটে যেত। তারা পরস্পরের ভুল ত্রুটি শুধরানোর সুযোগ পেত। ডাইভোর্স নেওয়ার কথা ভাবত না এত তাড়াতাড়ি। 

তাই প্রতিটি দম্পতির প্রয়োজন জীবন্ত আদর্শ বা আচার্যের প্র‍তি সক্রিয় অনুরতি।  প্রয়োজন তাঁকে পরিবারের কর্তা হিসাবে বরন করার। আজকে লক্ষ লক্ষ সৎসঙ্গী পরিবার শ্রীশ্রীঠাকুরের সদদীক্ষা গ্রহন করে শ্রীশ্রীআচার্য্যদেবকেই তাদের পরিবারের কর্তা হিসাবে মেনে চলছে। তিনিই আমাদের  প্রতিটি পরিবারের মূখ্য ব্যাক্তি,- আমাদের সকলেই অভিভাবক । তাঁকে খুশী করে চলাই এইসকল সৎসঙ্গী পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের একমাত্র লক্ষ। ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে যখনই কোন দ্বন্দ, সমস্যা, ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে তখনই তারা ছুটে যাচ্ছে শ্রীশ্রীআচার্য্যদেব, শ্রীশ্রী অবিনদাদা বা ঠাকুর পরিবারের অন্যদের কাছে। নিঃসংকোচে মনের কথা, অভিযোগ খুলে বলছে তাঁর কাছে। তিনি ধৈর্য সহকারে সকলের কথা শুনেন,- ছোট্ট ছোট্ট টোটকায় বিশাল বিশাল সমস্যা নিরসন করে পরিবারে শান্তি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। মানুষ আনন্দে-সুখে-নিশ্চিন্তে সংসার যাপন করছে।

  এক উচ্চশিক্ষিত দম্পতি। স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই কোন একটা কলেজে পড়ান। জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে গেছেন। ছেলে-মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।   তারা দু'জনেই এক শীতের সকালে শ্রীশ্রীআচার্য্যদেবের কাছে এসে প্রনাম করে জানালেন,-" আমরা অনেকদিন যাবত নানা সাংসারিক ঝামেলা ও ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর পারছিনা। সিদ্ধান্ত নিয়েছি,- আমরা এইবার আলাদা হব,- ডাইভোর্স নেব। আপনার চরনে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিবেদন করতে এসেছি।"  শ্রীশ্রীআচার্য্যদেব তাদের এই নিবেদন শুনে ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে গেলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,-" আপনারা তো সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন,- আমার আর কিছু বলার নেই৷ শুধু একটা অনুরোধ করব,- যদি কথা দেন  আমার সেই অনুরোধ রাখবেন। "  সেই দম্পতি হাত জোর করে বল্লেন,- " আজ্ঞে, আপনি আদেশ করুন।"  তখন আচার্য্যদেব সেই ভদ্রমহিলার উদ্দেশ্যে বললেন,-" আপনারা তো আলাদা হয়েই যাবেন৷ আমার শুধু একটা ইচ্ছা,-আপনি যদি আপনার গলার মাফলারটা আপনার স্বামীর গলায় জড়িয়ে দিয়ে তাকে একটা প্রনাম করেন,- আমার খুব ভাল লাগবে।"  সেই আদেশ পেয়ে উচ্চ শিক্ষিতা অধ্যাপিকা মহিলা একটু ইতস্তত করতে লাগলেন। কারন,-উনি উচ্চবিত্ত-উচ্চশিক্ষিতা আধুনিক মহিলা,- স্বামীকে কখনো সাষ্টাঙ্গে প্রনাম করার অভ্যাস নেই। অনভ্যাসের জড়তা ও সংকোচ তাকে ঘিরে ধরল।   কিন্তু কথা দিয়ে ফেলেছেন যে!  তাই অত্যন্ত সংকোচতার সাথে নিজের গলার মাফলারটা খুলে সামনে দাড়ানো স্বামীর গলায় জড়িয়ে দিয়ে তাকে সাষ্টাঙ্গে প্রনাম করলেন।   আর, প্রনাম করার সাথে সাথেই  তার স্বামী ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন। তার কান্না দেখে প্রনামরত স্ত্রীও কাঁদতে লাগলেন। সেখানে উপস্থিত সকলের চোখেই জল ভরে আসল এই দৃশ্য দেখে।   কাঁদতে কাঁদতে স্বামী ব্যাক্তিটি আচার্য্যদেবের উদ্দেশ্যে  বলতে লাগলেন,-" দাদা, আমি শুধু এই সামান্য শ্রদ্ধা ও সম্মানটকুই চেয়েছি এতদিন আমার স্ত্রীর কাছে। আমাদের কোন সমস্যা নেই,- কোন অভাব নেই৷ তার চোখে আমার প্রতি কোন শ্রদ্ধা না পেয়ে পেয়ে আমি নিজেকে এই সিদ্ধান্তে দাঁড় করিয়েছি। "   সেদিন তারা চলে যান।  পরে জানা যায়,-তারা আর ডিভোর্স নেন নি। নিজেদের ভুল-ত্রুটি শুধরিয়ে একসাথে আবার চলতে লাগলেন।   আচার্য্যদেব কোন যাদুমন্ত্র প্রয়োগ করেননি,- কোন অলৌকিক ক্ষমতা দেখাননি। তিনি তাঁর বিচক্ষনতা ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দিয়ে সেই প্রৌঢ় দম্পতির মনোমালিন্যের মূল কারনটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এবং সেই দম্পতিকে ছোট্ট একটা আচরনের মধ্য দিয়ে তাদের ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন।   আজকাল অনেক উচ্চশিক্ষিত আধুনিক দম্পত্তির মধ্যেই এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ না থাকার কারনে সাংসারিক ঝামেলা প্রকট হয়ে উঠছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হিসাবে নিয়ে কিছুদিন পরই দ্বন্দে লিপ্ত হচ্ছে। পুরুষ স্বভাবতই  স্ত্রীর কাছ থেকে শ্রদ্ধা,সম্মান ও নির্ভরতা আশা করে,- স্ত্রীও তার অবচেতন মনে চায় পুরুষের উপর নিশ্চিন্তে নির্ভরশীল হয়ে সুখে থাকতে। স্বামী-স্ত্রী দুইজন বয়স-যোগ্যতা সবদিক দিয়ে সমান সমান হলে ভাল বন্ধু হিসাবে কিছুদিন হয়ত কাটাতে পারে,- কিন্তু সেই শ্রদ্ধা ও নির্ভরশীলতার অভাবে কিছুদিন পরই সাধারনতঃ বিতৃষ্ণা জন্ম নিতে নিতে কোর্টের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

লক্ষ লক্ষ সৎসঙ্গী পরিবার শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে সকাল-সন্ধ্যা একসাথে বসে প্রার্থনা করছে। প্রার্থনার পর দুইবেলা স্ত্রী স্বামীকে প্রনাম করছে, ছেলে মেয়েরা মা-বাবাকে প্রনাম করছে। তাতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মান বজায় থাকছে। প্রতিটি পরিবারে শ্রদ্ধার চাষ হচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন অটুট হচ্ছে।

আচার্য্যদেব সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ঘুরে সকল সৎসঙ্গীদের নির্দেশ দিচ্ছেন, - আমরা যেন রাতের আহার পরিবারের সকলে একসাথে করি। আহার করতে করতে একে অপরের সাথে সারাদিনের গল্প, ঘটনাগুলি শেয়ার করি। একে অপরের খোঁজ খবর নেই। গল্প করতে করতে হাতের এঁটো শুকিয়ে যাক। খাবার পর সবাই মিলে থালাবাসন ধুয়ে ফেলব।

তাঁর এই নির্দেশ পালনের ফলে সৎসঙ্গী পরিবার গুলিতে পারস্পরিকতা, বন্ধন, ভালবাসা অনেকটাই বেড়ে উঠছে। আমরা শান্তিতে বসবাস করছি।

বাড়তে থাকা বিবাহ বিচ্ছেদের আরেকটি প্রধান কারন হল,- ভুল পাত্র বা পাত্রী নির্বাচন,  বিবাহের প্রকৃত উদ্দেশ্য না জেনে শুধু  বাহ্যিক রূপে মুগ্ধ হয়ে যৌন আকর্ষন আর আর্থিক লাভালাভের কারনে বিবাহে লিপ্ত হওয়া৷ আমার মনে হয়,- প্রত্যেক মেয়েই তার স্বামীর কাছে চায় প্রশ্রয়, নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা । সমস্ত বাহ্যিক ও রংগীন চাহিদার পেছনে প্রত্যেক নারীই তার স্বামীর প্রতি এই আন্তরিক চাহিদাটুকু হৃদয়ের অন্তরে পোষন করে বলেই আমার মনে হয়।অর্থাৎ সে চায় স্বামী নামক পুরুষটি তাকে সর্বোতভাবে পরিপূরন করুক। তাই আমাদের শাস্ত্রে,- স্বামী আর পিতাকে নারীদের নিকট সমপর্যায়ের শ্রদ্ধেয় বলে গন্য করা হয়েছে। শুধুমাত্র  যৌন সম্পর্কটুকু বাদ দিলে স্বামী ও পিতার ভূমিকার মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। অন্ততঃ আমাদের আর্যসংস্কৃতি অনুযায়ী তাই বলে জানি।   শ্রীশ্রীঠাকুর বলেন,- পুরুষ মানে যে বা যিনি পূরন করেন। যার পূরন করার ক্ষমতা যত বেশী তার পুরুষত্ব তত বেশী। স্ত্রী চায়  পুরুষের দ্বারা পূরিত হতে,- শারীরিক-মানসিক-আধ্যাত্মিক ও সামাজিকভাবে। আর পুরুষ চায়,- স্ত্রীর মাধ্যমে পোষিত হয়ে আরো বৃহৎ হতে,- নিজেকে আরো আরোভাবে বৃহৎ আদর্শের সাথে যুক্ত করতে। প্রত্যেক পুরুষের অন্তর্নিহিত সুপ্ত চাহিদা এটাই। সে কখনো স্ত্রীর আঁচলের নীচে মূখ গুজে  নিজেকে সংকোচিত রেখে সুখী  হয়না।  তাই,- স্বাভাবিকভাবেই পুরুষ যদি স্ত্রীর তুলনায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে থাকে তবে সেখানে স্ত্রীর পূরিত হওয়া বিঘ্নিত হয়। আর, সেই পুরুষও তার অবচেতন মনে হীনমন্যতার কারনে প্রতিনিয়ত স্ত্রীকে সন্তুষ্ট ও তোষামোদ করতে গিয়ে একসময় স্ত্রীর মনে বিতৃষ্ণার সৃষ্টি করে। কারন,- প্রত্যেক নারীও তার অবচেতন মনে এটাই কামনা করে,- তার স্বামী যেন বিস্তৃতির দিকে এগিয়ে যায়। তাতেই সে সূখী হয়।   যে বিয়েতে এই ভারসাম্য সহজে রক্ষা হয়,- সেই বিয়ে তত সফল৷ সেই স্বামী-স্ত্রী তত সুখী। 

শ্রীশ্রীঠাকুর বিবাহ সম্পর্কে বিস্তারিত দিক নির্দেশ করে গেছেন। বিয়ে কি,  কেন করতে হয়, কখন করতে হয়, কেমন পুরুষ কেমন নারীর স্বামী হতে পারে, কেমন করে সংসার করতে হয়, কিভাবে স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে বহন করবে, কেমন করে শ্বশুর বাড়িতে চলতে হয় ইত্যাদি প্রত্যেকটি ব্যাপারে বিস্তারিত বলে গেছেন তিনি। প্রতিটি সৎসঙ্গী পরিবারের ছেলে মেয়েরা যতই শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বিবাহনীতি সম্পর্কে অল্প বয়স থেকে ওয়াকিবহাল হবে, শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি ভালবাসার ফলস্রুতিতে এইসকল নীতি বিধি মেনে চলবে ততই বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবনতা কমে আসবে।

ততই আমাদের সমাজ, দেশ ও সারা বিশ্ব ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

সূত্রঃ (১)Waite, L. J., Browning, D., Doherty, W. J., Gallagher, M., Luo, Y. & Stanley, S. M. (2003). "Does Divorce Make People Happy? Findings from a Study of Unhappy Marriages". Institute for American Values. ISBN 1-931764-03-4)

(২)Jacquet, S. E.; Surra, C. A. (2001). "Parental divorce and premarital couples: commitment and other relationship characteristics". Journal of Marriage and Family. 63: 627–638. doi:10.1111/j.1741-3737.2001.00627.x.

(৩) . Fagan, P. F. & Rector, R. E. (2000). The Effects of Divorce in America. The Heritage Foundation. Backgrounder #1373.

(৪) 2002 article in Clinical Child and Family Psychology Review.

(৫) Gilman, Stephen E.; Kawachi, Ichiro; Fitzmaurice, Garrett M.; Buka, Stephen L. (2003). "Family Disruption in Childhood and Risk of Adult Depression". American Journal of Psychiatry. 160 (5): 939–946. doi:10.1176/appi.ajp.160.5.939. PMID 12727699.