Read Ishtavrit in the light of science and research by DR RAJESH CHOUDHURI in Bengali আধ্যাত্মিক গল্প | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

বিজ্ঞান ও গবেষণার আলোকে ইষ্টভৃতি

# ২০১৩ সালের ২৩শে অগাস্ট #BMC_Public_Health নামে আমেরিকা হতে প্রকাশিত একটি জার্নালে  গুরত্বপূর্ণ এক গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়। ( Issue -13. Article Number-773)

এই গবেষনায় ৫০ বছরের বেশী বয়সী একদল মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে একটা গ্রুপ সপ্তাহে অন্তত একবার কোন মঙ্গলজনক কার্যে নিজের আয় হতে দান করেন,- আরেকদল মানুষ কোন দান কর্মে যুক্ত নন। পাঁচ বছর এই দুটো গ্রুপের মানুষকে পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা  করা হয়। দেখা গেছে যারা সপ্তাহে অন্তত একবার কোন মঙ্গলজনক কার্যে দান করে অভ্যস্ত তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা অন্য গ্রুপটির তুলনায় ৪৪% কম পরিলক্ষিত । মোদ্দাকথা,- নিত্য কোন মঙ্গলজনক কর্মে নিজের আয় হতে দান করলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়।

না,- কোন অলৌকিক উপায়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে যায়,- তা নয়। তার পেছনেও কিছু বিজ্ঞানসম্মত কারন আছে।

#American_Journal_Of_Preventiv_Medicine ( Volume 59. Issue 2, August 2020, pages-176-186) এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিত্য কোন মঙ্গলজনক কর্মে দান করে, - তাদের শরীরে বিভিন্ন অংগে Inflammation এর মাত্রা বাকীদের তুলনায় অনেক কম। এই Inflammation নামক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটিই শরীরে বিভিন্ন ক্রনিক রোগব্যাধির জন্য দায়ী৷ শরীরে inflammation এর জন্য দায়ী মূলত: মানসিক উদ্বগ, দু:শ্চিন্তা, অনিদ্রা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা।

Andrew University এর এক বিশিষ্ট অধ্যাপক উনার আর্টিকেলে লিখেছেন,- নিত্য কোন মঙ্গলজনক কর্মে দান করার অভ্যাস মানুষের জীবনে সন্তুষ্টি ও তৃপ্তি প্রদান করে, এক উদেশ্যপূর্ন জীবনের বোধ জাগ্রত করে। যার ফলশ্রুতিতে এই প্রকার মানুষেরা তূলনামূলক ভাবে উন্নত ও সুস্থ জীবনযাত্রা যাপন করে, তারা সাধারণত এমন কর্ম-অভ্যাসে নিয়োজিত থাকে যা তাদের শরীর ও মনকে অনেক বেশী সুস্থ রাখে৷

নিত্য কোন মঙ্গলজনক কর্মে দান করার অভ্যাস মানুষের জীবনে আরো বহুবিধ মঙ্গল বয়ে আনে। যেমন-

★অধিক আনন্দপূর্ন এবং স্বস্তিময় জীবন: #The_Journal_Of_Positive_Psychology( vol-9,2014, Issue-3. page-204-208) তে একদল মনোবিজ্ঞানী দ্বারা  প্রকাশিত গবেষনাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে,- নিত্য দানক্রিয়ায় অভ্যস্ত মানুষের জীবনে আনন্দ ও সন্তুষ্টি অন্যদের তূলনায় অধিকতর হয়ে থাকে।

★কম উদ্বেগ ও দু:শ্চিন্তা:একাধিক মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রকাশিত  গবেষনা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যারা অন্যের প্রয়োজনে নিজের কষ্টার্জিত আয় হতে দান করেন তাদের মনে এক পরিতৃপ্তি ও পূর্নত্ব উপলব্ধি হয় যা তাদেরকে অত্যন্ত পজিটিভ মনোভাবের অধিকারী করে তোলে। অন্যের প্রয়োজন পূরনের প্রতি তাদের মনোযোগ নিবিষ্ট থাকে বলে তারা নিজেদের ব্যাক্তিগত জীবনের সমস্যা, উদ্বেগ ও জীবনের ঋনাত্মক দিকগুলো থেকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন থকে। তাতে নিজেদের সাংসারিক সমস্যাগুলো আরো পজিটিভ ভাব নিয়ে দ্রুত সুচারু ভাবে সমাধান করতে সমর্থ হয়।

★শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার উপলব্ধি : মানুষ যখন কোন ব্যাক্তি বা সংস্থাকে নিত্য দান করতে অভ্যস্ত হয়- তখন সেই ব্যাক্তি বা সংস্থার আদর্শ ও চিন্তাভাবনার সাথে ঐ ব্যাক্তির গভীর বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপন হয়। ফলশ্রুতিতে এই ব্যাক্তি বা সংস্থার সাথে সম্পর্কিত অন্য অন্য সকল মানুষের সাথে এক দৃঢ় সামাজিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই শক্তিশালী সামাজিক সম্পর্ক মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উদ্বেগ ও দু:শ্চিন্তা দূর করতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম মনোভাব সম্পন্ন মানুষের সাথে সামাজিকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ঐ সংস্থার আদর্শের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হওয়ায় প্রত্যেকের জীবনযাত্রা খুব সুশৃঙ্খল, স্বাস্থ্যকর ও উন্নত হতে থাকে।

★আধ্যাত্মিক উন্নতি ও পরিবর্তন: বহু মনোবিজ্ঞানীদের মতে আধ্যাত্মিক সাধনায় দানকর্ম অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ এক অংশ। মানুষের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও বোধকে প্রকাশ করা এবং সেই বিশ্বাসকে কর্মে রূপান্তরিত করার এক উত্তম প্রক্রিয়া হল দানকর্ম। নিত্য দানকর্ম মানুষকে ঈশ্বর বা গড বা আল্লার সাথে মানসিক ভাবে যুক্ত রাখে। সেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত অন্যান্যদের সাথেও যুক্ত রাখে।

২০০৬ সালে #National_Institute_Of_Health এর বিশিষ্ট বিজ্ঞানী Jorge Moll ও উনার সহকর্মীগন এক গবেষণায় লক্ষ করেন মানুষ যখন কোন মঙ্গল উদ্দেশ্যে দান করে তখন তার ব্রেইনের একটি নির্দিষ্ট অংশ সক্রিয় হয়ে উঠে যে অংশটি মূলত: মানুষের আনন্দ উপলব্ধি ও সামাজিক যোগাযোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীগন আরো লক্ষ করেন, - দানকর্ম কালে মানুষের ব্রেইনে Endorphin নামক হরমোন অধিক পরিমাণে নি:সৃত হয় যে হরমোনটি মানুষের মনে Positive ভাব সৃষ্টিতে সহায়ক। বিজ্ঞানীগন এই লক্ষনের নামকরণ করেন,-" helper's sign" ।

#Centre_for_Neuroechonomics_Studies এর ডিরেক্টর Paul Zak এক ল্যাবরেটরি গবেষণায় লক্ষ করেন মানুষ যখন কোন মঙ্গল উদ্দেশ্যে দান করে তখন মস্তিষ্কে Oxytocin হরমোনের ক্ষরন বৃদ্ধি পায়। ( যৌনক্রিয়াকালে এবং স্তন্যদান কালেও এই হরমোন ক্ষরিত হয়।) এই হরমোনের প্রভাবে দানকারীর মনে এক আনন্দ উপলব্ধি সৃষ্টি হয়, যাকে দান করছে তার প্রতি এক আবেগ ও টান সৃষ্টি হয়।

এইসব কারনেই হয়ত,- সকল ধর্মমতের গুরুগন আধ্যাত্মিক সাধনার সাথে নিত্য দানক্রিয়াকে যুক্ত করেছেন। মুসলিম ধর্মে জাকাত, বৌদ্ধ ধর্মে চীবর দান প্রথা রয়েছে। খৃষ্টানরা তাদের আয়ের প্রায় পাঁচ শতাংশ চার্চে দান করেন। হিন্দুধর্মেও বিভিন্ন যজ্ঞ, আচার- অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বনে দানের প্রথা রয়েছে।

নিত্য দান কাকে করব? কোন ভিক্ষুককে করা যায়, প্রতিবেশীকে করা যায়, পিতামাতাকে করা যায়, কোন সংস্থাকে করা যায়। সকল দানেই উপরোক্ত উপকার সমূহ লাভ হয়।

কিন্তু দান সঠিক পাত্রে ও সঠিক উদ্দেশ্যে নিয়োজিত হলেই তা সর্বাত্মক সার্থক। তাই সবচেয়ে উত্তম উপায় হল,- যাকে দান করলে সকলের মঙ্গল  সাধন সম্ভব, যিনি সবার ভাল করেন, যিনি সকলকে ভরন-পালন-পোষন করেন,- তাঁকে নিত্য দান করা। তিনিই সদগুরু বা আচার্য্য। তাই সদগুরুকে নিত্য দান করাই উত্তম পন্থা।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র এই উত্তম সাধন পন্থার নাম দিলেন ' ইষ্টভৃতি'। তাই ইষ্টভৃতি নিত্য পালনীয়।

এই ইষ্টভৃতির ফলেই আপামর সৎসঙ্গীবৃন্দ শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি এক তীব্র আবেগ-টান ও ভালবাসা অনুভব করে। এই ইষ্টভৃতির ফলেই সৎসঙ্গী গুরুভাই ও মায়েদের মধ্যে এক গভীর সামাজিকতা ও আপনত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এই ইষ্টভৃতি মহাযজ্ঞই আমাদের জীবনকে সুস্থ, সুরক্ষিত, আনন্দময় করে তুলছে। এই ইষ্টভৃতিই অকাল মৃত্যু রোধ করতে সক্ষম।