আমরা খুব ব্যাস্ত!! এই ব্যাস্ততার মধ্যেও পরিবারের জন্য সময় দেই, চাকরি-ব্যাবসার জন্য সবচেয়ে বেশী সময় দেই, সামাজিকতা রক্ষা করার সময় আছে, নিজের আমোদ প্রমোদ-ভ্রমনের জন্যও মাঝে মাঝে সময় বের করে নেই, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও আবদার মেটানোর সময় আছে, নিজের অসুস্থতার সময় ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে কয়েক ঘন্টা বসে অপেক্ষা করার সময় আছে, ট্রাফিক জ্যামে ঘন্টা খানেক আটকে থাকার সময় আছে, বিয়ে বাড়িতে গিয়ে খাওয়ার টেবিল ফাঁকা না পেলে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করার সময় আছে।
সময় পাইনা শুধুমাত্র ঠাকুরের কাজের জন্য, একটুও সময় পাইনা আচার্য্য নির্দেশ পালনের জন্য।
সকাল বিকাল প্রার্থনার সময় নেই, অনেকের তো আবার ইষ্টভৃতি করার পর্যন্ত সময় নেই, মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে প্রায়শ: আসা যাওয়া করলেও মন্দিরে ঢুকে ঠাকুরকে একবার প্রনাম করার সময় নেই, সৎসঙ্গে যাওয়ার একদম সময় নেই, ডিপি ওয়ার্ক করার মত এত অবসরও নই। দীক্ষা নিয়েছি পনের বিশ বছর,- দেওঘর ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার সময়ই পাইনি।
" ঠাকুর যেদিন নেওয়ান,- সেদিন যাব"!... ভক্তিমার্গের এক্কেবারে চূড়ান্ত অজুহাত!!
একবার ভেবে দেখুন,- যেদিন চতুর্দিকে অন্ধকার ঘিরে ধরবে সেদিন যদি ঈশ্বর বলেন,-" বাপু,- ভীষণ ব্যাস্ত আমি,- আজকে তোমার জন্য আমার সময় নেই!!" সেদিন কোথায় যাবেন?
রোজ ২৪ ঘন্টা সময় আমার আছেই,- এক সেকেন্ড সময়ও কেউ কমাতে পারবেনা। মাসে ত্রিশটা দিন,- বছরে ৩৬৫ দিন সময় আমার আছেই। প্রধানমন্ত্রীর জন্য যে সময় বরাদ্দ আছে,- আমার জন্যও একই সময় বরাদ্দ আছে। ঈশ্বর কারো প্রতি পক্ষপাতীত্ব করেননি। যে লোকটি ঈশ্বরের কাজ করে বেড়ায় তার জন্য প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা সময় বেশী বরাদ্দ করেছেন,- এমন নয়৷
কথা হল,- আমার দৈনন্দিন জীবন চলনায় কাকে সবচেয়ে বেশী গূরত্ব দিচ্ছি? যার গূরত্ব আমার জীবনে সবচেয়ে বেশী,- তার জন্য সময় বের করতে অসুবিধা হয়না।
সকালবেলা আরামের ঘুমটা আমার জীবনে বেশী গুরত্বপূর্ণ বলেই ঘুমের জন্য সময় পাই,- কিন্তু প্রার্থনার সময় হয়না। শ্বশুরবাড়িতে শালীর বিয়েতে চার পাঁচদিন আগে গিয়ে নিমন্ত্রন রক্ষা করা বউয়ের মন পেতে অনেকটা গূরত্বপূর্ন বলেই শত ব্যাস্ততার মধ্যেও চার পাঁচটা দিন বের করে নিতে অসুবিধা হয়না,- কিন্তু দশ বছরে একবার দেওঘর ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার সময় পাইনি। অফিসের বসের ছেলের জন্মদিনের নিমন্ত্রন রক্ষা করা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বলেই সন্ধ্যা সময় গিয়ে রাত বারটায় ঘরে ফিরতে অসুবিধা হয়না,- কিন্তু অফিস থেকে এসে পাশের পাড়ায় সৎসঙ্গে যাওয়ার সময় পাইনি কখনো।
পা ভেঙে একমাস বিছানায় পড়ে থাকতে হলে চাকরি থেকে ছুটি পাই ঠিকই,- কিন্তু বছরে একবার গুরুবাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটি দিচ্ছে না অফিস। " দাদা,- অফিসে যা চাপ!! একটা দিন ছুটি নেব,- এই সুযোগও নেই। "
শুধু ভেবে দেখতে হবে,- ঠাকুর আমার জীবনে এক নম্বরে আছেন,- নাকি দশ নম্বরে আছেন। যদি এক নম্বরে থাকেন,- তাহলে তাঁর জন্য সময়ের অভাব হয়না। আর,- দশ নম্বরে থাকলে ইষ্টকাজে একটুও সময় পাইনা।
রেলের ইঞ্জিন যদি ঠিক থাকে তবে পেছনের বগির অবস্থা খারাপ হলেও অসুবিধা নেই,- ঠিক টেনে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। আর রেলের বগি খুব যত্ন করে রক্ষনাবেক্ষন করছি, রোজ ঘষেমেজে পরিস্কার করছি,- কিন্তু ইঞ্জিনের খোঁজ রাখিনি,- জং ধরে ধরে ইঞ্জিন বসে গেছে,- গন্তব্যে পৌঁছা আর সম্ভব হবেনা।
তেমনি,- গুরু যদি আমার জীবনে মূখ্য থাকেন,- তবে শত ঝামেলা, অভাব, অনটনের মধ্যেও জীবনের শান্তি স্বস্তি আনন্দ বজায় থাকে।
রাস্তায় ছোট বড় গাড্ডা আছেই। সেই গাড্ডা পূর্ন রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে গেলে কোমড়ে ভীষণ ঝাঁকুনি লাগবেই। কিন্তু মার্সিডিজ চড়ে গেলে রাস্তার গাড্ডা টের পাওয়া যায় না।
তেমনি জীবনে সমস্যা, বাঁধা, বিপত্তি, প্রতিকূলতা, রোগ, শোক, মৃত্যু থাকবেই। গুরু মাথায় থাকলে গাড্ডাপূর্ন রাস্তায় মার্সিডিজ চড়ার মত অনুভূতি হয়,- ধাক্কাগুলো অনেকটাই হালকা হয়ে যায়।