Read Easy Sadhana by DR RAJESH CHOUDHURI in Bengali আধ্যাত্মিক গল্প | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

সহজ সাধনা

কিশোরী মোহন দাস, অনন্ত মহারাজ, নফর ঘোষ, শিলচরের কুমুদ দা,.. অমন আরো বহু বহু ভক্ত সৎসঙ্গের ইতিহাসে রয়েছে,- বর্তমানেও বহু ভক্ত কর্মী দাদা ও মায়েদের দেখতে পাই,- যারা পুঁথিগত বিদ্যায় অনেকটাই পিছিয়ে, ঠাকুরের বানীটানি বিশেষ মূখস্ত বলতে পারেন না, কঠিন কঠিন বানীর ব্যাখ্যা জানেন না, তত্ত্বকথা বিশেষ বলতে পারেন না।

কিন্তু,- সরলতা, সহজ ভক্তি, সমর্পন, গভীর বিশ্বাস, অকপটতা, নিষ্ঠা, একানুরক্তি এতটাই  বেশী যে,- তাদের দেখে লক্ষ কোটি মানুষ ঠাকুরের প্রতি আকর্ষিত হয়েছে৷ ঠাকুর তাদের কাঁধে ভর দিয়ে বিশ্বদুনিয়ায় বিচরন করেন।

ঠাকুরের বানীগ্রন্থ পাঠ, আলোচনা, বিশ্লেষণ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু কঠিন কঠিন বানীর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের নেশার চেয়েও,- ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে একবেলা ঠাকুর ঘরের ফ্লোর ধোঁয়া মোছার নেশা অনেক বেশী কার্যকরী। তাতে যে অনুভূতি লাভ সম্ভব,- শত পন্ডিতের আলোচনা ও ব্যাখ্যা শুনেও সেই অনুভূতি সম্ভব নয়।

ঠাকুরের বানী আলোচনা করা ও শোনা- Intellectual entertainment এ পরিনত হলে মুসকিল। তার চেয়ে আচার্য্যদেব যে নির্দেশ দিয়েছেন,- বোকার মত কোন কিছু না ভেবে মাঠে ঘাটে দোয়ারে দোয়ারে গিয়ে সেই নির্দেশ পালনে ব্রতী হলে বহু কঠিন কঠিন তত্ত্বকথা অতি সহজে বোধে ধরা পড়া সম্ভব।

এখনো একটা বিশাল অংশের গুরুভাই ও মায়েরা ইষ্টভৃতি করেনা, রোজ দুইমিনিটও নামধ্যান করেনা, ঘরে ঠাকুরের আসন নেই,- যাদের আছে তাদের অনেকেরই ঠিকঠাক নেই। কঠিন বানীর ব্যাখ্যা ও তার অনুভূতি তো শতযোজন দূরের ব্যাপার।

কোভিডের কল্যানে অনলাইন সৎসঙ্গের দৌলতে,- দেশবিদেশের বিখ্যাত বিখ্যাত বক্তাদের আলোচনা, বানীর ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, তত্ত্বকথা, মূখস্ত বানী,- বহু শোনা হয়েছে৷ কিন্তু এই নেশা থেকে বের হয়ে এবার মাঠেঘাটে নেমে কাজ করা লোকের সংখ্যা যদি সেই অনুপাতে বৃদ্ধি না পায়, আমি যদি এখনো ঘরে ঘরে যাওয়ার ফুসরৎ না পাই, আমার ব্যাস্ততা যদি এখনো আচার্যের নির্দেশ পালনে আটকে রাখে,- তবে বুঝতে হবে এতদিনের এত এত আলোচনা শুনা,- শুধু আমাদের Intellectual entertainment ই ছিল।

ঠাকুরের জগতে যাদেরই প্রকৃত অনুভূতি বা উপলব্ধি সামান্য হলেও হয়েছে,- খোঁজ নিয়ে জানবেন,- আচার্য নির্দেশ পালনে মাঠে ঘাটে নেমে কর্মে যুক্ত থাকার মাধ্যমেই  তা হয়েছে। বই পড়ে, শুধু আলোচনা করে ও আলোচনা শুনে, বানীর ব্যাখ্যা করে, ব্যাখ্যা শুনে- তা কারো হয়েছে বলে খোঁজে পাবেন না।

কত সহজ কাজের দায়ীত্ব তিনি দিয়েছেন। আশেপাশের গুরুভাই ও মায়েদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের ইষ্টভৃতি পরায়ন করে তোলা, ঘরে ঠাকুরের আসনের ব্যাবস্থা করা, প্রত্যেককে নামধ্যানে অভ্যস্ত করে তোলা, সকাল বিকাল প্রার্থনায় উদ্ধুদ্ধ করা, সত্যানুসরন গ্রন্থটা রোজ একবার অন্তত পাঠ করা, পরিবারের সবাই রাতের খাবার একসাথে খাওয়া।

শিক্ষিত-অশিক্ষিত, পণ্ডিত-মূর্খ, ধনী-গরীব,- আমরা সকলেই খুব সহজে এই কাজে যুক্ত থেকে আচার্য্যদেবের ইচ্ছা বাস্তবায়িত করতে পারি। ইচ্ছে থাকলেই হয়।

কিছু না পারলে,- নিকটবর্তী কেন্দ্র মন্দিরে গিয়ে ঘর মুছা, মাঠ পরিস্কার করা এইসব কাজ তো করতেই পারি। যেকোনো ভাবে যার যার মত করে তাঁর কাজে যুক্ত থাকাটাই প্রকৃত সাধনা।

হনুমান শ্রীরামচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি শাস্ত্রের শ্লোক মূখস্ত করে, প্রবচন শুনিয়ে ভক্ত হননি। গুরু শ্রীরামচন্দ্রের প্রতি অকপট বিশ্বাস, নির্ভরতা এবং তাঁর আদেশ পালনে নিরলস প্রচেষ্টাই তাকে শ্রেষ্ঠ ভক্তের সম্মানে আখ্যায়িত করেছে। তেমনি ভক্ত সুদামা, মীরাবাঈ, রামদাস এমন কত কত ভক্ত শুধু তাদের সহজ ভক্তি ও সমর্পনের কারনেই ঈশ্বর উপলব্ধি করেছেন। 

বর্তমানে শ্রীশ্রীআচার্য্যদেব এবং শ্রীশ্রীঅবিনদাদার একান্ত ইচ্ছা,- আমরা সককেই যেন নিয়মিত ডিপি ওয়ার্ক করি। আশেপাশে প্রতি প্রত্যেকটা মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, সেবা, সহানুভূতি ও তাদেরকে ইষ্টমুখী করাই ডিপি ওয়ার্ক। তাতে অন্যের কি লাভ হবে,- না হবে জানিনা। কিন্তু যে ডিপি ওয়ার্ক করছে তাদের ঈশ্বর উপলব্ধি হচ্ছে অতি সহজেই। বর্তমানে এই সহজ সাধনার একমাত্র উপায়।