ছোটবেলায় শুনতাম এমন একটি রোগ আছে যার নাম মধুমেহ। তখন মনে করতাম মানুষ বেশি বেশি মধু খেলে বোধহয় এই রোগটি হয়। তারপর শুনলাম এর আরেকটি নাম হচ্ছে বহুমূত্র রোগ। তখন ভাবতাম, এটা তাহলে মূত্রের সমস্যা জনিত কোনো রোগ। বড় হবার সাথে সাথে এই রোগটির নাম পাল্টে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে “সুগার”। ইংরেজিতে “ডায়াবেটিস”।
মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 1
১শুরুর কথাছোটবেলায় শুনতাম এমন একটি রোগ আছে যার নাম মধুমেহ। তখন মনে করতাম মানুষ বেশি বেশি মধু খেলে বোধহয় রোগটি হয়। তারপর শুনলাম এর আরেকটি নাম হচ্ছে বহুমূত্র রোগ। তখন ভাবতাম, এটা তাহলে মূত্রের সমস্যা জনিত কোনো রোগ। বড় হবার সাথে সাথে এই রোগটির নাম পাল্টে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে “সুগার”। ইংরেজিতে “ডায়াবেটিস”।আজকের পৃথিবীতে সুগার বা ডায়াবেটিস শুধু একটি রোগের নাম নয়, এটি এক নীরব মহামারী। এটি এমন একটি মহামারী, যা প্রতিদিন আমাদের চোখের সামনেই ছড়িয়ে পড়ছে— ঘরে ঘরে, পরিবারে পরিবারে। এক সময় যেটাকে “ধনী মানুষের রোগ” বলা হতো, আজ সেটাই আমাদের ভারতবর্ষকে বিশ্বের “ডায়াবেটিস রাজধানী” বানিয়ে ফেলেছে। ...আরও পড়ুন
মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 2
( পূর্ব প্রকাশিতের পর )৫গাট ও মাইক্রোবায়োমGut বা গাট—শব্দটা আজকাল আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এর প্রকৃত এখনও অনেকটাই অস্পষ্ট। অনেকেই মনে করেন গাট মানেই শুধু খাবার হজমের জায়গা। কিন্তু আসলে এটি আমাদের শরীরের এক বিস্ময়কর কেন্দ্র, একে বলাই যায় শরীরের “কন্ট্রোল রুম।”প্রায় ৩০ ফুট দীর্ঘ এক নালি—যা মুখ থেকে শুরু হয়ে খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র অতিক্রম করে পায়ুদ্বারে শেষ হয়—এই অবিশ্বাস্যভাবে সূক্ষ্ম ও জটিল ব্যবস্থাটিই হলো গাট।গাটই ঠিক করে দেয়—আমরা কতটা শক্তি পাবো,কোন ভিটামিন–মিনারেল শোষিত হবে,হরমোনগুলো কীভাবে কাজ করবে,আর আমাদের ইমিউন সিস্টেম কতটা শক্তিশালী থাকবে।গাট মাইক্রোবায়োম – আমাদের ভেতরের নীরব পরিবারগাটের ভেতরে লুকিয়ে আছে কোটি কোটি ...আরও পড়ুন
মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 3
১২ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ“প্রদাহ” শব্দটা শুনলেই আমরা আঁতকে উঠি। মনে হয়—এটা বুঝি খারাপ কিছু।কিন্তু সত্যিটা হলো—প্রদাহ আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা।ধরা যাক, আপনার হাতে একটা কাঁটা ফুটলো। সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গাটা ফুলে উঠবে, লাল হবে, গরম লাগবে, একটু ব্যথাও হবে।এটাই হলো অ্যাকিউট ইনফ্ল্যামেশন—অল্প সময়ের প্রদাহ। এটা আমাদের রক্ষা করার জন্যই হয়। কাজ শেষ হলে নিজে থেকেই থেমে যায়।সমস্যা শুরু হয় তখন, যখন প্রদাহ আর থামতে চায় না।বরং দিনের পর দিন, বছরের পর বছর চলতে থাকে। তখনই সেটি পরিণত হয় ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশনে।একে তুলনা করা যায় এমন এক নীরব আগুনের সাথে—যা বাইরে থেকে দেখা যায় না, কিন্তু ভেতর থেকে শরীরকে আস্তে আস্তে ...আরও পড়ুন
মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 4
দ্বিতীয় অধ্যায়১ডায়াবেটিস শরীরের উপর কী প্রভাব ফেলে ?ডায়াবেটিস – শরীরের নিঃশব্দ শত্রুডায়াবেটিস মানে শুধু রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া নয়।এটি এক নিঃশব্দ রোগ, যা ধীরে ধীরে শরীরের ভেতরের প্রতিটি অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।প্রথম দিকে বোঝা যায় না, তাই অনেকে এটাকে হালকাভাবে নেন।কিন্তু বছর ঘুরতে ঘুরতে এর ফল হয় ভয়ঙ্কর।ডায়াবেটিস কীভাবে ক্ষতি করে ?স্নায়ু (Nerves): রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ স্নায়ুর চারপাশে জমে গিয়ে সংকেত পৌঁছানো বন্ধ করে দেয় → হাত–পা ঝিনঝিনি, অবশ ভাব, ব্যথা।কিডনি (Kidneys): কিডনির ফিল্টার নষ্ট হয়ে প্রস্রাবে প্রোটিন চলে আসে → কিডনি ফেইলিউর পর্যন্ত হতে পারে।চোখ (Eyes): রেটিনার সূক্ষ্ম রক্তনালী দুর্বল হয়ে ঝাপসা দেখা শুরু হয় → অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে ...আরও পড়ুন
মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 5
৬ডায়াবেটিক কগনিটিভ ডিসঅর্ডার – ভুলে যাওয়া বা টাইপ–৩ ডায়াবেটিসভাবুন তো, এক সময় যিনি নিজের হাতে সংসারের সব হিসাব সামলাতেন, কারো কাছে কিছু জানতে চাইতেন না—একদিন দেখা গেল তিনি ঘরের জিনিসপত্র কোথায় রেখেছেন সেটাই মনে করতে পারছেন না।কখনো চাবি হারাচ্ছেন, কখনো ফোন।অথচ নিজের শরীরে মশা কামড় দিলেও টের পাচ্ছেন না।আরও দুঃখজনক হলো— তিনি, যিনি সন্তান–সন্ততির মুখস্থ নাম এক নিঃশ্বাসে বলে দিতেন, এখন তাদের নাম উচ্চারণ করতেও দ্বিধা হচ্ছে।এই দৃশ্যটি কতটা প্যাথেটিক— শুধু আক্রান্ত মানুষটির জন্য নয়, তাঁর পরিবারের জন্যও।এটাই হলো ডায়াবেটিক কগনিটিভ ডিসঅর্ডার।সহজ কথায়— ডায়াবেটিস শুধু হাত–পা বা কিডনি নয়, মস্তিষ্ককেও নীরবে আঘাত করে।কেন হয় এই সমস্যা ?১. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ...আরও পড়ুন
মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 6
তৃতীয় অধ্যায়১দৈনন্দিন জীবন শৈলীডায়াবেটিস কী, এটি কেন হয়, ডায়াবেটিসের ফলে শরীরের মধ্যে কী কী ক্ষতি হয় এই সমস্ত বিষয়গুলো এতক্ষণ ধরে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। অনেকগুলো সমস্যার কথা বলতে গিয়ে তার সমাধান কী হতে পারে তারও কিছুটা আভাস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবার আমরা এগিয়ে যাব ডায়াবেটিসের অভিশাপ থেকে মুক্তির দিকে।ডায়াবেটিস বা সুগারকে শুরুতে আমরা ছোট্ট একটা সমস্যা ভাবি।কিন্তু একটু একটু করে সেটাই আমাদের শরীর, মন, পরিবার—সবকিছুকেই গ্রাস করে নিতে থাকে।এতক্ষণের আলোচনাগুলো পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন, এই মিষ্টি নামের তিক্ত রোগটি কতটা নীরব অথচ ভয়ঙ্কর এক ঘাতক ব্যাধি।একজন মানুষ, যিনি একসময় সংসারের প্রতিটি দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন,আজ তিনি হয়তো ...আরও পড়ুন
মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 7
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)৬সুগার রিভার্স জার্নি: সংযমী জীবনের শুরুয়াৎআজকেই রিপোর্টে ধরা পড়েছে আপনার ডায়াবেটিস।ভয় পাবেন না।এটাই আপনার জীবনের নতুন অধ্যায়ের কাজ: উপবাসআজকের প্রথম সিদ্ধান্ত— উপবাস।সবচেয়ে ভালো হবে ২৪ ঘণ্টার ওয়াটার ফাস্টিং।চাইলে জলের মধ্যে লেবুর রস ও এক চিমটি পিঙ্ক সল্ট মিশিয়ে নিতে পারেন।যদি একেবারেই সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত ১৬ ঘণ্টার উপবাস অবশ্যই করবেন।এই সময়ে শুধুই জল খাওয়া যাবে। চাইলে হালকা গরম জলও নিতে পারেন।খাবারের এপিসোড – শুধুই একবারব্রেকফাস্ট মানে হলো ফাস্ট ভাঙা। অর্থাৎ উপবাস ভঙ্গ করা।আজকের দিনে সেটাই হবে আপনার একমাত্র ইটিং এপিসোড।আজকে সারাদিনে একবারের বেশি খাবেন না।এই একবারের খাবারই হবে ইনসুলিন–ফ্রেন্ডলি।মানে, শরীরে ইনসুলিনের বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না।এটাই ...আরও পড়ুন
মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 8
১১এক বছরের লাইফস্টাইল রোডম্যাপ১. প্রথম তিন মাস—প্রথম সাত দিনের লাইফস্টাইল যেমন ছিল, ঠিক তেমনই কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।খাবার, ঘুম, উপবাস—সব নিয়ম বজায় রাখতে হবে।তিন মাস শেষে HbA1c টেস্ট করতে হবে। নিশ্চিন্ত থাকুন, রিপোর্ট একদম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।২. চতুর্থ মাস থেকে বারো মাস পর্যন্ত—একই লাইফস্টাইল চালিয়ে যেতে হবে। তবে এ সময় থেকে অল্প অল্প করে ডাল খাবারে যোগ করতে পারবেন। পনিরও খেতে পারেন।তবে সতর্ক থাকবেন—ডালও পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে, কারণ এতেও কার্বোহাইড্রেট আছে।৩) অসতর্ক হলে কী করবেন ?কখনো হঠাৎ একদিন নিয়ম ভঙ্গ হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নেই।ততদিনে শরীর এতটাই সক্ষম হয়ে উঠবে যে, সে নিজেই সেই ছোট্ট ভুল ম্যানেজ করে ...আরও পড়ুন