Read Storey of Mahabharat Part 13 Marriage of Dhristra and Pandu by Ashoke Ghosh in Bengali আধ্যাত্মিক গল্প | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 13

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৩

ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে গান্ধারী ও পাণ্ডুর সঙ্গে কুন্তী ও মাদ্রী-র বিবাহ এবং কর্ণ, পঞ্চপাণ্ডব ও দুর্যোধনাদির জন্ম বৃত্তান্ত

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে গান্ধারী ও পাণ্ডুর সঙ্গে কুন্তী ও মাদ্রী-র বিবাহ এবং কর্ণ, পঞ্চপাণ্ডব ও দুর্যোধনাদির জন্ম বৃত্তান্ত

 

বৈশম্পায়ন বিচিত্রবীর্য, ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরের জন্মের কাহিনি বর্ণনা করার পরে ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে গান্ধারীর এবং পাণ্ডুর সঙ্গে কুন্তী ও মাদ্রীর বিবাহ এবং কর্ণ, যুধিষ্ঠিরাদি পঞ্চপাণ্ডব ও দুর্যোধনাদি কৌরব ভ্রাতাদের জন্মের কাহিনি বলতে শুরু করলেন -

বেদব্যাস কর্তৃক মৃত বিচিত্রবীর্যের স্ত্রী অম্বিকার গর্ভে ধৃতরাষ্ট্র ও অম্বালিকার গর্ভে পাণ্ডু ও দাসীর গর্ভে বিদুরের জন্মের পরে ভীষ্ম তাদেরকে পুত্রবৎ পালন করতে লাগলেন। ভীষ্মের প্রশিক্ষণে ধৃতরাষ্ট্র অসাধারণ বলবান, পাণ্ডু পরাক্রান্ত ধনুর্ধর এবং বিদুর অদ্বিতীয় ধর্মপরায়ণ হলেন। বেদব্যাস যেমন বলেছিলেন ঠিক তেমনই ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ ও বিদুর শূদ্র-গর্ভজাত হওয়ার কারণে পাণ্ডুই রাজপদ পেলেন।

বিদুরের সঙ্গে পরামর্শ করে ভীষ্ম গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা গান্ধারীর সঙ্গে ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ দিলেন। বিবাহের পর অন্ধ পতির ন্যায় অন্ধত্ব বরণ করবেন এই প্রতিজ্ঞা করে পতিব্রতা গান্ধারী বস্ত্রখণ্ড ভাঁজ করে চোখের উপর বাঁধলেন।

বসুদেবের পিতা শূরের পৃথা নামে একটি কন্যা ছিল। শূর তার পিসির পুত্র নিঃসন্তান কুন্তিভোজকে সেই কন্যা দান করেন। পালক পিতার নাম অনুসারে পৃথার অপর নাম হোলো কুন্তী। একদিন ঋষি দুর্বাসা অতিথি রূপে এলে, কুন্তী তাঁর যত্ন সহকারে সেবা করলেন, তাতে দুর্বাসা তুষ্ট হয়ে একটি মন্ত্র শিখিয়ে বললেন, এই মন্ত্র দ্বারা তুমি যে দেবতাকে আহ্বান করবে তার দ্বারা তোমার পুত্রলাভ হবে। কৌতূহলবশে কুন্তী সূর্যকে ডাকলেন এবং সূর্য হাজির হোয়ে বললেন, হে কৃষ্ণনয়না তুমি কি চাও? দুর্বাসার বরের কথা জানিয়ে কুন্তী নতমস্তকে ক্ষমা চাইলেন। তখন সূর্য বললেন, তোমার আহ্বান ব্যর্থ হবে না, আমার সঙ্গে মিলনের ফলে তুমি পুত্র লাভ করবে, কিন্তু কুমারীই থাকবে। কুন্তীর একটি দেবকুমার তুল্য পুত্র হল। এই পুত্র কবচ ও কুণ্ডল পরিহিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। কলঙ্কের ভয়ে কুন্তী তার সেই পুত্রকে একটি পাত্রে রেখে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেন। সূতবংশের রাজা অধিরথ ও তাঁর পত্নী রাধা সেই বালককে দেখতে পেয়ে ঘরে নিয়ে গেলেন এবং বসুষেণ নাম দিয়ে পুত্রবৎ পালন করলেন। কর্ণ বড় হয়ে সকল প্রকার অস্ত্রের প্রয়োগ শিখে অপরাজেয় ধনুর্ধর হোয়ে উঠ্লেন। কর্ণের শরীরে কবচ থাকায় সে অবধ্য জেনে একদিন ব্রাহ্মণবেশী ইন্দ্র কর্ণের কাছে এসে তার কবচ চাইলে, কর্ণ নিজের দেহ থেকে কবচটি ইন্দ্রকে দিলে ইন্দ্র তাকে একাঘ্নী অস্ত্র দান করে বললেন, তুমি যার উপর এই অস্ত্র প্রয়োগ করবে সে মরবে, কিন্তু একজন নিহত হওয়ার পর অস্ত্রটি আমার কাছে ফিরে আসবে। কবচ কেটে দেওয়ার জন্য বসুষেণের নাম কর্ণ ও বৈকর্তন হয়।

 রাজা কুন্তিভোজ তাঁর পালিতা কন্যার বিবাহের জন্য স্বয়ংবরসভা আহ্বান করলে কুন্তী পাণ্ডুর গলায় বরমাল্য দিলেন। পাণ্ডুর আর একটি বিবাহ দেবার ইচ্ছায় ভীষ্ম মদ্রদেশের রাজা শল্যের কাছে গিয়ে তার ভগিনীকে প্রার্থনা এবং স্বর্ণ রত্ন গজ অশ্ব প্রভৃতি ধন বিবাহের পণ রূপে শল্যকে দিলেন। শল্য প্রীত হয়ে তার ভগিনী মাদ্রীকে দান করলেন, ভীষ্ম সেই কন্যাকে হস্তিনাপুরে এনে পাণ্ডুর সঙ্গে বিবাহ দিলেন। অপর দিকে দেবক রাজার শূদ্র পত্নীর গর্ভে ব্রাহ্মণ কর্তৃক একটি কন্যার জন্ম হয়েছিল, তার সঙ্গে বিদুরের বিবাহ হল।

কিছুকাল পরে মহারাজ পাণ্ডু নানা দেশ জয় করে বহু ধনরত্ন নিয়ে রাজ্যে ফিরে এলেন এবং ধৃতরাষ্ট্রের অনুমতিক্রমে সেই সমস্ত ধন ভীষ্ম, দুই মাতা ও বিদুরকে উপহার দিলেন। তারপর তিনি দুই পত্নীর সঙ্গে বনে গিয়ে মৃগয়া করতে লাগলেন।

ব্যাস বর দিয়েছিলেন যে গান্ধারীর শত পুত্র হবে। যথাকালে গান্ধারী গর্ভবতী হলেন, কিন্তু দুই বৎসরেও তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হল না। এদিকে কুন্তীর একটি পুত্র যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়েছে জেনে তিনি অধীর ও ঈর্ষান্বিত হলেন। ধৃতরাষ্ট্রকে না জানিয়ে গান্ধারী নিজের গর্ভপাত করলেন, তাতে লৌহের ন্যায় কঠিন একটি মাংসপিণ্ড প্রসব করলেন। তিনি সেই পিণ্ড ফেলে দিতে যাচ্ছিলেন এমন সময় বেদব্যাস এসে বললেন, আমার কথা মিথ্যা হবে না। ব্যাসের উপদেশে গান্ধারী শীতল জলে মাংসপিণ্ড ভিজিয়ে রাখলেন, তা থেকে অঙ্গুষ্ঠপ্রমাণ এক শত এক ভ্রূণ সৃষ্টি হল। সেই ভ্রূণগুলিকে তিনি পৃথক পৃথক ঘৃতপূর্ণ কলসে রাখলেন। এক বছর পরে একটি কলসে দুর্যোধন জন্মগ্রহণ করলেন। তার পূর্বেই যেহেতু যুধিষ্ঠির জন্মেছিলেন, সে কারণে যুধিষ্ঠিরই জ্যেষ্ঠ। দুর্যোধন ও ভীম একই দিনে জন্মগ্রহণ করেন।

 দুর্যোধন জন্মেই গাধার ন্যায় কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলেন, সঙ্গে সঙ্গে শকুন, শৃগাল, কাক প্রভৃতিও ডাকতে লাগল এবং নানা দুর্লক্ষণ দেখা গেলো। ধৃতরাষ্ট্র ভয় পেয়ে ভীষ্ম বিদুর প্রভৃতিকে বললেন, আমাদের বংশের জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র যুধিষ্ঠির তো রাজ্য পাবেই, কিন্তু তার পরে আমার এই পুত্র রাজা হবে তো? শৃগাল ও অন্যান্য জন্তুরা আবার ডেকে উঠল। তখন ব্রাহ্মণগণ ও বিদুর বললেন, আপনার পুত্র নিশ্চয় বংশনাশ করবে, ওকে পরিত্যাগ করাই মঙ্গল। পুত্রস্নেহের বশে ধৃতরাষ্ট্র তা করলেন না। এক মাসের মধ্যে তার দুর্যোধন, দুঃশাসন, দুঃসহ প্রভৃতি একশত পুত্র এবং দুঃশলা নামে একটি কন্যা হোলো। গান্ধারী যখন গর্ভবতী ছিলেন তখন এক বৈশ্যা ধৃতরাষ্ট্রের সেবা করত এবং তার গর্ভে যুযুৎসু নামক এক পুত্র জন্মগ্রহণ করে।

একদিন পাণ্ডু অরণ্যে বিচরণ করার সময় একটি মিলনরত হরিণকে বাণবিদ্ধ করলেন। আহত হরিণ ভূপতিত হয়ে বলল, মহারাজ, আমি কিমিন্দম মুনি, পুত্রকামনায় হরিণের রূপ ধারণ করে পত্নীর সহিত মিলন করছিলাম। তুমি জানতে না যে আমি ব্রাহ্মণ, সেজন্য তোমার ব্রহ্মহত্যার পাপ হবে না, কিন্তু আমার শাপে তোমারও স্ত্রীর সঙ্গে মিলনকালে মৃত্যু হবে।

শাপগ্রস্ত পাণ্ডু বহু বিলাপ করে বললেন, আমি সংসার ত্যাগ করে কঠোর তপস্যা করবো। শাপের ফলে আমার সন্তান উৎপাদন অসম্ভব, অতএব গৃহস্থাশ্রমে আর থাকব না। কুন্তী ও মাদ্রী তাকে বললেন, আমরা তোমার ধর্মপত্নী, আমাদের সঙ্গে থেকেই তো তপস্যা করতে পারো, আমরাও ইন্দ্রিয়দমন করে তপস্যা করবো। তার পর পাণ্ডু নিজের এবং দুই পত্নীর সমস্ত অলংকার ব্রাহ্মণদের দান করে হস্তিনাপুরে সংবাদ পাঠালেন যে তিনি বনবাসী হয়েছেন।

পাণ্ডু তার দুই পত্নীর সঙ্গে বিভিন্ন পর্বত পেরিয়ে শতশৃঙ্গ পর্বতে এসে তপস্যা করতে লাগলেন। বহু ঋষির সঙ্গে তার সখ্য হল। একদিন পাণ্ডু ঋষিদেরকে বললেন,আমি যে ভাবে জন্মেছি সেই ভাবে আমার পত্নীর গর্ভে যাতে সন্তান হ’তে পারে তার উপায় আপনারা বলুন। ঋষিরা বললেন, রাজা, আমরা দিব্য চক্ষুতে দেখছি তোমার দেবতুল্য পুত্র হবে।

পাণ্ডু নির্জনে কুন্তীকে বললেন, তুমি সন্তান লাভের জন্য চেষ্টা কর, আপৎকালে স্ত্রীলোক উত্তম বর্ণের পুরুষ অথবা দেবর থেকে পুত্রলাভ করতে পারে। পাণ্ডু বললেন, আমি প্রাচীন ধর্মতত্ত্ব বলছি শোন। পুরাকালে নারীরা স্বাধীন ছিল, তারা স্বামীকে ছেড়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে মিলিত হোলেও দোষ বা অধর্ম হত না। উদ্দালক নামে এক মহর্ষি ছিলেন, তার পুত্রের নাম শ্বেতকেতু। একদিন শ্বেতকেতু দেখলেন, তার পিতার সমক্ষেই এক ব্রাহ্মণ তার মাতার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে মিলিত হোলেন। তা দেখে শ্বেতকেতু ক্রুদ্ধ হোলে উদ্দালক শ্বেতকেতুকে বললেন, তুমি ক্রুদ্ধ হয়ো না, সনাতন ধর্মই এই, পৃথিবীতে সকল স্ত্রীলোকই গাভীর তুল্য স্বাধীন। শ্বেতকেতু অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, আজ থেকে যে নারী পরপুরুষগামিনী হবে, যে পুরুষ পতিব্রতা পত্নীকে ত্যাগ করে অন্য নারীর সংসর্গ করবে, এবং যে নারী পতির আজ্ঞা পেয়েও ক্ষেত্রজ পুত্র উৎপাদনে আপত্তি করবে, তাদের সকলেরই ভ্রূণহত্যার পাপ হবে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন থেকে আমাদের জন্ম হয়েছে তা তুমি জান। আমি পুত্রপ্রার্থী, তাই তোমাকে অনুরোধ করছি, তুমি কোনও তপস্বী ব্রাহ্মণের কাছে গুণবান পুত্র লাভ কর।

কুন্তী তখন দুর্বাসার বরের বৃত্তান্ত পাণ্ডুকে জানিয়ে বললেন, মহারাজ, আপনি অনুমতি দিলে আমি কোনও দেবতা বা ব্রাহ্মণকে মন্ত্রবলে আহ্বান করতে পারি। দেবতার কাছে সঙ্গে সঙ্গে পুত্রলাভ হবে, ব্রাহ্মণের কাছে বিলম্ব হবে। পাণ্ডু বললেন, আমি ধন্য হয়েছি, তুমিই আমাদের বংশের রক্ষিত্রী। দেবগণের মধ্যে ধর্মরাজ সর্বাপেক্ষা পুণ্যবান, আজই তুমি তাকে আহ্বান করো।

গান্ধারী যখন এক বৎসর গর্ভধারণ করেছিলেন সেই সময়ে কুন্তী মন্ত্রবলে ধর্মরাজকে আহ্বান করলেন। শতশৃঙ্গ পর্বতের উপর ধর্মেরাজের সহিত মিলনের ফলে কুন্তী পুত্রবতী হলেন। প্রসবকালে দৈববাণী হল - এই বালক ধার্মিক, পরাক্রান্ত, সত্যবাদী ও পৃথিবীপতি হবে, এবং যুধিষ্ঠির নামে খ্যাত হবে।

তার পর পাণ্ডুর ইচ্ছায় বায়ু ও ইন্দ্রকে আহ্বান করে কুন্তী ভীম ও অর্জুন নামে আরও দুই পুত্র লাভ করলেন। একদিন মাদ্রী পাণ্ডুকে বললেন, মহারাজ, কুন্তী আমার সতিন, তাকে আমি কিছু বলতে পারিনা, কিন্তু আপনি বললে তিনি আমাকেও পুত্রবতী করতে পারেন। পাণ্ডু অনুরোধ করায় কুন্তী সম্মত হলেন এবং তার উপদেশে মাদ্রী অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে স্মরণ করে নকুল ও সহদেব নামে যমজ পুত্র লাভ করলেন। মাদ্রীর আরও পুত্রের জন্য পাণ্ড অনুরোধ করলে কুন্তী বললেন, আমি মাদ্রীকে বলেছিলাম কোনও একজন দেবতাকে স্মরণ করো, কিন্তু সে যুগল দেবতাকে ডেকে আমাকে প্রতারিত করেছে। মহারাজ, আমাকে আর অনুরোধ করবেন না।

 দেবতার কৃপায় লব্ধ পাণ্ডুর এই পঞ্চ পুত্র কালক্রমে চন্দ্রের ন্যায় প্রিয়দর্শন, সিংহের ন্যায় বলশালী এবং দেবতার ন্যায় তেজস্বী হল। একদিন রমণীয় বসন্তকালে পাণ্ডু নির্জনে মাদ্রীকে দেখে সংযম হারালেন এবং পত্নীর নিষেধ অগ্রাহ্য করে তাঁকে আলিঙ্গন করলেন। কিন্তু অভিশাপের ফলে মিলনকালেই পাণ্ডুর মৃত্যু হোলো। মাদ্রীর আর্তনাদ শুনে কুন্তী সেখানে এলেন এবং বিলাপ করে বললেন, আমি রাজাকে সর্বদা সাবধানে রক্ষা করতাম, তুমি এই বিজন স্থানে কেন তাকে লোভিত করলে? আমি জ্যেষ্ঠা ধর্মপত্নী, সেজন্য স্বামীর সঙ্গে সহমৃতা হব। তুমি এই বালকদের পালন করো। মাদ্রী বললেন, তোমার তিন পুত্রকে আমি নিজ পুত্রের ন্যায় দেখতে পারব না, তুমিই আমার দুই পুত্রকে নিজ পুত্রের মতো পালন কর। যেহেতু আমার কারণে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, তাই আমিই পতির সঙ্গে সহমৃতা হবো। এই বলে মাদ্রী পাণ্ডুর সঙ্গে সহমৃতা হোলেন।

______________

(ক্রমশ)