Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 82

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-৮২

পাণ্ডবদের আত্মপ্রকাশ, উত্তরা ও অভিমন্যুর বিবাহ এবং রাজ্যোদ্ধারের মন্ত্রণার কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

পাণ্ডবদের আত্মপ্রকাশ, উত্তরা ও অভিমন্যুর বিবাহ এবং রাজ্যোদ্ধারের মন্ত্রণার কাহিনি

উত্তরকে সঙ্গে নিয়ে অর্জুন কৌরবদের পরাজিত কোরে গরু উদ্ধার কোরে নিয়ে আসার তিন দিন পরে পঞ্চপাণ্ডব স্নান করে নতুন বস্ত্র পরে রাজার যোগ্য অলঙ্কারে ভূষিত হলেন এবং যুধিষ্ঠিরকে সামনে রেখে বিরাট রাজার সভায় গিয়ে যুধিষ্ঠিরকে রাজার আসনে বসালেন। বিরাট রাজকার্য করবার জন্য সভায় এসে তাদের দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, কঙ্ক, তোমাকে আমি সভাসদ করেছি, তুমি রাজার আসনে বসেছ কেন? অর্জুন সহাস্যে বললেন, মহারাজ, ইনি ইন্দ্রের আসনেও বসবার যোগ্য। ইনি ধর্মরাজ, সর্বশ্রেষ্ঠ রাজর্ষি, ধৈর্যশীল, সত্যবাদী ও জিতেন্দ্রিয়। ইনি যখন কুরুদেশে ছিলেন, তখন দশ হাজার হাতি এবং ত্রিশ হাজার রথ এঁর পিছনে যেত। ইনি বৃদ্ধ, অনাথ, অঙ্গহীন, পঙ্গু, প্রভৃতিকে পুত্রের ন্যায় পালন করতেন। এঁর ঐশ্বর্য ও প্রতাপ দেখে দুর্যোধন, কর্ণ, শকুনি প্রভৃতি ঈর্ষান্বিত হতেন। সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ যুধিষ্ঠির রাজার আসনে বসবেন না কেন?

বিরাট বললেন, ইনি যদি কুন্তীপুত্র যুধিষ্ঠির হন তবে এঁর ভাই ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব কারা? যশস্বিনী দ্রৌপদীই বা কোথায়? পাশা খেলার সভায় পাণ্ডবদের পরাজয়ের পর থেকে তাদের কোনও সংবাদ আমরা জানি না। অর্জুন বললেন, মহারাজ, সন্তান যেমন মাতৃগর্ভে বাস করে আমরা তেমনই আপনার ভবনে সুখে অজ্ঞাতবাস করেছি। এই বলে তিনি নিজেদের পরিচয় দিলেন।

উত্তর পাণ্ডবগণকে একে একে দেখিয়ে তাঁদের পরিচয় দিলে বিরাট তাঁর পুত্রকে বললেন, আমি যুধিষ্ঠিরকে প্রসন্ন করতে ইচ্ছা করি, যদি তোমার সম্মতি থাকে তবে অর্জুনকে আমার কন্যাদান করবো। ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠির, আমরা না জেনে যে অপরাধ করেছি তা ক্ষমা করুন। আমার এই রাজ্য এবং যা কিছু আছে সমস্তই আপনাদের। অর্জুন উত্তরাকে গ্রহণ করুন, তিনিই তার যোগ্য পতি।

যুধিষ্ঠির অর্জুনের দিকে চাইলেন। অর্জুন বললেন, মহারাজ, আপনার কন্যাকে আমি পুত্রবধূ রূপে গ্রহণ করবো, এই সম্পর্ক আমাদের উভয় বংশেরই যোগ্য হবে। বিরাট বললেন, আপনাকে আমার কন্যা দান করছি, আপনিই তাকে স্ত্রী রূপে নেবেন না কেন? অর্জুন বললেন, অন্তঃপুরে আমি সব সময় আপনার কন্যাকে দেখেছি, সে নির্জনে ও প্রকাশ্যে আমাকে পিতার ন্যায় বিশ্বাস করেছে। নাচ-গান শিখিয়ে আমি তার কাছে সম্মানের পাত্র হয়েছি, সে আমাকে গুরুতুল্য মনে করে। আমি এক বৎসর আপনার কন্যার সঙ্গে বাস করেছি, আমি তাকে বিবাহ করলে লোকে অন্যায় সন্দেহ করতে পারে, এই কারণে আপনার কন্যাকে আমি পুত্রবধূ রূপে চাইছি, তাতে লোকে বুঝবে যে আমি সৎস্বভাব ও জিতেন্দ্রিয়, আপনার কন্যারও অপবাদ হবে না। পুত্র বা ভাইয়ের সঙ্গে বাস যেমন নির্দোষ, পুত্রবধূ ও কন্যার সঙ্গে বাসও সেইরূপ। আমার পুত্র মহাবীর অভিমন্যু কৃষ্ণের ভাগ্নে, দেবকুমারের মতো রূপবান, অস্ত্রবিশারদ, সে আপনার উপযুক্ত জামাতা হবে।

অর্জুনের প্রস্তাবে বিরাট সম্মত হলেন, যুধিষ্ঠিরও অনুমোদন করলেন। তার পর সকলে বিরাটরাজ্যের অন্তর্গত উপপ্লব্য নগরে গেলেন এবং আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে পাঠালেন। দ্বারকা থেকে কৃষ্ণ, বলরাম, কৃতবর্মা ও সাত্যকি সুভদ্রা ও অভিমন্যুকে নিয়ে এলেন। ইন্দ্রসেন প্রভৃতি সারথি ও পরিচারকরাও পাণ্ডবদের রথ নিয়ে এলো। বিশাল সৈন্যদল সহ দ্রুপদ রাজা, দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র, শিখণ্ডী ও ধৃষ্টদ্যুম্নও এলেন। মহাসমারোহে বিবাহের উৎসব অনুষ্ঠিত হোলো। কৃষ্ণের উপস্থিতিতে অভিমন্যু ও উত্তরার বিবাহ সম্পন্ন হোলো। বিরাট অভিমন্যুকে সাত হাজার দ্রুতগামী ঘোড়া, দুই শত উত্তম হাতি এবং বহু ধন উপহার দিলেন। কৃষ্ণ যা উপহার দিলেন যুধিষ্ঠির সেই সব ধনরত্ন, কয়েক হাজার গরু, বিবিধ বস্ত্র, অলঙ্কার, শয্যা এবং খাদ্য-পানীয় ব্রাহ্মণদেরকে দান করলেন।

অভিমন্যু-উত্তরার বিবাহের পর রাত্রে বিশ্রাম কোরে পাণ্ডবগণ সকালবেলা বিরাট রাজার সভায় এলেন। এই সভায় বিরাট, দ্রুপদ, বসুদেব, বলরাম, কৃষ্ণ, সাত্যকি, প্রদ্যুম্ন, শাম্ব, বিরাটপুত্রগণ, অভিমন্যু এবং দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্ৰ উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ নানাপ্রকার কথাবার্তার পর সকলে কৃষ্ণের প্রতি তাকালেন।

কৃষ্ণ বললেন, আপনারা সকলে জানেন, শকুনি পাশা খেলায় কপটতার দ্বারা যুধিষ্ঠিরকে হারিয়ে তাঁর রাজ্য হরণ করেছিলেন। পাণ্ডবগণ বহু কষ্ট ভোগ করে তাঁদের প্রতিজ্ঞা পালন করেছেন, তাঁদের বারো বছর বনবাস এবং এক বছর অজ্ঞাতবাস সম্পন্ন হয়েছে। এখন যা যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন দুজনেরই জন্যই কল্যাণকর এবং কৌরব ও পাণ্ডব উভয়ের পক্ষে ধর্মসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত, তা আপনারা ভেবে দেখুন। যুধিষ্ঠির ধর্মবিরুদ্ধ উপায়ে স্বর্গরাজ্যও চান না, বরং তিনি ধর্মসম্মত উপায়ে একটিমাত্র গ্রাম পেলেই খুশি হবেন। দুর্যোধনাদি প্রতারণা করে পাণ্ডবগণের পৈতৃক রাজ্য হরণ করেছেন তথাপি যুধিষ্ঠির তাদের শুভ কামনা করেন। এঁরা সত্যপরায়ণ, নিজেদের প্রতিজ্ঞা পালন করেছেন। এখন যদি ন্যায্য ব্যবহার না পান তবে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণকে বধ করবেন। যদি আপনারা মনে করেন যে পাণ্ডবগণ সংখ্যায় অল্প সেজন্য জয়লাভে সমর্থ হবেন না, তবে আপনারা মিলিত হয়ে এমন চেষ্টা করুন যাতে এঁদের শত্রুরা বিনষ্ট হয়। কিন্তু আমরা এখনও জানি না দুর্যোধনের অভিপ্রায় কি, তা না জেনেই আমরা কর্তব্য স্থির করতে পারি না। অতএব কোনও ধার্মিক, সৎস্বভাব, সদ্বংশীয় ও সতর্ক দূতকে পাঠানো হোক, যাঁর কথায় দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরকে অর্দ্ধেক রাজ্য দিতে রাজি হবেন।

বলরাম বললেন, কৃষ্ণের বাক্য যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন উভয়েরই কল্যাণকর। শান্তির উদ্দেশ্যে কোনও উপয়ুক্ত লোককে দুর্যোধনের কাছে পাঠানোই ভালো। তিনি গিয়ে ভীষ্ম, দ্রোণ, অশ্বত্থামা, বিদুর, কৃপ, শকুনি, কর্ণ ও ধৃতরাষ্ট্রকে প্রণিপাত করে যুধিষ্ঠিরের সপক্ষে বলবেন। দুর্যোধনাদি যেন কোনও মতেই ক্রুদ্ধ না হন, কারণ তাঁরা বলবান, যুধিষ্ঠিরের রাজ্য তাদের অধিকারে রয়েছে। যুধিষ্ঠির পাশা খেলতে ভালোবাসেন কিন্তু দক্ষ খেলোয়াড় নন, শুভানুধ্যায়ীদের বারণ না শুনে দক্ষ পাশা খেলোয়াড় শকুনির সঙ্গে পাশা খেলেছিলেন। পাশা খেলার সভায় বহু লোক ছিল যাদের ইনি হারাতে পারতেন, কিন্তু তাদের সঙ্গে না খেলে ইনি শকুনির সঙ্গেই খেলতে গেলেন এবং রাজ্যসহ সবকিছু হারালেন। যদি আপনারা শান্তি চান তবে মিষ্টির কথায় দুর্যোধনকে প্রসন্ন করুন। সাম নীতিতে যা পাওয়া যায় তাই শুভ, যুদ্ধ অন্যায় ও অকল্যাণকর।

সাত্যকি বলরামকে বললেন, তোমার যেমন স্বভাব তেমন কথা বলছ। বীর ও কাপুরুষ দুই প্রকার লোকই দেখা যায়, একই বংশে কাপুরুষ ও বলশালী পুরুষ জন্মগ্রহণ করে। বলরাম, তোমাকে দোষ দিচ্ছি না, যারা তোমার বাক্য শোনেন তারাই দোষী। আশ্চর্যের বিষয়, এই সভায় কেউ যুধিষ্ঠিরের অল্পমাত্র দোষের কথাও বলতে পারে! কৌরবগণ অনভিজ্ঞ যুধিষ্ঠিরকে ডেকে এনে পরাজিত করেছিল, এমন জয়কে কোন যুক্তিতে ধর্মসঙ্গত বলা যেতে পারে? যুধিষ্ঠির যদি নিজের ভবনে ভাইদের সঙ্গে খেলতেন এবং দুর্যোধনাদি সেই খেলায় যোগ দিয়ে জয়লাভ করতেন তবেই তা ধর্মসঙ্গত হোতো। যুধিষ্ঠির কপট পাশা খেলায় পরাজিত হয়েছিলেন, তথাপি ইনি পণ রক্ষা করেছেন। এখন বনবাস থেকে ফিরে এসে ন্যায়সঙ্গত ভাবে পিতৃরাজ্যের অধিকার চান, তার জন্য মিনতি করবেন কেন? এঁরা যথাযথ প্রতিজ্ঞা পালন করেছেন তথাপি কৌরবরা বলে যে এঁরা অজ্ঞাতবাসকালে ধরা পড়েছিলেন। ভীষ্ম, দ্রোণ, ও বিদুর অনুনয় করেছেন, তথাপি দুর্যোধনাদি রাজ্য ফিরিয়ে দিতে চায় না। আমি তাদের যুদ্ধে জয় করে মহাত্মা যুধিষ্ঠিরের পায়ে এনে ফেলব, যদি তারা যুধিষ্ঠিরকে প্রণাম না করে তবে তাদের যমালয়ে পাঠাব। শত্রুকে হত্যা করলে অধর্ম হয় না, তাদের কাছে মিনতি করলেই অধর্ম ও বদনাম হয়। তারা যুধিষ্ঠিরকে রাজ্য ফিরিয়ে দিক, নতুবা রণভূমিতে নিহত হবে।

দ্রুপদ সাত্যকিকে বললেন, দুর্যোধন ভাল কথায় রাজ্য ফিরিয়ে দেবেন না। ধৃতরাষ্ট্র তার পুত্রের কথায় চলবেন, ভীষ্ম ও দ্রোণ বাধ্য হয়ে এবং কর্ণ ও শকুনি মূর্খতার জন্য দুর্যোধনকে সমর্থন করবেন। বলরাম যা বললেন তা যুক্তিসম্মত মনে করি না, যাঁরা ন্যায়পরায়ণ তাদের কাছেই মিনতি করা চলে। দুর্যোধন পাপবুদ্ধি, মিষ্টির কথায় তাকে বোঝানো যাবে না, মিষ্টভাষীকে তিনি দুর্বল মনে করবেন। অতএব সৈন্যসংগ্রহের জন্য বিভিন্ন মিত্র রাজাদের কাছে দূত পাঠানো হোক। দুর্যোধনও দূত পাঠাবেন, রাজারা যে পক্ষের আমন্ত্রণ আগে পাবেন সেই পক্ষেই যাবেন, এই কারণে আমাদের আগে যেতে হবে। বিরাটরাজ, আমার পুরোহিত এই ব্রাহ্মণ শীঘ্র হস্তিনাপুরে যান, ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন, ভীষ্ম ও দ্রোণকে ইনি কি বলবেন তা আপনি শিখিয়ে দিন।

কৃষ্ণ বললেন, কৌরব আর পাণ্ডবদের সঙ্গে আমাদের সমান সম্পর্ক। আমরা এখানে বিবাহের নিমন্ত্রণে এসেছি, বিবাহ হয়ে গেছে, এখন আমরা সানন্দে নিজ গৃহে ফিরে যাবো। দ্রুপদরাজ, আপনি বয়সে ও জ্ঞানে সকলের চেয়ে প্রবীণ, ধৃতরাষ্ট্র আপনাকে সম্মান করেন, আপনি আচার্য দ্রোণ ও কৃপের সখা। অতএব পাণ্ডবগণের জন্য যা কল্যাণকর হবে এমন বার্তা আপনিই পুরোহিত দ্বারা পাঠিয়ে দিন। দুর্যোধন যদি ন্যায়পথে চলেন তা হলে কুরুপাণ্ডবের সম্পর্ক নষ্ট হবে না। তিনি যদি অহঙ্কার ও লোভের বশে শান্তিকামনা না করেন তবে আপনি সকল রাজার কাছে দূত পাঠাবার পর আমাদের ডাকবেন।

তারপর বিরাটের নিকট থেকে সসম্মানে বিদায় নিয়ে কৃষ্ণ সকলের সঙ্গে দ্বারকায় ফিরে গেলেন। যুধিষ্ঠির, বিরাট ও দ্রুপদ প্রভৃতি যুদ্ধের আয়োজন করতে লাগলেন এবং নানা দেশের রাজাদের নিকট দূত পাঠালেন। আমন্ত্রণ পেয়ে রাজারা সানন্দে আসতে লাগলেন। পাণ্ডবগণ শক্তি সংগ্রহ করছেন শুনে দুর্যোধনও তার মিত্র রাজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।

যুধিষ্ঠিরের মত নিয়ে দ্রুপদ তাঁর পুরোহিতকে বললেন, আপনি বয়োবৃদ্ধ জ্ঞানী, দুর্যোধনের আচরণ সবই জানেন। আপনি যদি ধৃতরাষ্ট্রকে ধর্মসম্মত বাক্যে বোঝাতে পারেন তবে দুর্যোধনাদিরও মনের পরিবর্তন হবে। বিদূর আপনার সমর্থন করবেন, ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ প্রভৃতিরও সমর্থন পাবেন। মন্ত্রীগণ যদি ভিন্ন মত অবলম্বন করেন এবং যোদ্ধারা যদি বিমুখ হন তবে তাদের স্বমতে আনা দুর্যোধনের পক্ষে মুশকিল হবে, তার সৈন্যসংগ্রহে বাধা পড়বে। সেই সুযোগে পাণ্ডবগণের যুদ্ধের আয়োজন এগিয়ে যাবে। আমাদের এখন প্রধান প্রয়োজন এই যে আপনি ধর্মসংগত যুক্তির দ্বারা ধৃতরাষ্ট্রকে রাজি করাবেন। অতএব পাণ্ডবগণের কল্যাণের জন্য আপনি জয়সূচক শুভ মুহূর্তে সত্বর যাত্রা করুন। দ্রুপদ কর্তৃক এইরূপে নির্দেশ পেয়ে পুরোহিত তাঁর শিষ্যদের নিয়ে হস্তিনাপুরে যাত্রা করলেন।

______________

(ক্রমশ)