Read LOVE UNLOCKED - 8 by Pritha Das in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

LOVE UNLOCKED - 8

Love Unlocked :8
Pritha 🎀:

সকালে সূর্যের আলো সরাসরি চোখে এসে পড়তে ঘুম ভেঙে যায় দেবর্ষির। অন্যান্য দিন থাইগ্লাসের পর্দাটা টেনে শোয়,তবে কাল যা হলো এরপর এসবের কথা আর মাথাতেই ছিল না। কালকের কথা মাথায় আসতেই তড়িৎগতিতে উঠে বসলো ও। চারপাশে তাকিয়ে দেখলো এখনও ফ্লোরেই বসে আছে। 
আগের দিন নীচ থেকে আসার পর সেই যে দরজা লক করেছিল তারপর ঘরে এসে নিজের ড্রিঙ্কস সেকশন থেকে একের পর এক অ্যালকোহলের শট শেষ করছিল। পরে মাথায় আরও রাগ আর নেশা চেপে যেতে দামী দামী মদের বোতল, ফার্নিচার ভাংচুর করে শেষ রাতে মেঝেতেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এতে হাতে কিছুটা কাঁচ ও গেঁথে গেছে। তবে ও বরাবর নিজের ব্যান্ডেজ নিজেই করে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে ব্যান্ডেজ করে নিল । এরপর দরজাটা খুলে জিমরুমে ঢুকে পড়ল। রোজকার মত নিজের এক্সারসাইজ শুরু করে দিল। একটু পরেই জিমরুমে হড়বড় করে ঢুকলেন নন্দিনী দেবী।
"ইস ঘরটার কি অবস্থা করে রেখেছিস। সকালে তুই দরজা খুলতেই ঘরটা পরিষ্কার করে এলাম। তোর আর আক্কেল জ্ঞান হলো না। জেদ ষোলো আনা। কোনো সার্ভেন্টকে ঘরে ঢুকতে দিসনা। আমার তো বয়স হচ্ছে নাকি এত সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসতে পারি নাকি। এই নে তোর লেবু জল ! দুবার করে ওঠা নামা আর পারা যায় নাকি !" কথাটা বলতে বলতে জলটা টেবিলে রেখে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন নন্দিনী দেবী।

"আমি কাউকে আমার ঘরে আসতে বলিনি !" মুখ খুলল দেবর্ষি। তারপর একটু থেমে আবার বলল "আবির কোথায়!"  এতক্ষণ মায়ের বলা কথাটা মাথায় ঢুকেছে কিনা বোঝা গেলো না। ওকে খুবই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।

"তুই যদি চোটপাট করিস তাই বেচারি কখন থেকে এসে নিচে বসে আছে ভয়ে আসতে পারছে না। তাই আমি বললাম আমিই যাই তুমি বসে ব্রেকফাস্টটা করে যাও। সকালে নাকি তাড়াতাড়ি বেরোতে গিয়ে...."

"ওকে পাঠিয়ে দাও।" নন্দিনী দেবীর কথা বলার মাঝেই দেবর্ষি আবার বলে উঠলো।
নন্দিনী দেবী কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকার পর নীচে চলে গেলেন।
.
"স..স্যার... আ..আসবো ?" দরজা থেকে উঁকি মেরে আবির বলল।

"তোতলা কবে হলে তুমি ?" জিম করতে করতেই উত্তর দিলো দেবর্ষি।

"না মানে...আসলে..."

"আপডেটস বলো।" 

দেবর্ষি প্রোফেশনাল লাইন নিয়ে কথা বলছে দেখে এবার সিরিয়াস হয়ে আবির বলল "ম্যানেজারবাবু ছুটির জন্য এপ্লিকেশন পাঠিয়েছেন।একবার প্লিস চেক করে নেবেন। আমার বিষয়টা ভালো লাগছে না। ওনার ঘনঘন এত ছুটির প্রয়োজন কেন পড়ছে ! কারণটাও ওতো ইম্পর্ট্যান্ট বলে মনে হলো না। আপনি এই ব্যাপারে এত উদাসীন কেন ? ছোট মুখে বড় কথা বলার জন্য মাফ করবেন তবে এটা তো আপনার স্বভাবের সাথে যায় না স্যার।"

দেবর্ষি কিছু না বলে মুচকি হাসলো শুধু,বলল "সেন সাইন কোম্পানির ডিলটা  অ্যাপ্রুভ হয়েছে ?"

"স্যার আপনি আমার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছেন।"কথাটা বলার পর দেবর্ষির মধ্যে কোনো হেলদোল না দেখে শেষে চুপ করে গেল আবির। বরং দেবর্ষির করা প্রশ্নের উত্তর দিল "অ্যাপ্রুভ হয়েছে। ওনারা খুব খুশি হয়েছেন যে এতবড় কোম্পানির সাথে কাজ করতে পারবেন। তবে ওনারা এই প্রজেক্টের জন্য একটা ট্যাগলাইন আশা করছেন।"

ট্যাগলাইনের কথা বলতেই দেবর্ষির চোখের সামনে ভেসে উঠল আগের দিনের আরিয়ার মুখটা। তবে বুঝতে দিলো না। মুখে বলল "আমার কোম্পানির কি প্রয়োজন সেটা আমার থেকে ভালো কেউ বুঝবে না। তাছাড়া ট্যাগলাইনের দরকার তখন পরে যখন কোম্পানির নামের বদলে তার কাজকর্ম উদ্দেশ্য সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয়। বিশেষ করে যখন ব্র্যান্ড এর পরিচিতি কম হয় তখন নতুনদের কাছে পরিচিতি লাভ করতে এটা দরকার হয়। আই থিঙ্ক "রূপকথা ফেব্রিক্স" নামটাই যথেষ্ট আমার কোম্পানির কার্যকারিতা বোঝাতে। Isn't it ?"
আবিরকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরো বলল "আমি দেবর্ষি সিংহ রায়,রূপকথা ফেব্রিক্স এর সিইও। এটাই এনাফ যেকোনো ডিল সাকসেসফুল করতে।" কথাটা বলে মুচকি হেসে জিম করায় মন দিলো।
আবিরকে তখনও হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে দেবর্ষি বিরক্তিসূচক একটা আওয়াজ করে বলে উঠল "হোয়াট হ্যাপেন্ড এরম ইডিয়েটের মত হা করে তাকিয়ে আছো কেন !"

"স্যার আমি আপনার সাথে সাত বছর ধরে কাজ করছি। জীবনে এই প্রথম বার আপনাকে একসাথে এত কথা বলতে দেখলাম তার উপর নিজেকে এভাবে এক্সপ্লেইন করতে। এটা আমি সত্যি দেখছি ?" বলে নিজের চোখদুটো একবার ভালো করে ডোলে বুঝে নিল এটা আদেও সত্যি কিনা !

"হোয়াট রাবিশ !! চুপচাপ নিজের কাজে যাও। ডিস্টার্ব করো না।" দেবর্ষি নিজেও একটু থতমত খেয়ে ধমকে উঠল। আবিরও আর বাঘের গুহায় সময় নষ্ট না করে চুপচাপ কেটে পড়ল। তবে আবিরকে ধমকে বার করে দিলেও ওর বলা কথাগুলোকে নিজের মাথা থেকে বার করতে পারল না দেবর্ষি। শেষে বিড়বিড় করে বলে উঠল "সব ওই বাচাল মেয়েটার দোষ। কত বড় সাহস ও আমার ভুল ধরছে ! সামান্য একটা ক্যাফের স্টাফ হয়ে আমায় শেখাচ্ছে ট্যাগলাইনের গুরুত্ব !"

এদিকে বেচারা নিজেও বুঝল না যে সেইসময় সে নিজেই মেয়েটার প্রতি মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করে ফেলেছিল। আসলে এমন অনেক ক্ষেত্রে হয় মানুষ নিজের বদল গুলো নিজেও মানতে না পেরে অন্যের উপর এর দায়ভার চাপাতে চায়। এখানে দেবর্ষিও তাই করতে চাইছে। ___________________________________________
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভীষণ তাড়াহুড়ো করছে আরিয়া। প্রথমত ঘুম থেকে উঠতে লেট করে ফেলেছে। আর তাছাড়াও আজ তাড়াতাড়ি কলেজ পৌঁছাতে হবে ওকে। আগেরদিন সোনালীকে কলেজের নাম বলার পর থেকে ও মাথা খারাপ করে দিয়েছে কলেজে গিয়ে দেখা করবে বলে। তবে আরিয়া সেটা এভয়েড করতে চাইছে।ও চাইছে না আর কাউকে ওর আর দিশার মাঝে আনতে। কারন দিশা অলরেডি অনেক কিছুই জানে ওর সম্পর্কে। ও চায়না আর বেশি কেউ ওকে নিয়ে কিউরিওসিটি দেখাখ। ও বরাবর নিজের গন্ডির সীমারেখা কেটে এসেছে। আজও এর অন্যথা হবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই রেডি হচ্ছিল। আজকে ও একটা সাদা চুড়িদার পড়েছে। ও কখনোই খুব একটা সাজে না তাই আজও সেভাবে কিছু পড়ল না।কোমর পর্যন্ত চুলটা ভেজা থাকায় আজ আর বাঁধতে পারল না, ছেড়ে দিল। চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরোতে গিয়ে দেখলো কানে ছোট্ট সোনার দুলটা একটা আছে আরেকটা নেই। বেশ চিন্তায় পরে গেলো। আগের দিন তো ক্যাফ ছাড়া আর কোথাও যায়নি। তাহলে কি ক্যাফে! ক্যাফে থাকলে তো পেয়ে যাবে কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় বাসে পরে গেলে ! 
মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওর। এই দুলটা ওর বাবা ওকে গিফট করেছিল ওর পনেরো বছরের জন্মদিনে।
হাতে আর সময় নেই দেখে আরেকটা দুল খুলে ড্রয়ারে রেখে একজোড়া ঝুমকো পরে নিলো। এরপর একটু পারফিউম স্প্রে করে ঘরের দরজাটা লক করে বেরিয়ে এলো উঠানো। উঠানে দাঁড়িয়ে দোতলার দিকে তাকিয়ে একবার চিৎকার করে বলল "কাকিমা আসছি ! ফিরতে লেট হবে একেবারে ক্যাফে হয়ে তারপর ফিরব।"
ছবিদেবী দোতলাতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। হয়তো অপেক্ষা করছিলেন আরিয়ার বেরোনোর সময় তাকে বলে যাবে বলে। আরিয়া এটা রোজই করে। বাবা মা থাকলে হয়তো তাদের বলে যেতো, তবে তারা না থাকায় ও এখন বর্তমানে যাদের গার্জেন মানে তাদেরকেই বলে যায়।
ছবিদেবী কিছু উত্তর দিলেন না শুধু একবার মুখ বেঁকালেন। আরিয়া দেখতে পেলেও আর কিছু বলল না। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এসব এখন ওর অভ্যাস হয়ে গেছে !
___________________________________________
অপরদিকে দেবর্ষিও রেডি হয়ে উপর থেকে নিচে নেমে এলো। সকালের ওয়ার্কআউট সেরে কিছু সময় পর ব্রেকফাস্ট করে তারপর অফিস যায়। তবে আজ একেবারে রেডি হয়েই নীচে নেমেছে। ও খুব সময় বেঁধে কাজ করে, এক মিনিট এদিক ওদিক হলেই সারা বাড়ি মাথায় করে দেয়।বেশির ভাগ নিজের ফ্ল্যাটেই থাকে তবে যখন ও বাড়িতে আসে সার্ভেন্টরাও নাকানি চুবানি খায়।

নন্দিনী দেবী বলে উঠলেন "বাবান তুই এখনি বেরোবি ? আমি তো ব্রেকফাস্ট রেডি করে ফেললাম !"

"আমার টাইম নেই আমি বেরোবো। তোমরা খেয়ে নাও। বাই"

"এই দাঁড়া দাঁড়া, না খেয়ে কোথাও যাবি না। অর্ধেক দিন বাড়ি আসবি না। ছাইপাশ খাবি, ইস কত রোগা হয়ে গেছিস ! কাল বাড়ি এসে ডিনারটাও করলি না। আজ না খেয়ে যাবি না।"

"সিরিয়াসলি মম ! তোমার আমায় রোগা লাগছে ? ছয় ফুট হাইটের সিক্সপ্যাক বডি আমার ! ইন্টারন্যাশনাল ক্রাশ আর তুমি রোগা বলছো !"

"চুপ কর ! ওই সব শাকচুন্নি মেয়েদের নজরেই রোগা হয়ে যাচ্ছিস তুই ! আমি মা, সব বুঝি ! পেপারে কত ছবি বেড়ায় ! আমি সবে কালো টিকা দিয়ে রেখেছি ! নজর লেগে যাবে ! এসব ছাড় সময় নেই বললি তাড়াতাড়ি খেতে বসে পড়, এতদিন পর আমার কাছে এলি আজ আমি নিজে রেঁধে বেড়ে খাওয়াবো।"

"উফ আমার সময় নেই ! তাছাড়া আমি সকাল সকাল ওই আনহেল্দি ফুডগুলো খাই না। আজ আবার অফিস থেকে ক্যাফেও যেতে হবে।"

এতক্ষণ নারায়ণবাবু চুপচাপ মা ছেলের কথপোকথন শুনছিলেন। তবে ক্যাফের প্রসঙ্গ উঠতে এবার বলে উঠলেন "না তোমায় ক্যাফে যাওয়ার দরকার নেই। আমার ক্যাফে আমি বুঝে নেবো কাকে কি দায়িত্ব দেবো। তুমি নিজের কাজে যাও।"

"হোয়াট !"

"আমি বাংলাতেই বলেছি। এই বাড়ির সম্পত্তি এখনও আমার নামে। এমনকি ক্যাফেটাও ! তুমি বড় হয়েছো খুব উন্নতি করেছো ! নিজের ফ্যাশন হাউস বানিয়েছো ! খুব ভালো কথা। তবে উন্নতির শিখরে পৌঁছেও বাড়ির লোকের কথা ভাবতে শেখোনি। দায়িত্ব নিতে ভয় পাও তুমি। তাই তোমায় আর এক্সট্রা কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে না তুমি আমার ক্যাফেতে হস্তক্ষেপ করবে না।"

"বাবা আপনি কি বলছেন এসব !" নন্দিনী দেবী বলে উঠলেন।

"বৌমা তুমি চুপ করো।আমার যা বলার আমার বলে দিয়েছি।" কথা শেষ করে উনি আবার খেতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

দেবর্ষি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো "আমি দায়িত্ব নিয়ে ভয় পাই ? দাদান আমি একটু সময় চেয়েছিলাম, বলতে পারো ভালো থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা আজীবন নিজেদের ডিসিশন আমার উপর চাপিয়ে এসেছো ! নিজেদের জেদটা আমার উপর চাপিয়ে আমায় জেদি বলে এসেছো ! আর মম তো কাল বলেই দিলো আমার মেন্টাল ট্রিটমেন্ট দরকার ! তোমাদের কথায় আমি আজ নাচতে নাচতে বিয়ে করে ফেললে তখন আমি আদর্শ হতাম ! আর তোমরা যে সব কিছু থেকে আমায় সরিয়ে নিতে চাইছো ! তোমাদের আদর্শতা নিয়ে কে বিচার করবে ! কে দেবে সার্টিফিকেট যে তোমরা ভালো না খারাপ, সুস্থ না অসুস্থ ? এই সমাজটাই একটা সেম ওয়েতে চলছে, যার বাইরে কেউ গেলেই তাদের মস্ত অপরাধ হয়ে যায় ! ওয়েল, তোমরা যখন চাইছো তাই হবে, কিন্তু জেনে রাখো এতে তোমরা আমার যতটা ভালো করবে ভাবছো তার থেকেও বেশি ক্ষতি করে ফেললে, একদিন বুঝবে এই সিদ্ধান্তটা বিশাল বড় ভুল ছিল! " কথাটা বলে গটগট করে বেরিয়ে চলে গেলো দেবর্ষি ।
.
.
.
.
চলবে...