Read Story of Mahabharat Part 138 Death of Drupad and Birat on 14th day by Ashoke Ghosh in Bengali আধ্যাত্মিক গল্প | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 138

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৩৮

পঞ্চদশ দিনের যুদ্ধে দ্রুপদ ও বিরাট বধ

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

পঞ্চদশ দিনের যুদ্ধে দ্রুপদ ও বিরাট বধ

ঘটোৎকচের মৃত্যুর সেই ভয়ংকর রাতের মধ্যভাগে সৈন্যরা পরিশ্রান্ত হওয়ায় ও ঘুমে কাতর হয়ে পড়ায় অনেকে অস্ত্র ত্যাগ করে হাতি ও ঘোড়ার পিঠে ঘুমিয়ে পড়ল আবার অনেকে শত্রু মনে করে স্বপক্ষের সৈন্যদের বধ করতে লাগল। তাদের এই অবস্থা দেখে অর্জুন চিৎকার কোরে সৈন্যদের বললেন, রণভূমি ধূলো ও অন্ধকারে ঢেকে গেছে, তোমাদের বাহন এবং তোমরা ক্লান্ত ও ঘুমে কাতর হয়েছ, যদি ইচ্ছা করো তবে এই রণভূমিতে কিছু সময় ঘুমিয়ে নাও। আকাশে চাঁদ উঠলে বিশ্রামের পর আবার যুদ্ধ করবে। অর্জুনের এই কথা শুনে কৌরবসৈন্যরা চিৎকার করে বললো, কর্ণ, রাজা দুর্যোধন, পাণ্ডবসেনা যুদ্ধে বিরত হয়েছে, আপনারাও বিরত হন। তখন দুই পক্ষই যুদ্ধে নিবৃত্ত হয়ে অর্জুনের প্রশংসা করতে লাগল। সমস্ত সৈন্য এমন ভাবে ঘুমিয়ে পড়লো, মনে হোলো যেন কোনও নিপুণ চিত্রকর পটের উপর তাদের চিত্রিত করেছে। কিছুক্ষণ পরে চাঁদ উঠলে অন্ধকার দূর হওয়ায় সৈন্যগণ নিদ্রা থেকে উঠে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোলো।

দুর্যোধন দ্রোণকে বললেন, আমাদের শত্রুরা যখন ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে বিশ্রাম করছিল তখন আমরা তাদের বধ করতে পারতাম। তারা ক্ষমার যোগ্য না হলেও আপনার জন্যই তাদের ক্ষমা করেছি। পাণ্ডবরা এখন বিশ্রাম করে বলবান হয়েছে। আমাদের তেজ ও শক্তি ক্রমশই কমছে, কিন্তু আপনার প্রশ্রয় পেয়ে পাণ্ডবদের ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে। আপনি সর্ব অস্ত্রে বিশারদ, দিব্য অস্ত্রে ত্রিভুনের সকলকে সংহার করতে পারেন, কিন্তু পাণ্ডবগণকে শিষ্য জ্ঞান করে অথবা আমার দুর্ভাগ্যক্রমে আপনি তাদের ক্ষমা করে আসছেন। দ্রোণ বললেন, আমি বৃদ্ধ হয়েও যথাশক্তি যুদ্ধ করছি, এরপর বিজয়লাভের জন্য হীন কার্যও করবো, ভাল হোক মন্দ হোক তুমি যা চাও আমি করবো। আমি শপথ করছি, যুদ্ধে সমস্ত পাঞ্চাল বধ না করে আমার বর্ম খুলব না।

রাত্রির তিন প্রহর বাকি থাকতে আবার যুদ্ধ আরম্ভ হোলো। দ্রোণ কৌরবসেনাকে দুই ভাগে ভাগ করলেন এবং এক ভাগ নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। বিরাট ও দ্রুপদ সসৈন্যে দ্রোণকে আক্রমণ করলেন। দ্রোণের বাণে দ্রুপদের তিন পৌত্র নিহত হোলো। চেদি, কেকয়, সৃঞ্জয় ও মৎস্য সৈন্যগণ পরাভূত হোলো। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর দ্রোণ ভল্লের আঘাতে দ্রুপদ ও বিরাটকে বধ করলেন।

ভীমসেন তিরস্কার কোরে ধৃষ্টদ্যুম্নকে বললেন, কোন ক্ষত্রিয় দ্রুপদের বংশে জন্মগ্রহণ কোরে এবং সর্ব অস্ত্র বিশারদ হয়ে শত্রুকে দেখেও উপেক্ষা করে? কোন পুরুষ রাজসভায় শপথ কোরে পিতা ও পুত্রগণের হত্যা দেখেও শত্রুকে পরিত্যাগ করে? এই বলে ভীম শরক্ষেপণ করতে করতে দ্রোণের সৈন্যের মধ্যে প্রবেশ করলেন। ধৃষ্টদ্যুম্নও তার অনুসরণ করলেন।

কিছুক্ষণ পরে সূর্যোদয় হলে যোদ্ধারা সূর্যের উপাসনা করে আবার যুদ্ধ করতে লাগলেন। সাত্যকিকে দেখে দুর্যোধন বললেন, সখা, ক্রোধ লোভ ক্ষত্রিয়াচার ও পৌরুষকে ধিক — আমরা পরস্পরের প্রতি বাণবর্ষণ করছি! বাল্যকালে আমরা পরস্পরের প্রাণ অপেক্ষা প্রিয় ছিলাম, এখন এই রণস্থলে সে সমস্তই শেষ হয়ে গেছে। সাত্যকি, আমাদের সেই বাল্যকালের খেলা কোথায় গেল, এই যুদ্ধই বা কেন হোলো? যে ধনের লোভে আমরা যুদ্ধ করছি তা নিয়ে আমরা কি করবো? সাত্যকি সহাস্যে উত্তর দিলেন, আমরা যেখানে একসঙ্গে খেলতাম এ সেই সভামণ্ডপ নয়, আচার্যের গৃহও নয়। ক্ষত্রিয়দের স্বভাবই এই, তারা গুরুজনকেও বধ করে। যদি আমি তোমার প্রিয় হই তবে শীঘ্র আমাকে বধ করো, যাতে আমি পুণ্যলোকে যেতে পারি, মিত্রদের এই ঘোর বিপদ আমি আর দেখতে ইচ্ছা করি না। এই বলে সাত্যকি দুর্যোধনের প্রতি ধাবিত হলেন এবং সিংহ ও হাতির ন্যায় দুজনে যুদ্ধে রত হলেন।

______________

(ক্রমশ)