Read Story of Mahabharat Part 147 Going to War by Karna and Shalya by Ashoke Ghosh in Bengali আধ্যাত্মিক গল্প | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 147

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৪৭

কর্ণ ও শল্যের যুদ্ধযাত্রা

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

কর্ণ ও শল্যের যুদ্ধযাত্রা

দুর্যোধনের কাছে মহাদেবের কাহিনি শুনে শল্য বললেন, ব্রহ্মা ও মহাদেবের এই কাহিনি আমি বহুবার শুনেছি, কৃষ্ণও তা জানেন। কর্ণ যদি কোনও প্রকারে অর্জুনকে বধ করতে পারেন তবে কৃষ্ণ নিজেই যুদ্ধ কোরে তোমার সৈন্য ধ্বংস করবেন। কৃষ্ণ ক্রুদ্ধ হলে কোনও রাজা তার বিপক্ষে দাঁড়াতে পারবেন না।

দুর্যোধন শল্যকে বললেন, আপনি কর্ণকে অবজ্ঞা করবেন না, ইনি শ্রেষ্ঠ অস্ত্রবিশারদ, এঁর ধনুর ভয়ংকর আওয়াজ শুনে পাণ্ডবসৈন্য দশ দিকে পালায়। ঘটোৎকচ যখন রাত্রিকালে মায়াযুদ্ধ করছিল তখন কর্ণ তাকে বধ করেছিলেন। সেদিন অর্জুন ভয়ে কর্ণের সম্মুখীন হয়নি। কর্ণ ধনুর অগ্রভাগ দিয়ে ভীমকে আকর্ষণ কোরে বলেছিলেন, বোকা পেটুক। ইনি দুই সহদেব ও নকুলকে জয় করেও কোনও কারণে তাদের বধ করেননি। ইনি বীরশ্রেষ্ঠ সাত্যকিকে রথহীন করেছেন, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতিকে বহুবার পরাজিত করেছেন। কর্ণ ক্রুদ্ধ হলে ইন্দ্রকেও বধ করতে পারেন, পাণ্ডবরা কি কোরে তাকে জয় করবে? মহারথ শল্য, বাহুবলে আপনার সমান কেউ নেই। অর্জুন নিহত হলে যদি কৃষ্ণ পাণ্ডবসৈন্য রক্ষা করতে পারেন তবে কর্ণের মৃত্যু হলে আপনিই আমাদের সৈন্য রক্ষা করবেন।

শল্য দুর্যোধনকে বললেন, তুমি সৈন্যগণের সামনে আমাকে কৃষ্ণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলেছ, এতে আমি প্রীত হয়েছি, আমি কর্ণের সারথি হবো। কর্ণ দুর্যোধনকে বললেন, মদ্ররাজ শল্য বিশেষ খুশি হয়ে এ কথা বলছেন না, তুমি মিষ্ট বাক্যে ওঁকে আরও কিছু বলো। দুর্যোধন শল্যকে বললেন, আপনি পুরুষদের মধ্যে বাঘের তুল্য, কর্ণ আজ যুদ্ধে সকলকে বিনষ্ট কোরে অর্জুনকে বধ করতে চান। আমি বার বার প্রার্থনা করছি, আপনি তার রথ চালনা করুন। কৃষ্ণ যেমন পার্থের সখা ও সারথি হয়ে তাকে রক্ষা করেন, আপনিও তেমন সর্বপ্রকারে কর্ণকে রক্ষা করুন। শল্য তুষ্ট হয়ে দুর্যোধনকে আলিঙ্গন করে বললেন, তোমার যেমন চাইছ আমি তেমনই করবো। কিন্তু তোমাদের হিতকামনায় আমি কর্ণকে প্রিয় বা অপ্রিয় যে কথা বলবো তা কর্ণকে আর তোমাকে সইতে হবে। কর্ণ শল্যকে বললেন, ব্রহ্মা যেমন মহাদেবের, কৃষ্ণ যেমন অর্জুনের, সেইরূপ আপনি সর্বদা আমাদের কল্যাণ করুন।

শল্য কর্ণকে বললেন, আত্মনিন্দা, আত্মপ্রশংসা, পরনিন্দা ও পরস্তুতি — এই চার প্রকার কাজ সজ্জনের কর্তব্য নয়, তথাপি তোমার বিশ্বাসের জন্য আমি নিজের প্রশংসাবাক্য বলছি। ঘোড়া চালনায়, ঘোড়ার স্বভাব সম্পর্কে জ্ঞানে এবং ঘোড়ার চিকিৎসায় আমি ইন্দ্রের সারথি মাতলির সমকক্ষ। কর্ণ, তুমি উদ্বিগ্ন হয়ো না, অর্জুনের সাথে যুদ্ধের সময় আমি তোমার রথ চালাবো।

পরদিন সকালে রথ প্রস্তুত হলে শল্য ও কর্ণ তাতে আরোহণ করলেন। দুর্যোধন বললেন, মহাবীর কর্ণ, ভীষ্ম ও দ্রোণ যে দুস্কর কাজ করতে পারেননি তুমি তা সম্পন্ন করো। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে বন্দী করো অথবা অৰ্জুন, ভীম, নকুল ও সহদেবকে বধ করো এবং সমস্ত পাণ্ডবসৈন্য বিনাশ করো। কর্ণ শল্যকে বললেন, আপনি রথ চালনা করুন, আজ আমি আর্জুন, ভীম, দুই মাদ্রীপুত্র ও রাজা যুধিষ্ঠিরকে বধ করবো। আজ অর্জুন আমার শক্তি দেখবে, পাণ্ডবদের বিনাশ এবং দুর্যোধনের জয়ের জন্য আজ আমি হাজার হাজার অতি তীক্ষ্ম বাণ নিক্ষেপ করবো।

শল্য বললেন, পাণ্ডবরা মহাধনুর্ধর, তুমি তাদের অবজ্ঞা করছ কেন? যখন তুমি বজ্রের আওয়াজের মতো গাণ্ডীবের আওয়াজ শুনবে তখন আর এমন কথা বলবে না। যখন দেখবে যে পাণ্ডবগণ বাণবর্ষণ কোরে আকাশ ঢেকে দিয়েছেন, ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শত্রুসৈন্য বিনাশ করছেন, তখন আর এমন কথা বলবে না। শল্যের কথা অগ্রাহ্য করে কর্ণ বললেন, এগিয়ে চলুন।

______________

(ক্রমশ)