সন্ধ্যা নামার ঠিক আগের এই সময়টা খুব প্রিয় মণিকার। যখন স্কুল কলেজে পড়ত, এই সময়ে এককাপ চা নিয়ে মায়ের সঙ্গে বসত গোল বারান্দায়। মা বসতে চাইত না, সন্ধে দিতে হবে, জলখাবার করতে হবে, হাজারটা কাজ। ঠাকুমা বেঁচে থাকতে ট্যারা ট্যারা কথাও শোনাতেন। তবে মণিকা স্কুলের উঁচু ক্লাসে ওঠার আগেই ঠাকুমা চলে গেলেন। কাকারা ভাগ হয়ে গেলেন। মায়ের একটু বসার সুযোগ হল। বিয়ে হয়ে একমাত্র মেয়ে মণিকা চলে এল। বারান্দা ছিল না তখন এ বাড়িতে। শাশুড়ির শাসন ছিল। বড় দুই ননদের বিয়ে হয়ে গেলেও মণিকার বেচালের দিকেই তাদের আসল নজর পড়ে থাকত। বনি রনি হয়ে গেল বিয়ের সাত বছরের মধ্যেই। পাঁচ বছরের ছোট বড় দুভাই। চার বছরের রনি একদিন তাকে অবাক চোখে দেখে প্রশ্ন করেছিল, "তুমি এরকম বিচ্ছিরি একটা ন্যাকড়া পরেছ কেন? বাপি তো পুজোয় শাড়ি কিনে দিল তোমাকেও।"

1

ঝরাপাতা - 1

///ঝরাপাতাপর্ব - ১সন্ধ্যা নামার ঠিক আগের এই সময়টা খুব প্রিয় মণিকার। যখন স্কুল কলেজে পড়ত, এই সময়ে এককাপ চা মায়ের সঙ্গে বসত গোল বারান্দায়। মা বসতে চাইত না, সন্ধে দিতে হবে, জলখাবার করতে হবে, হাজারটা কাজ। ঠাকুমা বেঁচে থাকতে ট্যারা ট্যারা কথাও শোনাতেন। তবে মণিকা স্কুলের উঁচু ক্লাসে ওঠার আগেই ঠাকুমা চলে গেলেন। কাকারা ভাগ হয়ে গেলেন। মায়ের একটু বসার সুযোগ হল।বিয়ে হয়ে একমাত্র মেয়ে মণিকা চলে এল। বারান্দা ছিল না তখন এ বাড়িতে। শাশুড়ির শাসন ছিল। বড় দুই ননদের বিয়ে হয়ে গেলেও মণিকার বেচালের দিকেই তাদের আসল নজর পড়ে থাকত। বনি রনি হয়ে গেল বিয়ের সাত বছরের মধ্যেই। ...আরও পড়ুন

2

ঝরাপাতা - 2

ঝরাপাতাপর্ব - ২পিউর বুদ্ধিতে গোপার সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার আগে এক মুহূর্তের একটা দ্বিধা কাজ করে মণিকার মনে। যদি রাজি হয়, ওরাও বেশি সময় নেবে না। এক দুদিন সবাই আলোচনা করে হ্যাঁ বলবে। তার মানে, নিজের দিকের সব আত্মীয়দের একেবারে বিয়ে ঠিক হয়েছে খবর দিতে হবে। সেটা কি ঠিক হবে?বনির বিয়ের সময় দুই ননদের মুখ হাঁড়ি হয়ে গেছিল। সব ব্যাপারেই বলেছিল, কই আগে তো বলোনি? যদিও বিয়ের দু তিন বছর আগে থেকেই সবাই বুঝে গেছিল পিউ বাড়ির বৌ হবে। মণিকাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে একগাল হেসে বলত, সে যদি হয়, তাহলে আমার সবচেয়ে আনন্দ হবে।তারপর যখন পদে পদে প্রতিটি খুঁটিনাটি ...আরও পড়ুন

3

ঝরাপাতা - 3

ঝরাপাতাপর্ব - ৩বিয়ের দিন সকালে আলো ফোটার আগে হবু বর আর কনের দু বাড়িতেই দধিমঙ্গলের নিয়ম থাকে। রনির দধিমঙ্গল সমাধা হয়। শাঁখের আওয়াজে আশেপাশের বাকি বাড়ির মতো এ বাড়িতেও সকলে বুঝতে পারে। কিন্তু এ বাড়ির তিনটে লোক বা বিয়ের নেমন্তন্নে আসা আত্মীয়রা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে এখানে ওখানে। কারও ওঠার ইচ্ছেটুকুও যেন আর নেই। গতকাল রাতে কাজ সেরে এখানে ওখানে সবাই শুয়েছিল। দুই বোনের নিজস্ব ঘরে চেপেচুপে ওদের আরও দুই মামাতো আর মাসতুতো বোনও ছিল। তিনজনের কেউ টের পায়নি, কখন নিঃশব্দে লিলি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।বোনেদের কমন আলমারির গায়ে ম্যাগনেটে আটকানো একটা ছোট হাতচিঠি,- "মা, তোমাকে অনেক বোঝানোর ...আরও পড়ুন

4

ঝরাপাতা - 4

ঝরাপাতাপর্ব - ৪গোপার কান্নার পর কিছুই চাপার নেই। এতদিন লিলির লুকিয়ে রাখা সব কথাই এবার বলতে হয়। অবশ্য লুকোনোর নেই, এখন একেবারে শিয়রে শমন যাকে বলে।লিলি ওর প্রেমিককে বিয়ে করেছে শোনামাত্র পিউ কলসিটা ঠকাস করে মেঝেতে বসিয়ে ছুটে এসে মণিকাকে জড়িয়ে ধরে। পাড়ার এক কাকিমা বলে ওঠেন, "কলসিটা এখানে বসালে কেন পিউ? বিয়ের জন্য তোলা জল, একেবারে ছাদনাতলায়... " বলতে গিয়ে নিজের কানেই বিসদৃশ ঠেকে, চুপ করে যান। ক্ষিপ্ত রনি আগুনঝরা চোখে তাকিয়ে আছে পড়শীদের দিকে। বুঝতে পারছে ভদ্রমহিলার এই চুপ করে যাওয়ার পিছনে ব্যঙ্গ না থাক, সহানুভূতি থাকলেও সেটা সহ্য করা মুশকিল।এদিকে মণিকাও যেন পিউর জন্যই অপেক্ষায় ছিল। ...আরও পড়ুন

5

ঝরাপাতা - 5

ঝরাপাতাপর্ব - ৫রনিকে ঘিরে ধরে যখন বোঝানো হচ্ছে, মিলিকে বিয়ে করে ফেলতে, ঠিক তখন মিলিকেও একই ভাবে বোঝানো চলছে, বিয়ে করতে। মিলিকে অবশ্য ওর কাকা কাকিমা বেশ ধমকেই বলছেন। ওদের বোনেদের জন্য যদি তাঁর দাদার একটা কিছু হয়ে যায় ! অর্থাৎ, লিলির অন্যায়ের অর্ধেক দায়ভার ইতিমধ্যেই মিলির ঘাড়ে চেপে গেছে। এক্ষুণি বিয়েতে হ্যাঁ না বললে, সম্পূর্ণ ওর দোষ হয়ে যাবে।মাও সেভাবেই চাপ দিয়েই বলছে, "তোদের এত স্বাধীনতা দিয়ে মানুষ করলাম, যখন যা চেয়েছিস, তাই দিয়েছি, তার ফল তো একজন হাতে নাতে দিয়ে গেছে। তুইই বা বাকি থাকিস কেন। তুই এখন বিয়ে করবি না বলে আমাদের যেটুকু মান বাঁচত সেটাও ...আরও পড়ুন