- "এটা কি সম্ভব স্যার? আপনার নিজেরও কি মনে হয় না এর মধ্যে বিরাট একটা চাল আছে?" স্যার অর্থাৎ ডিআইজি বাসুদেব ধরের সঙ্গে সিদ্ধার্থর সম্পর্কটা যথেষ্ট সহজ। তবে এই মুহূর্তে ক্রাইম ব্রাঞ্চের নামী অফিসার সিদ্ধার্থ রায়ের চোখ কুঁচকে আছে। - "চাল তো আছেই, এত বিস্ফোরক তো এমনি এমনি আসেনি। আর আসবে খবরও ছিল। তোমাকে উড়িয়ে আনা হয়েছে সেজন্যই। চিতাও একটা আছে। এটা ফরেন্সিক কনফার্ম করেছে। লোকটি মারা গেছে চিতার আক্রমণে। কিন্তু এখানে চিতা থাকাটাও তেমন অস্বাভাবিক নয়।" বিডি অর্থাৎ বাসুদেব ধর বেশ শান্তভাবেই বলেন। - "এখানে চিতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, সেকথা আমিও জানি স্যার। তবে অস্বাভাবিক হল সেই চিতার চিহ্ন খুঁজে না পাওয়ার গপ্পো।" সিদ্ধার্থর কথা শুনলেও টেবিলের পেপার ওয়েটটা ঘোরাতে ঘোরাতে একটু যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছেন বিডি। - "তাই চিতা নিয়ে এই অদ্ভুত পরিস্থিতি কি করে উড়িয়ে দিই?" সিদ্ধার্থ স্যারের মনোভাব পড়ে নিতে চায়।
জঙ্গলের প্রহরী - 1
জঙ্গলের প্রহরী ১পর্ব - ১- এটা কি সম্ভব স্যার? আপনার নিজেরও কি মনে হয় না এর বিরাট একটা চাল আছে? স্যার অর্থাৎ ডিআইজি বাসুদেব ধরের সঙ্গে সিদ্ধার্থর সম্পর্কটা যথেষ্ট সহজ। তবে এই মুহূর্তে ক্রাইম ব্রাঞ্চের নামী অফিসার সিদ্ধার্থ রায়ের চোখ কুঁচকে আছে।- চাল তো আছেই, এত বিস্ফোরক তো এমনি এমনি আসেনি। আর আসবে খবরও ছিল। তোমাকে উড়িয়ে আনা হয়েছে সেজন্যই। চিতাও একটা আছে। এটা ফরেন্সিক কনফার্ম করেছে। লোকটি মারা গেছে চিতার আক্রমণে। কিন্তু এখানে চিতা থাকাটাও তেমন অস্বাভাবিক নয়। বিডি অর্থাৎ বাসুদেব ধর বেশ শান্তভাবেই বলেন।- এখানে চিতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, সেকথা আমিও জানি স্যার। তবে অস্বাভাবিক হল ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 2
জঙ্গলের প্রহরী ২পর্ব - ২আজ সকালে এই লোকটির মৃত্যুর কারণ যে চিতাবাঘের আক্রমণ, সেকথা জানাজানি হতেই সবাই করছে, পূর্ণিমার রাতে ঐ পাহাড়ের গা থেকে ঠাকুরাণীর চিতা নেমে আসে, একথা ওরা কবে থেকেই জানে।পুলিশের স্থানীয় কর্মীদের মধ্যেও একটা ঢিলেমির ভাব চোখে পড়ছে, যেন সমাধান হয়ে গেছে হত্যারহস্যের। ঠাকুরাণীর চিতাই যেখানে অপরাধী, সেখানে তদন্তের দরকারই বা কি? অপরাধীকে তো আর শাস্তি দেওয়া যাবে না।শুধুমাত্র সিদ্ধার্থ আর ঋষিই জানে বিডি স্যার এখনও এই তত্ত্ব বিশ্বাস করেননি।আজ থেকে পাঁচদিন আগে-----------------------------------রায়চৌধুরীদের এই পুরনো ভাঙা জমিদার বাড়ি আর বাকি জমিজমা দেখভাল করে প্রসাদ। ভাঙা জমিদারবাড়ির আউটহাউজে থাকে ছেলে পল্টনকে নিয়ে। ওর মা মরা ছেলে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 3
জঙ্গলের প্রহরী ৩পর্ব - ৩জঙ্গলের হাতার বাইরে কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা ছোট একটা বাংলোবাড়ি। হলুদ দেওয়াল, সবুজ দরজা লাল টিনের চাল। জঙ্গলের কোর এরিয়া না হলেও গাছপালায় ঘেরা বুনো ভাবটা রয়েছে এখানেও। তার মাঝখানে রোদে ধোওয়া বাংলোটি যেন উজ্জ্বল একটুকরো ফুলবাগান। বাংলোর নিজস্ব ফুলবাগানও রয়েছে।সিদ্ধার্থ যতদূর শুনেছে, এটা শাক্য গোস্বামীর পৈত্রিক বাড়ি। রেঞ্জারের বাংলোয় ও থাকে না এখানে বাড়ি আছে বলে। শুধু অফিসটা ব্যবহার করে। আগেরবার সেখানেই দেখা হয়েছিল।বাংলোর বারান্দায় একটি মেয়ে গার্ডেন চেয়ারে বসে বই পড়ছিল। সিদ্ধার্থ সামনে যেতে মুখ তুলে তাকায়।সিদ্ধার্থ কার্ড বের করে, আমি....... - দাদা বলেছে, আপনি আসবেন। আপনিই নিশ্চয়ই সিদ্ধার্থ...... মনে করতে চেষ্টা করে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 4
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৪অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটাতে ঋষি তাড়াতাড়ি বলে, ম্যাডাম চা খুব ভাল হয়েছে, নিমকিও। - থ্যাঙ্ক মিষ্টি হাসে শুক্লা, খাবার দাবার সব মা বানিয়েছেন। আমি শুধু চা করেছি। ঋষি এখনও চা খায়নি, থতমত হয়ে বলে, ও আচ্ছা, খাচ্ছি এক্ষুণি। গরম চায়েই চুমুক দেয়। সিদ্ধার্থও চায়ে চুমুক দিয়ে বলে, খুব ভালো চা। থ্যাংকস ম্যাডাম। - শুক্লা হল আমার ছোটবোন। ও কলকাতায় থেকে এম এস সি পড়ছে। ছুটিতে এখানে। আর শুক্লা ইনি সিদ্ধার্থ রায়, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ইনি ঋষি বসু। শাক্যর মনে পড়ে ফর্মালি আলাপ করানো উচিত। উভয়পক্ষই নিয়ম রক্ষার্থে হাতজোড় করে।সমস্যা হয় এরপরই, কারণ শুক্লা একটা মোড়া নিয়ে এসে বসে পড়ে একধারে। আর ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 5
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৫- এটা একটা গল্প মিঃ রায়। মিথ বলতে পারেন। এই অঞ্চলে প্রচলিত জনশ্রুতি, লোককথা। জঙ্গলের একটা ঢিপি আছে, আদিবাসীদের দেবী। স্থানীয় বাঙালিরাও মানে এই দেবীকে। তাঁকে সবাই বলে ঠাকুরাণী। জনশ্রুতি হল, অনেকটা বনবিবির মতো সেই ঠাকুরাণীর পোষা চিতাবাঘ ছিল। - এই চিতাই রায়চৌধুরীদের ছেলেকে বাঁচিয়েছিল? ঋষি তড়বড় করে ওঠে।- সেটাই তো লোককথা। - লোকে কি বলে তো বুঝলাম। আমি আপনার মত জানতে চাইছি মিঃ গোস্বামী। আপনি কি জানেন সেটা বলুন, প্লিজ। উই নিড ইওর ওপিনিয়ন। - দেখুন আমার মত হল, চিতার আক্রমণ সে সময় খুব স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। তখনও আমাদের এখানকার জঙ্গলে চিতা ছিল। এবার সেই ঘটনা নিয়ে একটা ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 6
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৬- "ওটা শাইলক না সঞ্জয়, শার্লক। শাইলক খুব খারাপ, লোভী লোক ছিল। শার্লক হোমস গোয়েন্দা বটে, সে অন্যরকম, গল্পের বইয়ের গোয়েন্দা। আমাদের মতো পুলিশি তদন্ত ওকে করতে হত না।" সঞ্জয়কে বুঝিয়ে বললেও সিদ্ধার্থ নিজে ভাবে, অতীতকালের ব্যবহারটা কি ঠিক হল? শার্লক হোমস, এরকুল পোয়ারো, মিস মেরি মার্পল কি অতীত হয়েছেন? ফেলুদা বা ব্যোমকেশ?এদিকে সঞ্জয় লজ্জায় জড়োসড়ো নাম বিভ্রাট করে ফেলে, "ভুল হয়ে গেছে স্যার। আমি মুখ্যু মানুষ, শুনেছিলাম, ভুল করে ফেলেছি। মাপ করে দিন।"- "আরে তুমি আগে দেখে চালাও। চলো থানার দিকটা ঘুরে যাই। গল্পের বইয়ের একটা নাম ভুল করেছ, তাতে কি? তবে পড়াশোনাও করতে হবে। ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 7
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৭- "না স্যার, ঐ লোকটা এখানে আগে কখনো আসেনি। এর আগে কেউ কখনো ওকে দেখেনি। এলে না কেউ তো দেখত, কেউ তো মনে রাখত।"- "ধরো যদি এক দুদিনের জন্য এসে থাকে, এক দেড় কিংবা দুবছর আগে?" সিদ্ধার্থ নিজেকেই বলে, ওর চিন্তা এখন নানান খাতে বইছে।"- "তাহলেও স্টেশনের লোক দেখত না? স্টেশন মাস্টার তো অন্ততঃ দেখত।" সঞ্জয় নিজেও ভাবছে।- "এই স্টেশনমাস্টার কত পুরনো?" সিদ্ধার্থ হিসেব করছে।- "ঠিক বলেছেন স্যার, স্টেশনমাস্টার বেশি পুরনো না স্যার, কয়েক মাস হল এসেছেন।" সঞ্জয় উত্তেজিত হয়ে ওঠে।- "সঞ্জয়, এসব কথা.... " সিদ্ধার্থকে থামিয়ে দেয় সঞ্জয়, "কেউ জানবে না স্যার।" গাড়িও থামিয়ে দেয়, ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 8
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৮গাড়ি থেকে নেমে সবাই শুক্লাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে কলকল করায় বোঝা গেল, এরা সব শুক্লার বন্ধু, গেস্ট। করে সবাই একসঙ্গে বলছে, "উফ কি লেট করল ট্রেন", "তোদের লোকাল রুটের ট্রেন তো আরেককাঠি", " হ্যাঁ লোক না হলে চলবে না ধর্মতলা রুটের বাসের মতো "।মেয়ে দুটি এবং একটি ছেলে বকবক করে যাচ্ছে, শুক্লার চোখমুখও বেশ ফ্রেশ হয়ে গেছে এদের দেখে। একহাত তুলে সবাইকে থামিয়ে বলে, "ব্যস ব্যস, খুব কষ্ট হয়েছে জানি এই পাহাড় জঙ্গলে আসতে। এবার একদম বাড়ি। খেয়েদেয়ে বিশ্রাম।"পঞ্চম ব্যক্তি এতক্ষণে মুখ খোলে, "তোমার তো চোট লেগেছে ! কি করে হল?"- "আর বোলোনা রাজীবদা, এই এক্ষুণি পড়ে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 9
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৯বাড়ি আসতে আসতে শুক্লার হাতপায়ের ব্যথা মালুম পড়তে থাকে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভয়, মা বাবা সব চাপ দেবেই দেবে, টিটেনাস দিতেই হবে। বন্ধুরা যদিও আশ্বাস দেয় মলম লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে। রাজীব অবশ্য এত হালকাভাবে নেয় না। বলে, দরকারে ডাক্তারও দেখাতে হবে। শুক্লার মুখখানা এতটুকু হয়ে যায়।বাড়িতে সবাই তো শুক্লাকে দেখে হাঁ, এই গেল আর এরকম কান্ড করে এল? বাবা বাড়ি নেই, মা আর দাদা প্রথমে একটু চেঁচামেচিও করে। তারপর মা এদের আপ্যায়ন করেন আর দাদা সিদ্ধার্থ ওখানেও ছিল কথাটা শুনেই গুম হয়ে যায়।বন্ধুদের ওর মা যত্ন করলেও, তারা ওর মাকে বলে, শুক্লাকে আগে দেখতে। মা ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 10
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১০শাক্য যখন বোনকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে ফিরছে, দূর থেকেই দেখল, অন্যমনস্কভাবে একটু হেলেদুলে হেঁটে আসছে একলা, গাড়ি তো নেই ই, সঙ্গেও কেউ নেই। শাক্যর মনে হয়েছে ছেলেটা জেদী আর একরোখা। কেস সলভের জন্য যেভাবে একমুখী হয়ে চলছে, কেসে জেতা হারাটাকে বোধহয় খুব পারসোনালি নেয়। সেই লোককে এমন এলোমেলো ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখতে পাবে ভাবেনি।যদিও নিজের প্রতি সিদ্ধার্থর ব্যবহারে উপরে সুগার কোটিং এর তলায় একটা কাঁটা ভালই বোঝে শাক্য। তাও শুক্লার জুতোজোড়া পর্যন্ত পাঠিয়ে দিয়েছে, গাড়ি নিয়ে ওর পাশ কাটিয়েই যেতে হবে, কথা না বললে হবে না ।- "আরে মিঃ রায়, কোনদিকে যাচ্ছেন?" সিদ্ধার্থ ভীষণ চমকে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 11
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১১- "আচ্ছা, মিস গোস্বামীটা বাদ দিয়ে আমার নামটা ইউজ করলে ভাল হয় না?" শুক্লার গলায় পরিচয়ের "সেটাই ভাল মিঃ রায়। আর চলুন না আমাদের সঙ্গে। আপনার বাংলোর সামনে দিয়েই তো যাব। আপনাকে নামিয়ে দেব আমরা। আসুন, আসুন, না বলবেন না।" শাক্যও যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখায়।- "আমি ঐ একটা সিগারেট খেয়ে...... " সিদ্ধার্থ বলতে যায়।- "তাহলে আর ছাড়ব ছাড়ব বললেন কেন? ছাড়বেন না, অথচ বললে শুধু কথার কথা ! ছাড়লে ছেড়েই দিন না।" শুক্লা পায়ের ব্যথায় গাড়ি থেকে নামছে না, তবে জানালা দিয়ে প্রায় মুন্ডু বের করে ফেলে ধমকি দেয়।- "ছেড়ে দেব দেখবেন।" আরও লজ্জা পেয়ে সিদ্ধার্থ গাড়ির ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 12
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১২- "না রে। তোর উপর আমি রাগ করতে পারি? আসলে এবার সত্যিই সিগারেট ছেড়ে দেব ভাবছি। তোর সঙ্গে গাইব। চল কি গাইবি?"- "ওরেত্তারা, তোমার হল কি গুরু?" লাফিয়ে এল ঋষি, আরেকটা টুলে বসে টেবিল বাজিয়ে গান ধরল -প্রথমত আমি তোমাকে চাইদ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাইতৃতীয়ত আমি তোমাকে চাইশেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই…ছেলেমানুষি ছাপিয়ে দুজনের গলা চড়ছে। ছোটবেলা থেকে পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে শোনা গান, ভুলে যাওয়ার পরেও স্মৃতির ভিতরে শিকড় ছড়িয়ে রেখেছিল। আজ সুর খুঁজে পেল।সেদিন অনেক রাতে যখন সিদ্ধার্থ চিত হয়ে শুয়ে, শুক্লার কাছ থেকে আনা বইটা মুখের সামনে খুলে ধরল তখন ওর মনটা কিসের ভারে যেন হাঁসফাঁস ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 13
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৩- "একটু অসুবিধা করুন দুদিন। আমরা চেষ্টা করছি কি করা যায়। আজ আসি। ম্যাডামের খবর নিতে শি ইজ ফাইন, খুব ভাল লাগছে। আপনারা সবাই ভাল করে ঘুরবেন, তবে সাবধানে। মিঃ গোস্বামীর কথা শুনে চলবেন।" সিদ্ধার্থ আর ঋষি উঠে দাঁড়িয়েছে।শাক্য হাঁ হাঁ করে ওঠে, ওর মা আর বাবাও বেরিয়ে এসেছেন, মা আর পিছনে একটি আদিবাসী মহিলা, দুজনের হাতেই খাবারের প্লেট।সিদ্ধার্থদের সামনের টেবিলে খাবার রেখে ওর মা চোখ পাকান, "রোজ রোজ এভাবে চলে গেলে হবে না। বোসো, আজ খেয়ে তবে যেতে পারবে।"ছেলেমেয়েরাও হৈচৈ করে ওঠে, "সিদ্ধার্থদা বসুন, ঋষিদা বসুন। আমরা দাদা ডাকতে পারি তো?" বসতেই হয় ওদের আন্তরিকতায়।রাজীব ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 14
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৪সিদ্ধার্থ আর ঋষির কাছে এসে দাঁড়ায় শাক্য, গলা নামিয়ে বলে, "প্লিজ কিছু মনে করবেন না আপনারা। ব্যবহার আমাদের কারও পছন্দ নয়। কাল থেকেই আমরা দেখছি, বড্ড হামবড়াই। আর হ্যাঁ, মেনি মেনি থ্যাংকস শুক্লাকে দেখতে আসার জন্য। সময় পেলে চলে আসবেন আমাদের বাড়ি।"- "আমরা কিছু মনে করিনি শাক্য। নানান ধরণের মানুষকে ডীল করার অভ্যেস আছে আমাদের। তবে আপনি যদি একটা হেল্প করতে পারেন খুব ভাল হয়।" সিদ্ধার্থ কাজের কথায় চলে আসে।- "নিশ্চয়ই, বলুন না।"- "আমরা আজ রায়চৌধুরী বাড়িতে যাচ্ছি ইনভেস্টিগেশনে। প্লিজ, এরা যেন ঐদিকে না যায়। আমাদের কিছু ফ্রি টাইম দরকার।"- "নো প্রবলেম। নিশ্চিন্তে আপনারা কাজ করুন। ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 15
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৫আশীষের ঘর সীল করে দিয়েছিল তাপস, প্রথমদিনই। এখন সীল ভেঙে নতুন করে সার্চ করে বোঝা যায়, আর সিদ্ধার্থর সন্দেহই ঠিক। ও বিশেষ একটি দলের সদস্য ছিল। বেশ কিছু লিফলেট, প্যামপ্লেট, ওর ডায়রি, তাতে কিছু ঠিকানা আর ফোন নম্বর।দুঘন্টা পর রায়চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ওরা। দিল্লির হেড অফিসে কিছু খবর জানতে চায় বলতে হবে। কলকাতা থেকেও কিছু খবর দরকার। বিশেষ করে আশীষ আর বৈদুর্য্যর ব্যাপারে। আশীষের ঘরে ওর নামটা ছাড়া কিছু জানা গেল না, সারনেমটাও না। সেটা বৈদুর্য্য বলেছে পুলিশকে, আশীষ মিত্র। তাই সিদ্ধার্থর ধারণা, দিল্লি আর কলকাতা, এই দুই জায়গার খবরের মধ্যে অনেকখানি সমাধান পাওয়া ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 16
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৬তাপস কি ভেবে নিচ্ছে দেখে সঞ্জয় বলে, "গাড়ির পথ এ দুটোই। তবে পাকদন্ডী বেয়ে নামা ওঠা চার্চের পিছনদিকের ভাঙা পাঁচিল দিয়ে জঙ্গল পেরিয়ে ঢোকাও যায়। আমরাও ছোটবেলায় তাই করতাম।"- "চার্চের পিছনে পাঁচিল ভাঙা, তোমরা দুজনেই জানো?"- "সবাই জানি স্যার। ঐ পাঁচিল প্রথমদিকে তৈরি হয়েছিল। আমাদের ঠাকুর্দার আমল থেকেই বোধহয় ভাঙা।" এবারও সঞ্জয়ই বলে।- "হুম। সঞ্জয়, তুমি তো চার্চে থেকেছ অনেক বছর। ছেলেরা ওখান থেকে রাতে বেরোয় না? দুষ্টুমি করে, এমনি স্কুল পালানোর মতো?"- "হ্যাঁ স্যার," লজ্জায় মাথা নিচু করে সঞ্জয় বলে, "আমিও করেছি। স্টেশনে চলে আসতাম, নতুন সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গেছি।"- "রাতে কখনো উপরে উঠে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 17
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৭মেয়েরা সবাই মণীষাকে বোঝায়, হ্যাঁ ওর পছন্দের মানুষটা একটু রাগী, একগুঁয়ে, নিজেকে কেউকেটা ভাবে, এগুলো ঠিক। তাকে যে মণীষার বন্ধুদের পছন্দ হয়নি, একথাটাও ঠিক নয়।দিয়া এখন আবার হাসিখুশি। ও বলে, "দেখ মণি, যার যার একটা পেশাগত স্বভাবও তৈরি হয়ে যায়, বা স্বভাবে সহজাত নেতৃত্বদান বা পরিস্থিতি মুঠোয় নেওয়ার ক্ষমতা থাকে বলেই সে এই ধরণের পেশায় সফল হতে পারে। ভাল ছাত্র তো অনেকেই হয়, জীবনে সফল হওয়ার সঙ্গে অনেকসময়ই তার যোগ থাকে না।"শমীককে কিছু বলতেই হবে দিয়াকে সাপোর্ট করে, "সে তুলনায় ঠিক মানুষকেই বেছেছিস তুই।"লজ্জা ঝেড়ে ফেলে মণীষা গর্বিত রাজহংসিনীর মতো মরালগ্রীবা বাঁকিয়ে বলে, "কথাটা শুনতে ভাল। ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 18
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৮শাক্যর জলপাই সবুজ হুডখোলা জিপসিতে ওরা বেরিয়েছে। নিচে নেমে আবার পাশের পাহাড়ের গায়ের রাস্তা ধরে উপরে জঙ্গলের দিকে ঘুরে আসবে। একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়েছে, তবে পাহাড় জঙ্গলের সৌন্দর্যে কেউ সেসব গায়ে মাখছে না।পাহাড়ি পথে নামাওঠায় গান গেয়েছে সবাই গলা ছেড়ে -লে যায়ে জানে কাঁহাহাওয়ায়ে হাওয়ায়েলে যায়ে তুঝে কাঁহাহাওয়ায়ে হাওয়ায়েবেগানি হ্যায় ইয়ে বাগিহাওয়ায়ে হাওয়ায়েলে যায়ে মুঝে কাঁহাহাওয়ায়ে হাওয়ায়ে।এখন জঙ্গলের সামনে এসে শাক্য বলে দেয়, আর অকারণ কথা নয়, মোবাইল সাইলেন্ট। আগে থেকেই বলা ছিল, একটু সবুজ, নীল, কালো ঘেঁষা জামাকাপড় এনেছিল সবাই জঙ্গল সাফারির জন্য। লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, জিপসির হুড লাগিয়ে, কোনোভাবেই গাড়ি থেকে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 19
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৯শাক্য আর ওর দলবলকে দেখে উপস্থিত সবাই মাঝখানে পথ করে দেয় প্রথমে, তারপরই প্রায় সবাই একসঙ্গে ঘটনা বোঝাতে থাকে ওকে। শাক্য ততক্ষণে সিদ্ধার্থ আর নিজের গার্ডদের কাছে পৌঁছেছে। গার্ড দুজন অক্ষত, তবে সিদ্ধার্থর জামাকাপড় ধুলোমাখা, কোথাও কোথাও কালচে ছোপ দেখে রক্তও মনে হল শাক্যর। ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছে, হাতে সিগারেট। ছেলেমেয়েরা শ্বাস টানে, শাক্য বুঝতে পারে, ওর চেহারা দেখে ভয় পেয়েছে এরা।শাক্য একবার ওদের দিকে ফেরে, "তোমরা কি বাড়িতে চলে যাবে? আমার এখানে সময় লাগবে।" কেউ অবশ্য রাজি হয় না।শিল্টন এখানে, সঙ্গে কমল। অবশ্য কমল এসেছে ঘটনা ঘটার পর। বাবুয়া, শিচাং, জনি, ডাবলু, বিকাশ আর ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 20
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ২০- "দাদা, কথাবার্তা সব পরে হবে। আর আমি তোমার কোনো বারণ শুনব না।" সিদ্ধার্থ আর শাক্য, মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে বলে ঋষি।- "সিদ্ধার্থ, আমারও অনেক কথা আছে। কিন্তু সত্যিই এখন না। তুমি প্লিজ হেলথ সেন্টারে যাও। তারপর যখন বলবে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব।" শাক্যও সিদ্ধার্থর কাঁধে হাত রাখে। সিদ্ধার্থ এগিয়ে যায় ওর গাড়ির দিকে। সঞ্জয় দৌড়য় গাড়ি খুলে দিতে।ইতিমধ্যে শুক্লা ঋষিকে বলে, "ঋষিদা, ওর কি খুব চোট লেগেছে? নাকি অন্য কিছু আন্দাজ করেছে বলে এত গম্ভীর? রেগে আছে মনে হচ্ছে। কি যে হচ্ছে কিছু তো বুঝতে পারছি না।"- "দাদার খুব মাথা গরম হয়ে আছে।" ঋষি যে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 21
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ২১- "হাতিরা ডিরেক্টলি না হলেও ইনডিরেক্টলি হেল্প করেছে। একজন অন্ততঃ একটা ভুল করেছে।" ঋষির মুখে চাপা "হুম, সন্দেহ আমি প্রথম থেকেই করছিলাম। আজ শিওর হলাম।" সিদ্ধার্থ আয়েস করে ধোঁয়া ছাড়ে, যদিও কনুইয়ের কাছে জ্বালা করছে, হাত ভাঁজ করতে লাগছে।- "তুমি প্রথম থেকে কাকে সন্দেহ করনি বলোতো? আমি সেই রাতে তোমার সঙ্গে না থাকলে আমাকেও সন্দেহ করতে।" ঋষি অনুযোগ করে।- "করতাম, তেমনি সেক্ষেত্রে তুইও আমাকে সন্দেহ করতি। সেটাই উচিত। ঐ ফাইভ হান্ড্রেড পারসেন্ট বাজিয়ে না দেখে কাউকে ছাড়া আমার ডিকশনারিতে নেই।"- "তবে শাক্য বা শুক্লাকে সন্দেহ করার কিছু নেই, এটা তো এখন বুঝেছ?" ঋষি যেন দম ছেড়ে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 22
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ২২সিদ্ধার্থ চলে যেতেই শাক্য বোন আর বোনের বন্ধুদের সোজা বাড়ি যেতে বলে। শাক্যকে নিয়ে এডিজি আর গাড়িতেই একটা মিটিং করবেন।রাজীবেরও বোলচাল ফুরিয়ে গেছিল এতবড় ঘটনার সামনে পড়ে। সুড়সুড় করে সব গাড়িতে ওঠে। রাজীবই ড্রাইভিং সিটে, তবে ওর ফ্যাকাশে মুখ দেখে ওরা বোঝে না, ওকে গাড়ি চালাতে এ্যালাও করে ভুল করেছে কিনা।বাংলোয় ফিরে দুমদুম করে মণীষা ঘরে ঢুকে যায়। পিছনে মেয়েরা, শমীক টেরিয়ে টেরিয়ে রাজীবকে দেখতে দেখতে ওদের পিছনেই যায়। ঘরে ঢুকেই মণীষা ফেটে পড়ল, "দেখলি তোরা দেখলি? এরকম একটা লোককে ও খোঁচাচ্ছিল ! অসহ্য লাগে আমার। সবজায়গায় সবজান্তা ভাব। লেকচারার বলে সবজায়গায় লেকচার দেবে। একা ও ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 23
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ২৩বন্ধুদের সব ঝামেলার মূর্তিমান কারণ হয়ে রাজীব বেচারা চুপচাপ বারান্দায় বসে ছিল। এমনিতেই রাজীবের ভিতরে একটা স্যার আছে, তার উপর মণীষাকে যতই ভালবাসুক, সেও তো আদতে রাজীবের ছাত্রী। তাই মণীষা আর তার বন্ধুদের শাসনের দায়িত্বটাই বেশি করে কাঁধে তুলে নিয়েছিল।বলতে নেই, প্রথম দেখায় সিদ্ধার্থকে ওর চালবাজই মনে হয়েছিল। এত বড় একটা কান্ড নাহলে কি করে ঘটল ওর নাকের ডগায়? তাই বাজিয়ে দেখতে গেছিল। কে জানত ওর নিজেরই ব্যান্ড বেজে যাবে? এখন মণীষাকে ম্যানেজ করবে কি করে?ওর কপাল ভাল, একটু পর নাক টানতে টানতে মণীষাই বেরিয়ে আসে। ভেবেছিল বাংলোর আশেপাশে ঘুরবে। রাজীবকে দেখেই ও বাংলোটা ঘুরে পিছনের ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 24
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ২৪- "আবার আপনি কেন? আমি যে দাদা বললাম।" শ্রীতমা কি ভেবেছে কে জানে, সিদ্ধার্থর সঙ্গে সত্যিই সুরে কথা বলছে প্রথম থেকেই।ঋষি এক মিনিট আসছি বলে ভেতরের দরজাটা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় থামানোর আগেই।সিদ্ধার্থ হাসে, "ঠিক আছে। তুমি করেই বলব। তবে কতদিনই বা আর বলতে পারব।"- "তার মানে?"- "তোমরা তো ফিরে যাবে কয়েকদিন পরই। কদিন থাকার প্ল্যান তোমাদের?"- "আমরা সাতদিন থাকব বলে এসেছিলাম। এখন তো যা সব দেখছি আর শুনছি, সব না মেটা পর্যন্ত যদি থাকতে পারতাম, ওয়াও।" শ্রীতমা ঝলমল করছে।- "নট সো ওয়াও ম্যাডাম। এই সবকিছুর পিছনে একটা ভয়ঙ্কর মস্তিষ্ক আছে।"- "আপনি, মানে আপনি জানেন? মানে ...আরও পড়ুন
জঙ্গলের প্রহরী - 25
জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ২৫শুক্লা কথা শুরু করার আগেই সিদ্ধার্থর টনক নড়েছিল। আসলে রাজীবকে প্রথমবার দেখেই ওর বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে এর। কেস সলভ করতে পারেনি বলে সেই রাজীবই আবার ওকে খুঁচিয়েছিল কাল। এতজনের সামনে সিদ্ধার্থর মাথা গরম হয়ে গেছিল। ওও পালটা টীজ করে বসেছিল। তার জন্য কি শুক্লার সঙ্গে রাজীবের কোনো সমস্যা হয়েছে?মুহূর্তে নিজের মন নিজের কাছে ধরা পড়ে সিদ্ধার্থর। ছি ছি ছি !! কি করে বসেছে ! শাক্যর উপর একটা সন্দেহ ছিল, সেটা সকলের উপরই প্রথমে ছিল। ওটা ওর কাজের অঙ্গ। তার উপর শুক্লা নিজের বইটার বদলে নতুন একটা বই দেওয়ায় ওর শুক্লার উপরেও সন্দেহ ...আরও পড়ুন